সারাদেশ
সাজেকের সড়ক দুর্ঘটনা: নিহতদের ৫ লাখ; আহতদের ২ লাখ ক্ষতিপূরণ
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের ৯০ ডিগ্রি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বিআরটিএর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার।
তিনি জানান, নিহত প্রতি ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়াও মরদেহ পরিবহনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সাজেক থানা থেকে ৫ জনের মরদেহ খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ।
নিহত ৯ জনের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে জানিয়েছেন বাঘাইছড়ি পুলিশ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল আওয়াল চৌধুরী।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের মধ্যে আহির উদ্দিন এবং তার ছেলে সামিউলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সকালে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রিপল বাপ্পি চাকমা জানিয়েছে, হাসপাতালটিতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪ জন।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিভিন্ন এলাকা থেকে সীমান্ত সড়কের কাজ করতে মালামাল ও শ্রমিকসহ উদয়পুরে যাচ্ছিল। ৯০ ডিগ্রি এলাকার একটি পাহাড়ি সড়ক থেকে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি খাদে পড়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫ জনের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ট্রাক ও জিপে করে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা দূরত্বের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক ৪ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্য ৬ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহির উদ্দিন ও তার ছেলে সামিউলকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন
ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুড়িগ্রামে মানববন্ধন করেছে যাত্রী ও স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার(২৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় কুড়িগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে জেলার রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।
এতে বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি প্রভাষক আব্দুল কাদের, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সভাপতি কলামিস্ট নাহিদ হাসানসহ অন্যরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দরিদ্রতম ও সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে কুড়িগ্রামবাসীকে একদিকে রাজধানীর সঙ্গে দূরত্বের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়, অন্যদিকে এখন থেকে বাড়তি ভাড়াও গুণতে হবে তাদের। পুরো রংপুর বিভাগকে নাটোর, চাটমোহর ঘুরে আসতে হয়। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ লাইন চালু হলে কমে আসত বাড়তি ১২২ কিলোমিটার পথ। অথচ মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ছিল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে যোগাযোগ ফ্রি হওয়ার। এই অবস্থায় ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো অযৌক্তিক মনে করে বাড়তি ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।
সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫১০ ও ৯৭২ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে যথাক্রমে ৬৪৫ ও ১২৩৭ টাকা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন লাইনচ্যুত
অন্যদিকে ঢাকা-রংপুর রুটে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০৫ ও ৯৬৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে যথাক্রমে ৬৩৫ ও ১২১৪ টাকা। ঢাকা-চিলাহাটি রুটে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪৯৫ ও ৯৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে যথাক্রমে ৬২০ ও ১১৮৫ টাকা।
আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর হবে ট্রেনের বাড়তি ভাড়া।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি দেওয়া হয়। ২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ বাতিল করা হলেও দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বলবৎ থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে ভাড়া না বাড়িয়ে শুধু বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর করা হবে।
আরও পড়ুন: মীরসরাইয়ে রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল, সড়কে দীর্ঘ যানজট
রাঙামাটিতে ট্রাক উল্টে ৬ শ্রমিক নিহত
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক এলাকায় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে ছয় শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উদয়পুর সীমান্তে রাস্তা নির্মাণের কাজ করছিল শ্রমিকরা। কাজ শেষে সীমান্ত থেকে ফেরার পথে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ছয় শ্রমিক নিহত ও আটজন আহত হন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার জানান, সেনাবাহিনী আহতদের উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কারও পরিচয় পাওয়া যায়নি।
সাজেক থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। ঘটনার বিস্তারিত পরে জানা যাবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চুয়েটশিক্ষার্থীর লাশ নরসিংদীতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর
‘আমারে কইছিল, পোলা ইঞ্জিনিয়ার হইয়া বিদেশে যাইব। আমার চিকিৎসা করাইব। এখন আমার চিকিৎসা কে করাইব, আমার ইঞ্জিনিয়ার পুতে গেল কই? আমার পুতেরে আইন্যা দেও তোমরা।’
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে নিহত চুয়েটশিক্ষার্থীর শান্ত সাহার লাশ নরসিংদীর পশ্চিম কান্দাপাড়ার সেবাসংঘ এলাকায় তার বাড়িতে পৌঁছালে এভাবেই বিলাপ করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা শিউলি সাহা।
এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী শান্ত সাহার (২১)।
শান্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শিউলি সাহা বলেন, ‘আমার বাচ্চা আর নেই, আমি আর বাঁচতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে আমাকে কইছিল, আমি ইঞ্জিনিয়ার পাস করে বিদেশে গিয়ে তোমারে বিদেশে নিয়া চিকিৎসা করামু। এখন আমাকে এ কথা কইব কে?’
নিজের কষ্ট প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না শান্তর বাবা শেখেরচর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী কাজল সাহা। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা ভরসা ছিল। সড়ক দুর্ঘটনা আমার সব কিছু ধ্বংস করে দিল। ছেলে বলেছিল আমার পড়া লেখা শেষ হলে সংসারের জন্য তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। কিন্তু আজ সবকিছুই আমার শেষ হয়ে গেছে।’
ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটি শেষে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরেন শান্ত। সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক সাহাকে মৃত্যুর খবরটি জানান শান্তর সহপাঠীরা।
তিন ভাইয়ের মধ্যে শান্ত সবার ছোট। তার মেজ ভাই পার্থ সাহা ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি দেশে ফিরলে নগরীর মেঘনা নদীর পাড়ে শান্তর লাশ দাফন করা হবে বলে জানালেন বড় ভাই কৌশিক সাহা।
চট্টগ্রামের কাপ্তাই সড়কে বাসচাপায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় শান্তসহ চুয়েটের আরেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম কাপ্তাই রোডের সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ময়নাতদন্ত শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শান্তর লাশ নরসিংদীতে নিয়ে আসে শান্তর দুই সহকারী প্রভোস্ট ও সাত সহপাঠী।
মেহেরপুরে বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা
গত এক সপ্তাহ ধরে মেহেরপুর জেলায় বইছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রির বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতিদিনই ৪২ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ওঠানামা করছে তাপমাত্রা।
দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ বেশি অসুস্থ হচ্ছে। পেটের পীড়া, ঠান্ডা জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, পানিশূন্যতা, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বাড়ছে হিট স্ট্রোকের রোগীও।
তীব্র গরমে মেহেরপুরের হাসপাতালগুলোতেও প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট।
রবিবার (২১ এপ্রিল) মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, বেড না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সাজ্জাদ বলেন, গত এক সপ্তাহে ১ হাজার ৩১৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। ২১০ জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছে।
মেডিসিন ও গাইনি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৫০ নারী। শিশু ওয়ার্ড ভর্তি ২৪০ জন। ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৫৫ জন শিশু।
এছাড়া উন্নত চিকিৎসা নিতে অন্য হাসপাতালে ১০ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরএমও আরও জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে পুরুষ বিভাগে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে মারা গেছে ৬ জন রোগী। এছাড়া সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়েছে ৫০ জন। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১১ জন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আব্দুল্লাহ মারুফ বলেন, এক সপ্তাহে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ১১২ জন, নারী ১৪৬ জন ও পুরুষ ৯৪ জন। এসব রোগীরা অধিকাংশই চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রোগীদের মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক আহসান হাবিব জানান, গত এক সপ্তাহে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক রোগী।
মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক জমির মোহাম্মদ হাসিবুস সাত্তার মুঠোফোনে বলেন, গরম বাড়ায় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকগণ কাজ করছেন।
বেডের সমস্যা থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষধের সংকট নেই বলে জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। এখন তা অতি তীব্র তাপদাহে রূপ নিয়েছে। এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
এই গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতেও নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খুলনায় শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সুপেয় পানির তীব্র সংকটে জনজীবন ভোগান্তি
খুলনার দাকোপ উপজেলায় শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে খাবার পানির সংকট মানুষকে আরও দিশেহারা করে ফেলছে।
দ্বৈত সংকটে বিশুদ্ধ খোলা পানি বিক্রির দোকানেও পড়ছে পানি কেনার দীর্ঘ লাইন। কিছু লোক আবার দূর-দূরান্ত থেকেও সংগ্রহ করছেন এই পানি। আবার বাধ্য হয়েও কিছু লোক ডোবা-নালার পানি খেয়ে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
সরেজমিনে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা এই উপজেলায় ৩টি পৃথক দ্বীপের সমন্বয় গঠিত। এর চার পাশে নদীতে লবণ পানির প্রচণ্ড চাপ থাকায় খরা মৌসুমে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়। প্রতি বছরের মতো এবারও ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের সর্বত্রই সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দুই লাখেরও বেশি মানুষ সুপেয় পানির জন্য হা-হুতাশ করছেন। এমনকি চায়ের দোকান, খাবার হোটেল, মিষ্টির দোকানে খরিদ্দারকে বিশুদ্ধ পানি দিতে না পেরে দোকানীরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। আবার চলতি রবি মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রধান ফসল তরমুজ, বোরো ক্ষেতেও সেচ দিতে না পারায় গাছ মরাসহ ফল ভালো বড় না হওয়ার কারণে অনেক কৃষক লোকসানে পড়েছেন।
এখানে কোথাও গভীর নলকুপ সফল না হওয়ায় রয়েছে অগভীর নলকুপ যা অধিকাংশ অকেজো। আবার কোন কোন নলকুপের পানিতে লবণ, আর্সেনিকযুক্ত এবং অতিরিক্ত আয়রন। এছাড়া এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত রেইন ওয়াটারও নেই। যে কারণে এলাকার মানুষের খাবার পানির একমাত্র ব্যবস্থা পুকুরের পানি ফিল্টার করে খাওয়া। কিন্তু অপ্রতুল পুকুরগুলোতে পানি স্বল্পতার কারণে প্রায় সকল ফিল্টার বা পিএসএফগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। এলাকার কতিপয় স্বচ্ছল ব্যক্তিরা বটিয়াঘাটা, খুলনাসহ বাহিরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কিনে জীবন ধারণ করছেন। আর মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে যে পুকুরে পানি আছে সেখান থেকে সরাসরি পানি নিয়ে পান করছেন। ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র অভাবের কারণে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার অনুপযোগী পানি খেয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। এতে অনেকেই ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগে ভুগছেন বলে জানা গেছে।
কালাবগি এলাকার রবিউল ইসলামসহ আরও অনেকে জানান, প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পথ নৌকায় যাওয়া আসা করে কৈলাশগঞ্জ এলাকা থেকে অতি কষ্টে বিশুদ্ধ পানি এনে খেতে হচ্ছে। আর যাদের ভাল অবস্থা টাকা পয়সা আছে তারা বাহিরে থেকে পানি কিনে খায়। আবার এলাকার কিছু অসহায় গরিব মানুষ সরাসরি পুকুরের পানি পান করছেন বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: খুলনা-চট্টগ্রামে জলবায়ু সহনশীল উদ্যোগ পর্যবেক্ষণে ইউএনডিপির শুভেচ্ছা দূত
দাকোপের হোটেল মালিক রচীন ইউএনবিকে বলেন, পানি সংকটের কারণে খরিদ্দারদের পানি দিতে পারছি না। পুকুরের পানি খাবার অনুপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে পেলেট ধোয়ার কাজ চলছে আর খরিদ্দারদের এক টাকারও বেশি দামে প্রতি লিটার পানি কিনে খেতে দিতে হচ্ছে।
তার মতো চা দোকানদার হাফিজুর রহমানও একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে চালনা পৌর মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস বলেন, সুপেয় পানি সংকট নিরসনে ৩২ পৌরসভা পানির প্রকল্পের আওতায় একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি পাইপ লাইনের কাজও। বর্তমানে সেটি পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে আর এই কাজ সম্পন্ন হলেই পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সংকট অনেকটা নিরসন হবে বলে মনে করেন তিনি ।
এ ব্যাপারে উপজেলা উপসহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বর্তমানে এখানে সুপেয় পানির আধারের মধ্যে ২ হাজার ৬৬৮টি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (ট্যাংকি), ২৭টি গভীর নলকূপ, ৫০০টি অগভীর নলকূপ সচল রয়েছে। এছাড়া সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের ২৩৪টি, উপকূলীয় জেলা সমুহে বৃষ্টির পানি সরবরাহ প্রকল্পের ৮৩৩টি ট্যাংকি, কমিউনিটি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ২১টি, ১৮টি পন্ড আল্টা ফিল্টার, আরও প্লান্ট ২টি ও ১৫টি ভ্যাসেল টাইপ পিএসএফের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি এনজিও কিছু পানির ট্যাংকি ও কয়েকটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্যান্ট নির্মাণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় রয়েছে অপ্রতুল। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানির জন্য রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংয়ের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু মার্চ হতে মে মাস পর্যন্ত প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এবং খরার কারণে পানির চাহিদা তীব্র থাকে। এ অঞ্চলে তরমুজ চাষের সময়ও ব্যাপক পানির সংকট দেখা দেয়। এই সময়ের জন্য ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে পুকুর, দিঘি খনন করা প্রয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন খাল খননের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, পানি সংকট সমাধানের জন্য এ অঞ্চলে আরও অনেক বেশি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (ট্যাংকি) ও পুকুর খনন করা দরকার। একই সঙ্গে পানির জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণও করতে হবে।
আরও পড়ুন: খুলনায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি
চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহে শরবত বিক্রেতাদের 'পোয়াবারো'
চুয়াডাঙ্গা জেলায় গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। তারপরও জীবিকার তাগিদে মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে। মরু অঞ্চলের মতো প্রখর তাপ আর ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের জনজীবন।
অসহ্য গরমে সামান্য প্রশান্তির খোঁজে মানুষ ছুটছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে। শরবতের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তার মোড়ে বসেছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। অর্থাৎ এই গরমে শরবত, জুস বা শরবত জাতীয় পানীয় বিক্রেতাদের পোয়াবারো। আগে যে বিক্রেতা দিনে ১ হাজার টাকার শরবত বিক্রি করতেন, সে এখন দিনে বিক্রি করছেন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। যে বিক্রেতা দিনে দুইশো গ্লাস বিভিন্ন শরবত বা জুস বিক্রি করতেন, তার বিক্রি বেড়ে এখন এক-দেড় হাজার গ্লাসে পৌঁছেছে।
প্রতিদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দিনের তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে এসব দোকানে সব বয়সের মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। লেবু শরবত বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবু, ট্যাং, বিট লবণ মিশ্রিত লেবু শরবত বিক্রি হচ্ছে নানা দামে। এক টুকরো লেবুর রস, বিট লবণ, ট্যাং আর ঠান্ডা পানি মিশ্রিত এক গ্লাস লেবু শরবত বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকায়। এছাড়া দুধের তৈরি মাঠার চাহিদাও তুঙ্গে এই গরমের দিনে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরসহ জেলার উপজেলা শহরগুলোতে শরবত বিক্রির ধুম। ১০ টাকা গ্লাস থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ফলের রসের তৈরি এসব শরবত কিনে পান করছেন পথচারীরা।
আরও পড়ুন: তাপপ্রবাহে আইসিডিডিআর,বি'র স্বাস্থ্যবিধি জারি
নিরাপদ সড়কের দাবিতে চোখে কালো কাপড় বেঁধে স্কুল শিক্ষার্থীর অবস্থান
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে নওগাঁয় চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী।
রবিবার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘণ্টাখানিক শহরের তাজের মোড় ও ব্রীজের মোড়ে তিনি এই অবস্থান করেন।
ওই শিক্ষার্থীর নাম ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া। তিনি নওগাঁ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এসময় শিক্ষার্থীর হাতে থাকা পোষ্টারে লেখা ছিল 'সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ চাই'। এসময় স্থানীয় পথচারীরাও এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের সড়ক দুর্ঘটনার দায় পুলিশ-বিআরটিএ এড়াতে পারে না: জাতীয় কমিটি
এসময় একই পথে যাওয়া পথচারী জুলফিকার রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা আসলে সড়কে কেউ নিরাপদ নয়। বাসা থেকে বের হলে সুস্থভাবে নিরাপদে বাড়িতে ফিরতে পারব কি না তার কোন নিশ্চয়তা নাই। একটি ছোট শিশু শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। সবারই উচিত নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হওয়া।
নিলুফার ইয়াসমিন, তানহা খাতুন নামের আরও দুই পথচারী বলেন, তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বাচ্চাটির এমন প্রতিবাদ ও দাবি খুবই যৌক্তিক। আমরা তার দাবিকে সমর্থন করছি। তাকে দেখে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। প্রতিদিনই সড়কে তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সবাই এক হয়ে আন্দোলন করতে হবে।
এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে বলেন, টিভি-পত্রিকাতে প্রতিদিন দেখি মৃত্যুর খবর। তার অধিকাংশই সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। রাস্তায় বের হলে বা স্কুলে যাওয়ার পথে আবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারব কি না তার কোন নিশ্চয়তা নাই। প্রতিদিন এত মৃত্যুর খবর দেখে খুবই কষ্ট পাই, ভয়ও লাগে।
ছোঁয়া আরও বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে নওগাঁ-সড়কের সাহাপুর নামক স্থানে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় এক বাবা-মা। আর বেঁচে যায় তাদের ৫ বছর বয়সী এক শিশু। এখন ভাবুন সেই শিশুটির কি হবে। শিশুটি বাবা-মার আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল সারা জীবনের জন্য। আমি চাই নিরাপদ সড়ক। নিরাপদে সড়কে চলাফেরা করতে চাই। সরকারের কাছে আকুল আবেদন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা: ১৮ মাসের ইয়াসিন বাবার পর মাকে হারালো, মৃত্যু বেড়ে ১৫
ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার বাবা সঙ্গীত শিল্পী খাদেমুল ইসলাম ক্যাপ্টেন বলেন, গত ১৮ এপ্রিল সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা ব্রিজ এলাকায় জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়। পাগল হাসান আমার সহকর্মী ও বন্ধু ছিল। এর আগে ১৭ এপ্রিল নওগাঁ-সান্তাহার সড়কের সাহাপুরের নামক স্থানে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় এনামুল হক ও বৃষ্টি আক্তার নামের দম্পত্তি। আর বেঁচে যায় তাদের ৫ বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম। এই ঘটনাগুলো আমার মেয়ের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটে যায়। মেয়েটি আমার এত মৃত্যুর খবর প্রতিদিন শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। যার কারণেই সে বলেছে, আব্বু আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই। মেয়ের এই মহৎ ও যৌক্তিক চাওয়াকে না বলতে পারিনি। যার কারণে পুরো সমর্থন জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আজ আমার ছোট্ট মেয়েটা একাই যেভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবি করছে ঠিক সেভাবে দেশের সবাই যদি এমন করে সচেতন হতো ও দাবিগুলো তুলে ধরতো, তাহলে প্রতিদিন এমন প্রাণহানির মতো ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আসতো। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, সবাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন চাই। আর তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ, যানবাহন চালক ও মালিকদেরকে একসঙ্গে কাজ করার আহব্বান জানাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি এ এস এম রায়হান আলম বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। পাশাপাশি যানবাহন চালক ও মালিকদের সচেতনও করছি। শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার এমন উদ্যোগ আমাদের অনেক মুগ্ধ করেছে। এমন দাবি ও সচেতনতাবোধ যদি সবার মাঝে জাগ্রত হতো তবে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব বলে মনে করি।
আরও পড়ুন: গুলিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী নিহত, স্বামী আহত
তাপপ্রবাহ: হিটস্ট্রোকে আরও ৩ জনের মৃত্যু
মেহেরপুর, নরসিংদী ও সিলেটে রেকর্ড পরিমাণ তাপপ্রবাহের কারণে রবিবার তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশ উচ্চ তাপমাত্রার কবরে পড়ায় এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষনের আলোকে এ নিয়ে গত দুই দিনে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হলো।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় রবিবার হিটস্ট্রোকে শিল্পী খাতুন (৪৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার রুইরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহেরের স্ত্রী শিল্পী।
তার ছেলে রওনক হোসেন জানান, সকালে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় তার মা হঠাৎ অসুস্থবোধ করেন, যদিও তিনি সুস্থ ছিলেন।
তিনি বলেন, তাকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলাকালে তিনি মারা যান।
নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শাফকাত জামিল ইবান নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি মাধবাদীর ভগীরথপুর গ্রামের মৃত জাকারিয়ার ছেলে এবং একজন পোশাক ব্যবসায়ী ছিলেন।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাহমুদুল কবির বাশার জানান, প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোক বলে মনে হলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: খুলনায় বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি
এদিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় হিট স্ট্রোকে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে দক্ষিণ সুরমা পুলিশ বক্সের সামনে তার মৃত্যু হয়।
দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রিকশাচালক আবু হানিফ পুলিশ বক্সের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী হিটস্ট্রোকে মৃত্যু কমিয়ে আনা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
ডা. সৌমিত্র আরও বলেন, ‘সাধারণ স্ট্রোক বা অন্য কোনও কারণে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।’
তবে তার লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি প্রবল তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। শ্রীমঙ্গল ও চাঁদপুর জেলা এবং রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে প্রচণ্ড গরমের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআরবি'র পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে 'অতি তীব্র' তাপপ্রবাহ বইছে
চরফ্যাশনে পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় পুকুরের পানিতে ডুবে মো. বায়েজিদ(৬) ও মারিয়া সুলতানা (৪) নামে দুই ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে শশিভূষণ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের ভাসানচর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া শিশু দুটি ভাসানচর গ্রামের মো. রাসেল মিয়ার সন্তান।
শিশু দুটির মামা ফয়েজ উল্লাহ জানান, দুপুরের দিকে বায়েজিদ ও মারিয়া বাড়ির পাশের পুকুরে গোসল করতে গেলে তারা দুজনই পানিতে ডুবে যায়। তাদের দুজনকে বাড়িতে না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে ৪ বছরের শিশু মারিয়ার জুতা ভাসতে দেখে পুকুরে নেমে খুঁজতে থাকলে শিশু বায়েজিদ ও মারিয়ার লাশ ভেসে উঠে।
আরও পড়ুন: ফেনীতে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ, লাশের সঙ্গে ডাক্তার অবরুদ্ধ
চরফ্যাশনের শশিভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনা জানার পরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যদের পাঠানো হয়। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে অস্বাভাবিক কোনো কিছু পায় নি। পরে শিশুদের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজশাহীতে পুকুরে ডুবে ২ বছরের শিশু মৃত্যু