বিজ্ঞান-এবং-উদ্ভাবন
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত কে এই জামাল নজরুল
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কৃতিত্বস্বরূপ প্রতি বছরের মতো এবারও সাতজনকে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই সাতজনের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম।
২০২৫ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন জামাল নজরুল।
কে এই অধ্যাপক জামাল নজরুল
শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবীর প্রথম সারির পদার্থবিজ্ঞানীদের সঙ্গে সমস্বরে উচ্চারিত হয় জামাল নজরুলের নাম। বলা হয়ে থাকে, মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানে জামাল নজরুলের মতো অবদান এ দেশের আর কোনো বিজ্ঞানীর নেই।
১৯৩৯ সালে বিচারক বাবার কর্মস্থল ঝিনাইদহে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় কলকাতায়। সেখান থেকে ফিরে কিছুদিন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান জামাল। সেখানে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি।
এই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ই বদলে দিয়েছে জামালের জীবনকে। বিশ্বখ্যাত এই বিদ্যাপীঠে গণিত ট্রাইপজের তিন বছরের কোর্স দুই বছরে শেষ করেন তিনি। গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডির পাশাপাশি লাভ করেন ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি। বলা বাহুল্য, বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকজন বিজ্ঞানী কেবল এই ডিগ্রি অর্জনের সম্মান লাভ করেছেন।
জামাল নজরুলের শিক্ষক, বন্ধু আর সহপাঠীদের নাম শুনলে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যেতে পারে কারও কারও।
কেমব্রিজে নজরুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন বিশ্বখ্যাত পদার্থ ও মাহাকাশবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। এছাড়া শিক্ষক ফ্রিম্যান ডাইসন, পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান, ভারতের সুব্রহ্মনিয়াম চন্দ্রশেখর, পাকিস্তানের আবদুস সালাম, ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও অমিয় বাগচী, সহপাঠী জয়ন্ত নারলিকার, ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জিম মার্লিস—এরা সবাই ছিলেন জামাল নজরুলের ঘনিষ্ঠজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৭ জন, প্রজ্ঞাপন জারি
১৯৮৩ সালে জামাল নজরুলের বিখ্যাত গবেষণা নিবন্ধ দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স প্রকাশিত হলে কেমব্রিজ-পাড়ায় রীতিমতো সাড়া পড়ে যায়। এই গবেষণাকে বলা হয় আইনস্টাইন-পরবর্তী ধ্রুপদী ধারার সবচেয়ে সফল গবেষণার একটি।
কেমব্রিজে জামাল নজরুলের যখন জয় জয়কার, ঠিক তখনই এক মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। বিদেশে তিন দশকের বিলাসী জীবন ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন প্রখ্যাত এ বিজ্ঞানী।
১৯৮৪ থেকে ২০১৩ সাল, জীবনের শেষ ২৯ বছর দেশের মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞান সাধনা আর অধ্যাপনায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার হাতেই গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট। ১৯৮৭ সালে এই বিভাগ উদ্বোধনে বাংলাদেশে এসেছিলেন নজরুলের প্রিয়জন পাকিস্তানের নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক আব্দুস সালাম।
২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণের পরও ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে জামাল নজরুল আমৃত্যু সংযুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে।
বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের স্বর্ণপদক, একুশে পদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কারের পাশাপাশি এবার স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এ মহান বিজ্ঞানীর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন দেশের প্রতি উদার মমত্ববোধ আর দেশের মানুষের থেকে পাওয়া আকুণ্ঠ ভালোবাসা।
৩৩ দিন আগে
নিজের তৈরি উড়োজাহাজ নিয়ে উড়াল দিলেন জুলহাস
উড়োজাহাজ তৈরি করে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মানিকগঞ্জের ষাইটঘর তেওতা এলাকার জুলহাস। নিজের তৈরি করা আরসি বিমানে আকাশে উড়াল দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই যুবক।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসক ড. মানেয়ার হোসেন মোল্লার উপস্থিতিতে যমুনার চরে বিমানটি নিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতায় ওড়েন জুলহাস। এ সময় বিরল এই ঘটনার সাক্ষী হতে সেখানে ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ।
জুলহাসের বাড়ি দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায় হলেও নদীভাঙনে সব হারিয়ে তার পরিবার বর্তমানে শিবালয় উপজেলার ষাইটগর তেওতা এলাকায় বসবাস করছে। ৬ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে জুলহাস পঞ্চম।
জুলহাস ২০১৪ সালে জিয়নপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করলেও অর্থাভাবে পড়ালেখা আর চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি। ২৮ বছরের এই তরুণ বর্তমানে ঢাকায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করছেন।
৪০ দিন আগে
স্টারলিংকের ২৩ ইন্টারনেট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ
যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ কোম্পানি স্পেসএক্স ২৩টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) স্যাটেলাইটগুলো উৎক্ষেপণ করা হয়।
স্পেসএক্স জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটে করে স্যাটেলাইটগুলো উৎক্ষেপণ করা হয়।
এটি ছিল ফ্যালকন ৯ রকেটের ৪৫০তম মিশন।
আরও পড়ুন: পৃথিবীতে ফিরছেন মহাকাশে আটকে পড়া সেই দুই নভোচারী
স্পেসএক্স পরে ২৩টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এসব স্যাটেলাইটের মধ্যে ১৩টির ডিরেক্ট টু কল সক্ষমতা রয়েছে।
স্পেসএক্সের মতে, স্টারলিংক এমন জায়গাগুলোতে উচ্চ-গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করবে যেখানে অ্যাক্সেস অনির্ভরযোগ্য, ব্যয়বহুল বা সম্পূর্ণ অকার্যকর।
৫১ দিন আগে
ছোটদের বাংলা ভাষা শেখার ১০টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ
বর্তমান প্রজন্মের শৈশব কেটেছে বিকশিত প্রযুক্তির সান্নিধ্যে। সেই ধারাবাহিকতায় এখন শিশুদেরও সময় কাটছে ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের সংস্পর্শে। তাই ই-বুক, ভিডিও ও গেমের মাধ্যমে প্রথম হাতেখড়ি এখন আর অবাক ব্যাপার নয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিশুদের বাংলা বর্ণমালা ও শব্দ শেখাটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব। ইতোমধ্যে অ্যাপেল ও অ্যান্ড্রয়ডের ফোনগুলোতে বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে, যেগুলোর শুধুমাত্র শিশুদের সহজপাঠের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। চলুন, সেগুলোর মধ্য থেকে বাংলা ভাষা শেখার সেরা ১০টি ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
শিশুদের জন্য বিনামূল্যে বাংলা ভাষা শেখার সেরা ১০টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ
বাংলা ভাষা শেখার জন্য শিশুদের উপযোগী গুগল প্লে-স্টোরের ১০টি জনপ্রিয় অ্যাপস
কিন্ডারগার্টেন-শিশু শিক্ষা (Kindergarten - শিশু শিক্ষা)
গুগল প্লে-স্টোরে কানেক্টেড সফ্টওয়্যার্স লিমিটেডের তৈরি এই অ্যাপটির রেটিং ৪.৫। ৩১ মেগাবাইট (এমবি) সাইজের ‘Kindergarten - শিশু শিক্ষা’ অ্যাপে বাংলা অক্ষরের পাশাপাশি সংখ্যা, ঋতু, মাস ও দিনের নামও শেখানো হয়।
সুন্দর সব ছবির পাশে স্পষ্ট বর্ণে পড়া যায় প্রাণী, পাখি, মাছ, নদী, ফল, ও ফুলের নাম। মজার কিছু গেমের মধ্য দিয়ে সাজানো ছোট ছোট যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগের অংক। এছাড়া আরও কিছু আকর্ষণীয় গেম রয়েছে পারিবারিক সম্পর্কের নাম ও নতুন নতুন শব্দ নিয়ে।
আরো পড়ুন: আইফোন চুরি প্রতিরোধে অ্যাপলের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা
মাতৃভাষা বাংলা ছাড়াও এখানে ইংরেজি ও আরবী বর্ণমালা শেখারও ব্যবস্থা রয়েছে।ডাউনলোড লিংক:
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.connected.kindergarten
হাতেখড়ি-বাংলা অ্যালফাবেট (Hatekhori - Bangla Alphabet)
অফলাইনে ব্যবহারের ফিচার বিশিষ্ট এই অ্যাপটির জন্য প্রয়োজন বেশ বড় জায়গা; ৭৩ এমবি। এখন পর্যন্ত ৪.৪ রেটিং প্রাপ্ত অ্যাপটি বানিয়েছে সূর্যমুখী লিমিটেড। এর বিশেষত্ব হচ্ছে অক্ষর চেনার সঙ্গে সঙ্গে এখানে শব্দ গঠন ও বানানও শেখা যায়। আঙ্গুল দিয়ে স্ক্রিনের গায়ে লেখার ব্যবস্থা থাকায় এটি লিখন প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
প্রি-স্কুল বাচ্চাদের জন্য যথেষ্ট সহজ করে তৈরি করায় তারা নিমেষেই নতুন শব্দ বলতে ও লিখতে শুরু করে। এই মৌলিক দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হওয়ায় ‘Hatekhori (Bangla Alphabet)’ বাচ্চাদের পাশাপাশি অভিভাবকদের কাছেও এটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ডাউনলোড লিংক:
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.sm.banglaalphabet&hl=en&gl=us
আরো পড়ুন:
বাংলা অ্যালফাবেট-শিশু শিক্ষা (Bangla Alphabet - শিশু শিক্ষা)
স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ, ধারাপাত, ও ছড়া শেখার জন্য আদর্শ এই অ্যাপের নির্মাতা বাইনারি সফ্টওয়্যার। এর ৩০ এমবি জায়গার মধ্যে একীভূত করা হয়েছে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার বিচিত্র উপাদান।
প্রতিটি বর্ণের উচ্চারণের জন্য এতে আছে কার্টুন ছবি ও মজার অডিও। সহজবোধ্যভাবে স্থান সঙ্কুলান হয়েছে মানবদেহের পরিচিতি, পশুপাখির নাম ও জাতীয় দিবসের মতো সাধারণ জ্ঞানের। কুইজ বা প্রশ্নোত্তর ধারা ক্রমান্বয়ে শিশুর শেখাকে অদম্য উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনায় পরিণত করে।
সাবলীল ইন্টারফেস এবং বিভিন্ন ফাংশনগুলোর কার্যকারিতার বিচারে রিভিউদাতাদের কাছ থেকে ‘Bangla Alphabet-শিশু শিক্ষা’ অ্যাপটি ৪.৪ রেটিং অর্জন করেছে।
ডাউনলোড লিংক:
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.binary.banglaalphabet&hl=en
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে যে প্রযুক্তিগত দক্ষতাগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে
বর্ণমালা-অ্যালফাবেট লার্নিং (বর্ণমালা - Alphabet Learning)
বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা এবং গণনা শেখার জন্য এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। ২৭ এমবির এই অ্যাপটি তৈরি করেছে ড্রিম জার্নি। বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষাতে বর্ণ চেনার পাশাপাশি আছে ছবির মাধ্যমে বাক্য গঠনের অনুশীলনের সুবিধা। আরও আছে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যা গণনা, রঙ ও ঋতুর নাম, এবং ৭ দিন ও ১২ মাসের নাম। এগুলোর প্রতিটির সঙ্গে রয়েছে স্পষ্ট অডিও। এমনকি সহজ ভাবে চিঠি লেখার অনুশীলনেরও ব্যবস্থা আছে। ব্যবহারকারিদের পর্যালোচনায় ‘বর্ণমালা - Alphabet Learning’ অ্যাপটির বর্তমান রেটিং ৪.৩।
ডাউনলোড লিংক:
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.dreamjourney.bornomala&hl=en-US
কিডস লার্ন বাংলা অ্যালফাবেট (Kids Learn Bangla Alphabet)
বাংলা লেখায় দক্ষতা অর্জনের আরও একটি নির্ভরযোগ্য উপায় এই ডিজিটাল মাধ্যমটি। এতে আঙুলকে চকের মতো করে অক্ষরের উপর হাত ঘুরানো যায় এবং ডাস্টারের মতো তা আবার মুছে ফেলা যায়।
টপঅফস্টেক সফ্টওয়্যার লিমিটেডের এই পরিষেবাটিতে প্রতিটি বর্ণের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ৪টি ছবি, শব্দ ও অডিও দেওয়া থাকে। শিশুরা আনন্দের সঙ্গে বর্ণ দিয়ে ছবি ও ছবি দিয়ে বর্ণ খোঁজার খেলায় মেতে ওঠে।
আরো পড়ুন: ভিডিও গেম খেলে অর্থ উপার্জনের উপায়
এখানে ধারাপাত এবং ছোট ছোট গাণিতিক হিসেব নিকেষ শেখারও ব্যবস্থা আছে। মানবদেহের পরিচিতি, পরিবেশ শিক্ষা (পাখি, পোকামাকড়, জীবজন্তু)-এর সঙ্গে স্থান পেয়েছে স্মৃতিশক্তি বিকাশের দারুণ কিছু গেম।
এর নজরকাড়া অ্যানিমেশন এবং সহজাত ইন্টারফেসের কারণে অ্যাপটির সঙ্গে নিমেষেই প্রি-স্কুল বাচ্চারা অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। রিভিউদাতাদের নিকট থেকে ৪.২ রেটিং প্রাপ্ত ‘Kids Learn Bangla Alphabet’ অ্যাপের সাইজ ৩০ এমবি।
ডাউনলোড লিংক:
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.tos.bnalphabet&hl=en
৫৩ দিন আগে
পৃথিবীতে ফিরছেন মহাকাশে আটকে পড়া সেই দুই নভোচারী
দীর্ঘ আট মাস পর পৃথিবীতে ফিরতে চলেছেন মহাকাশে আটকেপড়া নাসার আলোচিত দুই নভোচারী । আগামী মার্চের শেষ কিংবা এপ্রিলের শুরুতে তাদের ফিরে আসার কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্কের তৎপরতায় মার্চের মাঝামাঝিতেই তাদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ইলন মাস্কের রকেট কোম্পানি স্পেসএক্স এক বিবৃতিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। আটকেপড়া দুই নভোচারীর নাম বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, এতে মহাকাশ স্টেশনে আটকে থাকার সময় কয়েক সপ্তাহ কমে আসবে ওই দুই নভোচারীর। গত সপ্তাহে মহাকাশে অবস্থানের আট মাস পূর্ণ করেছেন তারা।
আরও পড়ুন: নাসার স্পেসএক্স মিশনের নভোচারীরা পৃথিবীতে ফিরছেন
গত বছরের জুন মাসে বোয়িং স্টারলাইনারের তৈরি একটি ক্যাপসুলে মহাকাশে যান নাসার দুই নভোচারী। ওই বছরেরে ২২ জুন তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা থাকলেও মহাকাশযানটির হিলিয়াম গ্যাস লিক হওয়ার কারণে তাদের ফিরতি যাত্রা স্থগিত হয়ে যায়।
নাসা সেই সময় জানায়, তাদের ফিরতে আট মাস সময় লাগতে পারে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। মহাকাশ স্টেশনে তাদের জীবন কেমন কাটছে তা নিয়ে জানতে আগ্রহী ছিল সারা বিশ্বের মানুষ।
নাসার বাণিজ্যিক ক্রুর প্রোগ্রাম ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মানুষের মহাকাশযাত্রা অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ।’
এদিকে, ক্ষমতা গ্রহণের পরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং স্পেসএক্সের ইলন মাস্ক নভোচারীদের ফিরিয়ে আনার গতি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নাসার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন করে নভোচারীদের মহাকাশে পাঠানোর আগেই আটকে থাকা দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন তারা। নাসা জানায়, উইলমোর এবং উইলিয়ামসকে যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুতগতিতে কাজ করছে তারা।
নাসার তথ্যমতে, মহাকাশে যাত্রার শুরু থেকেই বোয়িং স্টারলাইনার ক্যাপসুলটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে তারা ওই নভোযানটি ফিরিয়ে এনে স্পেসএক্সের একটি নতুন ক্যাপসুল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী জুন মাসে তাদের ফিরে আসার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: মহাকাশ স্টেশনে ৬ মাস অবস্থানের পর ফিরলেন ৩ চীনা নভোচারী
তবে স্পেসএক্স জানিয়েছে নতুন কোনো ক্যাপসুল তারা এখনি উৎক্ষেপন করবেন না। তাদের ধারণা সফলভাবে যাত্রা পরিচালনা করতে আরো কারিগরী প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে।
ফলে স্পেসএক্সের পুরাতন ক্যাপসুলেই এবার নভোচারীদের পাঠানোর কথা জানিয়েছে নাসা। আগামী ১২ মার্চ উৎক্ষেপণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ক্রুতে দুজন নাসা নভোচারী, একজন জাপানি এবং একজন রাশিয়ান নভোচারী অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
৬১ দিন আগে
ওপেনএআই কিনতে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার প্রস্তাব মাস্কের
টুইটারের (বর্তমান এক্স) পর এবার চ্যাপজিপিটির মূল প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই কেনার প্রস্তাব দিয়েছেন টেসলার প্রধান নির্বাহী ও মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রথম সারির এই প্রতিষ্ঠানটি কিনতে বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছেন মাস্কের নেতৃত্বাধীন একটি বিনিয়োগকারী দল।
ওপেনএআইয়ের সমস্ত সম্পত্তি কিনে নিতে ৯ হাজার ৭৪০ কোটি ডলার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছেন মাস্কের আইনজীবী মার্ক টোবেরফ।
তবে লোভনীয় এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম আল্টম্যান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ও আল্টম্যানের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার উৎকর্ষের এই যুগে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান পারস্পরিক টানাপোড়েনের মধ্যে মাস্কের এই প্রস্তাব নতুন উত্তেজনার জন্ম দিল।
আরও পড়ুন: চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে ভারতীয় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো
এদিকে, মাস্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তারই মালিকানাধীন এক্স (সাবেক টুইটার) কিনে নেওয়ার পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছেন আল্টম্যান। এক্স কিনতে ৯৭৪ কোটি ডলার দাম হাঁকিয়েছেন তিনি।
এক এক্স পোস্টে মাস্কের প্রস্তাব ফিরিয়ে তার উদ্দেশে এই প্রযুক্তিবিদ বলেন, ‘ধন্যবাদ! আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান বিক্রি করব না। তবে আপনি চাইলে আমরা টুইটার কিনে নিতে পারি।’
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রারম্ভিক এই যুগে এআইভিত্তিক বিভিন্ন টুলসের একটি বড় বাজার ইতোমধ্যে গড়ে ফেলেছে ওপেনএআই। ফলে সারা বিশ্ব থেকেই ব্যাপক বিনিয়োগ আকর্ষণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রযুক্তি খাতে, বিশেষ করে এআইতে ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানটি যে আধিপত্য করবে, তা সবারই জানা।
ইলন ও আল্টম্যান উভয়েই ওপেনএআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৫ সালে প্রাথমিকভাবে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করে ওপেনএআই। এরপর ২০১৮ সালে কোম্পানিটি থেকে বের হয়ে যান মাস্ক। তবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চালিয়ে যান আল্টম্যান। পরে ওপেনএআইকে লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত করার চেষ্টা শুরু করেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার হাত ধরে আসে চ্যাটজিপিটি।
ওপেনএআইকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে আল্টম্যানের এই সিদ্ধান্তের প্রতি অসম্মতি জানান মাস্ক। সে সময় তিনি বলেন, ওপেনএআই প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল মানবতার উপকারে এআই তৈরি করা, কিন্তু সেই নীতি থেকে সরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে ওপেনএআইয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নতুন বিনিয়োগ সংগ্রহের জন্যই এই নীতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পদক্ষেপ উন্নত এআই প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তারা।
আরও পড়ুন: ডিপসিক: এআইয়ের দুনিয়ায় চ্যাটজিপিটি ও জেমিনির লড়াকু প্রতিপক্ষ
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার জগতে মাস্ক পুনরায় প্রবেশ করেন ২০২৩ সালে। এক্সএআই নামে একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আসেন তিনি।
সম্প্রতি ওপেনএআইয়ের স্বত্ব কিনে নিতে মাস্কের কোম্পানি এক্সএআই ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ব্যারন ক্যাপিটাল গ্রুপ ও ভ্যালর ম্যানেজমেন্টের মতো প্রতিষ্ঠান।
আল্টম্যানকে প্রস্তাব দিয়ে এক বিবৃতিতে মাস্ক বলেছেন, ওপেনএআইকে তার পুরনো অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটিকে আবারও একটি ওপেন-সোর্স ও নিরাপত্তাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
অবশ্য মাস্কে যে দাম হাঁকিয়েছেন তা ওপেনএআইয়ের সর্বশেষ বাজারমূল্যের তুলনায় অনেক কম। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সর্বশেষ তহবিল সংগ্রহ করেছিল ওপেনএআই। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির বাজারমূল্য ছিল ১৫৭ বিলিয়ন ডলার। তবে বর্তমানে এর মূল্য ৩০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবকাঠামো তৈরির জন্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওপেনএআই। এই প্রকল্পে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওরাকল। এছাড়া প্রকল্পটির অপর দুই অংশীদার হিসেবে যুক্ত হয়েছে জাপানের একটি বিনিয়োগকারী সংস্থা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি সার্বভৌম তহবিল।
‘দ্য স্টারগেট প্রজেক্ট’ নামে পরিচিত এই উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এই প্রকল্পকে ‘ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এআই অবকাঠামো প্রকল্প’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টাদের একজন হওয়া সত্ত্বেও এই প্রকল্পে ঘোষিত বিনিয়োগের অর্থ বাস্তবে এখনও নিশ্চিত হয়নি বলে দাবি করেন মাস্ক। তবে তার এই দাবির পক্ষে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের অক্টোবরে টুইটার কিনে নেন ইলন মাস্ক। পরবর্তীতে মাইক্রোব্লগিং এই প্ল্যাটফর্মের নাম পরিবর্তন করে তিনি এর নতুন নাম দেন ‘এক্স’।
৬১ দিন আগে
অভ্র কি-বোর্ড: বাংলা ভাষার ডিজিটাল রূপান্তরে মেহেদী হাসান ও নেপথ্য কুশলীরা
নিরঙ্কুশ স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ভাষা কণ্ঠে ধারনের সময় নিউরনের প্রতিটি অনুরণন মিলিত হয় ঐকতানে। ইন্টারনেটে প্রথম বাংলা অক্ষরটি টাইপ করার সময় ঠিক এই অনুভূতির সঞ্চার হয়েছিল প্রত্যেক বাংলা ভাষাভাষি মানুষের হৃদয়ে। সেখানে অভ্র শব্দটি যেন ইন্টারনেটের নিঃসীম জগতে এক টুকরো বাংলাদেশের অবিরাম প্রতিধ্বনি। ডিজিটাল বাংলা লেখনীর সেই অভ্র কি-বোর্ড এবং তার নেপথ্যের কুশলীদের নিয়েই আজকের প্রযুক্তি কড়চা। চলুন, ঘুরে আসা যাক অভ্র সফ্টওয়্যারের ক্রমবিকাশের মঞ্চ থেকে, জেনে নেওয়া যাক কারিগরদের স্বপ্নগাঁথা।
সাবলীল বাংলা টাইপ ও একটি স্বপ্নের অঙ্কুরিদ্গম
২০০৩ সালের একুশে বইমেলায় বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স বায়োস নামক স্টলে প্রদর্শনী করা হয়েছিল ‘বাংলা লিনাক্স’-এর। কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম (ওএস)টির মেনু ও ফাইলের নামসহ সবকিছুই ছিল বাংলাতে। কতক তরুণদের এমন অভাবনীয় উদ্যোগের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিকটি ছিল পুরোপুরি বাংলায় বানানো ওয়েবসাইট।
এসব দেখে আর সব প্রযুক্তিপ্রেমিদের মতো যারপরনাই অবাক হয়েছিলেন মেহেদী হাসান খানও। স্কুল জীবন থেকেই কম্পিউটার নিয়ে তার অগাধ আগ্রহ। বিশেষ করে প্রোগ্রামিংয়ের বিষয়গুলো তার মধ্যে ভীষণ উদ্দীপনা তৈরি করে। এগুলোর উপর তার বেশ দখলও ছিল। তাই বাংলা লিনাক্সের ইউনিবাংলা নামের ফন্টটি যে ইউনিকোড সমর্থিত, তা বুঝতে তার একদমি সময় লাগেনি।
বাসায় ফিরে মেহেদী ফন্টটি তার কম্পিউটারে ইন্সটল করে দেখলেন যে, এতে কঠিন যুক্তাক্ষরও লেখা যাচ্ছে। কিন্তু অক্ষরের তালিকা থেকে মাউস দিয়ে ক্লিক করে অক্ষর বসাতে হচ্ছে, যেটি বেশ ঝামেলার। তখনি সহসা মাথায় আসে একটা কি-বোর্ড লে-আউট থাকলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যেতো। ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো ইন্টারনেটে লে-আউটের অনুসন্ধান। কিন্তু কোথাও কিছু পাওয়া গেলো না। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এই লে-আউট বানানোর কাজটা তিনিই করবেন।
আরো পড়ুন: একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
অভ্র কি-বোর্ডের পথচলা
ঢাকার আইডিয়াল স্কুল এবং নটরডেম কলেজ পাশের পর মেহেদী পড়াশোনা করছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। এরপরেও তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল তদানিন্তন বহুল প্রচলিত প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট-এ। মেহেদীর উদ্দেশ্য ছিল লিনাক্সের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত উইন্ডোজ ও এস-এও কি-বোর্ড ইন্টারফেসটি কাজ করবে। সে অনুযায়ী পুরোদমে শুরু হয়ে গেলো কোড লেখার কাজ।
অতঃপর ২০০৩ সালের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ-এ প্রকাশিত হলো ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার অভ্রের প্রথম সংস্করণ। এখানে প্রথম লে-আউট হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছিল জনপ্রিয় বিজয় বাংলা কি-বোর্ড। কিন্তু এতে টাইপ করার সময় কোন ‘কী’তে কোন বর্ণ রয়েছে তা মনে রাখতে হতো। বিশেষ করে একদম নতুনদের জন্য এটি ছিলো বেশ বিড়ম্বনার। এই সমস্যা দূর করতে মেহেদী নিজেই বানিয়ে ফেললেন অভ্র ইজি।
সফ্টওয়্যার সহজে এবং বিনামূল্যে ডাউনলোড করার জন্য তৈরি করা হলো পরিপূর্ণ একটি ওয়েবসাইট; নাম ওমিক্রনল্যাব। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল অনলাইন ফোরাম, যেখানে অভ্র নিয়ে চলতো ব্যাপক আলোচনা। ব্যবহারকারীরা অভ্র সম্পর্কে বিভিন্ন কারিগরি প্রশ্ন করতেন এবং বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি পেশ করে প্রয়োজনীয় উন্নয়নের জন্য মতামত দিতেন।
পরবর্তীতে এই অভ্র উন্নয়নের কাজে আরও কিছু প্রোগ্রামার যুক্ত হন। এদের মধ্যে ছিলেন রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম, রায়ান কামাল, শাবাব মুস্তাফা, নিপন হক, ওমর ওসমান, ও সারিম খান।
আরো পড়ুন: নতুন স্মার্টফোন কিনছেন, জেনে নিন সেটি আসলেই নতুন কিনা!
সফ্টওয়্যার বিকাশের ধারাবাহিকতায় অভ্রতে যুক্ত হয় ন্যাশনাল, প্রভা, ও মুনীর অপটিমার মতো নতুন নতুন লে-আউট। ফোনেটিক লে-আউট আসার পর আরও সহজ হয়ে ওঠে বাংলা টাইপিং। ইংরেজিতে ‘ami banglay gan gai’ লিখলেই বাংলা বর্ণমালায় রূপান্তরিত হয়ে স্ক্রিনে প্রদর্শিত হতো ‘আমি বাংলায় গান গাই’।
বিনামূল্যের পরিষেবার অমূল্য হয়ে ওঠা
পরিকল্পনা থেকে শুরু করে রিলিজ অতঃপর উত্তরোত্তর বিকাশে অভ্রকে কখনোই বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে দেখা হয়নি। অথচ মেহেদী নিয়মিত সফ্টওয়্যারের রিলিজ লগ লিখতেন, প্রতিবার জুড়ে দিতেন ক্রমিক ভার্সন নম্বর। একই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য লেখা হতো বিশাল বিশাল ইউজার ম্যানুয়াল। সফ্টওয়্যারটি বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হলেও সেবাটিকে পেশাদার রূপ দিতে তিনি এতটুকু কার্পণ্য করেননি। ওমিক্রনল্যাবের ফোরামের দৌলতে ব্যবহারকারীদের অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন যে, এর পেছনে হয়ত কোনো বিদেশি সফ্টওয়্যার কোম্পানি রয়েছে।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হওয়ায় অভ্রের নামের সঙ্গে কোনো ধরনের পাইরেসি জড়িয়ে পড়ার অবকাশ ছিল না। পরবর্তীতে ওপেনসোর্স করে দেওয়াতে এটি কপিরাইটের জটিলতা থেকেও মুক্ত ছিল। সুতরাং সর্বাঙ্গীনভাবে একটি আইনসিদ্ধ পেশাদার সফ্টওয়্যারে পরিণত হয়েছিল অভ্র। এর ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত’ স্লোগানের মতো এটি আক্ষরিক অর্থেই জনসাধারণের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা তৈরি করেছিল। পরে পরবর্তীতে মেহেদী তার এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অথচ ডাক্তারি পড়াশোনার চাপে কখনোই থেমে থাকেনি অভ্রর উন্নয়ন।
আরো পড়ুন: শিশুদের টিকটক আসক্তি: ঝুঁকি থেকে যেভাবে বাঁচবেন
বর্তমানে বিশ্বের যে প্রান্তেই বাংলা ভাষাভাষি জনগোষ্ঠির উপস্থিতি বিদ্যমান, সেখানেই রয়েছে অভ্রের পদচারণা। ২ দশকেরও বেশি সময় অতিক্রমের পরে এখনও এটি প্রথম দিনের মতোই বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।
৬২ দিন আগে
লেখকদের সৃজনশীলতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব: ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা
বর্তমান বিশ্বের সব থেকে আলোচিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই মানুষেরই তৈরি। অথচ ক্রমবিকাশের চরম মহূর্তে সৃষ্টি নিজেই যেন তার স্রষ্টাকে প্রতিস্থাপন করতে চলেছে। মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তাকে লেখ্য রূপ দেয়ার শৈলী বিগত শতাব্দীর শেষ লগ্নেও ব্যক্তির বিশেষত্বকে অনন্য করে তুলতো। কিন্তু বর্তমানে চোখের পলকে অবলীলায় লিখতে পারা এআই সেই বিশেষত্বের নেপথ্যে যেন কতক শর্ত জুড়ে দিয়েছে। লিখিত সৃষ্টিকর্মে এআইয়ের ব্যবহার বিচিত্রভাবে প্রভাবিত করছে সাংবাদিক ও লেখক সমাজকে। যার ধারাবাহিকতায় প্রশ্ন উঠেছে তথ্যবহুল প্রতিবেদন বা অনবদ্য রচনার জন্য নতুন মাপকাঠি নিরুপণের। চলুন, লেখকদের সৃজনশীল কাজে এআইয়ের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাবের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা যাক।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি লেখকদের সৃজনশীলতার পরিপন্থী
একটি লেখার পটভূমি থেকে শুরু করে প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এআইয়ের যুগে এখন সেই পরিসরটি অনেক ছোট হয়ে এসেছে। বিশ্বের নামকরা এআই টুলগুলোর মধ্যে রয়েছে চ্যাটজিপিটি, গ্রামার্লি, জেমিনি, জ্যাস্পার, এবং ক্লড। সম্প্রতি সর্বাধিক প্রসিদ্ধ চ্যাটজিপিটির সঙ্গে প্রথম সারিতে থেকে অন্য সব এআইকে টেক্কা দিচ্ছে চীনের ডিপসিক। এগুলোর মাধ্যমে সময়সাপেক্ষ কাজগুলো খুব কম সময়েই করে ফেলা যায়। ফলশ্রুতিতে, পেশাদার লেখকরা মনোনিবেশ করতে পারেন লেখার আবহ ও মৌলিকতার দিকে। চলুন, লেখালেখিতে এআই টুলগুলোর প্রধান সুবিধাগুলো জেনে নিই।
লেখকদের সৃজনশীলতায় এআইয়ের ইতিবাচক দিক
.
কন্টেন্টের বিচিত্রতা
এআইয়ের পারদর্শিতার ব্যাপ্তি তথ্যবহুল প্রতিবেদন থেকে পৌঁছে গেছে সৃজনশীল গল্প পর্যন্ত। ধরণ ও আকার নির্বিশেষে মার্কেটিং-এর জন্য যেকোনো কপিরাইটিং-এর জন্য এখন আর দীর্ঘ দিন ধরে অপেক্ষা করতে হয় না। আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, লেখাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উদ্দিষ্ট পাঠকদের জন্য তৈরি হয়, যা পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দৈনিক তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা এই টুলগুলোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদন তৈরি করতে পারেন।
আরও পড়ুন: কীভাবে বুঝবেন ছবিটি এআই দিয়ে বানানো কিনা
শুধু তাই নয়, ওয়েব অ্যাপগুলো লেখার ভাষাশৈলীতেও ভিন্নতা আনতে সক্ষম। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক রিপোর্ট, কথোপকথন ধাচের ব্লগ পোস্ট, নাটকের সংলাপ নির্ভর স্ক্রিপ্ট, এবং ই-মেইল রাইটিং; প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রতা বজায় থাকে।
রাইটার্স ব্লক থেকে পরিত্রাণ
লেখকদের জন্য এআইয়ের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হচ্ছে রাইটার্স ব্লক থেকে মুক্তি। প্রত্যেক সৃষ্টিশীল লেখকের এমন কিছু সময় আসে যখন তার চিন্তা লেখার প্রয়োজনীয় রসদ যোগাতে পারে না। এতে করে যেকোনো লেখা শুরু করতেই তার মধ্যে একরকম স্থবিরতা কাজ করে। এই রাইটার্স ব্লকের জড়তা কাটতে পেরিয়ে যায় অনেকটা সময়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই বন্দিদশা থেকে নিমেষেই উদ্ধার করে নিয়ে যেতে পারে এআই সফটওয়্যারগুলো। অবশ্য ইন্টারনেটের আগমনের পর থেকেই লেখকরা এই মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা মোকাবিলার হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছিলেন। আর এখন সেই হাতিয়ার আরও মোক্ষম হয়ে উঠেছে।
এআই প্ল্যাটফর্মগুলো যেকোনো বিষয়ের উপর নতুন নতুন ধারণা দেখাতে পারে। এছাড়া এখানে পুরোনো কোনো রচনার ভেতর থেকে অভিনব দৃষ্টিকোণও খুঁজে পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: শিশুদের টিকটক আসক্তি: ঝুঁকি থেকে যেভাবে বাঁচবেন
চতুর্মাত্রিক গবেষণা
ইন্টারনেটের যুগ শুরু হওয়ার পর থেকে সার্চ ইঞ্জিনগুলো গবেষণা প্রক্রিয়ায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। কিন্তু এগুলো সার্চ করা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কন্টেন্টগুলোকে সামনে হাজির করেই ক্ষান্ত হতো। ব্যবহারকারী সেগুলোর উপর গবেষণা করে তার কাঙ্ক্ষিত ঊত্তরটি খুঁজে নিতেন। কিন্তু এখন এআই ব্যবহারকারীর হয়ে এই ঊত্তরটি সরাসরি বের করে দেয়। বিশেষ করে গুগলের জেমিনি এক ক্লিকেই দীর্ঘ কন্টেন্টের সারবস্তু বের করে দেয়।
সামগ্রিকভাবে এই বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণ গবেষণার সময় কমিয়ে এনেছে। ফলে লেখক ও সাংবাদিকরা আরও সুক্ষ্ম গবেষণার দিকে যেতে পারেন।
ব্যাকরণগত দিক থেকে নির্ভুল লেখনীর নিশ্চয়তা
প্রকাশনা জগতের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় প্রুফরিডিং বা লেখার খসড়া সম্পাদনার ঝামেলাকে অনেকটা কমিয়ে এনেছে এআই। তথ্য ভুল না শুদ্ধ এবং লেখার ধরণ যেমনি হোক না কেন; প্রতিটি লেখাই ব্যাকরণগত নির্ভুলতা নিয়েই তৈরি হয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ধরণ অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হলে ভাষাশৈলীর সমস্যাও দূর হয়। বাকি থাকে তথ্যের যথার্থতা, যা সম্পূর্ণভাবেই গবেষণার উপর নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন: ভিডিও গেম খেলে অর্থ উপার্জনের উপায়
লেখার নির্দিষ্ট ধরণ বা নিজস্বতা সংরক্ষণ
চ্যাটজিপিটিসহ প্রথম সারির সবগুলো এআইয়েই রয়েছে লেখকদের নিজস্ব শৈলী সংরক্ষণ করে রাখার সুযোগ। এর মধ্যে রয়েছে একজন লেখকের বাক্য বিন্যাস, শব্দ চয়ন, এবং পাঠকদের সম্বোধনের ধারা, যা লেখকের স্বকীয়তার পরিচায়ক। সেটিং থেকে একবার নির্ধারণ করে রাখা হলে প্রতি কন্টেন্ট জেনারেশনের ক্ষেত্রেই সেই স্বকীয়তা বজায় থাকে।
লেখকদের সৃষ্টিশীল কাজে এআইয়ের নেতিবাচক ভূমিকা
.
গতানুগতিক রচনার প্রসার
বিষয়বস্তুর গভীরে গিয়ে প্রতিটি সূক্ষ্ম স্থানগুলোর জন্য সঠিক প্রম্প্ট বা নির্দেশনা না দেওয়া হলে এআই মোটা দাগে বিষয়টি বিশ্লেষণ করে। তাতে বাক্য বিন্যাস হয় গতানুগতিক এবং সার্বজনীন শব্দগুচ্ছে পরিপূর্ণ হওয়ায়, তা ইন্টারনেটে থাকা অন্যান্য লেখার সঙ্গে মিলে যায়। এ ধরণের রচনার সবচেয়ে মানহীন দিক হচ্ছে একই শব্দ বা শব্দগুচ্ছের পুনরাবৃত্তি।
এআইকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নির্দেশনার পদ্ধতি নিয়ে যথার্থ ধারণা ব্যতীত মানসম্পন্ন লেখা পাওয়া অসম্ভব। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সাধারণ নির্দেশনা দেওয়ার চর্চাটি বিপুল পরিসরে ঘটছে। এতে করে গোটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ছে গতানুগতিক রচনা। এটি সাহিত্যসহ সামগ্রিক প্রেস মিডিয়ার জন্য ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন: কীভাবে জানবেন ঢাকার যানজটের সর্বশেষ অবস্থা?
স্বকীয়তার অবক্ষয়
এআই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদ্যমান কাজ ও তথ্যের ভিত্তিতে লেখা তৈরি করে। শিরোনাম ও পর্যালোচনায় কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সেগুলো দিনশেষে সমজাতীয় লেখারই পৃষ্ঠপোষক। কিংবদন্তির কোনো গল্পে অ্যাডাপ্টেশনও একটি সৃজনশীলতা যখন সেখানে লেখকের স্বকীয়তা থাকে। কিন্তু বর্তমানে কম সময়ে এআইয়ের লেখাগুলো লেখকদের সেই স্বকীয়তা আরোপের প্রতি নিরুৎসাহিত করছে। এআই প্রস্তাবিত আবহ এবং কাঠামোর উপরেই তারা নিজেদের কাজগুলো প্রস্তুত করছে। এটি দীর্ঘ মেয়াদে কিংবদন্তিতুল্য লেখক তৈরির সম্ভাবনা ধূলিস্মাৎ করে দিতে পারে।
৬৯ দিন আগে
গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করলেন বাকৃবির অধ্যাপক
দেশে প্রথম গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা রোগের ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান।
অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান ইউএনবিকে জানান, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ হলেই সেটি সফল ভ্যাক্সিন হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু তার উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনটি ম্যাসটাইটিস রোগের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ শতাংশ কার্যকর।
তিনি বলেন, দুগ্ধপ্রধানকারী গবাদিপশুর ক্ষেত্রে ম্যাসটাইটিস বা ওলান ফোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রোগ। তবে দেশের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মোট চাহিদার ৯০ শতাংশই পূরণ করা হয় গরুর দুধ থেকে। ম্যাসটাইটিস রোগে গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ভালো দুধ উৎপাদন পেতে গাভীর ওলানের সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষেত্র বিশেষ কিছু ছত্রাকের আক্রমণে গাভীর এই রোগ হয়ে থাকে। দেশে বর্তমানে অনেক উচ্চ ফলনশীল গাভী পাওয়া যাচ্ছে। এইসব গাভীর দুধ উৎপাদন বেশি তাই ওলানও অনেক বড় হয়। ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে থাকলে বা দুধ দোহন করার পরপরই গাভীগুলো মাটিতে শুয়ে পড়লে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। সাব ক্লিনিকেল ম্যাসটাইটিসে গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন কমে যায় ও জীবাণু ছড়ায় কিন্তু ক্লিনিকেল ম্যাসটাইটিস হলে গাভীর দুধ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। গাভীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে ও দুধ উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেই উদ্দেশ্যেই সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ভ্যাক্সিন তৈরির গবেষণাটি করা হয়েছে।
ভ্যাক্সিন তৈরির গবেষণাতে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (বাস-ইউএসডিএ)।
অধ্যাপক বাহানুরের নেতৃত্বে এই গবেষণায় আরও ছিলেন পিএইচডি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কিছু শিক্ষার্থী।
এছাড়া দেশের অর্থনীতিতে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ভূমিকা সম্পর্কে অধ্যাপক জানান, দেশের প্রায় ৩৬ লাখ পরিবার জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে দুধ উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। একজন মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক ২৫০ গ্রাম দুধ পান করা উচিত। তথ্যমতে দেশে ১৫৮ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন দুধের চাহিদা রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৩০ দশমিক ৭৪ লাখ মেট্রিক টন দুধ। এছাড়া বিপুল পরিমান দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য বিদেশ থেকে প্রতিবছর আমদানি করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১ লাখ ১৮ হাজার টন দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করা হয়েছে। অর্থের হিসেবে প্রায় ১২২ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা শুধু বাংলাদেশই দুধের ঘাটতি পূরণে ব্যয় করে থাকে। এছাড়া দেশের অনেক পরিবার এক থেকে দুটি গাভীকে কেন্দ্র করেই জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়াও ম্যাসটাইটিস হলে প্রচলিত এন্টিবায়োটিক চিকিৎসাতেও তেমন কাজ হয় না।
তিনি জানান, ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই ভ্যাক্সিনটি এন্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে, মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করে।
দেশে পূর্বে এই রোগের ভ্যাক্সিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে এই ভ্যাক্সিন দেশে আর পাওয়া যায় না। দেশে উৎপাদিত গাভীর নমুনা থেকে সংগৃহীত ম্যাসটাইটিস রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করেই ভ্যাক্সিনটি তৈরি করা হয়েছে। অধ্যাপক বলেন, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নেত্রকোনাসহ দেশের ৯টি অঞ্চল থেকে প্রায় ৫১৭টি গাভী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
প্রাপ্ত নমুনা থেকে ম্যাসটাইটিসের জন্য দায়ী চারটি ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- স্ট্রেপ্টোকক্কাস অ্যাগালাক্টিয়া (Streptococcus agalactiae), এসচেরিচিয়া কোলি (Escherichia coli), স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus) ও স্ট্রেপ্টোকক্কাস উবেরিস (Streptococcus uberis)। চারটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করবে বিধায় একে পলিভ্যালেন্ট ম্যাস্টাইটিস ভ্যাকসিন (Polyvalent Mastitis Vaccine) বলা হয়।
অধ্যাপক বাহানুর বলেন, প্রাপ্ত নমুনায় দেখা গেছে প্রায় ৪৬ দশমিক ২৩ শতাংশ গাভী ওলান ফোলা রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ ক্লিনিকেল ম্যাসটাইটিস ও ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ সাব ক্লিনিকেল ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত। তবে উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনের দুটি ডোজ গাভীকে প্রয়োগ করলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে।
গবেষণা পদ্ধতি সম্পর্কে অধ্যাপক বাহানুর বলেন, নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে শুরুতে গাভীর চারটি ওলান ক্যালিফোর্নিয়া ম্যাস্টাইটিস পরীক্ষা (California Mastitis Test) বা সিএমটি (CMT) দ্বারা পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করা হয়েছে। এরপর সংক্রমিত গাভীর সোমাটিক কোষ (Somatic cell) গণনা করা হয়েছে। সুস্থ গাভীর ক্ষেত্রে সোমাটিক কোষ (Somatic cell) এর সংখ্যা শূন্য থেকে দুই লাখ, সাব ক্লিনিকেল ম্যাসটাইটিসের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা দুই থেকে পাঁচ লাখ এবং ক্লিনিকেল ম্যাসটাইটিসের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা পাঁচ লাখের ওপরে পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া প্রচলিত চিকিৎসায় রোগাক্রান্ত গাভীর সোমাটিক কোষ এর সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না, অর্থাৎ এন্টিবায়োটিকগুলো কাজ করছে না।
অধ্যাপক বাহানুর রহমান গাভী ও দুধে তার আবিষ্কৃত ভ্যাক্সিনের প্রয়োগে তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বলে জানিয়েছেন।
৯১ দিন আগে
ভিডিও গেম খেলে অর্থ উপার্জনের উপায়
ভিডিও গেমের অনুষঙ্গ উত্থাপিত হলে স্বাভাবিকভাবেই যে বিষয়টি সামনে আসে, তা হলো শিশুদের বিনোদনের মাধ্যম। ধারণাটির সূচনা থেকেই বিনোদনের খোরাক যোগাতে বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা করে এসেছে গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের চাহিদার আলোকে গ্রাহক শ্রেণিও সীমাবদ্ধ ছিলো সর্বোচ্চ টিনেজার পর্যন্ত। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে এই দৃশ্যপটে। বিশ্ব জুড়ে গেম খেলা এখন কেবল একটি শখ নয়, বরং অর্থ উপার্জনের একটি বিরাট মাধ্যম। শিশু থেকে বুড়ো সব বয়সের মানুষরাই এখন এই ইন্ডাস্ট্রির অনুগত গ্রাহক। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৫ সালে এই খাতে ৩১২ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে। আয়ের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়ে ওঠার কারণে অনেকেই রীতিমত ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন গেমিংকে। চলুন, ভিডিও গেম খেলার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার কয়েকটি উপায় নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ভিডিও গেম খেলে অর্থ উপার্জনের কয়েকটি পদ্ধতি
সর্বপ্রথম যে বিষয়টি অনুধাবন করা জরুরি তা হচ্ছে, এটি কোনো তাৎক্ষণিক প্রক্রিয়া নয়। যে কোনো পেশার মতো গেমিং থেকে আয়ের জন্যেও প্রয়োজন ধারাবাহিক প্রচেষ্টা, নিবেদিত হওয়া এবং গেমিং সম্পর্কে গভীর জ্ঞান। সাম্প্রতিক সময়ে নিম্নোক্ত কার্যক্রমগুলো চমকপ্রদ আয়ের পথ তৈরিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে।
লাইভ স্ট্রিমিং
একজন গেমার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুপরিচিত এবং সফল উপায়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে লাইভ স্ট্রিমিং। এখানে গেম খেলার পুরো সেশনটিকে সরাসরি দর্শকদের সঙ্গে শেয়ার করা যায়। অন্যান্য যেকোনো লাইভ অনুষ্ঠান উপভোগের মতো এটিও একটি নিত্য-নৈমিত্তিক বিনোদনের উৎস। পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে ঘরে বসে নিজের কম্পিউটার একজন গেম খেলেন আর ঠিক একই সময়ে তা দেখতে পারেন লাখ লাখ উৎসাহীরা। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে তারা সরাসরি লাইক, কমেন্ট, এবং শেয়ারও করতে পারেন।
আরো পড়ুন: মোবাইল ফোন বিস্ফোরণ: কারণ ও বাঁচার উপায়
এমন অনেকগুলো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে গেমাররা লাইভ স্ট্রিমিং করে আয় করতে পারেন। যেমন- টুইচ, কিক, ইউটিউব গেমিং, ফেসবুক গেমিং এবং ডিলাইভ। এগুলোতে কত দর্শক দেখছেন, গেমারের ফলোয়ার সংখ্যা, লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টের উপর নির্ভর করে আয়ের মাপকাঠি নির্ধারিত হয়। সঙ্গত কারণেই এখানে দর্শকদের ধরে রাখতে গেম খেলার পাশাপাশি দরকার হয় আরও কিছু দক্ষতার। সেগুলো হলো-
ভয়েস ওভার বা ধারা বিবরণী: গেমপ্লেতে প্রাসঙ্গিক এবং বিনোদনে ভরপুর ধারা বিবরণী দর্শকদের ধরে রাখার একটি মোক্ষম উপায়। যেমন- গেমিং-এর লাইভ রি-অ্যাকশন দেওয়া, গেমের সুনির্দিষ্ট কৌশল বা চিটকোড প্রদর্শনপূর্বক টিউটোরিয়াল, অথবা দর্শকদের সঙ্গে গেমের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চ্যাট করা।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: স্ট্রিমিংটিকে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উপযুক্ত উপায় হচ্ছে অনলাইন মার্কেটিং। আর সোশ্যাল মিডিয়ার বিশ্বে বিপণনের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো। কেননা এখানেই উদ্দিষ্ট দর্শকশ্রেণির এক বিশাল অংশের বিচরণ। এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপনটি যত বেশি সংখ্যক দর্শকদের সামনে পৌঁছে, স্ট্রিমিং-এ ভিউ হওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়তে থাকে। আর এরই সঙ্গে উন্মোচন হতে শুরু করে আয়ের পথ।
আরো পড়ুন: কীভাবে বুঝবেন ছবিটি এআই দিয়ে বানানো কিনা
নেটওয়ার্কিং: ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয়তা গেমারদের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া পরিচিতি বাড়ানোর একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। এতে সেই গেমারদের দর্শকদের কাছে এক্সপোজার পাওয়ার পাশাপাশি তার কাছ থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে সফল হওয়ার কার্যকরি টিপস পাওয়া যায়।
পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, ২০২৯ সাল নাগাদ প্রায় ১০৮ কোটি লোক গেমিং লাইভস্ট্রিমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ফলে এত বিশাল দর্শকের চাহিদা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাড়বে ব্র্যান্ড স্পন্সরশিপ ও চ্যানেল মেম্বারশিপের মতো প্ল্যাটফর্মকেন্দ্রিক আয়ের ক্ষেত্র।
গেমিং নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি
গেমিং কন্টেন্ট নির্মাতাদের জন্য এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ইউটিউব। প্ল্যাটফর্মটিতে প্রতিদিন ২০ কোটিরও বেশি মানুষ গেমিং ভিডিও দেখেন। বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক সাবস্ক্রাইবকৃত পাঁচটি চ্যানেলের মধ্যে দুটিই গেমিং চ্যানেল। তাই গেমারদের জন্য ইউটিউব যতটা বৈচিত্র্যময় ঠিক ততটাই লাভজনক।
আরো পড়ুন: টপ লোড বনাম ফ্রন্ট লোড ওয়াশিং মেশিন: জেনে নিন সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ
ইউটিউবে গেমারদের আয়ের পথ তৈরির পদ্ধতি
অ্যাড রেভ্যিনিউ: ভিডিওতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে এই আয়ের ক্ষেত্রটি তৈরি হয়। যত সংখ্যক দর্শক এই বিজ্ঞাপন দেখেন, তাতে ক্লিক করেন কিংবা বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত ওয়েবপেজে গিয়ে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা থেকে আয়ের একটি অংশ বরাদ্দ হয় কন্টেন্ট নির্মাতার জন্য। সঙ্গত কারণেই বিজ্ঞাপনগুলো কন্টেন্টের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হতে হয় এবং ভিডিওর সঠিক স্থানে যুক্ত করতে হয়।
ব্র্যান্ড স্পন্সরশিপ: জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে চায়। আর এই জন্য তারা চ্যানেলটির মালিক বা সংশ্লিষ্ট কন্টেন্ট নির্মাতার সঙ্গে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের উপর ভিত্তি করে চুক্তি করে। এই ব্র্যান্ড স্পন্সরশিপ বাবদ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিজ্ঞাপনটি ভিডিওর কিছু অংশে প্রচার করা হয়। কখনও কখনও কন্টেন্ট নির্মাতারা নিজেরাই ধারা বিবরণীর সময় পণ্যের প্রোমোশন করে দেন।
পেইড প্রোমোশন এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: চ্যানেলের ভিডিওগুলোতে গেম, গেমিং গিয়ার বা প্রযুক্তি-সংক্রান্ত পণ্যের প্রচারের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট কমিশন লাভ করা যায়। এখানে যেই প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার প্রোমোশন করা হবে তাদের পক্ষ থেকে প্রতি পণ্যের জন্য একটি রেফারেল লিঙ্ক কন্টেন্ট নির্মাতাকে দেওয়া হয়। সেই লিঙ্ক ভিডিওর ভেতরে অথবা ডেসক্রিপশন বক্সে উল্লেখ করা থাকে। অতঃপর দর্শকরা এই লিঙ্কের মাধ্যমে সেই পণ্যের ওয়েবপেজে গিয়ে পণ্যটি ক্রয় করলে আয়ের একটি শতাংশ কন্টেন্ট নির্মাতাকে দেওয়া হয়।
এছাড়া পোস্টকৃত ভিডিওগুলো বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন বা সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্যাম্পেইন চালিয়েও চ্যানেলটি কম সময়ে অধিক সংখ্যক দর্শকের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। পেইড ক্যাম্পেইনের জন্য জনপ্রিয় মার্কেটিং টুলগুলো হচ্ছে গুগল অ্যাড্স, বিং অ্যাড্স, ফেসবুক অ্যাড্স ও ইন্স্টাগ্রাম অ্যাড্স।
আরো পড়ুন: রয়্যাল এনফিল্ড ৩৫০ সিসির নতুন চারটি মোটরবাইক মডেলের আকর্ষণীয় সব ফিচার
সুপার চ্যাট্স এবং মেম্বারশিপ: অনেক সময় নির্মাতা ভক্তদের সঙ্গে সরাসরি চ্যাট করার সময় অনুদান প্রদানের বার্তা দিতে পারেন। এছাড়া স্রেফ ডেসক্রিপশন বক্সেও ক্রাউড ফান্ডিংয়ের লিঙ্ক রেখে দেওয়া যায়। পরবর্তীতে আগ্রহীরা সেখানে তাদের অনুদান দিতে পারেন। তাছাড়া ভিডিওর বাইরে বিশেষ সুবিধা দিতে নির্মাতারা দর্শকদের কাছ থেকে চ্যানেল মেম্বারশিপ নিতে পারেন। অনেক প্রসিদ্ধ ইউটিউব চ্যানেলে ফি প্রদানের ভিত্তিতে মেম্বারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি তাদের কিছু কিছু ভিডিও দেখার জন্যও অর্থ দিতে হয়।
চ্যানেলকে সম্পূর্ণরূপে আয়ের পর্যায়ে নিতে হলে দর্শকদের চাহিদার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া অপরিহার্য। গেমিংয়ের ক্ষেত্রে মূলত টিউটোরিয়াল, কৌশল নির্দেশিকা বা সাম্প্রতিক গেমের খবর, রি-অ্যাকশন এবং গেম রিলিজগুলো বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। গেমের সুনির্দিষ্ট সাবটপিক নির্বাচনের পাশাপাশি মানসম্পন্ন কন্টেন্ট নির্মাণ, নতুনত্ব এবং মার্কেটিংয়ের দিকেও নজর রাখা জরুরি।
গেম টেস্টিং
যারা বিশদ আকারে সূক্ষ্মতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণসহ যেকোনো সিস্টেমের অসঙ্গতিগুলো খুঁজে বের করতে পারেন, তাদের জন্য চমৎকার একটি কাজ গেম নিরীক্ষণ। যেকোনো ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যার টেস্টিংয়ের মতো এখন গেম টেস্টিংও একটি লাভজনক পেশা। এর জন্য বিভিন্ন ধরণের গেমপ্লের পাশাপাশি কম্পিউটার সহ নানা প্ল্যাটফর্মকেন্দ্রিক গেমের কারিগরি জ্ঞান থাকাও আবশ্যক।
আরো পড়ুন: আইফোন চুরি প্রতিরোধে অ্যাপলের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা
একজন গেম টেস্টার সাধারণ গেমারের দৃষ্টিকোণ থেকে গেমগুলো খেলার মাধ্যমে এর অসঙ্গতিগুলো খুঁজে বের করেন। অতঃপর সেই ত্রুটিগুলো দূর করে গেমটিকে সাধারণের কাছে আরও সহজ, আরামপ্রদ ও আনন্দদায়ক করে তোলার জন্য পরামর্শ দেন।
বর্তমানে গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গেমপ্লে, মেকানিক্স এবং গেমের সামগ্রিক বিষয় সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গেম টেস্টারদের সম্মানী হিসেবে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ের গিগ-কেন্দ্রিক বা ফ্রিল্যান্স বাজারে চটকদার গিগগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে এই গেম টেস্টিং। ফ্রিল্যান্স গিগের সুযোগ দেওয়া যে কোম্পানিগুলো হলো- প্লেটেস্টক্লাউড, বেটা ফ্যামিলি এবং ইউজার টেস্টিং।
চূড়ান্ত পেইড গেমপ্লে টেস্টার হিসেবে নিয়োগের পূর্বে অনেক ক্ষেত্রে প্লেয়ারদের গেমের বেটা টেস্টিং প্রোগ্রামে নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি অনেকটা চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার পূর্বে ইন্টার্নি বা অন-দ্যা-জব ট্রেনিংয়ের মতো। এখানে মূরত গেমারের গেম নিরীক্ষণের দক্ষতা যাচাই করা হয়।
আরো পড়ুন: শীতকালে গরম পানির গিজার: জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, মডেল, ধরন ও দাম
গেমিং প্রতিযোগিতা
যারা গেমিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে ইচ্ছুক তাদের পোর্টফোলিও সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন গেমিং টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। নগদ আর্থিক পুরস্কার অর্জনের বাইরে এই টুর্নামেন্টগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে গেম প্রতিষ্ঠানগুলো এবং অন্যান্য দক্ষ প্রতিযোগিদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিংয়ের সম্ভাবনা। অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমেই সংঘটিত এই প্রতিযোগিতাগুলো সারা বিশ্বের গেমার, গেম উৎসাহী এবং গেম নির্মাতাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
কিছু বৃহৎ এবং প্রসিদ্ধ টুর্নামেন্টগুলো হলো- দ্যা ইন্টারন্যাশনাল (ডোটা ২), লিগ অফ লিজেন্ডস ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ও ফোর্টনাইট ওয়ার্ল্ড কাপ।
একটি বড় টুর্নামেন্টে জয়লাভের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিতে একজন দক্ষ গেমার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়। স্পোর্টস ইভেন্টগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান বা গেমিং সংঘগুলো স্পন্সর করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থান অধিকারী গেমারদের দিকে তাদের আলাদা নজর থাকে। এর মধ্য দিয়ে পরবর্তীতে সেই বিজয়ীদের গেম সংক্রান্ত নানা পেশায় চাকররি ক্ষেত্র তৈরি হয়।
আরো পড়ুন: শীতে রুম হিটার: জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, মডেল, ধরন ও দাম
শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট গেমগুলোতে পারদর্শিতা থাকা অনেক গেমাররা নিজেই পুরো একটি টুর্নামেন্টের পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। এটি গেম ডোমেইনে উদ্যোক্তা মনোভাবের নামান্তর। এতে এন্ট্রি ফি, স্পন্সরশিপ ডিল এবং করপোরেট অংশীদারদের মাধ্যমে অর্থায়নের সুযোগ থাকে। বিস্তৃত পরিসরে একটি নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক থাকলে এই টুর্নামেন্টগুলো দীর্ঘমেয়াদে একটি লাভজনক ব্যবসায়িক মডেলে রূপ নেয়।
গেমিং পডকাস্ট তৈরি
সম্প্রতি চিত্তাকর্ষক অনলাইন বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে পডকাস্ট। গেমিং-এর বিস্তৃতি এই মিডিয়া পর্যন্তও চলে এসেছে। গেমাররা তাদের নিজস্ব পডকাস্ট নিয়ে যুক্ত হয়েছে হাল ফ্যাশনের মূল ধারায়। গেম রিভিউ, লাইভ ভাষ্য, ইন্ডাস্ট্রির খবরাখবর, গেম ডেভেলপমেন্ট, রি-অ্যাকশন এবং গেমিং জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাত্কারগুলো স্থান পাচ্ছে গেম পডকাস্টে।
স্পন্সরশিপ ডিল, ফান্ড রাইজিং বা ডোনেশন, সরাসরি পণ্য বিক্রয় বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মতো অনলাইনের সাধারণ পদ্ধতিগুলো এখন পডকাস্টের সঙ্গেও জুড়ে গেছে। তাই এই প্ল্যাটফর্মটিও আয়ের একটি লাভজনক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
আরো পড়ুন: শীতে ঘরের শুষ্কতা দূর করতে হিউমিডিফায়ার: জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, মডেল ও দাম
বাজস্প্রাউট, স্পটিফাই, পডবিনের মতো স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি ইউটিউবের মতো ভিডিও স্ট্রিমিং সাইটও পডকাস্ট হোস্ট করছে।
গেম নিয়ে ব্লগিং
ইউটিউব চ্যানেল যেখানে কাজ করে শুধুমাত্র ভিডিও নিয়ে, ব্লগিং সেখানে গুরুত্ব দেয় লিখিত কন্টেন্টকে। অবশ্য এখন একটি ব্লগসাইটকেও টেক্স্ট, অডিও এবং ভিডিও কন্টেন্টের সমন্বয়ে একটি সামগ্রিক প্ল্যাটফর্মে রূপ দেওয়া যায়। এখানেও একইভাবে জনপ্রিয়তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গেমপ্লে পর্যালোচনা, কৌশল বিশ্লেষণ, নতুন গেম বা প্রসিদ্ধ গেমের নতুন ভার্সনের আপডেট ও রি-অ্যাকশন।
এখানেও ব্লগাররা তাদের লিখিত কন্টেন্টকে উপজীব্য করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও অ্যাড রেভিনিউয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারে। এছাড়া নামী-দামী ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে নির্দিষ্ট স্পন্সরশিপের ভিত্তিতে তাদের পণ্য বা সেবার বিষয়ে পোস্ট লেখাও আয়ের একটি উপায়।
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে যে প্রযুক্তিগত দক্ষতাগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে
একটি সফল গেমিং ব্লগের নেপথ্যে প্রধান উপকরণ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান বা এসইও। এর মাধ্যমে গুগল, বিং বা ডাকডাকগো’র মতো বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেজে ব্লগকে নিয়ে আসা যায়। এতে করে ব্লগে পাঠক সমাগম বেশি হয়। ব্লগে পাঠকদের আনাগোণা যত বেশি হয়, সাইটে থাকা অ্যাড বা রেফারাল লিঙ্কে ক্লিক করা এবং ব্র্যান্ড স্পন্সরশিপ প্রাপ্তির সম্ভাবনা ততই বেশি থাকে। আর এর মধ্য দিয়েই আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পথ সুগম হয়।
শেষাংশ
ভিডিও গেম খেলে অর্থ উপার্জনের এই পদ্ধতিগুলোতে সফলতা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় সংকল্প, অধ্যবসায় এবং প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। এগুলোর মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিকাশ ঘটেছে গেমভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল ও ব্লগিংয়ের। শুধুমাত্র কারিগরি দিক থেকে বিশেষজ্ঞরা অগ্রাধিকার পেলেও ইন্ডাস্ট্রিতে পিছিয়ে নেই গেম টেস্টিংও। এই প্রতিটি উপায়ে গেমার শুধু গেমপ্লে করেই ক্ষান্ত হন না। এর পাশাপাশি তাকে যোগাযোগ এবং বিপণনেও মনোযোগী হতে হয়। একই সঙ্গে গেমপ্লেকে দর্শক ও শ্রোতাদের জন্য গ্রহণযোগ্য কন্টেন্টে রূপ দিতে হয়। আর এর পথ ধরে অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনে বাড়ছে গেমিং ইভেন্ট।
ফলশ্রুতিতে, আর সব পেশার মতই সৃজনশীল ও উদ্যোগী মনোভাবকেও গেমের ডোমেনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আরো পড়ুন: এয়ার পিউরিফায়ার: প্রয়োজনীয়তা, দাম, জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ও নতুন মডেল
৯২ দিন আগে