%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
লকডাউন: খুলনাঞ্চলে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা
খুলনায় করোনার প্রভাব আর দীর্ঘ বিধিনিষেধ ও কঠোর লকডাউনে তৃণমূল পর্যায়ের নিম্ন আয়ের মানুষ বর্তমানে দুর্দিনে কাটাচ্ছে। করোনার ঊর্ধ্বমুখী গতি আর দীর্ঘ লকডাউনের কারণে এ সকল নিন্ম আয়ের মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
দেশের চলমান করোনাভাইরাসে প্রকোপ আর দীর্ঘ লকডাউনে অনেকটাই জীবন্ত মৃত্যু ঘটাচ্ছে এসকল নিম্ন আয়ের মানুষদের। যার প্রভাবে চরম কষ্টে দিন নিপতিত করছেন তারা। এই তালিকায় আছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ী, শ্রমিক, দিন মুজুর, রিকশা-ভ্যান ইজিবাইক, মাহেন্দ্র চালকেরা।
রিকশাচালক মকবুল হোসেন জানান, করোনাভাইরাসের শুরু হতে আজ পর্যন্ত অনেক কষ্টে আছি। তারপর বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের চাপের মুখে রিকশা চালাতে পেরেছি। এক বেলা রিকশা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন হয়েছে তাই দিয়ে গোটা পরিবারের ভরণ-পোষন চালিয়েছি। আর বর্তমান সময়ে কঠোর লকডাউনের কারণে রিকশা রাস্তায় উঠতে দিচ্ছে না। যদি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় উঠছি সাথে সাথে হাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে প্রশাসনের লোকজন। তাছাড়া কঠোর লকডাউনের কারণে প্রশাসনের লোক বেশি রাত পর্যন্ত রিকশা চালাতে দেয় না।
সোনাডাঙ্গার রাজমিস্ত্রির হেলপার মহিদুল বলেন, ‘করোনার কারণে কেউ বাড়ির তৈরি বা মেরামতের কাজ করাচ্ছে না। তারপর আবার মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। একেই তো করোনার বিস্তার বেড়েছে অন্যদিকে কঠোর লকডাউনের কারণে প্রশাসন রাস্তায় নামলেই কেন রাস্তায় নেমেছি জিজ্ঞাসা করছে। কিন্তু কেউ দু’কেজি চাল কিনে দেয় না। লকডাউনের কারণে সম্পূর্ণ বেকার হয়ে পড়েছি।’
দৌলতপুর আমতলার কাঠ মিস্ত্রি লিটন, করোনা শুরু হতে ধরতে গেলে সম্পূর্ণ বেকার। তারপর আবার ঘাড়ের উপর সমিতির কিস্তির ভারী বোঝা। দোকানে কোন ক্রেতা নেই, নেই কোন কাজের অর্ডার।
আরও পড়ুন: নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ নেই, অভিযোগ বিএনপির
তিনি বলেন, ‘একেই কাজ নেই তারপরও দোকান খুলে বসে থাকতাম। মাঝে মাঝে দু’একটি কাস্টমার আসতো। কিন্তু লকডাউনের কারণে বর্তমানে দোকান খুললেই প্রশাসনের লোক বন্ধ করে দেয়।’
খালিশপুরের ফুটপাতের কাপড় ব্যবসায়ী রফিক, খালিশপুর পিপলস্ জুট মিলে বন্ধ হওয়ার পর কাটা সিট কাপড় কিনে এনে ফুটপাথে বসে বিক্রি করছিল।
তিনি জানান, লকডাউনের কারণে দোকান সম্পূর্ণ বন্ধ। পরিবারের ভরণ-পোষন জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছি। জানিনা সামনের দিনগুলো কেমন যাবে?
সব মিলিয়ে বর্তমানে কঠোর লকডাউনের প্রভাবে খুলনার নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষগুলো চরম উৎকন্ঠা আর দুর্দিনে দিন নিপতিত করছে। করোনা প্রভাবে দীর্ঘ লকডাউন ব্যবসায়ীদের করে তুলেছে সর্বশান্ত, তারা নিজ পরিবারের ভরণ-পোষন যোগাতে বর্তমানে হিমহিম খাচ্ছে।
চলমান লকডাউনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলের কারণে খুলনা শহরের প্রধান সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা। কিন্তু অলিগলি ও পাড়া-মহল্লার সড়ক লোকে লোকারণ্য।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে রাস্তার ওপারে খাবারের হোটেল। সেখানে ক্রেতাদের বসেই খাবার খেতে দেখা যায়। এর সামনে গলির মধ্যে কয়েকটি চায়ের দোকান। সেখানেই মানুষের আড্ডাস্থল।
নগরীর গোবরচাকা মধ্যপাড়ায় গলির রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন উঠতি বয়সী যুবকের পাশাপাশি বয়স্করাও। কেউ দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছেন, কেউ বা গলির মধ্যে খোশগল্পে মেতে আছেন। অধিকাংশরই মুখে মাস্ক নেই।
নগরীর সদর হাসপাতালের গলির ভেতরে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন কয়েকজন যুবক। জানতে চাইলে বলেন, ঘরে আর কতক্ষণ। চা খেয়ে বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দেবো। তারপর বাসায় চলে যাবো।
নগরীর মৌলভী পাড়ায় গলির রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো চার কিশোর। তাদের সবাই এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় স্থগিত হয়ে যাওয়া পরীক্ষা নিয়ে চলছিলো তাদের আড্ডা।
এদের একজন সাব্বির বললো আসলে ঘরে বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এ সময় পরীক্ষার পড়াও পড়তে ইচ্ছা করছে না। কারণ, পরীক্ষা কবে হবে তার কোনো ঠিক নেই।
আরও পড়ুন: করোনায় খুলনাতে আরও ১১ জনের মৃত্যু
প্রশ্ন তুলে আমিরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, লকডাউন কি শুধু দিনের জন্য, রাতের জন্য না? অফিস বন্ধ, গাড়ি চলাচল বন্ধ। কেউই খুলনার বাইরে যেতে পারবে না, আর শহরের বাইরে থেকেও কেউ আসতে পারবে না। কিন্তু এখন গণপরিবহন বন্ধ আর অফিস খোলা।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি না হলে লকডাউন কার্যকর করা কঠিন। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবিরাম পরিশ্রম করছেন, জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও লোকজন ঠেকানো যাচ্ছে না। পুলিশ চলে গেলেই তারা আবার আড্ডায় মেতে উঠছেন। তবে, এ বিষয়ে প্রশাসন কঠোর ভূমিকায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ফরিদপুরে প্রস্তুত ৫০ হাজার পশু
আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে ফরিদপুর জেলার ছোট-বড় পশু খামারিরা ৫০ হাজারেরও বেশি পশু প্রস্তুত করেছে। খামারিরা এখন শেষ মুহূর্তে তাদের পশুকে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ফরিদপুর জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার নয় উপজেলায় ছোট-বড় ৫ হাজার ১২০ জন খামারি রয়েছে। এর মধ্যে পদ্মার চারঞ্চলের খামারিই বেশি । এই খামারিরা আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে অর্ধলক্ষাধিক পশু প্রস্তুত করেছে। যা নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র সরবরাহ করা যাবে।
আরও পড়ুনঃ ৯৯৯ এ কল দিয়ে ছিনতাইকৃত গরুর ট্রাক উদ্ধার, আটক এক
ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা এলাকার বড় খামারি ‘সৈয়দ শাহ আলী বাগদাদি’ খামারের মালিক সৈয়দ জহুরুল আলম জানান, তার খামারের ৬০টি বড় ও মাঝারি আকারের গরু রয়েছে। তারা উন্নত জাতের অল্প বয়সী গরু কিনে কোরবানির বাজারের জন্য বড় করে তৈরি করেছেন।
এই খামারি জানান, সম্পূর্ণ দেশীয় ভিটামিনযুক্ত খাবার কাঁচা ঘাস, খড় এবং দানাদার খাবার, খইল, ভুসি ও চালের গুড়া খাইয়ে পশু মোটা তাজা করা হয়েছে। আর এসব খামারে কর্মসংস্থানও হয়েছে অনেকের।
আরও পড়ুনঃ সিরাজগঞ্জে দুধ নিয়ে বিপাকে খামারিরা
একই এলাকার ‘তাহেরা এগ্রোর’ মালিক আবরার নওশের বলেন, ‘আমার খামারে ৫০টি বড় আকারের গরু কোরবানির বাজারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা সারা বছর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পশুগুলোকে উপযুক্ত করেছি, আশা করছি ভালো দামও পাব।’
ফরিদপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল্লাহ মো. আহসান বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে এবারে জেলার প্রতিটি উপজেলায় আমরা অনলাইনে ও লাইভ ওয়েটে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। খামারিরা তাদের গরুর ছবি, ওজন ও মূল্য নির্ধারণ করে পেজে পোস্ট দিচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ সাতক্ষীরায় গরুর ক্ষুরারোগে দুশ্চিন্তায় খামারিরা, ১৫ দিনে ১৮ গরুর মৃত্যু
তিনি বলেন, ‘জেলায় এ বছর ৪৮ হাজার ৩৪৯টি গরু-ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে। তবে এই জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ৩৬ হাজার। আমরা জেলার চাহিদা পূরণের পরও ১৪ হাজার পশু অন্যত্র পাঠাতে পারব।’
লালমনিরহাটে ড্রাগন ফল চাষে ‘আবু তালেবের’ সাফল্য
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি বটতলা এলাকার আবু তালেব ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে আমেরিকার জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। শখের বাগানে ফুল ও ফল আসায় উৎসুক জনতা ভিড়ছেন ড্রাগন বাগান দেখতে।
জানা গেছে, আবু তালেব ফরিদপুরের একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন। ফার্মটি পরিদর্শনে আসা বিদেশি মেহমানদের জন্য ফার্মের মালিক ড্রাগন ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন। সেখানে ড্রাগনের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ হয় তার। সেই থেকে এ পুষ্টিকর ফলের বাগান করার আগ্রহ দেখা দেয় তার মধ্যে। ব্যয়বহুল হলেও নিজের পরিবার ও প্রতিবেশিদের জন্য ড্রাগন কিনে নিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন আবু তালেব।
আরও পড়ুন: মাশরুমের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
এরপর পরিবারের দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় ড্রাগন বাগান করার উদ্যোগ নেন। পুষ্টিগুণের কারণে আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ড্রাগন ফল। কাণ্ড থেকে পাতাহীন ড্রাগন গাছ জন্মায়।
কমলাবাড়ি বটতলা এলাকায় গত বছর নিজেদের ৬৫ শতাংশ জমিতে পাঁচ শতাধিক পিলারে ২০ হাজার চারা রোপণ করে তৈরি করেন ড্রাগন বাগান। নাটোর জেলা থেকে ড্রাগন ফলের চারা ক্রয় করেন। দেড় বছর বয়সে ফল দেওয়ার কথা থাকলেও তা ১০ থেকে ১১ মাসেই ফল দেওয়া শুরু করেছে। বিদেশি এ ফল ও বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ভিড় জমায় আবু তালেবের ড্রাগন বাগানে। আবু তালেব তার ড্রাগন বাগানে ফলের পাশাপাশি চারাও উৎপাদন করছেন। ইতোমধ্যে দুই হাজার চারা উৎপাদন করেছেন এবং প্রতিটি চার ৫০ টাকা দরে বিক্রিও করেছেন। আরও ১০ হাজার ড্রাগনের চারা উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
আরও পড়ুন: অপ্রচলিত ফসল চাষে পাহাড়ের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে: কৃষিমন্ত্রী
আবু তালেব বলেন, ‘আমি আশা করছি এ বছর আমার বাগানে ৮-১০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করতে পারব। বাগান থেকেই প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। তবে বাগানে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেও লাভবান হওয়া যায়। একটি গাছ থেকে ১২-১৫ কেজি ড্রাগন ফল পাওয়া যায়।’
স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (৪৫) জানান, জানুয়ারিতে আবু তালেবের কাছ থেকে ড্রাগনের ১০০টি চারা কিনে রোপণ করেছি। তার কাছ থেকেই ড্রাগনের চাষ পদ্ধতি জেনেছেন। আবু তালেবের মতো সফল হলে বড় পরিসরে ড্রাগনের চাষ শুরু করবেন।
আরও পড়ুন: নতুন করে কৃষি বিপ্লব ঘটবে: মন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাগন ফল চাষে দীর্ঘমেয়াদী মোটা অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। এটাই আমাদের প্রধান সমস্যা।’
কমলাবাড়ি এলাকার রেজাউল করিম রাজ্জাক বলেন, সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণ থাকায় এ ফলের চাহিদা দেশে অনেক বেড়েছে। তাই জেলার সৌখিন কৃষকেরা এ বাগান দেখতে আসছেন এবং নিজেরাও ড্রাগন বাগান করার কৌশল জেনে নিচ্ছেন। আগুন্তুকদের অনেকেই বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সে অনুযায়ী আগামীতে জেলায় ড্রাগন চাষ বাড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, শখের করা ড্রাগন বাগানটি এখন ওই পরিবারের একটি আয়ের মাধ্যম হতে চলেছে। এখন অনেক আগ্রহী কৃষক ড্রাগন চাষ করার কৌশল জানতে ওই বাগানে আসেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, ‘এখন অনেক কৃষক ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যেই অনেকে এ ফলের চাষ শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগ থেকেও তাদের অনুপ্রেরণা ও চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাগন ফল চাষে শুধু দরকার উঁচু জমি যেখানে কখনোই পানি জমাট বাঁধে না। আর দরকার সময় মতো সঠিক পরিচর্যা। ড্রাগন ফল চাষে বেশি বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। এ কারণে অনেক কৃষকের আগ্রহ থাকলেও চাষ করতে পারছেন না।’
মহামারিতে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করবে ঢাবি?
করোনা মহামারি পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হওয়ায় ১৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ তাদের একাডেমিক কার্যক্রম অনলাইনে শুরু করেছে, তবে তা আশানুরূপ ভাবে কার্যকর হচ্ছে না।
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে আগামী জুলাই থেকে সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাবি কতৃপক্ষ। তবে তা না হলে অনলাইনে নেওয়া হবে পরীক্ষা।
ঢাবি কতৃপক্ষের পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কিছু বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে।
আরও পড়ুনঃ কিউএসের বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই ঢাবি বুয়েট
অন্যান্য বিভাগের মতো একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সাইন্স এবং দর্শন বিভাগ সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেও তা পিছিয়ে দেয়। এছাড়া স্বাস্থ্য ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ৭ জুলাই নির্ধারিত পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করে আগামী আগস্টে তারিখ দেয়।
তানভীর আহমেদ ফাহাদ নামে দর্শনের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেক বিভাগ তাদের পরীক্ষার তারিখ পিছিয়েছে। আবার ফার্সি ভাষা ও সাহিত্যের মতো অনেক বিভাগ পরীক্ষা নিয়ে নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা পরীক্ষা হবে কি হবে না সেই অনিশ্চয়তার আছি। পরীক্ষা হলে হল যেহেতু খুলছে না, কিছু দিনের জন্য আমাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।’
বর্তামানে পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে অনেক শিক্ষার্থী ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা করেছে। তবে এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কি করবে সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নয়।
আরও পড়ুনঃ আজিমপুরে ঢাবি ছাত্রীর লাশ উদ্ধার
শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধার কথা জিজ্ঞেস করলে ডিনরা জানান, আবাসন ব্যবস্থা কতৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে।
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা অনলাইনে বা অফলাইনে হবে। যদি পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায় এবং লকডাউন দেওয়া হয় তবে শিক্ষার্থীদের ঢাকায় আসা উচিত হবে না।’
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ইউএনবিকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক এক মিটিংয়ে আমার অনুষদের ১৬ টি বিভাগের ১০ টি বিভাগের প্রধানরা সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। এবং বাকিরা অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন। যেহেতু পরিস্থিতিটাই অনিশ্চিত, সেহেতু অবস্থা বিবেবচনায় আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’
আরও পড়ুনঃ ঢাবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু
ঢাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর আব্দুস সামাদ জানান, পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে, তাই ভ্যাকসিন না নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসা উচিত নয়।
এ বিষয়ে সাবেক ডাকসু সদস্য তানভির হাসান ইউএনবিকে বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষার নেয়ার সিদ্ধান যৌক্তিক হলেও, সকলের জন্য সুবিধাজনক না। অধিকাংশের কাছে পিসি বা ল্যাপটপ নেই। এছাড়া হল না খুলে সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার পুরোপুরি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী। আমরা পরীক্ষার বিরোধিতা করছিনা তবে এর আগে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া উচিত।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তুহিন ইমরান জানান, অনেকের অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে, এর মধ্যে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আবাসনের জন্য অর্থ ব্যয় করতে হলে আরেকটি বড় সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। তাছাড়া অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হলে গ্রামে থাকা শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলে আশঙ্কা জানায়।
কোভ্যাক্সের ওপর নির্ভর রোহিঙ্গাদের টিকাদান
রোহিঙ্গাদের টিকা দেয়ার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশে ভ্যাকসিন ডোজ আসার অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও মার্চের শেষের দিকে এ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় সম্প্রদায় উভয়কেই ভ্যাকসিন ডোজের আওতায় আনতে চায়, কারও বিরুদ্ধে কোনও বৈষম্য দেখতে চায় না।
ইতোমধ্যে গত এপ্রিল ও মে মাসে রোহিঙ্গা শিবিরে কোভিড-১৯ শনাক্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০ জুন পর্যন্ত শিবিরগুলোতে করোনায় অন্তত ২০ জন মারা গেছেন এবং ১ হাজার ৫৬৬ জন শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, শুধুমাত্র মে মাসেই প্রায় ৬০০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে যা গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি।
কক্সবাজারে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র লুই ডোনভান ইউএনবিকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভ্যাক্সের টিকা আসার সাথে সাথেই যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেয়া শুরু হয় সেই জন্য ইউএনএইচসিআর এবং আন্তর্জাতিক মানব সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, কোভ্যাক্সের টিকা আসার এখনও কোনও নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘ মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চায় বাংলাদেশ
দেশে ভ্যাকসিনের ঘাটতি সম্পর্কে জানতে চাইলে লুই বলেন, কোভ্যাক্স থেকে প্রায় এক কোটি ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যা বাংলাদেশের নাগরিকদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে সমানভাবে টিকা দেয়ার জন্য ব্যবহার করা উচিত।
কোভিড -১৯ জাতীয় পরিকল্পনার পাশাপাশি জাতীয় টিকাদান পরিকল্পনা উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ বিশেষ বরাদ্দ পেলে তারা রোহিঙ্গা ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় উভয় সম্প্রদায়েরই টিকা দিতে চায়।
তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের জন্য টিকা সরবরাহ করা হলে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলো যারা রোহিঙ্গাদের কারণে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা তা মানবে না।’
দারিদ্র্য হার কমাতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চায় সরকার
দেশের দারিদ্র্য হার কমাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যেই আগামী বাজেট বাস্তবায়নের চিন্তা করছে সরকার।
আগামী বাজেটের এক নথি পর্যালোচনায় জানা যায়, দেশের দারিদ্র্যতা ও অসমতা দূর করে নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্যই এমন পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
আরও পড়ুন: বাজেট: কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ না দেয়ায় টিআইবির সাধুবাদ
দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকার দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্তদের আরও বেশি করে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। এর পাশাপাশি, দেশে ও বিদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ক্ষুদ্রঋণ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
বাজেট সংক্রান্ত নথি থেকে জানা যায়, এসব খাতে সরকার আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে যাচ্ছে। সরকারের এখন অন্যতম চেষ্টাই হচ্ছে আরও বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই ও সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা।
আরও পড়ুন: বাজেটে দরিদ্র ও বেকাররা ব্যাপকভাবে অবহেলিত: বিএনপি
দেশের আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি, রপ্তানি বৃদ্ধি, ব্যবসা বান্ধব কর ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক খাতকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাছ থেকে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
এবারের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো- স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্তরায়গুলো দূর করা।
আরও পড়ুন: বাজেটে জীবন, জীবিকার সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই: সিপিডি
এর পাশাপাশি সরকার দেশের বড়-বড় প্রকল্প সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সঠিক সময়ে মধ্যে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির টেকসই উর্ধ্বগতি নিশ্চিত করতে চায়।
এসকল প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো - পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সেতু, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ি পাওয়া প্ল্যান্ট এবং ঢাকা মেট্রোরেল।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের অন্তরায়
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির মাঝেই জীবন এবং জীবিকা নিশ্চিত ও অর্থনৈতিক প্রভাব কাটিতে ওঠার লক্ষ্যে সরকার আসন্ন অর্থবছরে গতানুগতিক বাজেটের থেকে একটু ভিন্ন ধারার বাজেট আনতে চলেছে।
সড়কের অপেক্ষায় ৬ বছর ধরে দাঁড়িয়ে এক সেতু!
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে জনদুর্ভোগ লাঘবে তিস্তার শাখা নদীর উপরে একটি সেতু নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার। কিন্তু সেতুর একপাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় ৬ বছরেও দুই গ্রামের মানুষের ভোগান্তির অবসান হয়নি। এতে রাস্তার অভাবে দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারন মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের চর বৈরাতী এলাকায় সেতুটির পূর্বের অংশের নিচ থেকে সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। গত ৬ বছর আগে সেতুটির তিস্তার বন্যায় ভেঙে যায়, সেই থেকে আজও এ অবস্থায় পড়ে আছে। সংস্কারের কোন উদ্যাগ নেয়নি কেউ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে দুই গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার।
জানা গেছে, এলজিইডি’র আওতায় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের চর বৈরাতী এলাকায় তিস্তার শাখা নদীর উপরে ২ লাখ ৯১ হাজার ১৬০ টাকা ব্যায়ে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু গত ৬ বছর পূর্বে ব্রিজটির এক দিকে সংযোগ সড়কের কিছু অংশ তিস্তা নদীর পানির তোরে ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়া সড়ক মেরামত করার জন্য এলাকার অনেকেই জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে একাধিকবার আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। বর্ষাকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ একটি সংযোগ সড়কের অভাবে বছরের পর বছর মারাত্বক দুর্ভোগে জীবন যাপন করছেন। বর্তমানে ওইসব গ্রামের মানুষ আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ যোগাযোগ ক্ষেত্রে বঞ্চিত।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯৩.৫০ শতাংশ: কাদের
স্থানীয়রা জানান, সেতু থাকলেও রাস্তা না থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে তিন চার কিলোমিটার পথ উল্টো ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। সেতুর একপাশে রাস্তা না থাকার কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের পাশাপাশি অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষের চলাচলে চরম অসুবিধা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, এবারও বর্ষা এলো কিন্তু সেতু ঠিক হল না। চরের মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রতিদিন হাট বাজারে যেতে হয়। ফলে সেতুর সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট না করায় দুর্দশার মধ্যে দিয়ে মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে।
চর বৈরাতী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আইয়ুব আলী (৬০) নামে এক বৃদ্ধ জানান, হামার এলাকাত চেয়ারম্যান মেম্বাররা খালি আসি আসি ভোট নিয়া যায়। ভোট নেয়ার আগত কত কথা কয় কিন্তু ভোট শ্যাষ হইলে আর ফিরিয়াও দেখে না।
দক্ষিণ ঘনেষ্যাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এই সংযোগ সড়কটি মেরামত করতে ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার এগিয়ে আসেননি। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে ছেলে মেয়েরা খুব কষ্ট করে স্কুল কলেজে যায়। সংযোগ সড়ক না থাকায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
আরও পড়ুন: চালুর দিনই পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলবে: রেলপথমন্ত্রী
তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমাতে এবং ছাত্র ছাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্তে দ্রুততম সময়ে সংযোগ সড়কটি সংস্কার করার জন্য কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছে সবাই।
কালীগঞ্জে উপজেলা প্রকৌশলী এ টি এম শামসুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে অচিরেই সেতুটি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
করোনা ফান্ড আত্মসাৎ: বহাল তবিয়তে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
করোনাকালীন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের বরাদ্দের টাকা ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেও বহাল তবিয়তে আছেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা)।
তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তদন্তে টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রমাণিত হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে আবাসিক হোটেলে থাকা বাবদ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা ও হোটেলে খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা তুলে নেন ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা)। এই নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীম কবিরকে প্রধান করে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি।
আরও পড়ুন: শ্রীপুর পৌরসভায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগমের দপ্তরে পাঠানো হয়। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিভিল সার্জন অফিস প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হাসান ইমামের কাছে পাঠিয়ে দেন। কিছু সংশোধন ও সংযুক্তির জন্য পরিচালকের (প্রশাসন) দপ্তর থেকে তদন্ত প্রতিবেদনটি ফেরত পাঠিয়ে দ্বিতীয় দফা তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রামে রেল কর্মকর্তা আটক
পরবর্তীতে গত ৪ এপ্রিল ২৫৩ নং স্মারকে ডা. শামীমা শিরিন লুবনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় প্রমাণাদিসহ তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়। দুই মাসের বেশি সময় ধরে তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরে পড়ে আছে বলে জানা যায়।
তদন্ত কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, আমরা সাধ্যমতো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলের মালিক ও ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছি। করোনাকালীন সময়ে রহমানিয়া হোটেলের ভাড়া করা কক্ষগুলো বন্ধ ছিল। সেখানে কোনও ডাক্তার নার্স থাকেনি। কিন্তু ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে খাবার হোটেলে কেউ খাবার খাননি। রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না বলেও তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় চাল আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যান কারাগারে
তদন্ত কমিটির প্রধান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শামীম কবির বলেন, আমরা তদন্তে যা পেয়েছি তাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। একই কথা জানান কমিটির আরেক সদস্য ডা. মিথিলা ইসলাম।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম বলেন, ‘প্রথমে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলাম তা ফেরত দিয়ে কিছুটা সংযুক্তি জুড়ে দিয়েছিল পরিচালকের দপ্তর। দ্বিতীয় দফায় আমরা আবার প্রতিবদেন পাঠিয়েছি। এখন ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) দপ্তরের।’
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে ইউএনও'র স্বাক্ষর জাল করে অর্থ আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ১
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনা আগেই জানিয়েছিলেন, হোটেলে থাকা নিয়ে রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার সঠিক তথ্য দেন নি। ডাক্তাররা রোস্টার ডিউটি করেছেন। ওই সময় তারা হোটেলটিতে ছিলেন। কোনও টাকা আত্মসাৎ হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
তবে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাঝহারুল ইসলাম জানান, শুরু থেকেই তিনি কোভিড-১৯ এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কখনো হোটেলে থাকেননি।
আরও পড়ুন: অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির মামলায় কুষ্টিয়ায় কোর্ট পরিদর্শকের কারাদণ্ড
আরেক চিকিৎসক আর্জুবান নেছা বলেন, তিনি বিভিন্ন সময় হোটেলে থেকেছেন। কিন্তু তারিখ বা কোন মাসে থেকেছেন সেটা তিনি জানাতে পারেননি। তবে তিনি প্রণোদনার টাকা পাননি।
এছাড়া হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত স্টাফরাও কোন প্রকার সরকারি প্রণোদনার টাকা পাননি বলে জানিয়েছিলেন।
বিষাক্ত বর্জ্যে অস্তিত্ব হারাচ্ছে শীতলক্ষ্যা
সিদ্ধিরগঞ্জের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। কালের পরিক্রমায় শীতলক্ষ্যা ঘিরে গড়ে উঠেছে ৪১৭টি কল-কারখানা। এর মধ্যে ১০৫টি কারখানার কোনো বর্জ্য শোধনাগারই (ইটিপি) নেই। এসব কারখানার বর্জ্য সরাসরি ফেলা হয় শীতলক্ষ্যায়। বাকি ৩১২টি কারখানায় নামে মাত্র শোধনাগার থাকলেও তা ব্যবহার না করার অভিযোগ রয়েছে। ফলে গোপনে অথবা কৌশলে তারা শীতলক্ষ্যাতেই ফেলে দূষিত বর্জ্য।
তিস্তা-ধরলা পাড়ে ভাঙন, সরকারি ভাতার বদলে বাঁধ চায় এলাকাবাসী
তিস্তা ও ধরলার পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত তিন দিনে প্রবল ভাঙনে প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা এবং আবাদি জমি, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে।
হুমকির মুখে রয়েছে বাঁধসহ নানান স্থাপনা। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই তীব্র ভাঙনে দিশেহারা লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলায় মোগলহাটের ফলিমারী এলাকায় ধরলা নদীর ডান তীরে গত তিন দিনে নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। বসতভিটা ও ভুট্টাসহ অর্ধশত বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। গৃহহারা হয়েছেন অনেক পরিবার। অসহায় পরিবারগুলো স্থানীয় বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে আছেন।
আরও পড়ুন: যাদুকাটা নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে সুনামগঞ্জের ২ গ্রাম
এদিকে তিস্তার ভায়াবহ ভাঙনে লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড়, বালাপাড়া, বাদিয়ারটারী ও চৌরাহা গ্রামে গত তিন দিনে তিস্তা নদীর গর্ভে বিলিন হয়েছে ২০টি পরিবারের বসতভিটা। এছাড়া অর্ধশত বসতভিটা ও শতাধিক একর আবাদি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। কুটিরপাড় এলাকার এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি বালুর বাঁধ হুমকিন মুখে পড়েছে। এই বাঁধটি স্থানীয়রা নিজ অর্থায়রে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন। এই বাঁধ রক্ষায় তিস্তা পাড়ের হাজারও পরিবার আশায় আছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত তিন দিনে তিস্তার প্রবল ভাঙনে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ঝুঁকিতে থাকা অর্ধশত বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বালু উত্তোলন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে দিশেহারা এলাকাবাসী
এলাকাবাসীর দাবি, ‘আমরা চিড়া, গুড়, মুড়ি, বিধবা ও বয়স্ক ভাতা চাই না আমার তিস্তার বাঁধ চাই।’
উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বয়সী কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, গত দুই দিনে ভিটেমাটি গিলেছে তিস্তা। সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে আজ তিনি রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফলিমারী গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল হক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত কয়েক দিন আগে চোখের সামনেই বসতভিটা ধরলা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন আশ্রায় নিয়ে আছেন অন্য জায়গায়।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর বর্ষা আসার আগেই ধরলার ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্ষাকালে ভাঙন আরও তীব্র হতে পারে। ঝুঁকিতে থাকা অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মাগুরায় মধুমতির ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি বিলীন
হঠাৎ তিস্তায় পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু পানিতে ডুবে গেছে, আর ভাঙতে শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনের কারণে চিন্তিত তিস্তাপাড়ের মানুষরা। পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছে বিপাকে। তারা তাদের বাড়িঘর নিয়ে অনেকে ঠাঁই নিচ্ছেন অন্যের বাড়িতে।
তিস্তাপাড়ের ফাতেমা খাতুন আহাজারি করে বলেন, ‘হামাক বাঁচান ব্যাহে, হামার শোগ শ্যাষ। সব নদীত ভাঙ্গিয়া গেইছে ব্যাহে। হামাক বাঁচান। হামরা কৈ যাম কি খামো, শোগ নদী ভাঙি নিয়া যাবার লাগছে। সরকার এগুলা কি কইরবার লাগছে। হামাক বাঁচান ব্যাহে, হামা বাঁচান।’
তিস্তাপাড়ের আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা রিলিপ-টিলিপ কিছু চাই না। বালুর বাঁধ থাকি শুরু করি নদীর পাশে যদি বস্তা দিত তাহল আর নদী ভাঙত না।’
তিস্তাপাড়ের মহিষখোচা বালাপাড়ার রজব পাড়ার শোভা বলেন, ‘আমাদের ভুট্টাবাড়ী ৪ দোন মাটি আবাদ কচ্চি। খুব কষ্ট করি। বাড়ি পাকা করছি তায়ও শোগ ভাঙি যাবার নাগছে। তোমরা বোল্ডার ফেলে দেও। তা হলে ভালো হবে। ৫০০ টাকার জন্য কি ভোট দেই তোমাক। হামার শরম লজ্জা থুইয়া হামরা ভোট দেই। বয়স্ক দেন, বিদুয়া দেন, আরও বাউরা হবে। আর খ্যায় লোব বাড়ি যাইবে। ওগলা বেবাক বন্দ করি দেন। ওই টাকা দেয়া বন্দ করি দেন। ওই টাকা দিয়া তোমরা বস্তা দেও বোল্ডার ফেলান।
তিস্তা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, বালুর বাঁধটির অর্ধেকের বেশি বিলীন হয়েছে। বাকিটুকু রক্ষা করতে জিও ব্যাগ প্রয়োজন। যার চাহিদা পাঠাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেটের আবেদন করেছি, কিন্তু এখন পর্যান্ত বাজেট পাইনি। ভাঙ্গন এলাকায় কিছু বস্তা ফেলা হয়েছে যাতে করে ভাঙন রোধ করা যায়।’
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, তিস্তার ভাঙ্গন এলাকা আদিতমারী ইউএনও পরিদর্শন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুত আছে, ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ বিতরণ করা হবে।’