বিশেষ সংবাদ
খুলনায় ৮০০ কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্যের সম্ভাবনা
নোনা পানির চিংড়ি চাষের জমি কমে যাওয়া খুলনায় চাষিরা তরমুজ আবাদে ঝুঁকছেন। এখানে গ্রীষ্মের পাশাপাশি শীত মৌসুমে তরমুজের আবাদ হচ্ছে। শীত মৌসুমে ৭ হাজার ও গ্রীষ্ম মৌসুমে সাড়ে ৩শ’ হেক্টর জমিতে এই ফল আবাদ হয়। সব মিলিয়ে দুই মৌসুমে খুলনায় ৮শ’ কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
জানা গেছে, আম্পান-ইয়াস, নদী ভাঙন, রোগবালাই, করোনা ও আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দাম ওঠানামা করায় চাষিরা লোকসান গুনতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে হাড়ির টাকা বাকি থাকে। লোকসান এড়াতে চিংড়ি চাষিদের একাংশ তরমুজ আবাদে নেমেছে।
খুলনা জেলার দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় শীত মৌসুমে ৭ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে চাষ শুরু, ফেব্রুয়ারিতে ফসল তোলা শুরু হবে। গ্রীষ্ম মৌসুমে সাদামাছের ঘেরের পাড়ে ৩১৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে। গ্রীষ্ম মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন জুড়ে।
আরও পড়ুন: শীতের প্রথম বাজার ধরতে ব্যস্ত যশোরের সবজি চাষিরা
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান খান জানান, এবারের শীত মৌসুমে ৯ ইউনিয়নে তিন হাজার চারশ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে। বাজুয়া, কৈলাশগঞ্জ, দাকোপ ও লাউডোব ইউনিয়নের ৬ হাজার চাষি এর সাথে সংশ্লিষ্ট। ৮০ দিনের মধ্যে তরমুজ বাজারজাত হয়। বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ শীত মৌসুমে ২০ হাজার টাকা। বিক্রি তিন লাখ টাকা।
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এর মধ্যে সুরখালী, গঙ্গারামপুর ও ভান্ডারকোট ইউনিয়নের একাংশ জুড়ে উৎপাদন হতো। এবার বটিয়াঘাটা ইউনিয়নের ফুলতলা, হাটবাটি ও হোগলবুনিয়া গ্রামে আবাদ হবে। গেল মৌসুমে দুই হাজার দুইশ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও এবারের লক্ষ্যমাত্রা তিন হাজার পাঁচশ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
দাকোপ উপজেলার বটবুনিয়া গ্রামের চাষি প্রদিপ রায়, দীলিপ মন্ডল, সন্তোষ মন্ডল ও হেকমত আলী মোল্লা জানান, আমন কাটার পরে সেই জমিতেই তরমুজের আবাদ হবে। বলা যেতে পারে, বছর জুড়ে তরমুজের আবাদ হচ্ছে। ফলে কৃষি ও পরিবহন শ্রমিকদের সারা বছরের কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, শীত মৌসুমে এর আবাদ প্রসার হচ্ছে। বিঘা প্রতি ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হয়। এতে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
যমুনার চরে ভেড়া পালনে শত শত নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন
গাইবান্ধার দুর্যোগকবলিত যমুনা নদীর বালু চরে দুর্যোগ সহনীয় ভেড়া পালন করে সাবলম্বী হচ্ছে চরের নারীরা। উন্নত জাত, দুর্যোগ সহনীয় ও প্রজনন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় ভেড়া পালনে ঝুকে পড়েছে চরের নারীরা। এতে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে তারা।
মোল্লার চরের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান বলেন, গাইবান্ধার তিস্তা যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকজুড়ে ১ শ ৬৫টি চর রয়েছে। গাইবান্ধার, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলার এসব চরে অন্তত ৩ লাখ মানুষ বাস করে। বিশেষ করে তিস্তাসহ তিন নদীর দুর্গম চরাঞ্চল কাপাসিয়া, বেলকা, তারাপুর, হরিপুর। গাইবান্ধার মোল্লারচর, কামারজানি, এ্যাড়েন্ডাবাড়ি, উড়িয়া ও কঞ্চিপাড়া। সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া,কামালেরপাড়া ,সাঘাটা সদরসহ অন্তত ১৩ টি ইউনিয়ন দুর্গম চরাঞ্চল।
চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও উপকার ভোগী শিল্পি বেগম বলেন, এসব এলাকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ তাদের জীবন জীবিকা যাপনে চাষাবাদ ও গবাদী পশু সম্পদের ওপর নির্ভর করে। তারা সারা বছর কোন না কোন দুর্যোগ মোকাবিলা করে বুক উচু করে বাস করে। বিয়েসহ অন্যান্য বিপদ কাটে গরু ছাগল হাঁস মুরগি বিক্রি করে। তারপরেও তারা সুখি মানুষ। গবাদী পশু সম্পদ হিসাবে পালন করলেও এই চরগুলোতে কোন ভেড়া পালনের প্রচলন ছিল না।
তিনি বলেন, ‘আমি একটি ভেড়া পেয়েছি, তার অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমি এখন পাঁচটি ভেড়ার মালিক হয়েছি। একেকটি ভেড়ার ওজনেও অনেক বেশি। দুর্যোগে বিক্রি করে সংসারে খরচ বহন করবো। ’
সাজেদা বেগম নামে আরেকজন বলেন, ফ্রেন্ডশীপ নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ের গবেষণার নতুন সফলতা হিসাবে উন্নত মানের ভেড়া দিয়েছেন। যেমন উচু, তেমন লম্বা। দেখতে বেশ সুন্দর। অল্প সময়ে অনেক বড় হওয়ায় তাদের আনন্দের সীমা নাই।
তিনি বলেন, ‘এই প্রজননের সফলতা হিসাবে ভেড়ার উন্নত জাত অন্তত ৩০ কেজি ওজন ও বছরে ৪ বার বাচ্চা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: হাত-পা বিহীন এসএসসি পরীক্ষার্থী সালাহ উদ্দিনের স্বপ্ন বড়
হাত-পা বিহীন এসএসসি পরীক্ষার্থী সালাহ উদ্দিনের স্বপ্ন বড়
মায়ের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে করে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসা করত। বর্তমানে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ভবিষ্যতে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখে হাত পা বিহীন প্রতিবন্ধী সালাউদ্দিন। পরিবারে অভাব থাকা সত্বেও পড়ালেখা বাদ দেয়নি সে।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা দরগাহ ঘোনা এক হত-দরিদ্র মো. জয়নাল আবেদীন ও আয়েশা বেগমে দম্পতি পরিবারে হাত পা বিহীন জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন চার বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সে পঞ্চম।
তার মা আয়েশা বেগম জানান, হাত পা বিহীন জন্ম হয় সালাহউদ্দিনের। অংশবিশেষ একটি পায়ে দুইটি আঙ্গুল রয়েছে। এই দুইটি আঙ্গুল দিয়ে সে খাতায় লিখতে পারে। তার অনেক স্বপ্ন। সে কিছুতেই হারতে চায় না। তাই তার স্বপ্ন পূরণে দিনরাত কষ্ট করে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর
একটা হুইল চেয়ারে করে তার মা তাকে প্রতিদিন সকালে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। এরপর স্কুল ছুটি হলে দুপুরে আবার গিয়ে প্রতিবন্ধী ছেলে সালাহ উদ্দিনকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসতেন। এভাবে মা ছেলের স্কুলের দশ বছরের সংগ্রামের পথ চলা শেষ করে। শুরু হয় প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনের এসএসসি পরীক্ষার যুদ্ধ। মহেশখালী (৫) ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন বলে, ‘আমি পরিবারের বোঝা হতে চাই না । আমিও স্বপ্ন দেখি একদিন পরিবারের হাল ধরব। প্রতিবন্ধী হয়ে আমি পরিবারের বোঝা হতে চাই না। সেই স্বপ্ন নিয়ে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি।’ ব্যাংকে চাকরি করার স্বপ্ন রয়েছে তার , এমনটি জানান প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন ।
পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষকরা আমাকে সবসময় সহযোগীতা দিয়ে আসছেন। এতটুকু আসার পেছনে আমার মা ও স্কুল শিক্ষকের ভূমিকা অতুলনীয়। কম বেশি অনেকে সহযোগিতা করেছেন। তবুও পরিবারের দারিদ্রতা নিয়ে বুকে জমে আছে বিশাল কষ্টের পাহাড়।
আরও পড়ুন: বাস্তবে জীবিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা মৃত!
মহেশখালী (৫) ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৫ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষা দিতে এসে ক্যামেরা বন্দি হন সে। পুরনো হুইল চেয়ারে করে পরীক্ষা দিতে আসেন। আগের তুলনায় শরীরের ওজন বেড়ে গেছে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনের। তাই লক্কর ঝক্কর হুইল চেয়ারে চলাচল করতেও ভয় হয় তার। কিন্তু নিরুপায়, নতুন আরেকটা হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্যও নাই দরিদ্র পরিবারের। বর্তমানে যে হুইল চেয়ারটা ব্যবহার করছেন এটাও কয়েক বছর আগে ঢাকার এক ব্যাক্তি দিয়েছিল বলে জানান তিনি।
এরপর গত বছর কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একটা হুইল উপহার দিলেও সেটা কিছু দিন পর নষ্ট হয়ে যায় । তাই আগের হুইল চেয়ারই তার ভরসা। সরকার কর্তৃক প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা ও কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন সময় চাউল দিয়ে সহযোগিতা করে বলে জানিয়েছে সে।
আরও পড়ুন: তিন দশক গান গেয়েই চলছে অন্ধ বাউলের সংসার
এদিকে, সব কিছুর মূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া, এ কারণে ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানায় প্রতিবন্ধী সালাউদ্দিন।
শীতের প্রথম বাজার ধরতে ব্যস্ত যশোরের সবজি চাষিরা
যশোরে আগাম শীতের সবজি দ্রুত বাজারে তুলতে, খাবারে বেশি স্বাদ যোগতা এবং বেশি টাকা আয় করার জন্য চাষিরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলার সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, সাতমাইল, চুড়ামনকাটি, বারিনগর, হৈবতপুর, কাশিমপুর, বন্দবিলা, লেবুতলা, নোঙরপুর, ইছালি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন জেলার সবজি চাষের কেন্দ্রস্থল। সেখানে এখন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি, মুলা, বোতল করলা এবং বিভিন্ন ধরনের পালং শাকের মতো শীতকালীন সবিতে মাঠ সবুজ হয়ে উঠছে।
সরকারি সূত্র জানায়, দেশের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ সবজিই যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজি দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করা হয়।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
যদিও এ বছর দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর তীব্র গরমের জন্য অনেক কৃষক সময়মতো শীতকালীন সবজির চাষ শুরু করতে পারিনি, এ কারণে একটু দেরি হয়েছে। এর মধ্যেও কিছু কৃষক স্থানীয় বাজারে উৎসাদিত সবজি স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে ভালো দাম পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মাঝিমাঝি সময়ে রবি মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু হয় চলবে মার্চ মাসের মাঝিমাঝি পর্যন্ত।
ইতোমধ্যে জেলায় ১৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মূলা, লালশাক- পালংশাক, সবুজ শাকসহ নানা ধরনের সবজি চাষ হয়েছে।
বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
প্রাকৃতিক ভেষজগুণ সম্পন্ন মসলা জাতীয় উদ্ভিদ চুইঝালের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পাতা, কাণ্ড, শেকড়, ফুল, ফল, ডাল সবই ঔষধি গুণসম্পন্ন। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এই মসলা মাংসের পাশাপাশি মাছের তারকারিতেও ব্যবহার হয়। আর এই গুড়া মশলা শুধু দেশীয় বাজারেই নয়, বিদেশে আর্থাৎ থাইল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে, দেশে খুলনার চুই ঝালের চারার কদর রয়েছে। মাটিতে কিংবা অন্য গাছের আশ্রয়ে লতার মতো বেড়ে ওঠে চুই ঝাল গাছ। কাণ্ড, বাকল, শেকড় তরকারিতে ব্যবহার করা হলেও এবার চুই ঝালের মসলার স্থায়িত্ব বাড়াতে যুক্ত হয়েছে নতুনত্ব। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য চুই ঝালের পাউডার (গুড়া) মশলা তৈরি করে নতুন রূপ দিয়েছেন খুলনার কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডল।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর
কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক বলেন, ‘২০১৭ সালে কৃষি অফিসের সহায়তায় চুই ঝালকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে কাজ শুরু করি। ২০১৮ সাল থেকে আমি ও নিউটন দেশের বিভিন্ন স্থানে চুইয়ের চারা বিক্রি শুরু করি । এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি আমাদের। নিজেদের উৎপাদিত চুই ঝালের পাশাপাশি অন্য কৃষকদের কাছ থেকে এই চুই ঝালের শেকড়, কাণ্ড, লতা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছি। তবে চুই লতা কাটার পর এর শেকড়, বাকল, ডাল বেশিদিন রাখা সম্ভব হয় না। শুকিয়ে কাঠে পরিণত হলে সেটি আর মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। আবার চুইয়ের কাঁচা ডাল, শেকড় ও লতা কুরিয়ার করে পাঠাতে অনেক সময় তিন দিন লেগে যায়। এতে চুই ঝাল নষ্ট হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘চুই ঝাল নষ্ট হওয়া বন্ধ করতে ও নতুন রূপ দিতে কৃষি কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেনের পরামর্শে চুই ঝালের পাউডার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। সেই অনুযায়ী, গুড়া মশলা তৈরি করে খেয়েছি, যা খুবই সুস্বাদু। তবে চুইঝাল চিবিয়ে খেয়ে যেই স্বাদ পাওয়া যায়, সেটি গুড়া মসলায় পাওয়া যায় না। কিন্তু গুড়া মসলায় দারুণ একটা স্বাদ রয়েছে। এখন এই চুইয়ের পাউডার সাতক্ষীরার সাঈদ ভাইয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ড পাঠানো হবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজার ধরতে পারলে চুই ঝালের কদর বহুগুণে বেড়ে যাবে।
কৃষক নিউটন মন্ডল বলেন, ‘চুই গাছের শেকড়, ডাল বিক্রি করে অনেক সময় উপযুক্ত দাম পায় না কৃষকরা। আমরা সেই বিষয়টি বিবেচনা করে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চুই ঝালের পাউডার তৈরির কাজ শুরু করি। প্রথমবার পাউডার তৈরি করে খেয়েছি, এটি খুবই ভালো সুস্বাদু। এবার আমরা এক কেজি চুই ঝালের গুঁড়ামসলা থাইল্যন্ডে পাঠাচ্ছি। থাইল্যান্ড পাঠানোর পরে সাড়া মিললে যারা আমাদের কাছ থেকে চারা নেয় তাদের উৎপাদিত চুই কিনে নিয়ে পাউডার করব। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিদেশি চুই রপ্তানি করব।’
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
তিনি বলেন, ‘১২ কেজি চুইয়ের শেকড়, ডাল শুকিয়ে এক কেজি পাউডার তৈরি হয়। ফলে এর দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। আমরা পাউডারের মান ও প্রকারভেদে দাম নির্ধারণ করেছি। কেজি প্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মানভেদে চুইঝালের পাউডার বিক্রি করা হবে।’
ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘চুই একটি উচ্চমূল্যের ফসল ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। চুই খেলে অনেক রোগের উপকার হয়। দীর্ঘদিন ধরে খুলনা এলাকাতে বিক্ষিপ্তভাবে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। লোকজন বাগান বা ঘরের আশপাশে দু-একটি চাষ করতেন। কিন্তু আমাদের সহযোগিতায় কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডল সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকীকরণের জন্য আমাদের একটি প্রকল্পের সহযোগিতা পেয়ে প্রথমে প্রদর্শনী আকারে মাতৃগাছ তৈরি করে। এরপর থেকে চারা গাছ তৈরি করে বিক্রি করেছেন।’
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বছর থেকে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৪০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চুইঝালেরচাহিদা রয়েছে। চুই ঝালের কাণ্ড, শেকড় পাঠলে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাই তারা চুইয়ের যে প্রকৃত স্বাদ সেটি গ্রহণ করতে পারে না। এজন্য আমাদের নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডল স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্লেন্ডিংয়ের মাধ্যমে চুইঝালের গুঁড়ো তৈরি করে এর পাউডারটি বিদেশে পাঠাচ্ছে। প্রথম চালান তারা থাইল্যান্ডের পাঠাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, চুইঝাল যাতে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে যায়, সে জন্য আমাদের একটি প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের প্রত্যেকটা উপজেলায় পাঁচটি চুইগ্রাম হবে। গ্রামের প্রতিটি সদস্যের বাড়িতে অন্তত দু’টি করে চুইঝাল গাছ লাগানো হবে।
শীত এলেই কিছুটা আয়ের মুখ দেখেন মমেনা
শীতের আগমনি বার্তা মমেনা বেওয়ায় ক্লান্ত শরীরে যেন একটু সুখের অনুভূতি নিয়ে আসে। বছরের ছয় মাস বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে ঝি’র কাজ করেন তিনি। নভেম্বর মাস এলেই সব কাজ ফেলে নেমে পরেন পিঠা তৈরীর কাজে। ফলে শীত এলেই দু’পয়সা আয় হয় তার সংসারে। এই চার মাস পিঠা তৈরী করে এক ছেলে আর দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি।
কুড়িগ্রাম শহরের কেন্দ্রীয় বাস্টস্টান্ড সংলগ্ন সিএন্ডবি মোড় এলাকায় প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পিঠা তৈরী করেন মমেনা বেওয়া। একাই দোকান সামলান তিনি। কারণ ছেলেমেয়েরা এখন দূরে থাকে। তাদের সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ নেই তার।
মমেনা বেওয়া জানান, একমাত্র ছেলে বিয়ে করে ঢাকায় চলে গেছে। সেখানে রাজ মিস্ত্রীর কাজ করে সে। মায়ের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। এই ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠা বিক্রি করে টাকা জমিয়ে এক মেয়েকে সদর উপজেলার ঘোগাদহ ও অপর মেয়েকে যাত্রাপুরে বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে শহরের পৌরসভা এলাকার বাণিয়াপাড় গ্রামে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণ অটুট রেখে শীতকালীন সবজি খাওয়ার সঠিক উপায়
ব্যবসার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন ৭০টাকা কেজি দরে পাচঁ কেজি আতপ চাল কিনে বাড়িতে উড়–ন-গাইনের সাহায্যে নিজেই আটা বানিয়ে নেন। এরপর ভাপা পিঠা ১০ টাকা এবং চিতই পিঠা ৫ টাকায় বিক্রি করেন। এতে দিন শেষে কখনো ৪শ’ কখনো বা ৫শ’ টাকা আয় হয় তার। সেই কষ্টের টাকা জমিয়ে তিনি ভবিষ্যতের আপদ-বিপদ থেকে পরিবারকে রক্ষা করেন।
মমেনা বেওয়া অভিযোগ করেন, চালসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন লাভ কম হচ্ছে।
মমেনা বেওয়ার মত বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রিক্সা প্যাডলার মাহিন আলম শীত এলেই মহাজনের কাছে রিক্সা জমা দিয়ে চার মাস পিঠা তৈরীর কাজ করেন। প্রতিদিন মাহিন আলমের আয় হয় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।অপরদিকে সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় দিনমজুর জাহাঙ্গীর আলমও শীতকালে পেশা পরিবর্তন করেন।
আরও পড়ুন: খুলনায় জমে উঠেছে শীতের পিঠা বিক্রি
চলতি মাসে ১৫ দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়
তীব্র ঘনকুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ না হলেও দেশের উত্তরপ্রান্তের শীতপ্রবণ জেলা পঞ্চগড়ে ক্রমশ তাপমাত্রা কমছে। চলতি মাসের ১৫ দিনই জেলার তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করেছে।
বৃহস্পতিবার তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। এটি ছিল এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
পঞ্চগড় জেলায় এবার ব্যতিক্রমী তাপমাত্রা বিরাজ করছে। দিনে গরম এবং রাতে ঠান্ডা লাগছে। এর ফলে জেলায় শিশু ও বৃদ্ধরা শীত ও শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সামর্থ্যবানরা শীতের গরম কাপড় সংগ্রহ ও লেপ তোষক বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। তবে অসহায় দরিদ্র মানুষ শীত মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের অপেক্ষায় রয়েছেন।
আরও পড়ুন: কপ-২৬: তাপমাত্রা হ্রাস ও ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে আশাবাদী বাংলাদেশ
জেলার হাটবাজারগুলোতে লেপ-তোশক তৈরির দোকানগুলোর কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। ভোর থেকে সকাল ৭-৮ টা পর্যন্ত দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনগুলোকে সড়ক মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি হায়দার আলী
৫০ বছর পেরিয়ে দেশ যেখানে স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী পালন করছে সেখানে এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাননি দর্শনা পরানপুরের হায়দার আলী। জীবন বাজি রেখে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি এখন রংমিস্ত্রী। অতি কষ্টে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন।
হায়দার আলী দাবি করেন, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার পরানপুরের কলিমুদ্দিনের বড় ছেলে হায়দার আলী ১৯৭১ সালে ৮ নম্বর সেক্টরে মাত্র ২১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। সে সময়ের টগবগে তরুণ হায়দার ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিষয়খালী অঞ্চলে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
ডুমুরিয়ায় খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা
আবহমান কাল থেকে বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদর বেশি। তাই শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া অঞ্চলের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তবে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়-পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অন্য বছরের তুলনায় গুড়-পাটালির দাম বেশি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা গাছ পরিষ্কার বা তোলা চাচা করার জন্য গাছি দা ও দড়ি তৈরিসহ ভাড় (মাটির ঠিলে) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
খেজুর গাছ তোলার গাছি নিছার শেখ, আফসার সরদার, রফিকুল ইসলাম ও আজিজুর রহমানসহ একাধিক গাছিরা বলেন, শীত চলে আসছে। এখন খেজুর গাছ তোলার সময়। খেজুর রসের গুড়-পাটালি তৈরি করে ডুমরিয়া বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করা হয়। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এতে আমরা অনেক লাভবান হয়ে থাকি। কিন্তু ইটভাটায় খেজুর গাছ মেরে জ্বালানি কাজে ব্যবহার করার কারণে এ ঐতিহ্য বিলীন হতে চলেছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় মধুমতি নদীতে আবার ভাঙন শুরু
খুলনা অঞ্চলে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারের বন বিভাগের উদ্যোগে গত কয়েক বছর আগে খেজুর গাছ রোপণের কাজ শুরু করেছে। উপজেলার জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে রোপিত হয়েছে খেজুর গাছের হাজার হাজার আটি। দেশি জাতের সাথে পরীক্ষামূলকভাবে আরব দেশিয় খেজুরের চারাও রোপণ করা হয়েছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছে।
তবে ইটভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ না করলে গাছ রোপণের কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না বলে এ পেশায় জড়িত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘খেজুর গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। ইটভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারে সরকারিভাবে বন্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃকক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে। এছাড়া গুড়ের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার নানা উদ্যোগ নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: সমুদ্রতীরে ডলফিনের খেলা, বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে পর্যটকদের
যশোর অঞ্চলে আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর প্রত্যাশা
মাগুরায় মধুমতি নদীতে আবার ভাঙন শুরু
পানি কমতে শুরু করায় মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতি নদীতে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। গত সাত দিনে উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের প্রায় ১৫টি বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ওই গ্রামের প্রায় ২৫টি বাড়িসহ বেশ কিছু স্থাপনা।
এদিকে, বাজেট না থাকায় ভাঙনরোধে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অনুমতি পেলে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, মো. ফরিদ আহম্মদ, মো. আক্কাচ আলী, হাফেজ মো. আহম্মদ আলীসহ অনেকে তাদের শেষ সম্বল বসত ঘর ভেঙে, গাছপালা কেটে সরিয়ে নিচ্ছেন।
পানি কমতে থাকায় নদীভাঙন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ভাঙন ভয়ংকর আকার ধারণ করায় নদীতীরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভাঙনের মুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন শাহাদত মোল্যা, ইবাদত মোল্যা, রমজান মিয়া, নান্নু, মৃদুল শেখ, মন্নু শেষ, পান্নু ও সুলেমান শেখ।
এছাড়া উপজেলার নদী তীরবর্তী চরপাচুড়িয়া, মহেষপুর, কাশিপুর, ভোলানাথপুর, আড়মাঝি, হরেকৃষ্ণপুর ও রুইজানি এলাকার ভাঙনকবলিত অধিবাসীদের এখন দিন কাটছে আতঙ্কে। এসব গ্রামের মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। গত দুই বছরে বর্ষা মৌসুমে মধুমতীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ৪৫টি পরিবারের শতাধিক ঘরবাড়ি। এ বছর ভাঙনের মুখে রয়েছে অসংখ্য দোকানপাটসহ হাজার হাজার একর ফসলি জমি।
আরও পড়ুন: তিস্তা নদী ভাঙনে দিশেহারা কুড়িগ্রামের মানুষ
হরেকৃষ্ণপুর এলাকায় নদী ভাঙনে মাফুজার ও মিটুর মিয়ার বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে মিটুর মিয়া অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
অন্যদিকে মাফুজার মিয়া রাস্তার পাশে ছাপড়াঘর তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তারা বলেন, ‘আমাদের এখন কোন জমিজমা নেই। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মোট সাত বার বসত ঘর সরিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি। এবার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে মধুমতি ভাঙন বৃদ্ধি পায়। এই ভাঙনে আমাদের বসতবাড়ি নদীতে নিয়ে গেছে।’
এ ব্যাপারে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পাল বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে তালিকা করা হচ্ছে।’
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, ‘ফের ভাঙনের খবর পেয়েছি। সরেজমিনে লোক পাঠানো হয়েছে। যেহেতু বাজেট নেই, তাই অনুমতির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলে কাজ শুরু করবো।’
আরও পড়ুন: নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে নয় হাজার পরিবারকে জমিসহ ঘর দেয়া হবে