বিশেষ-সংবাদ
দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা: শীতেও ভবদহ অঞ্চলে ভোগান্তি
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা-যশোর বিস্তৃত অঞ্চলের ভবদহের ৫২টি গ্রাম ২০ বছর ধরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে। বর্ষাকাল বিদায় নিয়ে শীতের আগমন ঘটলেও ভবদহ এলাকা এখনও জলাবদ্ধ। ফলে এসব এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিএডিসি) এই বিশাল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে এর সফলতা নিয়ে সন্দিহান বাসিন্দারা।
ভবদহের দুঃখ
১৯৬১-৬২ সালে খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও যশোর জেলার অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হরি নদীর উপর ২১ ভেন্টের স্লুইস গেট নির্মিত হয়েছিল। এর কিছু দুরে ৯ ভেন্টের আরেকটি স্লুইস গেট স্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুর-সিলেট আন্তনগর ট্রেন এখনও স্বপ্ন!
সে সময় এ অঞ্চলে স্লুইস গেট নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল ভবদহ এলাকার অর্ধশত বিলের ফসলকে বন্যার পানি ও সাগরের নোনা পানি থেকে রক্ষা করা। কিন্তু মাত্র ২০ বছর পরে সেটি এখানকার মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হরি নদী ভরাট হতে থাকে এবং স্লুইস গেটগুলো ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ‘ভবদহের দুঃখ’ বলে পরিচিতি পেয়েছে।
হাটগাছা গ্রামের অনামিকা বিশ্বাস জানান, ঘরের চারপাশে পানি কিন্তু খাওয়ার উপযোগী নেই একটুও। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ঘরেই থাকে। ঘরের নিচ দিয়ে মাছ চলে বেড়ায় কিন্তু তা ধরে খাওয়ার কোন উপায় নেই। প্রভাবশালীরা সেখানে মাছ চাষ করছে।
সেচ পাম্প ‘লোকসান প্রকল্প’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিএডিসি) যৌথ উদ্যোগে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে বাসিন্দাদেন জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
ভবদহ সংলগ্ন বিলে ফসল ফলাতে ও পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এ বছরের শুরুতে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয়রা এই পদ্ধতিকে সাগরে ঢিল ফেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এর আগে ভবদহর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১২ সালে সরকার ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্পও কোন কাজে আসেনি। বছর দুয়েক আগে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে একটি প্রকল্প জমা দেয় যা বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বিএডিসির যশোরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সেচ বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, এ অঞ্চলের বিলে ফসল ফলাতে ও মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাউবোকে বিএডিসি ৩০ এইচপি (হর্সপাওয়ার) পাওয়ারের ২০টি পাম্প সরবরাহ করে। যা রক্ষণাবেক্ষণে বিএডিসির ৮ জন শ্রমিকসহ একজন উপ-প্রকৌশলী সেখানে সার্বক্ষণিক দেখভাল করে থাকেন। কিন্তু লিকেজ দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তা পাউবোকে অবহিত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আরও পড়ুন: দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, বিএডিসির কাছ থেকে ২০টি পাম্প পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় কম। তাই আরও বড় পাম্প নিতে ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২ বছর আগে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পড়ে আছে। সেটিরও অনুমোদন মেলেনি।
ভবদহ অঞ্চলের বিল কেদারিয়ার বাসিন্দা সত্য বিশ্বাস জানান, আশির দশকে ভবদহতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আজ ৪০ বছর পরও এই জলাবদ্ধতা দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু প্রভাবশালীরা লাভবান হচ্ছে কারণ তারা সরকারি বরাদ্দ আনছে আর লুটপাট করছে।
ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই
নদীর তলদেশ পলিতে ভরে যাওয়ায় বিলের পানি কোথাও যেতে পারছে না। ফলে এসব বিলের পানি নামতে না পারায় মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
স্থানীয় খুলনা-৫ আসনের (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির সেচ প্রকল্প কতটা সফল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে হরি নদী খননসহ এর শাখা প্রশাখা খননের কোন বিকল্প নেই। ভবদহের জল হরি নদী দিয়ে ভদ্রা, ঘ্যাংরাইল হয়ে শিপসা নদীতে পড়ে সাগরে মিশে। তাই ভবদহের মধ্যে খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করতে হবে।
চাঁদপুর-সিলেট আন্তনগর ট্রেন এখনও স্বপ্ন!
চাঁদপুর ও সিলেট রুটে আন্তনগর ট্রেন সার্ভিস দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি।
এ অঞ্চলের শত শত মানুষ চাঁদপুর থেকে হযরত শাহজালাল ও শাহ পরানের পবিত্র মাজার জিয়ারত করতে যান। এছাড়াও সিলেটের মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থী রয়েছে। বিপুল সংখ্যক পর্যটকও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে উত্তর-পূর্ব জেলায় যান। তাই এই রুটে চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় দিন দিন ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
আরও পড়ুন: দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, ২০০০ সালে চাঁদপুর থেকে লাকসামগামী একটি কমিউটার ট্রেনে সিলেটগামী যাত্রীদের জন্য বেশ কয়েকটি বগি সংযুক্ত ছিল। লাকসাম জংশনে পৌঁছার পর এসব কোচ জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে লিংক করা হতো। এতে করে অনেক আরামে ও সাশ্রয়ী মূল্যে ঝামেলা ছাড়াই সিলেটে ভ্রমণ করতে পারতেন যাত্রীরা।
২০০০ সালে ২০ সেপ্টেম্বর মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে চাঁদপুর বড় রেল স্টেশনের বেশ কিছু অংশও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে বিলীন হওয়া স্থানটি বালু দিয়ে ভরাট করা হলেও লাকসাম হয়ে সিলেটে ট্রেন চলাচল পুনরায় চালু করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, মাজারে ভক্ত ও পর্যটকরা সিলেটে যাতায়াতের সময় নানা অসুবিধার সম্মুখীন হন।
এমনকি চাঁদপুর রেলস্টেশন থেকে সিলেটের টিকিটও দেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন স্টেশন মাস্টার শোয়াইবুল সিকদারসহ বেশ কয়েকজন টিটি।
আরও পড়ুন: ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
তিনি বলেন, চাঁদপুর ও সিলেটের মধ্যে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য আন্তনগর ট্রেন চালু করা খুবই প্রয়োজন। আগের তুলনায় সিলেটগামী যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এটা এখন সময়ের দাবি।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে রাজধানীর গণপরিবহনকে ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ করার উদ্যোগ
বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। যদিও শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুধু ঢাকা মহানগরীতে হাফ ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাস মালিক সমিতি। তবে সারাদেশে সব গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবি মানা না পর্যন্ত আন্দোলন করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
এই অচলাবস্থা শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থায় আরও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে যার ফলে যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরকার ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। অন্যদিকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের পর ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) আন্তনগর ও আন্তজেলা বাসের ভাড়া যথাক্রমে ২৬.৫ শতাংশ ও ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকরের সিদ্ধান্ত: ওবায়দুল কাদের
তবে পরিবহন শ্রমিকরা এই নির্ধারিত হারের বাইরে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া এই অনিয়মের প্রতিবাদকারী যাত্রীরা পরিবহন শ্রমিকদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছেন, এমনকি একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের হুমকিও দেয়া হয়েছে।
২০ নভেম্বর বদরুন্নেসা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী অর্ধেক বাস ভাড়া দিতে চাইলে ঠিকানা পরিবহনের বাসের চালকের এক সহকারী তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়।
মনিটরিং ব্যবস্থায় সমন্বয়ের অভাব থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া পরিবহন শ্রমিকরা নির্ধারিত বাস স্টপেজের পরিবর্তে যেকোনো স্থানে যাত্রী উঠাচ্ছে বা নামিয়ে দিচ্ছে। রাজধানীর গণপরিবহনের এরূপ বিশৃঙ্খল চলাচলের কারণে যাত্রীদের প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শুধু ঢাকায় শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া
পরিবহন বিশৃঙ্খলার পেছনের কারণ
উত্তরা-কুড়িল-বাড্ডা-মালিবাগ-গুলিস্তান রুটে রাইদা, আলিফ, ইকবাল, ইউনিক, ভিক্টর, আকাশসহ বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস চলাচল করে। মিরপুর-ফার্মগেট-গুলিস্তান সড়কে মিরপুর পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহন রয়েছে।
গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর থেকে রামপুরা, বিমানবন্দর সড়ক থেকে মহাখালী-মগবাজার-মৌচাক পর্যন্ত প্রায় ২৯১টি রুটেই এসব পরিবহন চলতে দেখা যায়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, রাজধানীর গণপরিবহনে চরম বিশৃঙ্খলাবিরাজ করছে। তাতে যাত্রীদের প্রতিনিয়ত হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। রাজধানীতে চলাচলকারী ৮৭ শতাংশ মিনিবাসে এই অবস্থা বিদ্যমান। এ বিষয়ে আসলে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেই, ফলে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে না।
তিনি আরও বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা আনার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশনগুলোর।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩১ লাখ।
বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির তথ্য বলছে, রাজধানীতে চলাচল করছে আড়াই হাজারকোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার বাস। রাজধানী ছাড়া সারা দেশে এক লাখের বেশি বাস চলাচল করে।
সারা দেশে ৭০ লাখ চালকের মধ্যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) লাইসেন্স আছে মাত্র ১৬ লাখের। বাকি সব চালক অবৈধ।
বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ইউএনবিকে বলেন, গণপরিবহন বিশৃঙ্খলার জন্য অন্যতম দায়ী পরিবহন শ্রমিকরা। গণপরিবহন শ্রমিকদের আমরা বিভিন্নভাবে সচেতন করার চেষ্টা করছি। তবে আরও সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: নিরাপদ সড়ক ও হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
গণপরিবহন সেবা শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে পদক্ষেপ
খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, নির্দেশের চেয়েও বেশি বাস ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে মালিক, শ্রমিক ও ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে নয়টি টিম বিভিন্ন রুটে কাজ করছে।
কোনটি সিএনজিচালিত চলাচলকারী বাস ও কোনটি ডিজেলচালিত বাস সেটা বাসের গায়ে লিখা থাকতে হবে।
এছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ চালকই দক্ষ নন। বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিআরটিএ তাদের জন্য এককালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এটি পুনরায় চালু করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
কুবির হলের ডাইনিংয়ে নেই ভর্তুকি, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
দীর্ঘ ১৫ বছরেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আবাসিক হলে খাবারের ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে আবাসিক হলগুলোতে তৈরি হওয়া পুষ্টিহীন খাবার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন দোকানগুলোতে উচ্চমূল্যে খাবার খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
হল সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে মাসিক দায়িত্ব দিয়ে ডাইনিংগুলো পরিচালিত হয়। অনেক সময় মাসের মাঝামাঝিতে এসে বন্ধ হয়ে যায় এসব ডাইনিং। এছাড়া গত ২৭ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খোলা হলেও কাজী নজরুল ইসলাম হলে চালু হয়নি ডাইনিং।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম হলে প্রভোস্ট না থাকায় ডাইনিংয়ের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারছে না হলটি। ফলে আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে এ হলের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডাইনিংগুলোতে নামমাত্র খাবার দেয়া হয়। একই ধরনের খাবার প্রায় প্রতিদিন নিয়ম মাফিক চলতে থাকে। এসব খাবারে থাকে না তেমন পুষ্টিগুণ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন হোটেলগুলোতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে বাড়িয়ে দেয়া হয় খাবারের দাম। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলেও কেন্দ্রীয় ক্যাফেটারিয়ায় আনসারদের অস্থায়ী ক্যাম্প থাকায় বন্ধ পড়ে আছে কাফেটেরিয়াটি। ফলে শিক্ষার্থীদেরকে খাবারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন হোটেলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নির্যাতিত নারীদের সহায়তায় পুলিশের কিউআরটি
কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আজমির হোসেন বলেন, হলগুলো খোলার পরও আমাদের হলে ডাইনিং চলছে না যা ভোগান্তিকর। আবার অনেক হলে ডাইনিং চললেও খাবার তেমন সুবিধার না। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুনজর কামনা করছি।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাঈমা নুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের ডাইনিংয়ে ভর্তুকি প্রয়োজন । ভর্তুকি থাকলে আমরা আরও কম টাকায় আরও ভালো খাবার পেতে পারতাম।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ইউজিসিতে আমরা এ বিষয়ে বলেছি অনেকবার। কিন্তু ইউজিসি হলের ভর্তুকি বাবদ কোনও টাকা আমাদের প্রদান করে না। কিন্তু যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তুকি দিচ্ছে সেগুলো নিজস্ব আয় থেকে দেয়। কিন্তু আমাদের সেরকম আয় নেই।
নিজেদের আয় কিভাবে বাড়ানো যায় এমন চিন্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক মার্কেট থাকে, যেখান থেকে আয় হয়। আমাদের এরকম কোন মার্কেটও নেই। আমরা আশা করছি নতুন ক্যাম্পাস যেহেতু ২০০ একরের সেহেতু সেখানে এসব করা যায় কিনা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বড় হলে শিক্ষার্থীদের দেয়া বেতন থেকেও একটি অংশ তখন থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলে প্রভোস্ট না থাকা বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয় নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্তে উপনীত হবো এবং শিক্ষার্থীরাও হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে খাওয়া- দাওয়া করতে পারবে।
পড়ুন: মাটি সরে দেবে গেছে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল
যমুনার চরে ভেড়া পালনে শত শত নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন
নির্যাতিত নারীদের সহায়তায় পুলিশের কিউআরটি
পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাপলা হটলাইনে কল রিসিভ করলে অপর প্রান্ত থেকে একজন নারীর চিৎকার শুনতে পান। ওই নারী ভীত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাকে সাহায্য করুন, আমার স্বামী আমাকে মারধর করছে। আমি মরে যাচ্ছি।’
চলতি বছরের ২১ আগস্ট রাজধানীর ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার থেকে এই কলটি আসে।
পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমের (কিউআরটি) দায়িত্বে থাকা এসআই শাপলা তার দলকে জড়ো করেন এবং ঘটনাস্থলে যান। সেখানে তিনি একজন ২২ বছর বয়সী নারীকে তার স্বামীর হাতে নির্যাতিত হতে দেখেন।
দলটি ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। অপরাধী-স্বামীকেও আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
আরও পড়ুন: উন্নত দেশের মতো হবে বাংলাদেশ পুলিশ: আইজিপি
উদ্ধার করা নারীকে পরে তার বড় বোনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিউআরটি টিম তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তিনি তার স্ত্রীর সাথে যথাযথ আচরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
শাপলার কিউআরটি টিম উদ্ধার হওয়া ওই নারীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। দেখতে পায় যে তিনি তার স্বামীর কাছে ফিরে গেছেন এবং তারা শান্তিতে সংসার করছে।
তৃপ্তির হাসি নিয়ে শাপলা বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে আমরা একটি পরিবারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। আমি আশা করি তারা এভাবেই বেঁচে থাকবে।
দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
বিদেশি প্রকৌশলী ছাড়াই দীর্ঘ চার বছর পর দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের তিন নম্বর পাম্প সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। পাম্পটি সচল হওয়ায় আগামী বোরো মৌসুমে জিকে সেচ প্রকল্পের সেচ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এতে তিনটি পাম্পের সাহায্যে কুষ্টিয়াসহ চার জেলার কৃষকদের পানির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে স্থাপিত জিকে মূল পাম্পের তিন নম্বর পাম্পটি ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল অকেজো হয়ে যায়। গত চার বছর দুটি পাম্প দিয়েই কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা জেলার ১৩ উপজেলায় সেচ কাজ সচল রেখেছিল জিকে কর্তৃপক্ষ। পাম্পটি অকেজো থাকায় সেচ কাজ ব্যাহত হয়ে আসছিল। অকেজো হয়ে যাওয়া ৩৭ হাজার হর্স পাওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পটি মেরামতের জন্য জাপানি ইবারা কোম্পানি ১৭ কোটি টাকা দাবি করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিটাককে পরামর্শক নিয়োগ দেয়।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি বিটাক অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংকে তিন নম্বর পাম্পটি মেরামতের জন্য তিন কোটি ৭১ লাখ টাকায় চুক্তি সম্পাদন করেন। অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দেশি প্রকৌশলীরা দীর্ঘদিনের চেষ্টায় প্রায় মাসখানেক আগে তিন নম্বর পাম্পটি সচল করতে সক্ষম হয়েছে। পাম্পটি সচল হওয়ায় একদিকে কৃষকেরা নিজেদের চাহিদা মত সেচের পানি যেমন পাবে তেমনি আগামী বোরোতে স্বল্প খরচে অধিক ফসল ফলাতে পারবে কৃষকেরা।
জিকের পানি দিয়ে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন করেন কুষ্টিয়াসহ চার জেলার কয়েক হাজার কৃষক। এতদিন দুটি পাম্প মেশিন সচল থাকায় সময়মতো পানি পেতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে কৃষকদের। তবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিক না থাকায় জিকের বেশির ভাগ পানি অপচয় হয়। খাল খনন কাজ সময়মতো না হওয়ায় পানি ক্ষেত্রে পৌঁছাতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এসব কারণে গ্রামের খালখনন ও সংস্কারের দাবি কৃষকদের।
এদিকে বিটাকের সহযোগিতায় অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিং দেশি প্রকৌশলীদের নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে পাম্প সংস্কারের কাজ করতে পারবে বলে জানান অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কর্মকর্তা। একই সাথে এ ধরনের সাফল্যের পর অন্যান্য কাজে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করা সম্ভব বলেও মনে করেন প্রকৌশলীরা।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর
অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভারি পাম্প বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘দেশে এ ধরনের সফলতা তাদের প্রথম। তারা বাইরের কোন সহযোগিতা ছাড়াই নিজেরাই এমন কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।’
অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলী আজাদ মনে করেন, এখন দেশের বাইরেও তারা পাম্প মেরামতের জন্য কাজ করতে পারেন। দেশে এ ধরনের কাজ করতে পারায় সরকারের অনেক অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। পাশাপাশি দেশে যে এ ধরনের কাজ করা যায় তার নজির সৃষ্টি হয়েছে। সামনে তারা আরও জটিল কাজও সমাধান করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন।
তিন নম্বর পাম্পটি সচল হওয়ায় আগামীতে কৃষদের চাহিদা মত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান জিকে পাম্প হাউজের ইনচার্জ প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
তিনি জানান, জিকের পানির ওপর নির্ভর করে চার জেলার কৃষক। চাপ বেড়ে গেলে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। পদ্মায় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে তিনটি পাম্পের সাহায্যে চার জেলার কৃষকদের পানির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। পাশাপাশি পাম্প মেরামতে সরকারের প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। এটাও একটা ভালো দিক।
জিকে সেচ হাউজের প্রতিটি পাম্প সেকে এক হাজার তিনশ কিউসেক পানি পদ্মা নদী থেকে উত্তোলন করে সেচ খালে দিতে পারে বলেও জানান তিনি।
বিশ্বনাথে মাঠে মাঠে শীতকালীন সবজি
সিলেটের বিশ্বনাথে মাঠে মাঠে এখন শীতকালীন সবজির ঘ্রাণ। এই মৌসুমের সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলায় এবার শীতের আগাম সবজি চাষের ধুম পড়েছিল। কেউ কেউ আরও আগেই সবজি চাষে নেমেছিলেন।
এরই মধ্যে মুলা, শিম, বাঁধাকপি, আলু, লাল শাক, ফুলকপি, টমেটো, শসা, গাজরসহ নানা ধরনের সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে।দাম একটু চড়া তারপরও লোকজন নতুন সবজি ক্রয় করছেন। আগাম সবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব সেই চিন্তা মাথায় রেখে চারা তৈরি ও সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা।
আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণ অটুট রেখে শীতকালীন সবজি খাওয়ার সঠিক উপায়উপজেলার খাজাঞ্চি ও অলঙ্কারী ইউনিয়নে শীতকালিন সবজি বেশি চাষাবাদ হয়। ফলে এসব ইউনিয়নে সবজি চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে সিলেটের বাজারেও বিশ্বনাথের সবজি বিক্রি হয়। কিন্তু দাম বেড়েছে দিগুণ -তিনগুণ।বেশি দামের আশায় প্রতিবছরের মত এবারও অনেক চাষি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আগাম জাতের টমেটো, বেগুন, বাধাঁকপি, ফুলকপির বীজ বপন করেছিলেন। তবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়নি।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বনাথে এ বছর ১৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করার লক্ষমাত্রা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৬৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে আবাদ চলমান রয়েছে। যেটা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
আরও পড়ুন: ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
উপজেলার কর্মকলাপতি, মাধবপুর, রহিমপুর, হরিপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগেই। যারা পিছিয়ে পড়েছেন তারা এখন চাষে তোড়জোড় শুরু করেছেন।
চাষিরা জানান, সবজি চাষে এখন খরচ বাড়ছে। কীটনাশক, সার, শ্রমিক, সেচ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন।উপজেলার হরিপুর গ্রামের সবজি চাষি উস্তার আলী জানান, শীতের আমেজ শুরু হয়েছে সে কারণে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ করছি।তেলিকোনা গ্রামের সবজি চাষি নুরুল হক বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে আমাদের সবজি চারা কিছুটা নষ্ট হলেও ফলন ভালো হয়েছে। লাল শাকঁ, আগাম জাতের চিচিঙ্গা, ঝিঁঙ্গার আবাদ করেছি। আশা করি লাভবান হবো।’খাজাঞ্চি ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি সবজি চাষাবাদ হয়। এখানে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। বর্তমানে এলাকার সবজি চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আরও পড়ুন: খুলনায় ৮০০ কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্যের সম্ভাবনাউপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, সিলেটের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় বিশ্বনাথে টমেটোর চাষ বেশি হয়। প্রতি হেক্টরে ২০ টনেরও বেশি ফলন হয়েছে এ অঞ্চলে।
তিনি বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে আগাম চাষ হয়নি। তবে শীতকালীন সবজি চাষে কোন প্রভাব পড়বে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে চাষিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে চাষিদের মাঝে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী ক্ষেত, বিনামূল্যে সবজির বীজ ও সার দেয়া হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে।’
ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
পুরোপুরি শীত শুরু নাহলেও বেশ কয়েকদিন থেকে খুলনা মহানগরীতে সন্ধ্যার পর থেকে শীতের পিঠা বিক্রি ধুম পড়েছে। মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীরা মোড়ে মোড়ে পিঠার দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন। আর সাধারণ মানুষও খাচ্ছেন এসব ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পিঠা তৈরির ছাঁচে চালের গুঁড়ি নিয়ে তার ওপর গুড়, নারকেল ছিটিয়ে ভাপে দিচ্ছেন দোকানি। খোলায় বানানো হচ্ছে চিতই পিঠা। সন্ধ্যার পরেই পিঠার দোকানে ভিড় করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। অনেকে আবার পিঠা বিক্রির দোকান দিয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
শান্তিধাম মোড়স্থ জাতিসংঘ শিশু পার্কের পশ্চিম পাশে, মহানগরীর রূপসা ঘাট, পিটিআই মোড়, দোলখোলা মোড়, গফফারের মোড়, শিশু হাসপাতাল রোড, তারের পুকুর পাড়, পিকচার প্যালেস মোড়, ক্লে রোড, মহারাজ চত্বর রোড, স্টেশন রোড, কদমতলা রোড, খান জাহান আলী রোড, সোনাডাঙা বাস স্ট্যান্ড, মোল্লা বাড়ির মোড়, নিউ মার্কেট, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মোড় আর ফুটপাতে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক অস্থায়ী পিঠার দোকান।
পিঠা বিক্রেতা নুরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই পিঠা বিক্রি করি। এবার প্রায় ১৫-২০ দিন হয়েছে চিতই পিঠা বিক্রি শুরু করেছি। ৫ টাকা করে প্রতি পিস, বিক্রিও খুব ভালো।
নুরুর দোকান থেকে পিঠা কিনে প্রশংসা করে বেসরকারি চাকরিজীবী মামুন বলেন, ‘এখানকার পিঠার মান ভালো। তাই প্রতিবছরই কিনে থাকি। এবারও কিনেছি।
আরও পড়ুন: কুবিতে নবান্ন উৎসব
দোকানিরা জানান, খুব বেশি পুঁজি লাগে না বলে সহজে এ ব্যবসা শুরু করা যায়। জ্বালানি হিসেবে খড়ি, অকেজো কাঠের টুকরা, কিংবা গাছের শুকনা ডাল ব্যবহার করছেন তারা। তবে কেউ কেউ আবার পিঠা তৈরি করতে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। কিছু গুড়, আটা, নারকেল নিয়ে এ ব্যবসা খুলে বসা যায়।
সোনাডাঙা মোল্লা বাড়ির মোড়ের পিঠা বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, পাটিসাপ্টা, কুলি, চিতই, খিজানো পিঠা ও তেলের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। দামে কম ও মান ভালো হওয়ায় দোকানে প্রায় ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে।
এদিকে দিনের আদ্রতা কমে যাওয়ার দরুন কার্তিক মাসের শেষ দিকের সকালে একটু একটু সূর্যের কিরণের দেখা মেলে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে রাতের শেষাংশে বেশ শীতে কাঁপন ধরছে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে নবান্ন উৎসব শুরু
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গত ১২ নভেম্বর (শুক্রবার) ভারতের তামিল নাড়ুর উপরদিয়ে অতিক্রম করেছে। তারই প্রভাবে গভীর সঞ্চালন মেঘমালা বাংলাদেশের উপরে অবস্থান করছিল। এরই প্রভাবে সূর্যের কিরণ দেখা যায় এবং কোথাও কোথাও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার কারণে সন্ধ্যার পর ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে।
তিনি জানান, এই লঘুচাপের পরেই শীতের আরও তীব্রতা বাড়বে বলে মনে করেছে আবহাওয়া অফিস।
সেতু আছে, নেই সংযোগ সড়ক
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শান্তিপুর নদীর উপর পাকা সেতু থাকলেও নেই সেতুতে ওঠার জন্য কোনও সংযোগ সড়ক। ফলে বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাচ্ছে আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষাকালে নদীতে পানি থাকলেও হেমন্তকালে নদীর পানি প্রায় শুকিয়ে যায়। হেমন্তকালে নদী শুকিয়ে গেলে চলাচল করা যায় তবে বর্ষাকালে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব। যার ফলে চলাচলে দুর্ভোগ দেখা দেয়।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বাদল ইউনিয়ন অন্তর্গত বাদাঘাট-চানপুর সড়কে শান্তিপুর নদীর উপর ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়নি। আবার নির্মিত হয়নি সেতুতে উঠা নামার সংযোগ সড়কও। তাই নদীর উপর ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটি। আসছে না কোনো কাজেও।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
তাহিরপুর উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলজিইডি (সুনামগঞ্জ) হিলি প্রকল্প ৩২ লক্ষাধিক টাকা নির্মাণ ব্যয়ে সেতুর দরপত্র আহ্বান করে। নির্মাণকাজের ঠিকাদারি পায় জামালগঞ্জ উপজেলার পারভেজ এন্টারপ্রাইজ।
জানা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বাদাঘাট-চানপুর সড়কটি দিয়ে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কের শান্তিপুর নদীতে সেতুতে উঠার জন্য দু’দিকে অ্যাপ্রোচে মাটি নেই। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প থেকে উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। শান্তিপুর বাজারের উত্তর পাশ থেকে সেতু পর্যন্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্পে ইউপি সদস্য আবু তাহের মিয়াকে প্রকল্প প্রধান করা হয়। প্রকল্প চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রকল্পে শান্তিপুর বাজার থেকে কাজ শুরু করে সেতুর উত্তর পাশে দুই শতাধিক ফিট দূর পর্যন্ত মাটির কাজ করান। অবশিষ্ট সংযোগ সড়কটি অসম্পূর্ণ রেখে দেয়া হয়। ফলে ২০১৮ সালে বর্ষায় সেই মাটিও সরে যায়।
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
এই ব্যাপারে স্থানীয় মাসুক মিয়া জানান, নির্মাণের পর সেতুটি ব্যবহার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্ব সাধারণের জন্য সেতুটি চলাচলের উপযোগী করতে হলে প্রটেকশন ওয়াল দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
চানপুর গ্রামের বাসিন্দা মজিদ বলেন, সংযোগ সড়কটি স্থাপন করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হলে আমরা সহজেই চানপুর-বাদাঘাট সড়ক ব্যবহার করে তাহিরপুর সদরে যাতায়াত করতে পারতাম। জনদুর্ভোগ কমে আসত।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইকবাল করিব জানান, আমি একবারেই নতুন, তাই এই সেতুটির বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরও পড়ুন: শীতের প্রথম বাজার ধরতে ব্যস্ত যশোরের সবজি চাষিরা
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলব।
মাটি সরে দেবে গেছে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় খালের ওপর নির্মিত সেতুর নিচ থেকে মাটি ধসে একাধিক স্থানে দেবে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। মাঝের অংশ সম্পূর্ণভাবে দেবে গেছে। দুই সপ্তাহ ধরে এমন পরিস্থিতি হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলেও হালকা যান চলাচল অব্যাহত থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।
জানা যায়, দেবগ্রামের তেনাপচা আশ্রয়ন ইউজেড-আরএইচডি (পিয়ার আলী মোড়) সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন। সড়কের ৫২৩ মিটার চেইনেজে অবস্থিত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে খালের ওপর প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যায়ে ১২ মিটার দৈঘ্যের ২ ভেন্ট বক্স কালভার্ট নির্মাণ হয়। কালভার্টের তলদেশের মাটি ধসে যাওয়ায় কয়েক স্থানে দেবে গেছে। ফেলে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দ্রুত সেতুটি মেরামত বা পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডির গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী গত ১৬ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ীর তত্ত্বাবধানে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় পদ্মা নদী থেকে উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের কেউটিল হয়ে বয়ে যাওয়া খালটি ফরিদপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের খনন কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকায় ছিল প্রায় ১১ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন: খুলনায় ৮০০ কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্যের সম্ভাবনা
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পর্যাপ্ত জায়গা ও ঢালু না রেখে খাল খনন করা হয়। এমনকি সেতুসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গার্ডার, সিসি ব্লক, জিওব্যাগ সহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থার প্রয়োজন থাকলেও করা হয়নি। ফলে গত দুই বছরে বর্ষাকালে খাল দিয়ে পানি প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হওয়ায় সেতুর নিচে এবং পাশ থেকে মাটি ধসে যায়। তেনাপচা এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে খালের দুই পাশ বেশি ধসে পড়ে। এতে ৬-৭টি পরিবার অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়। আরও বেশ কিছু পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, তেনাপচা খালের ওপর নির্মিত সেতুটির মাঝখানে এবং একপাশ ভেঙে দেবে গেছে। সেতুর নিচে একাধিক স্থান ভেঙে গেছে। সেতুতে ওঠতে বাম পাশের বেশ জায়গা নিয়ে মাঠি সরে গেছে। ওই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে মাহেন্দ্র, রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো হালকা যান এবং পথচারীরা আসা যাওয়া করছে।
এ সময় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী ও উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার সিদ্দিক নসিমনে বিভিন্ন মেহগনি গাছের গুড়ি ফেলছেন।
আসাদ চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে তাদের খালের দুই পাশে প্যালাসাইডিং করতে বলেছে। কাজ শেষে তাদের বিল পরিশোধ করা হবে।
আসাদ চৌধুরী জানান, অপরিকল্পিত খননে দুই বছর ধরে খালের দুই পাড় ধসে পড়ছে। ছোটভাকলার আব্দুল আজিজ মাস্টারের বাড়ির কাছ থেকে দেবগ্রামের প্রয়াত চেয়ারম্যান পিয়ার আলীর বাড়ি হয়ে তেনাপচা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন হয়েছে। এর মধ্যে তেনাপচা এক কিলোমিটার এলাকায় বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। খাল পাড়ে তার বাড়ি থাকায় তিনিও ঝুঁকিতে বাস করছেন।
অপরিকল্পিত খননের কারণে সেতুটি ধসে পড়ছে বলে জানান।
আরও পড়ুন: যমুনার চরে ভেড়া পালনে শত শত নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন