জীবনধারা
ঘুরে আসুন মালদ্বীপ: অপরূপ এক দ্বীপদেশ ভ্রমণ গাইড
মন্ত্রমুগ্ধ নীল জলরাশি ও রোমাঞ্চকর সমুদ্র তলদেশে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাইলে নির্দ্বিধায় ঘুরে আসুন মালদ্বীপ। ১২০০টি দ্বীপ এবং ২৬টি প্রবালদ্বীপের এই অপরূপ দ্বীপদেশটি অপার্থিব সব বিলাসিতার কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশি পর্যটকদের স্বপ্নের গন্তব্য সাগর মাঝের এই এক টুকরো স্বর্গটি। অন এরাইভাল ভিসার সুবিধায় তারা নিমেষেই মেটাতে পারেন নিজেদের সমুদ্র তৃষ্ণা। তবে এর ব্যয়বহুল পর্যটন সেই তৃষ্ণার রাশ টেনে ধরে। এরপরেও মালদ্বীপ ভ্রমণকে উদ্দেশ্য করে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে কোন এক শীতে অথবা বৃষ্টিস্নাত আগস্টে বাজেট ট্যুর দেয়া যেতেই পারে। চলুন, দেখে নেয়া যাক ওয়াটার অ্যাক্টিভিটি করতে মালদ্বীপের কোথায় কোথায় যাবেন।
মালদ্বীপের বিখ্যাত ১০টি দর্শনীয় স্থান
মালে দ্বীপ
মালদ্বীপের রাজধানী মালে দেশটির সবচেয়ে বড় ও বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর। মালদ্বীপের অধিকাংশ দর্শনীয় স্থানের সাথে এর যোগসূত্র থাকায় মালদ্বীপ ভ্রমণে বিশ্ব পরিব্রাজকদের প্রথম পছন্দ এটি। এখানে আছে প্রবাল পাথরে বানানো ওল্ড ফ্রাইডে বা হুকুরু মস্ক, মালে মাছ বাজার, ভারুনুলা রালহুগান্ধু, মালে জাতীয় যাদুঘর, মুলি আজ প্যালেস এবং সুনামি স্মৃতিস্তম্ভ।
স্নোর্কেলিং ও সার্ফিং-এর জন্য উপযুক্ত জায়গা এই দ্বীপটি। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ব্যবস্থা আছে মালে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নামার। এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ৪ কিলো দূরত্বে ট্যাক্সি করে পৌছা যায় মালেতে। এছাড়া এয়ারপোর্টের সামনে থেকে স্পিডবোট বা ফেরীতে চেপেও যাওয়া যায় এই দ্বীপে। বাংলাদেশ থেকে বিমানে যাতায়াত সহ এই মালে ভ্রমণে একজনের খরচ হতে পারে দিন প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত কোথায়? কীভাবে যাবেন?
বারোস দ্বীপ
ভারতের সামুদ্রিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে এই বিলাসবহুল রিসোর্ট দ্বীপটি সবার ঊর্ধ্বে। হানিমুনের জন্যে বিখ্যাত এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ ওয়াটার স্কাইং, উইন্ড সার্ফিং, ওয়াটার বোর্ডিং এবং ক্যানোইং।
মালে এয়ারপোর্ট থেকে ২৫ মিনিট দূরত্বের বারোসে যাবার একমাত্র মাধ্যম স্পীড বোট বা ফেরী। বিমান ভাড়া ছাড়াই এই দ্বীপ ভ্রমণ খরচ দিন প্রতি ৩৮ থেকে ৭৭ হাজার টাকা।
হুলহুমালে দ্বীপ
দ্বীপদেশ মালদ্বীপের মধ্যমণি হলো এর বৃহত্তম দ্বীপ হুলহুমালে। স্বল্প ব্যয়ের হোটেল, রেস্তোঁরা এবং রাজধানীর সন্নিকটে থাকার জন্য এই দ্বীপটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। মালে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হুলহুমালের সৈকতে স্থলপথেই পৌছানো যায় ১০ মিনিটে। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে হুলহুমলে বিচ, হুলহুমলে সেন্ট্রাল পার্ক, এইচডিসি বিল্ডিং, এবং হুকুরু মিসকি।
আরও পড়ুন: সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান: অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নগরী
বানানা রিফ
উত্তর মালে এটল-এ অবস্থিত এই রিফ বিশ্বের সেরা ডাইভিং সাইটগুলোর মধ্যে অন্যতম। মালদ্বীপের প্রথম আবিষ্কৃত এই ডাইভিং সাইটটি গথুগিরি নামেও পরিচিত। সমুদ্র গর্ভের তিনশ মিটার এই দীর্ঘ প্রবাল প্রাচীর সমুদ্রপৃষ্ঠে চোখ ধাঁধানো নানা রং ছড়িয়ে দেয়। তাই রাতের বানানা রিফকে কেউ এলিয়েন জগৎ বললেও তাকে দোষারোপ করা যাবে না। এখানকার মুল আকর্ষণ স্কুবা, স্নোর্কেলিং, প্রবাল প্রাচীরে জেট স্কিইং আর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আলিমাথা দ্বীপ, বিয়াধু দ্বীপ, মান্তা পয়েন্ট অন্যতম।
মিহিরি দ্বীপ
পার্থিব জগৎ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন থাকার এক মোহনীয় অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে মিহিরি দ্বীপে। এর ৩০টি জলের ভিলার প্রত্যেকটি যে কোন নতুন দম্পতিকে পৃথিবীর কোন আদিম দ্বীপে অ্যাডাম ও ইভের আবহ দিবে। ভেজা মৌসুমে এর রেস্তোরাঁগুলোর মুখরোচক খাবার আর ডুব সাঁতার বারবার টেনে নিয়ে যেতে চাইবে মিহিরি দ্বীপে। যে কোন আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বরে নিমেষেই হারিয়ে যাওয়া যেতে পারে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে।
ভবিনফারু দ্বীপের সৈকত
এই দ্বীপের সৈকত মালদ্বীপের সেরা পাবলিক সৈকতগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার জেট স্কিইং, বন্যান ট্রি ভবিনফারুর ঘরগুলো, প্যারাসেইলিং এবং স্নোর্কেলিং বছরের অধিকাংশ সময়ে ভিড়ের প্রধান কারণ। তলদেশে প্রবাল আর রঙিন মাছের মাঝখানে নিজেকে প্রকান্ড অ্যাকোয়ারিয়ামে বন্দি মনে হবে। মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্পিডবোট এ করে ২৫ মিনিটে চলে আসা যায় এই সৈকতে।
আরও পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
রাঙ্গামাটিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ‘আষাঢ়ী পূর্নিমা’ উদযাপিত
যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে রাঙ্গামাটিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব আষাঢ়ী পূর্ণিমা পালিত হয়েছে। বুধবার সকালে আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে রাঙ্গামাটির আনন্দ বিহার ও মৈত্রী বিহারসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিন সকাল থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা পঞ্চশীল গ্রহণ, অষ্টশীল গ্রহণ, সমবেত প্রার্থনা, চীবরদান, গুরু ভক্তি, ছোয়াইং প্রদান (ভান্তেদের দান), মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলনসহ নানা অনুষ্ঠান পালন করেন।
এসময় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন আনন্দ বিহারের উপাধ্যক্ষ ধর্মেশ্বর ভান্তে থেরো।
বিকালে বুদ্ধ মূর্তি স্নান, ধর্মদেশনা, হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও দেশ-জাতির মঙ্গল কামনায় প্রার্থনার মধ্যদিয়ে শেষ হয় আষাঢ়ী পূর্ণিমার আয়োজন।
আষাঢ়ী পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি ধর্মীয় উৎসব। কারণ এ তিথিতেই গৌতম বুদ্ধ মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি লাভ, রাজ প্রাসাদ, রাজত্ব ও স্ত্রী-পুত্রের মায়া ত্যাগ করে দুঃখ থেকে মুক্তির পথ অন্বেষণে গৃহত্যাগ এবং বুদ্ধত্ব লাভের পর তাঁর পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের উদ্দেশে প্রথম ধর্মচক্র দেশনা দেন (ধর্মের বাণী প্রচার করেন)। এবং তিনি সংযম পালনের ব্রত নিয়ে এই আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিনমাস বর্ষাবাস শুরু করেছিলেন।
এ আষাঢ়ী পূর্ণিমার পরে তিনমাস বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বর্ষাবাস শুরু করেন। এ সময় ভিক্ষুরা জরুরি কোনো কারণ ছাড়া বিহারের বাইরে রাত্রিযাপন করতে পারেন না। এছাড়া এ তিনমাস বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ধর্ম বিনয় অধ্যয়ন ও ধ্যান চর্চা করে থাকেন। তিনমাস বর্ষাবাস শেষ হওয়ার পর প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব।
আরও পড়ুন: খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত
বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু
বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত কোথায়? কীভাবে যাবেন?
নদীমাতৃক বাংলাদেশের সেরা প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলো সৌন্দর্যের এক অপার মহিমা নিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণপিপাসুদের। প্রকৃতিপ্রেমীরা নিজেদের ভেতরটাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য শরণাপন্ন হন এই স্বর্গীয় উপাচারগুলোর। সারা বছর ধরে প্রতিটি মৌসুমে এই জলপ্রপাতগুলো প্রাণভরে উপভোগ করা সম্ভব। কিন্তু বৃষ্টি এই জায়গাগুলোকে যেন আরো যত্ন সহকারে সাজিয়ে তোলে। প্রবল বর্ষণ জলপ্রপাত ও ঝর্ণাগুলোকে প্রাণবন্ত করে তোলে। ঠিক জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অপূর্ব সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। আজকের নিবন্ধটি সাজানো হয়েছে তেমনি কয়েকটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা নিয়ে।
বাংলাদেশের সেরা ১০টি প্রাকৃতিক ঝর্ণা, জলপ্রপাত
খৈয়াছড়া ঝর্ণা
প্রকান্ড এই ঝর্ণাটি চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। এর বিশেষ আকর্ষণ হল এর নয়টি বিচ্ছিন্ন ধাপ, যা বাংলাদেশের আর সকল জলপ্রপাত থেকে একে আলাদা করেছে। আর একই কারণে খৈয়াছড়াকে বাংলাদেশের ঝর্ণার রানী বলা হয়। ঝর্ণাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে অবস্থিত। পূর্ব দিকে গ্রামের রাস্তা ধরে আধা ঘণ্টা হেঁটে খৈয়াছড়া জলপ্রপাতের মূল ট্রেইলে ওঠা যায়। বনের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটার পর অবশেষে দেখা মিলবে ঝর্ণা ধারার।
এই ঝর্ণা দেখতে হলে ঢাকার ফকিরাপুল বা সায়েদাবাদ থেকে যে কোন ফেনীগামী বাসে করে প্রথমে মহিপাল আসতে হবে। তারপর সেখান থেকে চট্টগ্রামগামী আধা-লোকাল বাসগুলো নামিয়ে দেবে বড়তাকিয়া বাজারে।
আরও পড়ুন: সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান: অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নগরী
আমিয়াখুম ঝর্ণা
এটি মূলত বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত একটি অসাধারণ জলপ্রপাত। বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্তবর্তী এই দুর্গম জলপ্রপাতটিকে ডাকা হয় বাংলার স্বর্গ নামে। এই স্বর্গের দেখা পেতে হলে ঢাকার ফকিরাপুল অথবা সায়েদাবাদ বাস স্টেশন থেকে বান্দরবানগামী যেকোন বাসে করে বান্দরবান যেতে হবে। সেখান থেকে বাস বা জিপে করে সরাসরি থানচি। তারপরই সবচেয়ে জরুরী কাজ হলো একজন গাইডকে সঙ্গে নেয়া। এই গাইড রেমাক্রি, নাফাখুম, জিনাপাড়া, থুইশাপাড়া, এবং দেবোতাপাহাড় পাড়ি দিয়ে পৌঁছে দেবে আমিয়াখুমের শিয়রে।
থানচি থেকে নৌকায় করে রোমাক্রি পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা হাটা পথ নাফাখুম ঝর্ণা। নাফাখুম থেকে থুইসাপাড়া পর্যন্ত ৪ ঘণ্টার যাত্রাপথে জিনাপাড়ায় বিশ্রাম নেয়া যেতে পারে। অতঃপর দেবতাপাহাড় হয়ে অমিয়াখুমের যাত্রাতে সময় লেগে যেতে পারে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা।
হাম হাম জলপ্রপাত
এটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। একটি শান্ত পাহাড়ের উপর প্রায় দেড়শ ফুট উচ্চতা থেকে স্রোতের চিত্তাকর্ষক দৃশ্য সমস্ত ভ্রমণকারীর মনে এক অদ্ভূত নেশা জাগিয়ে তোলে। দুর্গম পথের পরে বুনো গুল্ম দিয়ে আচ্ছাদিত উল্লম্ব ভাবে প্রবহমান এই নদীর দিক থেকে চোখ ফেরানো যায় না। এই বিস্ময়ের সাক্ষী হতে ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে প্রথমেই শ্রীমঙ্গল আসতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি বা জীপে করে কলাবন পাড়া যেতে হবে। কলাবন পাড়া থেকে হাম হাম যাওয়ার দুটি পথ রয়েছে- এক হচ্ছে ঝিরি পথ এবং আরেকটি পাহাড়ি পথ। একটু বেশি সময় লাগলেও পাহাড়ি পথের তুলনায় চেয়ে ঝিরি পথের সৌন্দর্য্যটা একটু বেশি। এ পথে হাম হাম পৌঁছতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন: ১৫৫ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়লেন নাজমুন নাহার
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
একই ট্রেইলে একাধিক ঝর্ণা দেখতে চাইলে চলে যেতে হবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়ায়। এই একটি ট্রেইলে পাওয়া যাবে মিঠাছড়ি, বাঘবিয়ানী, এবং বান্দরখুমসহ ছোট বড় নানা ঝর্ণা। এত ঝর্ণা একসাথে থাকায় ট্রেইলটি ভ্রমণপ্রেমীদের নিকট খুবই জনপ্রিয়।
নাপিত্তাছড়ায় যেতে হলে ঢাকার ফকিরাপুল বা সায়েদাবাদ থেকে যে কোন বাসে চড়ে চলে যেতে হবে চট্টগ্রামের মিরসরাই। ট্রেন যাত্রা পছন্দ করলে কমলাপুর থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোন ট্রেনে উঠে নামতে হবে ফেনী স্টেশনে। সেখান থেকে মহিপাল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে লোকাল বাস বা লেগুনা নিয়ে সোজা মিরসরাইয়ের নদুয়ারী বাজার। এই নদুয়ারী বাজার থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে পায়ে হেটে নাপিত্তাচোরা ট্রেইলে পৌঁছা যায়।
শুভলং ঝর্ণা
বাংলাদেশের অপরূপ শহর রাঙ্গামাটি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে শুভলং বাজারের পাশেই দেখা পাওয়া যায় শুভলং ঝর্ণার। বর্ষাকালে প্রায় ১৪০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে বিপুল জলধারা আছড়ে পড়ে কাপ্তাই লেকে। ঝর্ণার কাছেই আছে প্রায় ২০০০ ফুট উঁচু শুভলং বা টি-এন্ড-টি পাহাড়। এখানে বিছানো চমৎকার সিঁড়ি বেয়ে চূড়ায় পৌছে দেখা যাবে সেনাক্যাম্প ও টি-এন্ড-টি টাওয়ার।
আরও পড়ুন: সিঙ্গাপুর ভ্রমণ: সাগরের উপকন্ঠে অভিজাত উদ্যাননগরী
শুভলং যাবার জন্য ঢাকা থেকে রাঙামাটি পৌছে প্রথমেই রিজার্ভ বাজার থেকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। সারাদিনের জন্যে নৌকা নিয়ে নিলে ঝর্ণার পাশাপাশি কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোও ঘুরে দেখা যাবে। ঘাট থেকে শুভলং ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
সুপ্তধারা-সহস্রধারা
এই দুটি ঝর্ণা ঐতিহাসিক চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে বাংলাদেশের প্রথম ইকোপার্ক সীতাকুন্ড ইকোপার্কের ভিতরে অবস্থিত। ঝর্ণা দুটি দেখতে হলে ইকোপার্কের টিকেট কেটে অনেকটা ভেতরে হেটে আসতে হয়। সুপ্তধারা ঝর্ণার প্রবেশ পথে ত্রিশ মিনিট হাটতে হবে। মূল স্রোতের সামনে যেতে নেমে যেতে হবে প্রায় ৪২২টি ধাপ। এভাবে মোট দেড় ঘণ্টা হাটার পর অনেক দূর থেকে সুপ্তধারার শ্রুতিমধুর শব্দ কানে আসবে। সুপ্তধারা থেকে আরও ত্রিশ মিনিটের হাটা পথ হল সহস্রধারার সিঁড়ি। সেখানে আরো প্রায় ৪৮৭টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে হবে। সিঁড়ির শেষেই সহস্রধারার মোহনীয় অবিরাম পতনের দৃশ্য।
ঢাকার কমলাপুর থেকে মেইল ট্রেনে বা সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল কিংবা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে করে সীতাকুন্ড যাওয়া যায়। সীতাকুন্ড বাজার থেকে লোকাল বাস ও সিএনজিগুলো সোজা ইকোপার্কে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
বাকলাই জলপ্রপাত
বান্দরবানের থানচি উপজেলার নাইটিং মৌজার দারুণ একটি গ্রাম বাকলাই। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং থেকে তাজিংডং যাওয়ার মধ্যিপথে পড়বে এই গ্রামটি। আর এরই মধ্যমণি হলো ৩৮০ ফুট উঁচু বাকলাই জলপ্রপাত। এখন পর্যন্ত এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। গ্রামটি ট্রেকারদের ক্যাম্পিং স্পট হিসেবে সুপরিচিত। গ্রামের মধ্য দিয়ে পায়ে হেটে জলপ্রপাত পর্যন্ত পৌঁছতে মাত্র এক ঘণ্টা সময় লাগে।
এ পর্যন্ত আসতে হলে ঢাকা থেকে বাসে করে প্রথমে বান্দরবান পৌঁছতে হবে। বান্দরবান থেকে বাস বা জীপগুলো (চান্দের গাড়ি) চার ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার দূরত্বের থানচিতে নিয়ে যায়। থানচি বাজার থেকে বাকলাই জলপ্রপাত পৌঁছতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। এই সময়টি একদমি বৃথা যাবে না, কেননা বাকলাই ট্রেকিং এর পথে রয়েছে দারুণ কিছু মনোমুগ্ধকর জায়গা।
রিসাং ঝর্ণা
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা গ্রামের দর্শণীয় স্থানটি হলো এই ঝর্ণাটি, যাকে স্থানীয়রা সাপ মারা রিসাং ঝর্ণা বলে ডাকে। এই ঝর্ণার আরো একটি নাম আছে, আর তা হলো তেরাং তৈকালাই। খাগড়াছড়ি সদর থেকে এই ঝর্ণার দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার, যা অতিক্রম করতে প্রয়োজন হয় জীপ, মাইক্রো বা প্রাইভেট কার। অবশ্য ঝর্ণার পাদদেশে এসে গাড়ি থেকে নেমে পড়তে হয়। সেখান থেকে মূল স্রোত দেখতে পাহাড়ি রাস্তা ধরে কিছুটা পথ পায়ে হেটে এগিয়ে যেতে হয়।
আরও পড়ুন: কলকাতা ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার উপায় ও খরচ
ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি পৌঁছে প্রথম কাজ হবে চান্দের গাড়ি বা জীপ রিজার্ভ করে নেয়া। রিসাং র্ঝণাসহ আলুটিলা গুহা, ঝুলন্ত ব্রিজ, বৌদ্ধ মন্দির, এবং দেবতা পুকুর সবগুলোই কাছাকাছি দূরত্বের। তাই গাড়ি ঠিক করার সময় এই সবগুলো জায়গার কথা বলে নেয়া উত্তম। একসাথে সবগুলো ঘুরে দেখতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে।
জাদিপাই জলপ্রপাত
এই প্রশস্ত ঝর্ণাটিকে বলা যেতে পারে বান্দরবানের পাহাড়ী এলাকার প্রাণ, যেটি রুমা উপজেলায় অবস্থিত। কেওক্রাডং থেকে জাদিপাই জলপ্রপাত হেটে যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। প্রায় ২০০ ফুট কালো পাথরের নিচ দিয়ে প্রবাহিত পরিষ্কার পানির স্রোত গিয়ে মিশেছে সাঙ্গু নদীর সাথে। বগা লেক থেকে হেটে কেওক্রাডং-এর পরেই সাক্ষাত পাওয়া যাবে বান্দরবানের সর্বোচ্চ গ্রাম পাশিংপাড়ার। এই পাসিংপাড়াই পৌঁছে দেবে সোজা জাদিপাই ঝর্ণায়।
ঢাকা থেকে বাসে করে বান্দরবান আসার পর জীপ বা চান্দের গাড়িগুলো নিয়ে চলে যেতে হবে রুমায়। বিকাল ৪টার মধ্যে রুমা বাজারে পৌঁছাতে হবে, কেননা এর পরে সেনাবাহিনী বগা লেকের দিকে যাওয়ার অনুমতি দেয় না।
আরও পড়ুন: হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ভ্রমণ: দর্শনীয় স্থান ও খরচ
সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা
সিলেটের জাফলং-এর এক দারুণ মন্ত্রমুগ্ধতা মিশে আছে এই সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণায়, যাকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছে মায়াবী ঝর্ণা। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট এগোলেই এই নামের সার্থকতা টের পাওয়া যাবে। বিএসএফের প্রহরায় বাংলাদেশিরা ভারতের সীমান্তে অবস্থিত এই মায়াবী ঝর্ণা দেখতে যেতে পারে। এই অবিরাম ধারার মোট তিনটি ধাপ রয়েছে, যার মধ্যে তৃতীয় ধাপে এমন একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে যার অন্য প্রান্ত এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।
ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ বা মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটগামী যে কোন বাসে সিলেট আসতে সময় লাগে প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। কমলাপুর কিংবা এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটের ট্রেনে ওটা যেতে পারে। এই যাত্রাতে দুয়েক ঘণ্টা বেশি সময় লাগতে পারে। অতঃপর সিলেটের জাফলংগামী বাস বা সিএনজিগুলো নিমেষেই পৌঁছে দিবে জাফলং-এ।
পরিশিষ্ট
বাংলাদেশের সেরা এই প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের আকর্ষণ করে আসছে। সেই অর্থে এই দর্শনীয় স্থানগুলো বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা বহন করে চলেছে। তাই এই স্থানগুলোর সৌন্দর্য্যকে টিকিয়ে রাখা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। পাশাপাশি বিপজ্জনক স্থানগুলোতে ভ্রমণের সময় নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। পর্যটন বিভাগের পক্ষ থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এগুলোকে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান পর্যটন শিল্পের ল্যান্ডমার্ক করে তোলা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
ঈদের ছুটিতে শিশুদের নিয়ে ঢাকার ভেতরে খোলামেলা পরিবেশে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
ঈদ আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু থাকে শিশুরা। শৈশব-কৈশোর পার করে আসার মানুষেরা এই শিশুদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ দেখেই নিজেদের মধ্যে সুপ্ত চঞ্চলতাটা টের পান। ফিরে যান আবার নিজেদের সেই শৈশবে। ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের ঈদের দিনগুলো কাটানোর জন্য প্রধান পছন্দ থাকে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। ঘুরতে যাবার আগের দিন এমন পরিবারের অভিভাবকদের সাথে সাথে শিশুদের অস্থিরতাটাও বেশ দেখার মত হয়। ঘুরতে যাবার আগে মনের ভেতর সেই জায়গাটির ছবি আঁকতে শুরু করে। আর বাবা-মার দিকে সেই জায়গাগুলো নিয়ে ছুড়ে দেয় হাজারো প্রশ্ন। ঈদের দিনগুলো উদযাপনের জন্য ঢাকার ভেতরেই দারুণ কিছু জায়গার তথ্য থাকছে আজকের নিবন্ধে।
ঈদের ছুটিতে শিশুদের নিয়ে ঢাকার ভেতরে বেড়ানোর মত ১০টি মনোরম জায়গা
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জাদুঘর
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত এই বিমান বাহিনী জাদুঘরটি। জঙ্গি বিমান, হেলিকপ্টার এবং রাডারে পূর্ণ বিশাল খোলা চত্বরের এই জায়গাটি বাংলাদেশের প্রথম বিমান বাহিনী জাদুঘর। এগুলোর মধ্যে তিনটি বিমান ভারতী বিমান বাহিনীর, যেগুলো তারা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহার করেছিলো। পরবর্তীতে বিমান তিনটি বাংলাদেশকে উপহার দেয়া হয়।
শিশুরা দুয়েকটি বিমান ও হেলিকপ্টারে চড়তে পারে। এছাড়া তাদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইড এবং লেকে নৌকা ভ্রমণ। চত্বরের আশপাশ জুড়ে আছে স্যুভেনির শপ নীলাদ্রি, একটি ফুড কোর্ট, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি, নান্দনিক ফোয়ারা ও থিম পার্ক। জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। তবে সামরিক বাহিনীর পরিবারের জন্য তা ২৫ টাকা।
পড়ুন: ঈদের ছুটি কাটানোর জন্য ঢাকার কাছাকাছি সেরা কয়েকটি রিসোর্ট
হাতিরঝিল
দিগন্তের দৃশ্য দেখতে বাধা দেয়ার জন্য হাতিরঝিলের চারপাশে ঘেরাও করা কোন দৈত্যাকার অট্টালিকা নেই। লেকের পাশ দিয়ে পায়ে চলা রাস্তা থেকে খুব সহজেই সেই দিগন্ত এবং লেকের পানিতে আকাশের প্রতিবিম্ব উপভোগ করা যায়। এটি মুলত ঢাকার মগবাজার থেকে গুলশান-বাড্ডার যাওয়ার পথ, তাই এখানে নেই কোন প্রবেশদ্বার বা বের হওয়ার গেট।
দিন-রাত পুরোটা সময়েই দর্শনার্থীরা বিনামূল্যেই ঘুরতে পারেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের ব্রিজের নিচ থেকে রঙ-বেরঙের আলো পুরো হাতিরঝিলের রূপ যেন আরো বাড়িয়ে দেয়। হাতিরঝিলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যাওয়ার জন্য স্থলপথে আছে চক্রাকার ট্যুরিস্ট বাস সার্ভিস। আর লেকের পানিপথ পেরোবার জন্য আছে ওয়াটার ট্যাক্সি।
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা
ঢাকার বাইরে এমনকি দেশের বাইরে থেকেও যে ভ্রমণপিপাসুরাই রাজধানী ঘুরতে আসেন, তারা মিরপুরের চিড়িয়াখানা দেখতে ভোলেন না। তাদের মুল আকর্ষণ থাকে বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখা। কিন্তু প্রায় ৭৫ হেক্টর আয়তনের এই দর্শণীয় জায়গাটিতে ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি দেশ-বিদেশের প্রাণীদের আশ্রয়স্থল।
পড়ুন: ঢাকার কাছেই প্রকৃতির মাঝে ক্যাম্পিং সাইট
শিশুরা এখানে দেখতে পারে সিংহ, চিত্রা হরিণ, বানর, ভালুক, নীলগাই, গন্ডার, ফ্লেমিংগো, কুমির, জলহস্তি, জেব্রা, কানাবক, এবং অজগর সাপ সহ নানা ধরনের প্রাণী। আর প্রায় ২৪০ প্রজাতির স্টাফিং পশুপাখি নিয়ে আছে প্রাণী জাদুঘর। চিড়িয়াখানার ভেতরে আছে ১৩ হেক্টর আয়তনের দুইটি লেক। চিড়িয়াখানায় প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। প্রাণী জাদুঘরের জন্য দিতে হয় ১০ টাকা। তবে দুই বছরের নিচে শিশুদের জন্য জন্যে কোন টিকেট লাগে না।
বোটানিক্যাল গার্ডেন
মিরপুরের চিড়িয়াখানা দেখতে গেলে হাতে আরো একটু বেশি সময় নিয়ে যাওয়া ভালো। কারণ পাশেই আছে বাংলাদেশের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বোটানিক্যাল গার্ডেন। এর প্রায় ২০৮ একর জায়গা বুকে ধারণ করে আছে প্রায় ৮০০ প্রজাতির নানান ধরনের বৃক্ষ।
এখানে প্রবেশ করতে মাথাপিছু ২০ টাকা দিতে হয় আর শিশুদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫ টাকা। চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন ঘোরার ক্ষেত্রে যেটা খেয়াল রাখতে হবে তা হচ্ছে সন্ধ্যার বেশ কিছু সময় আগেই এখান থেকে বের হয়ে যেতে হবে। কেননা এ দুটি জায়গা গরমের সময় বিকেল পাঁচটা আর শীতের সময় বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
পড়ুন: ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
চন্দ্রিমা উদ্যান
শিশুদের নিয়ে খোলামেলা পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য চন্দ্রিমা উদ্যান সেরা জায়গা। লেকের দু’ধারে সিড়ি ও বসার জায়গা এবং উপর দিয়ে নজরকাড়া সেতু উদ্যানটির প্রবেশপথকে মনোরম করে তুলেছে। সেতুতে দাড়িয়ে দু’পাশের লেক থেকে ফোয়ার দেখার আকর্ষণেই মুলত দর্শনার্থীরা ভিড় করেন এখানে।
এর ভেতরের বিশাল ঘাসে বিছানো জায়গাটিতে নির্দ্বিধায় শিশুদেরকে ছেড়ে দেয়া যায় আপন মনে খেলা করার জন্য। এর প্রায় ৭৪ একর জায়গার ভেতরে সেতু পেরলেই দেখা যাবে মরহুম জিয়াউর রহমানের সমাধি কমপ্লেক্স। চন্দ্রিমা উদ্যানের ঠিক উল্টো পাশে অবস্থিত জাতীয় সংসদ। এখানে আসার আগে বিজয় সরণী এলাকায় অতিক্রমের সময় এক পাশে চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটার।
ধানমন্ডি লেক
ঢাকার ছড়ানো-ছিটানো লেকগুলোর মধ্যে ধানমন্ডি লেক সবচেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এই বেশি বলতে কিন্তু একপার থেকে অন্য পাড়ের দূরত্ব অনেক বেশি তা নয়। পুরো ধানমন্ডি এলাকাটার আশপাশ দিয়ে সংকীর্ণ পানিপথ তৈরি করে বয়ে গেছে লেকটি। এই দর্শনীয় স্থানটিতে প্রবেশের সাথে সাথেই পুরো ধূসর পরিবেশটা যেন আচমকা পরিণত হয় সবুজের সমারোহে।
পড়ুন: ঈদের ছুটিতে ভ্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি এবং দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু সতর্কতা
এখানে বেশ পরিপাটি করে বিছানো হয়েছে হাঁটার রাস্তা, তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ব্যায়ামের স্থান, বসার বেঞ্চ, ফাষ্টফুড শপ ও রেস্টুরেন্ট। নির্দিষ্ট ফি দিয়ে লেকে মাছ ধরা আর বোটে চড়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। তাছাড়া এটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রবীন্দ্র সরোবর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসস্থানের জন্য বেশ নামকড়া।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
মাঝে ছোট্ট একটি লেক নিয়ে বিস্তৃত মাঠের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যে কোন এক বিকেল কাটানোর জন্য দারুণ এক জায়গা। ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত এই উদ্যানটির পূর্ব নাম রমনা রেসকোর্স ময়দান। ঘোড়দৌড় খেলার জন্য জায়গাটি বেশ জনপ্রিয় ছিলো।
এখানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৭ মার্চের সেই জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এখানেই ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এখানকার নান্দ্যনিক স্থাপনা স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং শিখা চিরন্তন এখনো তার সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে। হাতে একটু বেশি সময় নিয়ে শিশুদের ঘুরিয়ে আনতে পারেন তিন নেতার মাজার আর কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি।
পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
রমনা পার্ক
ঢাকা নগরীর সব বয়সের অধিবাসীদের ঘোরাঘোরির জন্য সাধারণ পছন্দ হলো রমনা পার্ক। একসাথে এত জায়গা জুড়ে সুনিবিড় ছায়া ঘেরা পরিবেশ ঢাকার আর কোথাও নেই। প্রায় ৬৮.৫০ একরের এই পার্কটির দুর্লভ প্রজাতির গাছ-গাছালির ভিড়ে অপরূপ লেকটি সরবে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়।
প্রতি বছর এর বটমূল নামক জায়গাটিতে ছায়ানটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। ভোরে আলো ফুটার আগ থেকেই শরীর চর্চার ধুম পড়ে যায় পার্কটিতে। পাশাপাশি হওয়ায় আরো কিছু সময় নিয়ে এই পার্কের সাথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও ঘুরে নিতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এই স্থানদুটিতে ঘোরার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময়সূচী নেই এবং কোন ফি দিতে হয় না।
জিন্দা পার্ক
ঢাকা থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বের জিন্দা পার্ককে খুব বেশি দূরে বলা যায় না। পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়ক ধরে গেলে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই ঘন্টার মধ্যেই পৌছে যাওয়া যায় আদর্শ গ্রাম নামে খ্যাত এই দর্শনীয় স্থানটিতে। এটি পড়েছে মুলত নারায়ণগঞ্জ জেলার দাউদপুর ইউনিয়নে। এর প্রায় ১৫০ একর এলাকার জুড়ে আছে ২৫০ প্রজাতির দশ হাজারেরও বেশী গাছপালা এবং ৫ টি জলাধার। এর সুন্দর ভাবে গড়া গাছের উপর টং ঘর, পুকুরের উপর সাঁকো, মাটির ঘর, বড় সান বাধানো পুকুর, লাইব্রেরি দেখলে নিমেষেই মন ভরে যায়।
পড়ুন: রাতে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা
ঢাকা নগরবাসীর ডে-আউটের জন্য সেরা জায়গা হতে পারে জিন্দা পার্ক। জিন্দা পার্কে ঢোকার জন্য ১০০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটতে হয়। বাচ্চাদের জন্যে এই টিকেট ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হলে ১০ টাকা খরচ করতে হয়। যারা নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাবেন তাদের ৫০ থেকে ১০০ টাকা পার্কিং ভাড়ার কথা মাথায় রাখতে হবে।
লা রিভারিয়া রিসোর্ট এন্ড পার্ক
যারা রিসোর্ট পছন্দ করেন তাদের জন্য ঢাকার অদূরেই এই দৃষ্টিনন্দন জায়গাটি সেরা পছন্দ হতে পারে। যারা ঢাকার ভেতরে নদীর হাওয়া পেতে চান তাদের চাহিদাও মেটাবে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেসে গড়া এই রিসোর্টটি। কাঞ্চন ব্রীজ দিয়ে মায়ার বাড়ী বাস স্ট্যান্ড থেকে কাছেই এই রিসোর্টটিতে পৌছে বড়জোর আড়াই ঘন্টা লাগতে পারে।
এই দারুণ অবকাঠামোরটির অবস্থান মুলত নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ-এ। কোন প্যাকেজ বুকিং ছাড়া শুধুমাত্র ১০০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে রিসোর্টটি ঘুরে দেখা যাবে। এখানে সকাল ১০ থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত ডে-লং প্যাকেজের জন্য জনপ্রতি ২,৫০০ টাকা খরচ করতে হয়। এর মধ্যে পাওয়া যাবে কটেজে থাকা, দুপুরের খাবার এবং সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার সুবিধা।
পড়ুন: সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান: অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নগরী
পরিশিষ্ট
ঈদের ছুটিতে শিশুদের নিয়ে ঢাকার ভেতরে ঘোরার জন্য এই জায়গাগুলো কেবল খোলামেলাই নয়, বেশ নিরাপদও বটে। তাছাড়া উন্মুক্ত পরিবেশে সময় কাটানো শুধু মন নয়, দেহের জন্যও উপকারি। দৈহিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে শিশুদের স্বাভাবিক ক্রমবিকাশের জন্য প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা জরুরি। ভ্রমণের সময় শিশুদের এই দর্শনীয় স্থানগুলোর তাৎপর্যের পাশাপাশি এই জায়গাগুলোকে যে যত্ন করা আমাদেরই দায়িত্ব তা বুঝাতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ও ফুল ছেড়া সহ স্থানীয় সম্পদের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকার জন্য শিশুদেরকে অভ্যস্ত করে তোলা প্রত্যেক অভিভাবকদের দায়িত্ব।
মানবজীবনে পবিত্র ঈদুল আযহার শিক্ষা
পবিত্র হজ্জ্বের মৌসুমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হিজরি বর্ষপঞ্জির জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ থেকে ১২ এই তিন দিন মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি করা হয়। এর মাধ্যমে মুসলমানগণ নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হন। একই সাথে প্রত্যেকের মধ্যে চেষ্টা থাকে অন্তরের পাশবিকতাকে ধ্বংস করে আত্মশুদ্ধি এবং খোদাভীতি অর্জনের। হযরত ঈসমাইল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে নিজ পুত্রকে কুরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ভয় ও ভালোবাসার উপহার স্বরূপ আল্লাহ তাঁর পুত্রকে নিরাপদে রেখে তার স্থানে একটি দুম্বাকে রেখে দেন। ফলে ঈসমাইল (আঃ)-এর ছুড়িতে দুম্বাটি জবাই হয়ে যায়। সেই দিন থেকে বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। চলুন জেনে নেয়া যাক, পবিত্র ঈদুল আযহার তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে জীবনকে কিভাবে সমৃদ্ধ করা যায়।
জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পবিত্র ঈদুল আযহার ১০টি শিক্ষা
ত্যাগ-তীতিক্ষা
পৃথিবীতে বড় বড় অর্জনগুলোর নেপথ্যে রয়েছে হাজারো আত্মত্যাগ। দানবাকৃতির স্থাপনাগুলোর মধ্যে নিহিত আছে শত শত শ্রমিকের ঘাম পানি করা কষ্ট। বিশ্ব জুড়ে প্রতিটি বিপ্লবের পেছনে রয়েছে লাখ লাখ বিসর্জনের গল্প।
জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলেও প্রতিটি মানুষকে তার আরামপ্রদ দিনগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে পরিশ্রম করে যেতে হয়। আর প্রতিটি পরিশ্রম মানেই ত্যাগ-তীতিক্ষা, যার শিক্ষা যুগ যুগ ধরে দিয়ে আসছে এই কুরবানির ঈদ। জীবনে চূড়ান্ত সফলতা পেতে হলে স্বস্তির জায়গাগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। ত্যাগ করতে হয় জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটিও। এখানে কুরবানির পশুটিও সেই বস্তুগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করছে যেগুলো আঁকড়ে পড়ে থাকার জন্য সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌছা সম্ভব হচ্ছে না।
পড়ুন: পদ্মা সেতু কোরবানির আয়োজনে অভাবনীয় সুযোগ তৈরি করেছে: মন্ত্রী
আত্মশুদ্ধি
বাহ্যিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা একটি মানুষকে যেমন বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখে, মনের পরিচ্ছন্নতা তেমনি মানসিক শক্তি বাড়িয়ে তোলে। লোভ, হিংসা, অহঙ্কার, গীবত ইত্যাদি হচ্ছে মনের রোগ যেগুলো একটি মানুষকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।
ঈদে পশু জবাই দেয়া মানে মনের পশুকে হত্যা করা, যেটি এর ধারক মানুষটি সহ তার আশেপাশের সবাইকে ক্ষতি করতে পারে। এই পশুর বিনাশের ফলে মানুষের ভেতরে থাকা ভালো ও খারাপ সত্ত্বার মধ্যে শুধুমাত্র ভালো সত্ত্বাটাই বিরাজ করতে থাকে। এই ভালো সত্ত্বাটি মানুষকে প্রতিনিয়ত সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার দিকে ধাবিত করে। এভাবে তার জীবনে আসল শুদ্ধতা আসতে শুরু করে।
দায়বদ্ধতা
যে কোন কাজের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতার অভাব থাকলে সেই কাজের প্রতি গুরুত্ব থাকে না। এই দায়বদ্ধতা আসতে পারে ভালবাসা থেকে, শ্রদ্ধা থেকে অথবা কোন নিয়ম মানা থেকে। মনুষ্য সমান মানেই কতগুলো সম্পর্কের সমষ্টি আর এই সম্পর্কগুলো টিকে থাকে দায়বদ্ধতার কারণে।
পড়ুন: ঈদুল আযহার বাংলা সিনেমা ২০২২: সিনেমাপ্রেমিদের ঈদ আনন্দ
একটি মানুষের সফলতা শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়। তার এই অর্জনের উপর নির্ভর করে তার আশেপাশের মানুষগুলো। তাই সে যখন তা ভুলে যায় তখন তা শুধু তার সাফল্যের পথেই বাধা নয়, সেই মানুষগুলোর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যকে অবহেলা করার শামিল। কুরবানির জন্য উপযুক্ত প্রতিটি মুসলমানকে কুরবানি যথাযথভাবে পালন না করার জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আর এভাবেই কুরবানির ঈদ দায়বদ্ধতার শিক্ষা দেয়।
সম্পদের সমবন্টন
কুরবানির মাংস সমভাবে তিন ভাগ করতে হয়। এক ভাগ ফকীর-মিসকিনের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়- স্বজনের এবং এক ভাগ নিজের জন্য। এখানে কোন এক ভাগে বেশি দেয়ার নিয়ম নেই। অবশ্য কেউ চাইলে নিজের ভাগটুকু ফকীর-মিসকিন ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে পারেন। তবে সেখানে পরিবারের সকলের সম্মতি থাকতে হবে। কারণ পরিবারের হক নষ্ট করা ঠিক নয়।
এই বন্টন পদ্ধতি শুধু এই ঈদের জন্য নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বন্টনের সময় সমতা বিধানের তাগিদ দেয়। যে কোন পণ্য বিনিময়ের সময় ক্রেতা-বিক্রেতা কিংবা দাতা-গ্রহীতা উভয়কে খেয়াল রাখতে হবে যেন লেনদেনে কোন ত্রুটি না থাকে।
পড়ুন: কোরবানির হাট মাতাবে ‘সম্রাট’ ও ‘ট্রাম্প’
গরীব-দুঃখীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি
গরীবদের কথা উপেক্ষা করা হলে কোন ঈদ-ই সঠিক ভাবে পালন করা হবে না এবং এর জন্য গুণাহগার হতে হবে। কুরবানির মাংসের এক ভাগ তো আছেই, পাশাপাশি দান-সাদকা করার কথাও বলা হয়েছে। যারা একবেলা আহার যোগাড় করাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার মাধ্যমে ঈদের খুশী ছড়িয়ে দেয়াটাই ঈদের মুল বার্তা।
হত-দরিদ্র মানুষের একবেলা চাল যোগাড়ে যেখানে সমস্যা সেখানে মাংস কিনে খাওয়ার কথা তারা চিন্তাও করতে পারে না। তারা ঈদুল আযহার এই দিনটির জন্য রীতিমত অপেক্ষা করে থাকে। তাই নিজের ভাগে মাংস বেশি পড়লো কিনা এবং লোক দেখানো কুরবানি এসব কিছু বাদ দিয়ে গরীব-দুঃখীদের পাশে দাড়ালে ঈদের আসল উদ্দেশ্য হাসিল হবে।
সামাজিকতা
কুরবানির ঈদের কার্যক্রমগুলোর জন্য অনেকগুলো হাত একত্রিত হয়। কুরবানির জন্য পরিকল্পনা থেকে শুরু করে মাংস বন্টন পর্যন্ত কাজগুলো একের পক্ষে করা সম্ভব হয় না। এভাবে এই ঈদটি মানুষকে পরস্পরের কাছে আনে। পুরনো ঝগড়া-বিবাদ ভুলে প্রতিটি প্রাণে সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতা ছড়িয়ে দেয়।
পড়ুন: কোরবানির পশু কেনাবেচায় ডিজিটাল হাট চালু
কেউ একা পুরো একটা পশু কুরবানি দিতে অপারগ হলে প্রয়োজনে সে অন্যদের সাথে বড় পশু কুরবানিতে শরীক হতে পারে। এতে শরীক হওয়া প্রত্যেকে সমান ভাবে কুরবানির নেকী অর্জন করতে পারে। এই সম্মিলিত হওয়ার রেশ থেকেই ঈদ পরবর্তী বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতায় একে অপরের দিকে এগিয়ে আসে।
নিয়মানুবর্তিতা
ঈদে প্রতিটি ক্রিয়াকলাপ কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে পালন করতে হয়। ঈদের পশু নির্বাচন, ঈদের নামায আদায়, পশু কুরবানি, মাংস বন্টন সবকিছুর জন্য সঠিক সময় ও পদ্ধতি আছে। এর বাইরে কেউ নিজের খেয়াল-খুশী মত এই কাজগুলো সম্পন্ন করতে গেলে ঈদুল আযহার আসল লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। এই পদ্ধতিগুলো কারো উপর বোঝা নয়, বরং প্রতিটি মুসলমান নিজেদের সাধ্য মত এগুলো পালন করতে পারে।
এভাবে ঈদুল আযহা জীবনের প্রতিটি কাজে নিয়ম মেনে চলার শিক্ষা দেয়। প্রতিটি কাজে সফলতা পাবার মুলমন্ত্র হচ্ছে সেই কাজের প্রাসঙ্গিক নিয়মগুলোর বাইরে না যেয়ে তা সঠিকভাবে মেনে চলা।
পড়ুন: ঈদ উপলক্ষে ১ লাখ ৩০০ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ
হালাল উপার্জন
যে কোন স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। সম্পূর্ণ যাকাতের ন্যায় এই নিসাব পরিমাণটি হলো সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা কিংবা এর সমতূল্য বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্য। এমনকি সেই সমমূল্যের নগদ টাকা কারো কাছে থাকলে তিনি কুরবানি দেয়ার জন্য উপযুক্ত হবেন। এই পরিমাণটি খাদ্য, বাসস্থান এবং উপার্জনের উপকরণের বাইরে হতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই সমমূল্যের অর্থ অবশ্যই হালাল উপার্জনের হতে হবে। নতুবা হারাম উপার্জনের টাকা থেকে কুরবানি আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হয় না।
পরিকল্পনা মাফিক ব্যবস্থাপনা
যে কোন কাজ সম্পন্ন করা যেমন কাজটির জন্য পূর্ব পরিকল্পনার সাথে জড়িত ঠিক তেমনি কাজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা। বছর ঘুরে মাত্র একবার আসে ঈদুল আযহা। আর তাই এর জন্য আগে থেকে প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।
পড়ুন: ঈদুল আযহা: মহামারির মধ্যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে অনলাইনে গরু ক্রয়
হিসেবের সংসারে প্রতি মাসের খরচ থেকে কুরবানির জন্য টাকা বাঁচিয়ে রাখা এই পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত। আর এই পরিকল্পনার মাধ্যমেই স্পষ্ট হয় একজন মুসলমান কতটা গুরুত্বের সাথে কুরবানির ঈদকে গ্রহণ করছেন। অতঃপর কুরবানির পশু কেনা, কুরবানির কসাই ঠিক করা, কুরবানির পরবর্তী পরিস্কার করণ, মাংস বন্টন প্রভৃতির জন্য পূর্ব পরিকল্পনা থাকা দরকার। এভাবে জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে পথ দেখায় এই ঈদ।
মিতব্যয়ীতা
লোক দেখানো কুরবানি বা কুরবানির পশুর পিছনে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করা যেমন অপচয়ের শামিল, তেমনি দায়সাড়া গোছের পশু ক্রয় করাও ঠিক নয়। বাজার দর যাচাই করে, বিক্রেতা যেন প্রতারিত না হয় এবং একই সাথে অন্যদেরও যেন পশু কিনতে সুবিধা হয় সেদিকে লক্ষ রেখে কুরবানির পশু কিনতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা অর্থাৎ যতটুকু না হলেই নয় সেদিকে গুরুত্ব দিলে অপচয় রোধ করে পশু ক্রয় সম্ভব হবে।
তাছাড়া পশু ক্রয়ে খরচকৃত টাকা এবং পশুর রক্ত-মাংস নয়; এখানে আল্লাহর নির্দেশ পালনটাই আসল। এভাবে নিত্য-নৈমিত্তিক লেনদেনে মিতব্যয়ী হওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায়।
পড়ুন: ঈদুল আজহা: হাটের জন্য প্রস্তুত ঠাকুরগাঁওয়ের ‘বারাকাত’
পরিশিষ্ট
এভাবে পবিত্র ঈদুল আযহার শিক্ষা শুধু ধর্মীয় দিক থেকে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষকে উপকৃত করতে পারে। তাই কুরবানির যথাযথ ভাব গাম্ভীর্য অনুসারে এর কার্যকলাপগুলো পালিত হচ্ছে কিনা সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়। আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রদর্শন, অর্থের অপচয়, গরীব-দুঃখীদের উপেক্ষা করা এবং কুরবানির পশুকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থেকে কুরবানির আসল উদ্দেশ্যের প্রতি খেয়াল করা উচিত। অন্যথায় এত ঘটা করে পালিত উৎসবের কোন অর্থ তো থাকবেই না, বরং আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন। সর্বপরি, আত্মত্যাগ ও খোদাভীতিকে সামনে রেখে শুধু প্রয়োজনীয়তাটুকুতে গুরুত্বারোপ করলে ঈদুল আযহার উদ্দেশ্য হাসিল সম্ভব হবে।
ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেলেন ফায়েজ বেলাল
সামাজিক কাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই বছর ব্রিটিশ রাজ পরিবার থেকে সম্মানজনক ডায়না অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশের তরুন সামাজিক উদ্যোক্তা ফায়েজ বেলাল। তার প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগ বিওয়াইএস এর মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষা, ক্লাইমেট একশন, নারীপুরুষ সমানাধিকার সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকার জন্য এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।
অভয়, গার্লস সামিট, স্বপ্নজয়, সম্পর্কে ভাল থাকুক দেশ, শী ইস দ্যা ফার্স্ট, আমি থেকে আমরা, ইয়ুথ ফেস্ট, বরিশাল নুক সহ নানান উদ্ভাবনী প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সমূহ সমাধান করে আসছে ফায়েজ বেলালের প্রতিষ্ঠিত এই উদ্যোগ। বিগত ৮ বছরে বিওয়াইএস এর নানান কার্যক্রমের অংশ হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। বর্তমানে বরিশাল, ঢাকা এবং রংপুর বিভাগের প্রায় ১২ টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এক বিবৃতিতে ফায়েজ বেলাল বলেন, ‘আমাদের দেশের সবাই বলে বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত। বিওয়াইএস সেটা করে দেখিয়েছে। বরিশালের তরুণদের হাত ধরে শুরু হওয়া ছোট্র সংগঠনটি আজ দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত তরুণ সংগঠন হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ এবং কিশোরীদের নেতৃত্ব বিকাশকে প্রাধন্য দিয়ে প্রায় দশ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছি। আজকের এই সম্মনানা বিওয়াইএস এর শুধুমাত্র স্বকৃতি দেয়নি দিয়েছে মর্যাদাও।’
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু গ্লোবাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন করা হবে আগামী বছর
ফায়েজ আরও বলেন, ‘আমার এই অর্জন উৎসর্গ করছি জলবায়ু পরিবর্তন এলাকার হাজার হাজার নারী ও কিশোরীদের, যাদের উদ্যম ও প্রচেষ্টার কারণে বিওয়াইএস আজ এই সম্মাননা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’
২০৩০ সালের মধ্যে টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সামনে রেখে দুই মিলিয়ন নারী এবং কিশোরীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাদের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখতে কাজ করে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই সংগঠন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের প্রিন্সেস ডায়ানার নামে তার দুই ছেলে প্রিন্স হ্যারি ও প্রিন্স উইলিয়াম ব্রিটিশ রাজপরিবারের পক্ষে এই পুরস্কারটি প্রবর্তন করেন। পুরষ্কারটিকে ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাকর পুরষ্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১ জুলাই রাত ৮টায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে পুরষ্কার ঘোষণা হয়।
আরও পড়ুন: ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন’ পাচ্ছেন ২ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান
নিউইয়র্কে প্রথম ইংরেজি মঞ্চ নাটকে তাসনুভা আনান
সংবাদ উপস্থাপক, মডেল ও অভিনেত্রী তাসনুভা আনান সম্প্রতি নিউইয়র্কে তার প্রথম ইংরেজি মঞ্চ নাটক ‘শকুন্তলা’ তে অভিনয় করেছেন।
নাটকটি ধ্রুপদী সংস্কৃত লেখক কালিদাসের লেখা ক্লাসিক কাহিনী থেকে গৃহীত হয়েছে। এটি মঞ্চে নিয়ে এসেছে এনওয়াই-ভিত্তিক থিয়েটার গ্রুপ ঢাকা ড্রামা এবং নাটকটি নিউইয়র্কের কুইন্সের জ্যামাইকা সেন্টার ফর আর্টস অ্যান্ড লার্নিং-এ মঞ্চস্থ হয়।
তাসনুভা ইউএনবিকে বলেছে,‘শকুন্তলা’ নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী নারীদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আমি যখন একটি এনজিওর সঙ্গে কাজ করছিলাম, তখন আমি সেসব অভিবাসী নারীদের দুঃখ,কষ্ট দেখেছি, যা এই নাটকের অংশ হতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী সংবাদ উপস্থাপক তাসনুভা গত বছরের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বৈশাখী টিভিতে যোগ দেন। তিনি বিখ্যাত নাট্যদল বটতলার সক্রিয় সদস্য এবং ২০০৭ থেকে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
আরও পড়ুন: নিউইয়র্ক সিটি ফ্যাশন উইকে ট্রান্স মডেল হিসেবে বাংলাদেশের তাসনুভা আনান শিশির
টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ছবিতে তাসনুভা আনান শিশির
সিলেট শহরের দর্শনীয় স্থান: অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নগরী
বাংলা সাল্তানাত, বার ভূইয়া ও মুঘল সাম্রাজ্যের কিংবদন্তি নিয়ে রাজকীয় ভাবে নিজের অবিস্থিতির জানান দিচ্ছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নগরী সিলেট। সুরমা নদীর উত্তর তীর ঘেষে পাহাড়ী মাটিতে পরিণত এই উচ্চভূমির ভূখন্ডটিকে এক অপার সৌন্দর্য্য দান করেছেন এর বিলগুলো। উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ুর যত্নে ছেয়ে যাওয়া চা-বাগানগুলো সিলেট শহরের মুল আকর্ষণ। এছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকায় ঢাকা থেকে স্থলপথে ২৪০ কিলোমিটার দূরত্বের এই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দেশের অর্থনীতিতে। আজকের নিবন্ধটিতে প্রকৃতি ও ইতিহাসের অমৃত সুধায় ভরা সিলেট শহরের কিছু সেরা দর্শনীয় স্থানকে তুলে ধরা হবে।
সিলেট শহরের দশটি দর্শনীয় স্থান
জাফলং
এক সময়ের খাসিয়া জৈন্তা রাজার বিশাল সাম্রাজ্য কালের বিবর্তনে পরিণত হয়েছে ছোট্ট জাফলং-এ। ১৯৫৪ সালে শেষবারের মত জমিদারী প্রথা বিদায় হলেও পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ বুক সযত্নে ধরে রেখেছিলো এর সম্পদতূল্য পাথরগুলো। আর এই পাথরের জন্যই অবারিত বনভূমি হারিয়ে যাওয়ার পরেও এখানে গড়ে উঠেছিলো নতুন জনবসতি।
সেই জনবসতিই এখন পর্যন্ত সমুজ্জ্বল রেখেছে সিলেট থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে তামাবিল সীমান্তের পার্শ্ববর্তী এই জায়গাটিকে। মেঘালয়ের মেঘের পর্দা ভেদ করে ধূসর পাহাড়ের পদরেখা আর নদীর তীর ধরে অনন্তের মাঝে বাধা হয়ে দাড়ায় ঝুলন্ত ব্রিজ। লোকাল বাস, অটো রিকশা বা মাইক্রোবাস নিয়ে আড়াই ঘন্টায় পৌছে যাওয়া যেতে পারে এই অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমিতে।
পড়ুন: গরমকালে কম খরচে বাংলাদেশের কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন?
রাতারগুল
সিলেট মহানগর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত রাতা নামক গাছে আচ্ছাদিত এই জলাভূমিটি। রাতারগুলের মধ্যে দিয়ে গোয়াইন নদী যেয়ে মিশেছে চেঙ্গীর খাল-এ। শুধু এই রাতারগুল-ই নয়, গোটা সিলেটটাই ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হলো বর্ষাকাল। বুনো প্রকৃতিকে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ বাংলাদেশে খুব কমই পাওয়া যাবে। বনের গহীনে পাওয়া যাবে বন্য কাঠ গোলাপ।
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বেই যেসব খাবার সংরক্ষণ করা জরুরি
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বা পরবর্তী অবস্থায় খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য দুর্যোগের আগে থেকেই খাবার সংরক্ষণ জরুরি। দুর্যোগ পরবর্তী বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে নিরাপদে থাকাটাই কঠিন। সেখানে খাবারের ব্যবস্থা করার কোন অবকাশ থাকে না। তবে পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে এই ধাক্কাটা অনেকাংশে সামলে ওঠা যায়। মুলত এ অবস্থায় সমূহ ক্ষতির কথা বিবেচনা করেই এগোতে হবে। কেননা এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করা দুরূহ ব্যাপার। এরপরেও নিজের নিরাপদে টিকে থাকাটা সুনিশ্চিত করার জন্য বিকল্প উপায়গুলো অবলম্বন করলে বিপদ কাটিয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। এই নিবন্ধে দুর্যোগ পূর্ববর্তী বিভিন্ন ধরনের খাবার সংরক্ষণের উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের আগে কোন ধরনের খাবার সংরক্ষণ করতে হবে
চিড়া-মুড়ি-খৈ
সহজলভ্য শুকনো খাবার মানেই চিড়া, মুড়ি আর খৈ। দুর্যোগ সহ যে কোন জরুরি অবস্থায় এই শুকনো খাবারগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। যেহেতু দুর্যোগ পরবর্তী সময়ের জন্য যে সব খাবার বানানোর প্রয়োজন হয় না সে ধরনের খাবার সাথে রাখার দিকে গুরুত্ব বেশি দিতে হবে। সে দিক থেকে চিড়া, মুড়ি, খৈ উপযুক্ত খাবার হতে পারে। তাছাড়া এগুলো দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাঘব করতে সক্ষম।
মুড়ির মতো চিড়াও বেশ সহজলভ্য এবং এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখতে সক্ষম।
আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পশু-পাখির সুরক্ষা: বন্যা, খরা ও শৈত্য প্রবাহে করণীয়
আলু
সবজির মধ্যে দীর্ঘ দিন সঞ্চয় করে রাখার ক্ষেত্রে সর্বাধিক জনপ্রিয় হচ্ছে আলু। যুদ্ধ, বিভিন্ন দুর্ভিক্ষ পীড়িত সময়গুলোতে মানুষ আলু দিয়েই দিন যাপন করতো। শরীরে যথেষ্ট কার্বোহাইড্রেট যোগানের জন্য কোন পূর্ব প্রস্তুতি সহ রান্না করা ছাড়াই শুকনো খাবার হিসেবে আলুর বিকল্প নেই।
নারকেল, খেজুর ও বাদাম
শুকনো ফল হিসেবে সবচেয়ে উপকারি ফল হলো এই নারকেল, খেজুর ও বাদাম। এগুলো অনেক দিন ধরে খাবার যোগ্য থাকে এবং একই সাথে এগুলো খাওয়ার ফলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি হয়। এখানে নারকেল একই সাথে ক্ষুধা ও তৃষ্ণা দুটোই মিটাবে। পুরো এক বেলার ক্ষুধা নিবারণের জন্য একটি খেজুরই যথেষ্ট। আর তাতে যে কোন ধরনের বাদাম যোগ হলে পুরো আহারটিই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তাছাড়া এগুলো শিশুদের জন্যও বেশ পুষ্টিকর খাবার।
বিস্কুট ও গুড়
মুড়ি-চিড়া ও আলুর মত বিস্কুট এবং গুড় দুর্যোগের সময়ে ব্যবহারের জন্য সার্বজনীন খাবার। ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি খাবারে রুচির ভিন্নতা আনতে সহায়তা করে এই খাবারগুলো। গুড় দিয়ে চটজলদি শরবত বানিয়ে নিয়ে তৃষ্ণা মেটানো যায়। খাবার দুটি একত্রে শরীর সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। তবে বিস্কুট সংরক্ষণের সময় অবশ্যই এর মেয়াদ দেখে নিতে হবে। নতুবা মেয়াদোত্তীর্ণ বিস্কুট খেয়ে হিতে-বিপরীত ঘটতে পারে।
আরো পড়ুন: রাতে হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় প্রয়োজনীয় কিছু সতর্কতা
বিশুদ্ধ খাবার পানি ও ঔষধপত্র
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের পর অন্যান্য খাবারের সাথে পানিরও সংকট দেখা দেয়। আর কমপক্ষে পানি না হলে এমন ভয়াবহ অবস্থায় টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে যায়। তাই পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বিশুদ্ধ পানি সংরক্ষণের দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
আরো একটি দরকারি জিনিস হলো খাবার স্যালাইন। বন্যার সময় স্বাভাবিক ভাবেই পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় কমপক্ষে শরীরে পানির ঘাটতি পুরণের ব্যবস্থা রাখা বাঞ্ছনীয়। এর বাইরে সম্ভব হলে প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জামগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই দুর্যোগ পীড়িত অবস্থায় ফার্মেসিতে যেয়ে ঔষধ কেনার অবস্থা থাকবে না। তাই যে ঔষধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অব্যাহত ছিলো, কমপক্ষে সেগুলো সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
চাল-ডাল, লবণ
দুর্যোগের পরে যদি কোন ভাবে পানি গরম করার অবস্থা বিদ্যমান থাকে সে কথা ভেবে চাল-ডাল ও লবণ সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। তাহলে নিদেনপক্ষে ডাল-ভাত খাওয়া সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের বাহারি আম এবং তাদের উৎপাদনকারী অঞ্চল
বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের আগে খাবার সংরক্ষণের উপায়
বাষ্পরুদ্ধ কৌটায় চিড়া-মুড়ি-খই ও বাদাম রাখা
সবচেয়ে ভালো কৌটার মুখে কাগজ দিয়ে তারপর মুখ লাগালে। কৌটার ভেতরে পলিথিনের ভেতরে রাখলে আরো নিরাপদ হবে। এভাবে কৌটার ভেতরে বাতাস ঢুকে চিড়া-মুড়ি-খই নরম হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দূর হবে। এটি দীর্ঘ দিন চিড়া-মুড়ি-খই খাওয়ার যোগ্য রাখার একটা ভালো পদ্ধতি।
কাঠ, পেস্তা ও কাজু বাদাম সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। তবে বাদামের কৌটা অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় রাখা ভালো।
শুকনো ঠান্ডা স্থানে আলু সংরক্ষণ
পানির সংস্পর্শে আলুতে পঁচন ধরে তাই আলু সংরক্ষণের জন্য শুকনো স্থান বাছাই করা উচিত। এ জন্য বাঁশের ঝুড়ি, ডোল ও মাটির যে কোনো পাত্র নির্বাচন করা যেতে পারে। প্রতিটি ক্ষেত্রে পাত্র অবশ্যই ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। আলুতে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধে নিশিন্দা, নিম ও বিষ কাটালি পাতার গুঁড়ো আলুর স্তুপে মিশিয়ে দেয়া যায়। প্রায় সাত থেকে আট মাস আলু সংরক্ষণের জন্য এ পদ্ধতি বেশ কার্যকর।
আরো পড়ুন: এয়ার কন্ডিশনার ছাড়াই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার কার্যকরী উপায়
বিস্কুট ও লবণের বয়ামে চালের পুঁটলি রাখা
খোলা জায়গায় বিস্কুটের কুড়মুড়ে ভাবটা নিমেষেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই বায়ুরোধী পাত্রে বিস্কুট রেখে ব্লটিং পেপার দিয়ে মুখ ভাল করে লাগিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া অল্প কিছু চাল পুঁটলি বেঁধে বিস্কুটের সাথে রাখলে বিস্কুট সহজে নেতিয়ে যায় না।
লবণের পানি পানি হওয়া রোধ করতেও একই কাজ করা যেতে পারে। এভাবে দীর্ঘ দিন বিস্কুট ও লবণ ভালো রাখা যায়।
কিছু দিন পর পর গুড় রোদে দেয়া
বায়ুরোধী পাত্র ভর্তি পাটালি গুড় খুব গরমেও না আবার খুব ঠান্ডাতেও রাখা যাবে না। পাত্রের ভেতরে কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা যেতে পারে। দানাগুড় ও ঝোলাগুড়ের ভেতরে ভেজা চামচ ডোবানো যাবে না। সেগুলোর পাত্র কিছু দিয়ে ঢেকে অথবা মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। পাত্রের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বয়াম নির্বাচন করা যাবে না। গুড়ের স্বাদ ও গন্ধ বেশি দিন অটুট রাখার জন্য সিলভার বা কাঁচের পাত্র উত্তম। তবে যেভাবেই রাখা হোক না কেন, ফাঙ্গাসমুক্ত রাখতে কিছুদিন পর পর এই গুড় রোদে দিতে হবে।
আরো পড়ুন: কোন ধরনের আগুন কীভাবে নেভাবেন?
আস্ত নারিকেল সংরক্ষণ উত্তম
নারিকেল আস্ত রেখে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করাই সবচেয়ে সহজ। খোলা অবস্থায় সংরক্ষণ করতে ফ্রিজের প্রয়োজন হয়; তাও বেশিদিন এভাবে নারকেল ভালো রাখা সম্ভব হয় না। নারিকেলের পানি কাচের বয়ামে রাখা যেতে পারে। শুকনো নারিকেল সজ্জা অন্ধকার এবং অপেক্ষাকৃত শীতল জায়গায় বেশ কিছু দিন রাখা যেতে পারে। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে নারিকেলের নষ্ট হওয়া সম্ভাবনা বাড়ে। আবার তাপমাত্রা যত কম হয়, ফল তত দ্রুত তার স্বাদ হারিয়ে ফেলে।
রুম টেম্পারেচারে বদ্ধ জায়গায় খেজুর রাখা
অন্যান্য শুকনো খাবারগুলো মত খেজুরও মুখবন্ধ বয়ামে সংরক্ষণ করতে হবে। সিল করা যায় এমন প্লাস্টিকের ব্যাগও খেজুর রাখার জন্য ভালো। তবে পাত্রগুলো যেন সরাসরি সূর্যের আলো না পায় বা চুলার আশেপাশে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খেজুর অল্প ভেজা রেখে রুম টেম্পারেচারে সংরক্ষণ করা উত্তম।
চাল-ডালের পোকা নির্মুল
চালের ড্রামের মধ্যে কয়েকটি শুকনো মরিচ বা গোল মরিচ ফেলে রাখলে আর পোকা আসে না। এছাড়া নিমের ডাল-সহ কয়েকটি নিমপাতা চালে ডুবিয়ে রাখলে টানা কয়েক মাস চাল পোকামুক্ত থাকে। একই ভাবে তেজপাতা চালের পাশাপাশি মসুরের ডালের ক্ষেত্রেও বেশ ভালো কাজ করে।
আরো পড়ুন: বন্যার সময় খাবার পানি পরিশোধিত করার উপায়
মুগ ডালে উদ্ভিজ্জ তেল মাখিয়ে একটি মুখবন্ধ মাটির পাত্রে রেখে দেয়া যায়। পাত্রের ভেতর কয়েকটি শুকনো লাল মরিচ ও নিম পাতা ফেলে পাত্রটি সুতি কাপড় দিয়ে আবৃত করে রাখলে অনেক দিন ডাল ভালো থাকে। ইঁদুরের উৎপাত থেকে রক্ষা করতে চারপাশে তারের জালি ঘিরে রাখা যেতে পারে। বুটের ডাল ভালো রাখার জন্য মাঝে মধ্যে রোদে দিতে হয়।
পানির বিশুদ্ধকরণ ও ঔষধপত্র সংরক্ষণ
খাবার পানি আগে থেকে বিশুদ্ধ করে রাখাটাই উত্তম। অন্যথায় দুর্যোগের মুহুর্তে ফিটকিরি, ফিল্টারসহ পানি ফুটানোর অন্য ব্যবস্থাগুলো সংরক্ষিত রাখতে হবে। ঝড়ের পর বৃষ্টির পানি জমিয়ে তা পান করা যায়।
ঔষধপত্রগুলো বিশেষ করে খাবার স্যালাইন ঘরের একটু উচু স্থানে পোকামাকড়ের থেকে দূরে রাখতে হবে। জায়গাটি যেন অবশ্যই চুলা বা ঘরের অত্যধিক গরম জায়গা না হয়ে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা হয়।
আরো পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমছে, তবে আটকে পড়া বর্জ্যে দুর্ভোগ
শেষাংশ
যে কোন পরিস্থিতিতে বিকল্প রাস্তাগুলো খোলা রাখলে জটিলতাগুলোর সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকা যায়। আর এই বিকল্প পথ তৈরি করার সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হলো প্রতিরোধ বা পূর্বপ্রস্তুতি। প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে খাবারের ব্যবস্থা করার উপায় থাকে না। তাই বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের আগে থেকেই উপরোল্লিখিত খাবারগুলো সংরক্ষণ করে রাখলে দুর্যোগের প্রাক্কালে খাদ্যাভাব দূর করা যাবে। এমন দুর্যোগে নিজেকে নিরাপদে রাখার পরপরই প্রয়োজন পরে টিকে থাকার ব্যাপারটা। কেননা এ ধরনের দুর্যোগের ধাক্কা কয়েক দিন ধরে টেনে নিয়ে বেড়াতে হয়। এ অবস্থায় আগে থেকে সঞ্চিত খাবার এই দিনগুলোতে শরীর ও মন দুটোকে সবল রাখতে সাহায্য করবে।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি: ছায়ানটে সুফিয়া কামাল স্মরণে বর্ষা উৎসব স্থগিত
দেশে সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুফিয়া কামালকে স্মরণ করে বর্ষা উৎসব স্থগিত করা হয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে অনুষ্ঠানটি এবং ছায়ানটের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচার হওয়ার কথা ছিল।
কিংবদন্তি কবির ১১১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সুফিয়া কামাল স্মারক বর্ষা অনুষ্ঠান’(সুফিয়া কামাল স্মৃতি বর্ষা উদযাপন) শুরু হয়েছিল।
আরও পড়ুন: শুরু হচ্ছে শিশুতোষ অনুষ্ঠান ‘বই পড়ি জীবন গড়ি’
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লায়সা আহমেদ লিসা বলেন, সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে ১০ আষাঢ় ১৪২৯ শুক্রবার সুফিয়া কামাল স্মৃতি বর্ষা উদযাপন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন,পরিস্থিতির উন্নতি হলে শ্রাবণ মাসে এই অনুষ্ঠানের আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ৪০০ বছর আগের গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে ‘কাজল রেখা’
সুফিয়া কামাল ১৯৬১ সালের শেষ দিকে ছায়ানট প্রতিষ্ঠা করেন।