এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজে বিস্তারিত লিখে ভক্তদের মনের প্রশ্ন দূর করার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে পরিবর্তন আনা মাশরাফি।
সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিজের রাজনীতিতে আসার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এ ডানহাতি পেসার।
আগামী ৯ ডিসেম্বর মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সেই অনুযায়ী মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনে আসার কথা ৮ ডিসেম্বর।
কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর এখনো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি মাশরাফি। স্বাভাবিকভাবেই সংবাদ সম্মেলনের বড় অংশ যে তার রাজনীতিতে আসা নিয়ে হবে তা অনুমেয়ই ছিল। হলোও তাই।
রাজনীতি নিয়ে বেশির ভাগ প্রশ্ন থাকবে ভেবেই ম্যাচের আগেরদিনের সংবাদ সম্মেলন আরও আগে নিয়ে আসা হয়।
যেখানে মাশরাফি রাজনীতিতে আসার ব্যাখ্যায় নিজেকে সুপারস্টার ভাবছেন না। তাছাড়া খেলা ছেড়ে দিলে মানুষ তাকে আজীবন মনেও রাখবে না বলে ভাবেন দেশসেরা অধিনায়ক।
এর আগে ফেসবুক পোস্টে রাজনীতিতে আসার কারণ হিসেবে মাশরাফি মানুষের জন্য কাজ করতে চান বলে জানিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেই কথাটা আবারও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই স্বাভাবিক। উদ্দেশ্য যেটা আমার পরিষ্কার, মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, যদি সুযোগ পাই কাজ করব। আমি বিশ্ব ক্রিকেটে এমন কোনো সুপারস্টার না যে আট মাস পর আমি যখন খেলা ছেড়ে দিব তখন জনে জনে মানুষ আমাকে স্মরণ করবে।’
মাশরাফি বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার অবশ্যই শেষের দিকে। না আমি শচিন টেন্ডুলকার, না আমি ম্যাকগ্রা যে আমার কথা মানুষ স্মরণ রাখবে। আমি আমার মতো করেই ক্রিকেটটা খেলেছি। আমার স্ট্রাগলিং লাইফে যতটুক পেরেছি খেলেছি। তবে আমি সবসময় এনজয় করেছি মানুষের জন্য কাজ করতে পারা। এটা আমার ছোটবেলার শখ ছিল বলতে পারেন। যেই সুযোগটা আমি বললাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন।’
ঘরের মাঠে আপনার শেষ ওয়ানডে সিরিজ নির্বাচনের কারণে আলোচনা থেকে সরে যাচ্ছে, বিষয়টি কিভাবে দেখেন?
মাশরাফি: প্রথমত আমি বলেছি, আমার মাইন্ড সেট আপ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর্যন্ত মনে হচ্ছিল আমি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর পারবো কিনা জানি না। তারপরও আমার ফিটনেস পারফর্মেন্স ঊনিশ পর্যন্ত চলছিল বলে আমি মোটামুটি এগিয়েছি। সেটাই বলছি আমার বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাইন্ড সেট আপ আছে। তারপর রিভিউ করার সুযোগ আছে, আমি যদি সেই অবস্থায় না থাকি তাহলে অবশ্যই আমাকে কুইট করতে হবে। আর যদি থাকে তাহলে অবশ্যই আমি চেষ্টা করবো, তার আগেও যে কোনো কিছু হতে পারে। ২০১১ বিশ্বকাপের পর আপনাদের এখানেই ৫০% বিশ্বাস করেছিল যে আমার ক্যারিয়ার শেষ। আল্লার রহমতে আরও সাত বছর ক্যারি করতে পেরেছি। ওইখানে আমার ফ্যামিলির সবাই ভেবেছিল আমি পারবো কিনা।
শেষ সিরিজ নিয়ে?
মাশরাফি: আমার কাছে এ নির্বাচনে আসার আগেও যেমন ছিল এই সিরিজটাও সেরকম। আমার শেষ আর শুরুতে কিছু আসবে না। তবে অবশ্যই সিরিজটা জিততে চাই। আমার চোখে ঠিক আট দশটা সিরিজ যেভাবে খেলছি এটাও তাই।
ক্রিকেটের বাইরে পলিটিকাল মানুষজনের সাথে উঠা বসা?
মাশরাফি: না এখনও ঘুরার সুযোগ পাইনি। যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সিরিজটা খেলার পর যাবো। নড়াইলের মানুষজনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমি যেতে পারিনি, গেলে আমার যেই কাজগুলো আছে সেগুলো আমি করবো।
ভিন্ন দলের মন্তব্য?
মাশরাফি: আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে আপনার নিজের পারসনালিটি থাক উচিত। আপনি যদি কোনো দলকে সাপোর্ট করেন তাহলে অবশ্যই সেটা প্রকাশ্যে বলা উচিত। এমন অনেকেই আছে যারা সাপোর্ট করে কিন্তু বলতে পারে না। প্রত্যেকে যে যার দল করে তার সম্মানটা থাকা উচিত এবং তার মতো করে দেশের জন্য কাজ করবে এই মানসিকতাই থাকা উচিত। যারা কমেন্ট করছে বা করবে তারা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই।
তিন দিন পরে সিরিজ, সব কথা রাজনীতি নিয়ে, পুরোপুরি ক্রিকেটে আছেন?
মাশরাফি: এজন্যই (রাজনীতি নিয়ে) আমি আজ প্রেস কনফারেন্সে আসছি যাতে পোস্ট ম্যাচে আর কেউ রাজনীতি নিয়ে কথা না বলেন। না হলে ম্যাচের আগের দিন যদি প্রেস কনফারেন্স করতাম এই প্রশ্নগুলো তখন হতো। আমি ব্যক্তিগভাবে মনে করেছি আপনাদের মনে যদি প্রশ্ন থাকে তাহলে এখনি ফেস করা উচিত।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে এলেন না ব্যক্তিগতভাবে এলেন?
মাশরাফি: আমি ব্যক্তিগতভাবেই বলেছি, কালকে রাবিদ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করেছি। যে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। উত্তরগুলো দেয়া উচিত আমার মনে হয়। আজ হোক কাল হোক আমার ফেস করতেই হতো। খেলার মধ্যে যাতে এই প্রশ্নগুলো না হয় এইজন্যই আমার আসা।
বিশ্বকাপের পরও খেলবেন কিনা রিভিউ করবেন, সাংসদ হয়ে গেলে আর খেলাটা চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কিনা?
মাশরাফি: প্রথমত আমার লক্ষ্য বিশ্বকাপ পর্যন্তই থাকবে। বিশ্বকাপ পর্যন্ত আট মাসের ব্যাপার। আট মাস পর্যন্ত যেভাবে খেলে আসছি ওইভাবে খেলার চেষ্টা করব। আমার পারসোনাল গোলও ছিল বিশ্বকাপ। পরে সেটা রিভিউ করব কিনা সেই সময়ই বলে দেব।
নড়াইলের সমর্থন?
মাশরাফি: সাপোর্ট আলহামদুলিল্লা ভালো আছে। আমি পারসোনালি এখনও যেতে পারিনি তাই টোটালি বলাটা কঠিন। খেলার পরে গেলে বুঝতে পারব।
দেশের ক্রিকেটে মাশরাফির চিন্তা কী?
মাশরাফি: দেশের ক্রিকেটের কথা যেটা বললাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালোই চলছে। এখন যারা আছেন ক্লিয়ারলি বলতে পারেন। আমার অবস্থান থেকে যতটুকু সাপোর্ট দেয়ার ততটুকু দেব।
বোর্ডে আসতে চান কিনা?
মাশরাফি: আমি তো আগেই বললাম সামনে কি হবে জানি না। নির্বাচন হলে নির্বাচনে জিততে হবে। সো এই পর্যায় পার না হলে বলা যায় না কিছুই।
দল না জিতলে আপনার ভবিষ্যত?
মাশরাফি: হতে পারে, কালকে আপনার জীবনে কী ঘটবে আপনি জানেন না। আমার জীবনে কী ঘটবে সেটাও আমি জানি না। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্লিয়ার মাইন্ড নিয়ে যাচ্ছি কিনা। আমি শুধু নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। কালকে আমার সাথে কী হবে সেটা জানি না। তাই এতকিছু ভাবার সুযোগ এখানে নেই।
টেস্ট থেকে অবসর?
মাশরাফি: দেখা যাক, আমি তো দশটা কাজ তো একসাথে করব না। আর টেস্ট মনে হয় এমনিই বলে দেব। আর টেস্ট তো আট বছর ধরে খেলছি না।
পরিবার থেকে বাধা, সমর্থন?
মাশরাফি: খুব স্বাভাবিক, পারিবারিকভাবে জানার পর এটা একটা নতুন জিনিস তাদের জন্য। তাদের জন্যও মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে, আমারও লাগবে। এটাই স্বাভাবিক। হয়তো বা ওইভাবে রাজনীতি আমার বাসায় কেউ করেনি। এটাই সত্যি। তো কিছুটা সময় তো তাদেরও লাগবে মানিয়ে নিতে।
কীভাবে মানালেন?
মাশরাফি: মানামানি (হাসি)। সবাইকে যেটা বললাম অ্যাডজাস্ট করতে হবে।