যশোরের জেলা ও দায়রা জজকে তার অধীনস্ত যুগ্ম জেলা জজের নীচে নয় এমন একজন বিচারককে দিয়ে এ নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
রিটকারী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার বিচারপতি জে বিএম হাসানের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ূন কবির পল্লব এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
পরে হুমায়ূন কবির পল্লব জানান, এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে দাখির করা তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান হোসেন মাদকাসক্ত। এ অবস্থায় গত ২৮ জুন হাইকোর্ট ইমারানের ডোপ টেস্ট করে রিপোর্ট দাখিল করতে যশোরের সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়। সিভিল সার্জনের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরান মাদকাসক্ত নয়। এ অবস্থায় দুটি রিপোর্ট সাংঘর্ষিক হয়ে যাওয়ায় আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
গত ১৮ জুন ইমরানের কিডনি নষ্ট হবার উপক্রমের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ইমরানের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং তার চিকিৎসা যাবতীয় ব্যয় বিবাদীদের বহন করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের দুইজন আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার।
রিট আবেদনে বলা হয়, গত ৩ জুন যশোর জেলার সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের নেছার আলীর ছেলে ইমরান হোসেন সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ অফিসার কর্তৃক নির্মম প্রহারের শিকার হন। এ ঘটনায় ৯ জুন ‘যশোরে পুলিশি নির্যাতনে কলেজছাত্রের কিডনি নষ্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বর্তমানে যশোর শহরের বেসরকারি কুইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইমরানের দুটি কিডনির কার্যকারিতা খুবই খারাপ অবস্থা আছে এবং ৭ জুন থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস চলছে বলে জানা যায়। যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক এবং ইমরানের মৌলিক অধিকারের লংঘন।
এ রিটের প্রাথমিক শুনানি করে গত ২৩ জুন ইমরানের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে যশোরের সিভিল সার্জন ও ঘটনার তদন্তের বিষয়ে পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে রিপোর্ট তলব করেছিলে হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী গত ২৮ জুন সিভিল সার্জন এবং এসপির পক্ষ থেকে দেয়া পৃথক দুটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ছাত্রের কিডনি এখন পুরোপুরি নরমাল এবং সে শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে। আর পুলিশি প্রতিবেদনে ইমরানের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি এবং ইমরানকে মাদকসেবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
তবে ইমরানকে আটককারী তিন পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইমরানের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিবেদন দেখে আদালত ইমরানের ডোপ টেস্ট রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দে। সে অনুযায়ী সোমবার ডোপ টেস্টের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে ইমরান মাদকাসক্ত নয় বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করে হাইকোর্ট সোমবার এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।