অধস্তন আদালত
অধস্তন আদালতের কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরাতে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট
অধস্তন আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী বাদী হয়ে এই রিট করেছেন।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামী সপ্তাহে এই রিটের উপর শুনানি হতে পারে।
এর আগে আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরাতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর আইনসচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী।
নোটিশ পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা সরাতে অনুরোধ জানানো হয়। তা না হলে উচ্চ আদালতে রিট করে আইনি প্রতিকার চাওয়া হবে বলে আইনি নোটিশ উল্লেখ করা হয়েছিল।
নোটিশের জবাব না পেয়ে ১০ আইনজীবী আজ রিট করেন।
রিটকারী ১০ আইনজীবী হলেন— জি এম মুজাহিদুর রহমান, মোহাম্মদ নোয়াব আলী, সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মিজানুল হক, মুজাহিদুল ইসলাম, মেসবাহ উদ্দিন, মো. জোবায়দুল ইসলাম, আজিম উদ্দিন পাটোয়ারী ও সাজ্জাদ সারোয়ার।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির সাংবাদিকদের বলেন, দেশের অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের লোহার খাঁচা অতীতে ছিল না। বর্তমানে প্রায় শতাধিক আদালতে এই ধরনের খাঁচা বিদ্যমান, যার সিংহভাগ ঢাকায় অবস্থিত। এ ধরনের খাঁচা ব্যবস্থা সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কারো সঙ্গে নিষ্ঠুর-অমানবিক আচরণ করা যাবে না। অথচ, এই খাঁচা ব্যবস্থার মাধ্যমে নাগরিকদের সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক ও বর্বর আচরণ করা হচ্ছে।
রিট আবেদনকারীদের এই আইনজীবী আরও বলেন, সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ, নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদসহ অন্যান্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক দলিল এই ধরনের আচরণ অনুমোদন করে না। অন্ধকার যুগে মানুষকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হতো। এই ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ করা হতো। বর্তমানে নিম্ন আদালতে এই খাঁচা ব্যবস্থার মাধ্যমে মূলত নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে। এমনকি জামিনে থাকা আসামিদের হাজিরার জন্যও এই খাঁচা ব্যবহার করা হয়। তাদের এই খাঁচায় ঢোকানো হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের সময়ও জামিনে থাকা আসামিদের খাঁচায় ঢুকিয়ে রাখা হয়।
রিটে, আদালত কক্ষে লোহার খাঁচা স্থাপনের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং এরই মধ্যে স্থাপিত লোহার খাঁচা অপসারণ করে কাঠের ডক কেন প্রতিস্থাপন করা হবে না- এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে।
যেসব আদালত ও ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের লোহার খাঁচা স্থাপন করা হয়েছে, তার একটি তালিকা হাইকোর্টে দাখিলের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছে রিটে।
রুল হলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিনে থাকা আসামিদের আদালতকক্ষে লোহার খাঁচায় না ঢোকানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছে এই রিটে।
অধস্তন আদালতের ২১১ জন করোনা আক্রান্ত
অধস্তন আদালতের মোট ২১১ জন বিচারক ও কর্মচারী করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪ জন বিচারক এবং ১৬৭ জন কর্মচারী রয়েছেন।
৫ কার্যদিবসে অধস্তন আদালতে ৪,৯৬০ আসামির জামিন
সারাদেশে অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে গত পাঁচ কার্যদিবসে ১০,৮৬৬টি মামলার জামিন-দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত ৪০ বিচারক
ভার্চুয়াল আদালতে কাজ করতে গিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত অধস্তন আদালতের ৪০ বিচারক ও ১৩৬ কর্মী এবং সুপ্রিম কোর্টের ৪৫ কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
অধস্তন আদালতের ২১ বিচারক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
অধস্তন আদালতের মোট ৮৩ জন বিচারক ও কর্মচারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২১ জন বিচারক এবং ৬২ জন কর্মচারী রয়েছেন।
২০ বিচারকসহ আদালতের ১০৩ কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত
ভার্চুয়াল আদালতে কাজ করতে গিয়ে শনিবার পর্যন্ত অধস্তন আদালতের ২০ জন বিচারক, ৫৯ কর্মী এবং সুপ্রিম কোর্টের ২৪ কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
রেড জোনে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাধারণ ছুটি
যে সকল অধস্তন আদালত রেড জোনের মধ্যে পড়েছে, সেসব আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির আওতাভুক্ত থাকবেন।