বিক্ষোভকারী
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে কলম্বিয়ায় হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ আগস্ট) দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার প্রধান শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে নেমেছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, কলম্বিয়ার প্রথম বামপন্থী সরকার জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করেছে। ফলে দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে এবং দেশে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর সরকার বলছে, গ্যাসোলিন ভর্তুকি বাবদ বছরে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।
তারা বলেছে, জাতীয় তেল কোম্পানি ইকোপেট্রোলকে ঋণ পরিশোধের জন্য ভর্তুকি বাদ দিতে হবে এবং সামাজিক কর্মসূচির জন্য আরও তহবিল খালি করতে হবে। ইকোপেট্রোল দেশটির বেশিরভাগ জ্বালানি উৎপাদন করে।
দারিদ্র্য হ্রাস করার এবং দেশের অবশিষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে শান্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পরেই পেট্রোর প্রশাসনের ওপর জনগণের অসন্তোষ বেড়েছে এবং বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুসারে, পেট্রোর প্রশাসন দেশের গ্রামীণ অংশে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং কলম্বিয়ার অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করেছে। তবে ২০২৩ সালে দেশটির অর্থনীতি মাত্র এক শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কলম্বিয়ার সুপারমার্কেটের জন্য হিমায়িত খাবার এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনকারী একটি ছোট কোম্পানির ম্যানেজার আলেজান্দ্রা মেন্ডোজা বলেছেন, ‘এই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা ব্যবসা-বিরোধী।’
তিনি তার কোম্পানির হলুদ জ্যাকেট পরে সোমবারের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন।
মেন্ডোজা বলেন, ‘আমাদের খরচ এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে এবং পেট্রলের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি মাসে আমাদের বাজেট সামঞ্জস্য করতে হবে।’
আরও পড়ুন: স্কুলে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করবে ফ্রান্স: শিক্ষামন্ত্রী
কলম্বিয়ায় গ্যাসোলিনের দাম গত বছরের আগস্ট মাসে ৯ হাজার পেসো প্রতি গ্যালন (২ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার) থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৪ হাজারের বেশি (৩ দশমিক ৪০ ডলার) হয়েছে, কারণ কলম্বিয়ার সরকার প্রতি মাসে ভর্তুকি কমিয়েছে।
কলম্বিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা বছরের শেষ নাগাদ গ্যাসোলিনের দাম গ্যালন প্রতি ১৬ হাজার পেসো বা প্রায় ৪ ডলার করতে চান। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান গ্যাসের দামের সমান। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ন্যূনতম মজুরি কলম্বিয়ার ন্যূনতম মজুরির চেয়ে চার গুণ বেশি। কলম্বিয়ার ন্যূনতম মজুরি মাসে ২৮০ ডলার।
গত জুলাই মাসে মন্ত্রণালয় জানায়, অক্টোবরে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের পর ডিজেলের জন্য ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ করা হবে এবং আগামী বছরের শেষে ডিজেল জ্বালানির দাম দ্বিগুণ হবে।
অথচ, কলম্বিয়ার বেশিরভাগ পণ্যবাহী ট্রাক চালাতে ডিজেল ব্যবহৃত হয়।
পেট্রোর সরকারের যুক্তি, দেশের পেট্রোলে ভর্তুকি দেওয়ায় বেশিরভাগ ধনী কলম্বিয়ানরা উপকৃত হয়েছে, যারা যানবাহনের মালিক।
তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কিছু গ্রুপের সঙ্গে তিনি গ্যাসোলিনের দাম নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক।
গত শনিবার পেট্রোর প্রশাসন দেশের ট্যাক্সি ড্রাইভার ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে একটি চুক্তি বাতিল করেছে।
তবে কলম্বিয়ার বিরোধী দলের সদস্যরা বলছেন, সরকারের জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ডেলিভারি কর্মী, চালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইতোমধ্যে তারা মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সংগ্রাম করছে।
কংগ্রেসওম্যান জেনিফার পেড্রাজা সোমবারের বিক্ষোভ সংগঠিত করতে সাহায্য করেছিলেন।
জেনিফার বলেন, সরকার পেট্রল ও ডিজেলের উপর কম বিক্রয় কর ধার্য করে জ্বালানির দাম বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ প্রশাসনকে একটি ভিন্ন পেট্রল নীতি নিয়ে আলোচনা করতে বলছে।’
তিনি আরও বলেন, কলম্বিয়ার জাতীয় তেল কোম্পানির ‘সবার জন্য পেট্রল সাশ্রয়ী করতে আগ্রহী হওয়ার সময় এসেছে।’
আরও পড়ুন: মাদাগাস্কারে ইন্ডিয়ান ওশান আইল্যান্ড গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্টেডিয়াম বিধ্বস্ত, নিহত ১২
সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে একমত মোদি-শি জিনপিং
ইমরান খান গ্রেপ্তার: বিক্ষোভকারী-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১০
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার থেকে পাকিস্তানে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং এক হাজার ৭৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির বিভিন্ন হাসপাতাল ও পুলিশ কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা সিনহুয়াকে এ তথ্য জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ ও হাসপাতালের একাধিক সূত্র সিনহুয়াকে জানিয়েছে, নিহতরা সবাই বেসামরিক নাগরিক এবং আহতদের মধ্যে এক হাজার ৩৯৩ জন বেসামরিক এবং ৩৫৭ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর অস্থিরতা থামাতে সেনা মোতায়েন
খানের গ্রেপ্তারের পর তার পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের কর্মীরা রাস্তায় নেমে আসার পর সংঘর্ষ শুরু হয়।
ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) মঙ্গলবার খানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে দুর্নীতির অভিযোগে আটক করে, যখন তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলার শুনানির জন্য তাকে সেখানে হাজির করা হয়েছিল।
দেশটির ফেডারেল সরকার বিক্ষোভকারীদের থামাতে এবং আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে রাজধানী ইসলামাবাদ এবং পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের প্রধান শহরগুলোতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে।
আরও পড়ুন: ৮ দিনের রিমান্ডে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
ইমরান খানের গ্রেপ্তার: পাকিস্তানজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা
শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি, বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের টিয়ারশেল
অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র ঘাটতি এবং মানুষের জীবিকা ব্যাহত হওয়ার কারণে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে করা বিক্ষোভে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার থেকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী ও আশেপাশের এলাকায় পুলিশ কারফিউ জারি করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, কালো পোশাক পরা, কালো পতাকাধারী, সরকারবিরোধী স্লোগান ও ব্যানার বহনকারী হাজার হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছুঁড়ছে।
বিক্ষোভকারী এবং অন্যান্য সমালোচকরা বলেছেন, ১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দায়ী। তারা ঘাটতি দূর করার প্রতিশ্রুতি পূরণ না করতে পারায় দুই মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া রনিল বিক্রমাসিংহেকেও দায়ী করে।
সাধারণ নাগরিক ও বিরোধী দলীয় কর্মীরা শনিবার আরও কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী নিয়ে কলম্বোতে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দেয়। কিন্তু তার আগেই পুলিশ শুক্রবার রাত ৯টা থেকে কলম্বো ও এর শহরগুলোতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করেছে।
কারফিউ ঘোষণা করায় দেশটির বিরোধী দলসমূহ ও শ্রীলঙ্কার বার অ্যাসোসিয়েশন সরকারের সমালোচনা করেছে। তারা বলছে ‘কারফিউ স্পষ্টতই বেআইনি ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।’
বিরোধী নেতা সজিথ প্রেমাদাসা কারফিউকে ‘এক ধরনের প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি এক টুইটে বলেছেন, ‘আগামীকাল রাস্তায় নামুন। স্বৈরাচারকে পরাজিত করে গণতন্ত্রকে বিজয়ী করতে জনগণের সঙ্গে যোগ দিন। হ্যাঁ আমরাও পারি।’
আরও পড়ুন: গোতাবায়ার বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের হামলা
শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চুং, দেশটির জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ করার জন্য স্থান ও নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি এক টুইটে বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা ও বলপ্রয়োগ অর্থনীতিকে ঠিক করবে না কিংবা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারবে না। শ্রীলঙ্কানদের এই মুহূর্তে যা (সবচেয়ে বেশি) প্রয়োজন।’
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে তারা বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগতার কথা জানায়। দেশটির বিদেশি ঋণের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলারে ঋণ পরিশোদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভ প্রায় শূন্যের কোটায় এবং দেশটি নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, জ্বালানি, রান্নার গ্যাস ও ওষুধ আমদানি করতে অক্ষম।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালানোর জ্বালানির অভাবে প্রতিদিন মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকছে। জ্বালানি ও গ্যাস কিনতে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য প্রতিবেশি ভারতের সাহায্যের ওপর দেশটি টিকে আছে।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশচুম্বি হয়ে পড়েছে। যার ফলে দরিদ্র ও দুর্বল গোষ্ঠী মারাত্মক চাপে পড়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে দেশটির স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সরকার প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুললোতে থাকা অন্যান্য রাজ্যের কর্মচারীদের বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছে।
আরও পড়ুন: জ্বালানি সংকটে শ্রীলঙ্কায় আরও এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ
শ্রীলঙ্কায় তীব্র সংকটের মুখে সরকারের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের
শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ চলছে
সারা দেশে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে সোমবার টানা অষ্টম দিনের মতো ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
ধর্ষণের প্রতিবাদে শাহবাগে বিক্ষোভ অব্যাহত
সারাদেশে চলমান ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে শুক্রবার টানা পঞ্চমদিনের মতো বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।