বাগেরহাট
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ: বাগেরহাটের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভৈরব, দড়াটানা, পানগুছি, পশুর এবং বলেশ্বরসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে বুধবার সকালে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
সকাল থেকে মাঝে মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর দমকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সাগর প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে উঠেছে। মোংলা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সর্তক সংকেত চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ২০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করেছে।
এদিকে বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে আড়াই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অর্ধশতাধিক ট্রলার নিয়ে পাঁচশতাধিক জেলে সুন্দরবনের দুবলারচর, আলোরকোল এবং বেদাখালী খালে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি এখন ভারত উপকূলের ছত্রিশগরে অবস্থান করছে। আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। স্থল নিম্নচাপটি বৃষ্টি ঝরিয়ে আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যাবে।
মোংলা বন্দরে ৩ নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, সাগর উত্তাল হয়ে উঠায় দুই দিন ধরে পাঁচশতাধিক জেলে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ওই সব জেলেরা তাদের ট্রলার নিয়ে নিরাপদ স্থানে রয়েছে। জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে আড়াই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লা জানান, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ: সুন্দরবনে আড়াই ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে
বাগেরহাটে ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা
বঙ্গোপসাগরে পশুর এবং বলেশ্বর নদীর মোহনায় বেহুন্দিসহ নানা ধরনের জাল পেতে রাখার কারণে ইলিশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ঝাঁক বেঁধে ইলিশ নির্বিগ্নে উপকূলের নদ-নদীতে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে করে সাগর এবং নদ ও নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য কমে গেছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইলিশের ওপর পড়েছে।
বিচরণ কমে যাওয়ায় জেলেরা জাল ফেললেও কাঙ্খিত ইলিশ ধরা পড়ছে না। ট্রলারের সক্ষমতা না থাকায় এই অঞ্চলের জেলেরা গভীর সাগরে যেতে পারেনা। ফলে উপক‚লীয় জেলা বাগেরহাটের পাইকারি মাছের আড়তে ইলিশের সরবারহ অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় জেলে, ট্রলার মালিক, আড়তদার এবং ইলিশ ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, মাছের প্রজননের সময় কেবলমাত্র বাংলাদেশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণায় আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে সাগরে অবরোধের দাবি করেছেন সুন্দরবন অধ্যুষিত উপকূলীয় বাগেরহাট জেলার জেলেরা। তবে প্রজনন বাড়াতে নদ ও নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার পক্ষে মৎস্য বিভাগ।
অপরদিকে, জেলা মৎস্য বিভাগ এবং সুন্দরবন বিভাগ সাগর মোহনায় ইলিশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে।
বাগেরহাট অঞ্চলের জেলে ও ট্রলার মালিকরা বড় বড় টোলিং জাহাজ বন্ধ এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাগরে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ অবরোধের দাবি জানিয়েছে। জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
মৎস্য বিভাগ বলছে, সুন্দরবন মাছের অনেক বড় প্রজনন ক্ষেত্র। এজন্য গোটা সুন্দরবনের নদ-নদীতে সারা বছর জুড়ে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা গেলে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যাবে।
সুন্দরবন বন বিভাগ জানায়, গোটা সুন্দরবনে সারা বছর মাছ আহরণ বন্ধ রাখতে হলে আগে জেলেদের বিকল্প কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
শনিবার বাগেরহাট কেবি বাজার পাইকারি মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশ নিয়ে কোনো ট্রলার ঘাটে ভেড়েনি। ট্রলার শূন্য আড়তের ঘাট। আড়তে ইলিশ নেই বললেই চলে। সামান্য পরিমাণ ইলিশ ছিল যা কোল্ডস্টোর থেকে আড়তে তোলা হয়েছে। তবে আড়ত জুড়ে ইলিশের ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
বাগেরহাটে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর, আটক ৩
বাগেরহাটের মোংলায় একটি সর্বজনীন কালী মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতে উপজেলার ‘কানাইনগর সর্বজনীন কালী মন্দির’-এ এই প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ তিন যুবককে আটক করেছে।
আটক যুবকেরা হলেন- মো. রাহাত চৌধুরী (২০), মো. নয়ন মুন্সি (২৪) এবং মো. আসিফ খান (২২)। এদের সবার বাড়ি কানাইনগর গ্রামে।
স্থানীয় বাসিন্দা শান্তনা রাণী বিশ্বাস জানান, তিনি প্রতিদিনের মতো রবিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে মন্দিরে গিয়ে দেখেন ভাঙা প্রতিমা মেঝেতে পড়ে আছে। পরে তিনি প্রতিবেশিদের বিষয়টি জানান।
মন্দির কমিটির সভাপতি দেবাশীষ বিশ্বাস জানান, খবর পেয়ে মন্দিরে গিয়ে ভাঙা প্রতিমা দেখতে পান তিনি।
দেবাশীষ বিশ্বাস আরও জানান, মন্দিরের সামনে তাদের একটি মাঠ রয়েছে। সম্প্রতি বালু দিয়ে ওই মাঠ তারা ভরাট করেছে। শনিবার বিকালে স্থানীয় ১৫ থেকে ১৬ জন যুবক ওই মাঠে ফুটবল খেলছিল। এসময় তিনি তাদের ওই মাঠে খেলা করতে নিষেধ করে। এতে ওই যুবকরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা এবং এক পর্যায়ে হট্টগোল তৈরি হয়। এসময় ওই যুবকরা তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।
দেবাশীষের ধারণা মাঠে ফুটবল খেলা নিয়ে যাদের সঙ্গে তার বাক-বিতণ্ডা হয়েছে, তারাই মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করতে পারে।
রবিবার সকালে এ ঘটনার খবর পেয়ে সহকারি পুলিশ সুপার আসিফ ইকবাল ওই মন্দিরে যান এবং মন্দির কমিটিসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। বর্তমানে মন্দিরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মোংলা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি পীযুষ মজুমদার জানান, ওই এলাকার হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে বসবাস করেন। তাদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রয়েছে।
যারা মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, শনিবার রাতের কোন এক সময়ে সর্বজনীন ওই মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে তারা মন্দিরে ছুটে গিয়ে কমিটির কর্মকর্তা এবং স্থানীয়দের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। ভাঙচুরের বিষয়টি পুলিশ গভীর ভাবে তদন্ত করছে।
তিনি বলেন, ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে কি না তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। ফুটবল খেলা নিয়ে যাদের সঙ্গে মন্দির কমিটির বাক-বিতণ্ডা হয়েছে তাদের মধ্যে তিন যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: নড়াইলে ভাঙচুর: ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে সেই যুবক গ্রেপ্তার
নড়াইলে হিন্দু বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর
বাগেরহাটে ট্রাকের ধাক্কায় নছিমন চালক নিহত
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার পাগলা-শ্যামনগর এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় নছিমন চালক নিহত এবং দুজন আহত হন। এই সময় নছিমনে থাকা পাঁচটি গরু মারা যায়। শুক্রবার সকালে বাগেরহাট-ঢাকা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত নছিমন চালক ফজর আলী শেখ (২৫) উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় পিকআপ ভ্যানচালকসহ নিহত ২
আহতরা হলেন-চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের গরু ব্যাপারী আব্দুল হক সরদার (৬০) এবং তার ছেলে শাহাদাৎ সরদার (২৪)।
ফকিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আলীমুজ্জামান জানান, শক্রবার সকালে বাবা-ছেলে চিতলমারী থেকে ওই নছিমনে গরু নিয়ে বিক্রির জন্যফকিরহাটের বেতাগা পশুর হাটে যাচ্ছিল। পথে নছিমনটি পাগলা-শ্যামনগর এলাকায় পৌঁছালে পেছন দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। গরুবোঝাই নছিমনটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে ঘটনাস্থলে নছিমনের চালক ও পাঁচটি গরু মারা যায়। দুর্ঘটনায় আহত বাবা-ছেলেকে প্রথমে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ফ্লাইওভারে প্রাইভেটকার-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ৩
এঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি।
বাগেরহাটে কোটি টাকার পণ্য নিয়ে ট্রলারডুবি
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে বিভিন্ন মুদি দোকানের মালামাল নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে গেছে। বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার সন্যাসী বাজার এলাকায় খালে নৌঙ্গর করা অবস্থায় এমভি বলেশ্বর নামে ওই ট্রলার ডুবে যায়।
স্থানীয়রা ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে মালামাল উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ট্রলারের ম্যানেজার সান্টু মাঝি জানান, বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন মুদি দোকানের প্রায় কোটি টাকার মালামাল নিয়ে ট্রলারটি বুধবার ভোরে খুলনার বড়বাজার থেকে ছেড়ে আসে। কিছু মালামাল নামাতে সকাল ১০টার দিকে সন্যাসী বাজার এলাকায় নৌঙ্গর করে ট্রলারটি। এসময় হঠাৎ করে এক পাশ কাত হয়ে ট্রলারটি ধীরে ধীরে খালে ডুবে যায়।
তিনি জানান, ট্রলারে দুটি ফ্রিজ, ডিজেল, চাল, ডাল, চিনি, বাদামসহ কোটি টাকা মূল্যোর বিভিন্ন মালামাল রয়েছে। এসব মুদি দোকানের মালামাল বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের সন্যাসী এবং পিরোজপুরের কাউখালী, তুষখালী এবং মঠবাড়িয়া বাজারে নামানোর কথা ছিল।
স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) অনুপ কুমার জানান, ৬০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্টিল বড়ির ওই ট্রলারটি একপাশ কাত হয়ে ডুবে গেছে। স্থানীয় লোকজন ট্রলার থেকে মালামাল উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।
পড়ুন: মেঘনা চরে ফেরি আটকা, যাত্রীদের উদ্ধার
জাহাজ ও ফেরি ভাড়া ২০ শতাংশ বাড়াল বিআইডব্লিউটিসি
বাগেরহাট: লোডশেডিংয়ে ভোগান্তি বাড়ছে, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা
বাগেরহাটে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। দিন-রাতে তিন থেকে চার বার লোডশেডিং করা হচ্ছে শহরে। আর গ্রাম অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বেশি। লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাসা-বাড়িতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতির মুখে রয়েছে ব্যবসায়ীরা।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রতিদিন চাহিদায় তুলনায় ২৫ মেগাওয়াট এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদার তুলনায় আড়াই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে। সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।
জানা গেছে, বাগেরহাটের গ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবারহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। আর বাগেরহাট পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহের দায়িত্বে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। সব ধরণের ব্যবসা-বার্ণিজ্য এবং উৎপাদনমুখী কলকারখানায় লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মালটিমিডিয়া ক্লাশ করানো সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় ঘুরছে না ফ্যান আর জ্বলছে না লাইট।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, জাতীয় গ্রিড থেকে বাগেরহাট ১৩২/৩৩ কেবি গ্রিড উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবারহ করা হয়। এই উপকেন্দ্র থেকে বাগেরহাট জেলা এবং পিরোজপুরের সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবারহ করে। বাগেরহাট উপকেন্দ্রের প্রতিদিন পিক আওয়ারে চাহিদা ৯৮ মেগাওয়াট। সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন জানান, জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক সংখ্যা তিন লাখ ৪০ হাজার। ৬১টি ফিডারের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবারহ করা হয়। প্রতিদিন তাদের চাহিদা রয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু সেখানে তারা পাচ্ছে ৫০ মেগাওয়াট। ২৫ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে। দিন-রাতে চার বারে চার ঘণ্টা লোডশেডিং করে বিদ্যুতের ঘাটতি মিটানো হচ্ছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
পড়ুন: স্কুলশিক্ষকের তৈরি ভাসমান সেতুতে দুর্ভোগের অবসান হলো গ্রামবাসীর
বাগেরহাটে বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বাগেরহাটের মোংলায় বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন একটি সেপটিক ট্যাংকের ডোবায় পড়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে দিগন্ত কলোনি এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মৃত ইয়ামিন হোসেন (২১ মাস) মোংলা পৌর শহরের কবরস্থান রোডের বাবুল হোসেনের ছেলে।
শিশুটির মামা মানিক খান জানান, তার বোন খাদিজা বেগম শিশু সন্তান ইয়ামিনকে নিয়ে মোংলার দিগন্ত কলোনি এলাকায় বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। শিশুটি বাড়ির পাশে খেলা করতে করতে নির্মাণাধীন ওই সেফটি ট্যাংকের ডোবায় পড়ে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুজির পর ওই ডোবায় শিশুটিকে ভাসতে দেখে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃতঘোষণা করেন।
মোংলা থানার তদন্ত বিভাগের ওসি বিকাশ চন্দ্র রায় বলেন, সুরতহাল রিপোর্ট শেষে শিশুটির মৃতদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পড়ুন: দেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ১৪ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু
যশোরে গর্তের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
বাগেরহাটে চলছে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলা
বাগেরহাটে বৃক্ষমেলায় দেশি-বিদেশি ফলজ, বনজ ঔষধিসহ নানা জাতের গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে। নার্সারিতে মিলছে ৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস, ৪০ প্রজাতির অ্যাডেনিয়াম এবং ৪০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি আমের চারা। সেইসঙ্গে লাল, সাদা, নীল, গোলাপীসহ নানা রঙের ফুলের চারা রয়েছে মেলায়। মেলায় আসা নার্সারিগুলোতে দেশি-বিদেশি নানা জাতের গাছের চারা ভরপুর থাকলেও এখনো বিক্রি জমে উঠেনি।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বাগেরহাট শহরের শালতলার জেলা পরিষদ মিলনায়তন চত্ত্বরে সাতদিন ব্যাপী এই মেলা শুরু হয়েছে।
মেলায় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫টি নার্সারি স্টল দিয়েছে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসন, সামাজিক বন বিভাগ ও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ এই মেলার আয়োজন করেছে। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী এই মেলা চলবে।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে বৃক্ষমেলায় গিয়ে দেখা গেছে, নার্সারি মালিকরা তাদের স্টলের সামনে দেশি-বিদেশি ফলজ, বনজ এবং ঔষধিসহ নানা জাতের গাছের চারা সাজিয়ে রেখেছে। দর্শনার্থীদের জানার সুবিধার্থে অনেক গাছের চারার সাথে নাম লিখে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। মেলায় ঘুরে আর আর মর্ডান নার্সারিতে ৫০ প্রজাতির ক্যাকটাস এবং ৪০ প্রজাতির অ্যাডেনিয়াম দেখা মিলেছে। আল্লাহর দান নার্সারিতেও দেখা গেছে দেশি-বিদেশি অনেক জাতের গাছের চারা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় পর বাড়ি ফেরার পথে শিক্ষার্থীরা মেলায় প্রবেশ করে ঘুরে ঘুরে দেখছে। এসময় নানা বয়সের নারী-পুরুষ দর্শনার্থী ও ক্রেতা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন।
মেলায় আসা নার্সারির মালিকরা জানান, তাদের বিক্রি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবে আগামিতে বিক্রি বাড়ার আশায় রয়েছে নার্সারি মালিকরা।
আরও পড়ুন: বিজয়নগর বছরে ৫০ কোটি টাকার ফল বিক্রি
বাগেরহাটে মাটির চুলার কারিগরদের জীবন চরম দুর্ভোগে
রাজিয়া বেগম প্রায় দুই যুগ ধরে মাটির চুলা তৈরি করে বিক্রি করছেন। রাজিয়ার মাও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভৈরব নদের পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে থেকে চুলা তৈরি করেছেন। প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজিয়ার স্বামী কামরুল ইসলাম নিরুদ্দেশ রয়েছেন। এক ছেলে নিয়ে রাজিয়ার সংসার। চুলা বিক্রি করে তার সংসার চলে। চুলা বিক্রি হলে খাবার জোটে আর বিক্রি না হলে খাবারের জন্য রাজিয়াকে বিকল্প পথ খুঁজতে হয়।
বাগেরহাটে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এই মাটির চুলা তৈরি করা হয়। কয়েক যুগ ধরে শহরের ভৈরব নদের পাড়ে এই মৃৎশিল্পের দেখা মেলে। নারীরা নিজেদের দক্ষতা আর সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে নদের চর থেকে পলিমাটি তুলে চুলা তৈরি করেন। ওই নদের পাড়ে সাজিয়ে রেখে চুলা বিক্রি করা হয়। তবে সেই চুলা তৈরির কারিগরদের কষ্টের শেষ নেই। নদের পাড়ে ঝুপড়ি ঘরেই তাদের সংসার। সরকারের কাছে সহায়তার দাবি জানিয়েছে তারা। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক চুলা তৈরির কারিগরদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
জানা গেছে, মাটি দিয়ে তৈরি করা চুলার ঐতিহ্য রয়েছে। এক সময় গ্রাম-বাংলায় রান্না-বান্নার মূলভিত্তি ছিল মাটির চুলা। শহর-বন্দর-গ্রাম থেকে সর্বত্রই চুলার ব্যবহার রয়েছে। হোক সে মাটির চুলা বা অন্য কোন চুলা। চুলা ছাড়া রান্না অসম্ভব। বাগেরহাট ভৈরব নদের চর থেকে মাটি তুলে শহর রক্ষা বাঁধের পাশে তৈরি করা হচ্ছে গ্রামীণ মাটির চুলা। কারিগররা একমুঠো দুমুঠো করে একের পর এক মাটি সাজিয়ে তৈরি করে চুলা।
চুলা তৈরির কারিগর রাজিয়া বেগম জানান, নদের চর থেকে পলিমাটি তুলে একমুখ ও দুই মুখসহ বিভিন্ন সাইজ এবং নানা ডিজাইনের চুলা তৈরি করে। একটি চুলা বিক্রির উপযোগী হতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। একটি চুলা ১৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে। প্রায় ৩০ বছর ধরে নদের পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে থেকে তিনি মাটির চুলা তৈরি করে বিক্রি করছেন। স্বামী নিরুদ্দেশ থাকায় এক ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। চুলা বিক্রি হলে খাবার জোটে আর বিক্রি না হলে খাবার জোটে না। নিজের ঘর না থাকায় নদের পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে তার জীবন চলছে। একটি ঘরের জন্য দারে দারে ধন্না দিয়েও আজও পর্যন্ত ঘর মেলনি। সরকারের কাছে ঘরের দাবি রাজিয়ার।
মাটির চুলা তৈরির আরেক কারিগর জোসনা বেগম। তিনিও ভৈরব নদ পাড়ের বাসিন্দা। প্রায় ৩০ বছর ধরে জোসনা বেগম মাটির চুলা তৈরি করছেন। ৮ বছর আগে তার স্বামী আসলাম হওলাদার মারা গেছেন। তারও সংসার চলে চুলা বিক্রির টাকায়। শুধু রাজিয়া আর জোসনা বেগম নয় আরও বেশ কয়েকজন নারী ভৈরব নদ থেকে মাটি তুলে চুলা তৈরি করে বিক্রি করছেন। গ্রামীণ মাটির চুলা তৈরির এসব কারিগরদের সংসার চলছে অনেক কষ্টে।
পড়ুন: ব্যাপক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা
ফেনীতে সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে ৩ ভাই নিহত
ফেনীতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে সেপটিক ট্যাংক বিস্ফোরণে তিন ভাই নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের নাজির রোড এলাকার রুহুল আমিন ভবনের নিচ তলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা পেশায় নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন-বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের ফুলহাতা গ্রামের ছৈয়দ আলী মুন্সির ছেলে মো. মুনীরুজ্জামান মুন্সী, তার ভাই নুরুল ইসলাম মুন্সী ও মো. আবদুর রহমান মুন্সী।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানায়, বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ওপরে টিনসেট একটি কক্ষে থাকতেন ওই শ্রমিকরা। হঠাৎ বিকট শব্দে ট্যাংকটি বিস্ফোরিত হয়। এতে ভবনের নিচ তলাসহ ওপরের ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনাস্থলে দু’জনের মৃত্যু হয় এবং ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অন্য একজন মারা যান।
ফেনী ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দি বলেন, নির্মাণাধীন ভবনটিতে সেপটিক ট্যাংকের গ্যাস অপসারিত হওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না, ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আরও কোনো ব্যক্তি হতাহত হয়েছে কি না বলা যাচ্ছে না। এখনো উদ্ধার তৎপরতা চলছে।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পড়ুন: গাজীপুরে কারখানায় এসি বিস্ফোরণ, নিহত ২
চুয়াডাঙ্গায় বয়লার বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত