কৃষি
কুড়িগ্রামে ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক
কুড়িগ্রামে কয়েকদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার কৃষকরা। এবার দেরিতে বন্যা হওয়ার কারণে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন। তারা প্রায় ৮০ ভাগ ফসল ঘরে তুললেও জুনের শেষে বৃষ্টির কারণে সবজির খেত ডুবে গেছে। ফলে বাড়তি লাভ করার স্বপ্ন পানিতে ধুয়ে মুছে গেছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে পাটখেত ডুবে যাওয়ায় নিচু এলাকার পাটচাষিরা আগাম পাটকাটা শুরু করেছেন। ফলে কাঙ্খিত অর্জনের চেয়ে কিছুটা কম পাট পাবেন তারা।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, বন্যায় ক্ষতির কথা ভেবে জেলায় প্রায় ৮শ’ হেক্টর পাট আগাম কাটা হয়েছে। এতে সামান্য কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হবে কৃষকরা।
আরও পড়ুন: বন্যার আশঙ্কা : কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
সদর উপজেলার ধরলা নদী তীরবর্তী পৌরসভা, হালোখানা, ভোগডাঙ্গা ও পাঁছগাছী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, নিম্নাঞ্চলের সবজি খেতগুলো ডুবে গেছে। রবিবার দুপুরে পাঁছগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকার সবজী চাষিরা খেত থেকে সবজি উত্তোলন করছিলেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এডিপির হার ৭৬ শতাংশ
করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যেও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৭৬ শতাংশ, যা জাতীয় গড় অগ্রগতির চেয়ে ১৮ শতাংশের বেশি। মে মাস পর্যন্ত জাতীয় গড় অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ। অবশিষ্ট এক মাসের মধ্যে প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
রবিবার সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক।
এছাড়া, বাস্তবায়ন অগ্রগতির এই হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। গত বছর মে, ২০২০ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতির হার ছিল ৫৯ শতাংশ, মোট বরাদ্দ ১ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকার মধ্যে ব্যয় হয়েছিল ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা। অথচ, সেখানে চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের ৮৫টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট বরাদ্দ ২ হাজার ৩২২ কোটি টাকার মধ্যে ১ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যায় কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১২টি তদারকি কমিটি
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলমান করোনা মহামারি ও ঘূর্ণিঝড়, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে এডিপি বাস্তবায়নে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আমাদের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে। করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের মতো সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
এসময় কৃষিমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে অতিদ্রুত লবণাক্ত সহিষ্ণু ধানের জাত সম্প্রসারণের জন্য সকলকে নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ব্রিধান ৬৭, ব্রিধান ৯৭, ব্রিধান ৯৯, বিনা-১০সহ অনেকগুলো লবণাক্তসহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবিত হয়েছে। এগুলোর পর্যাপ্ত বীজ উৎপাদন করে কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের চাষের জমি কমছে, মানুষ বাড়ছে, খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে খাদ্যের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতাকে টেকসই করতে হলে আরও নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে।
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলামের সঞ্চালনায় এসময় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) ড. মো. আব্দুর রৌফ, অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি) মো. রুহুল আমিন তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ওয়াহিদা আক্তার, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) হাসানুজ্জামান কল্লোল, অতিরিক্ত সচিব (সার ও উপকরণ) মো. মাহবুবুল ইসলাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ ও অন্যান্য সংস্থাপ্রধানসহ প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: কৃষি মন্ত্রণালয়কে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
এডিপি মিটিংয়ের আগে কৃষিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২০-২১ প্রদান করেন। এ বছর কৃষি মন্ত্রণালয়ের ও দপ্তর/সংস্থার মধ্যে তিনজনকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। দপ্তর/সংস্থার প্রধানদের মধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে উপসচিব এস এম ইমরুল হাসান ও কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল বাতেন সিরাজী এই পুরস্কার লাভ করেন।
খাদ্য ও কৃষিতে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ: মন্ত্রী
বাংলাদেশে খাদ্য ও কৃষিতে অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির উন্নয়নে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০ বছর আগে ১৯৯৯-২০০০ সালে এ সরকারের আগের আমলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে ও বর্তমান সরকার এ আমলেও তা ধরে রেখেছে। মাথাপিছু আয় ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। ফলে খাদ্যে মানুষের প্রবেশযোগ্যতা সহজতর হয়েছে। এছাড়া, বিগত দশকে অপুষ্টি দুই-তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে।’
আরও পড়ুন: টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গবেষকদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর
মঙ্গলবার কৃষিমন্ত্রী খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ৪২তম সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ‘স্টেট অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার’ অংশে বাংলাদশের অবস্থান তুলে ধরে এ কথা বলেন।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলমান কোভিড-১৯ এর শুরুতেই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, সরবরাহ অব্যাহত রাখা ও দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় আনতে নানামুখী প্রণোদনা প্রদান করেন। এছাড়া, কৃষিখাতে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। ফলে কোভিড পরিস্থিতি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও নির্দেশনায় দেশে কৃষির উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহের ধারা অব্যাহত থাকে এবং খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: ফড়িয়াদের কাছ থেকে ধান কিনবে না সরকার: খাদ্যমন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, করোনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ ১১ লাখ রোহিঙ্গাও দেশে রয়েছে। যা আমাদের সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এসময় তিনি উন্নয়ন সহযোগী দেশসমূহকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
কোভিড-১৯ এর কারণে ভার্চুয়ালি ১৪-১৮ জুন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের সম্মেলন। কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন।
আরও পড়ুন: খাদ্যশস্য সংগ্রহে ধানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে: মন্ত্রী
ঢাকা থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার, যুগ্ম সচিব তাজকেরা খাতুন, উপসচিব আলী আকবর ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব বিধান বড়াল অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া ইতালির রোম থেকে অংশগ্রহণ করছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান ও ইকনমিক কাউন্সিলর মানস মিত্র।
বাজেট: কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেছেন, আসছে অর্থবছরে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। হাওর অঞ্চলে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ডাউন পেমেন্ট কমানোর বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ২২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। যার পুরোটাই কৃষি মন্ত্রণায় খরচ করেছে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, কৃষকের সুবিধার্থে আধুনিক এক মেশিন ১০০ জন কৃষকের কাজ করে। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে দিন রাত কাজ করতে বড় মেশিনগুলো দরকার হয়।
শুক্রবার ইআরএফ মিলনায়তনে জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ সামনে রেখে ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন’ শীর্ষক সংলাপে অতিরিক্ত সচিব এসব কথা জানান।
আরও পড়ুন: খামারিদের দেয়া সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে: কৃষিমন্ত্রী
জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ সামনে রেখে কৃষি খাতের গুরুত্ব, সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরতে বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল টিচার্স সোসাইটি এই সংলাপ অয়োজন করেন।
সংলাপে অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, আজকে যে যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে সেটা একটি বিবর্তনের মধ্যেমে এসেছে। একজন কৃষক শুধু কৃষকই নয়। তিনি কখনও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কখনও উদ্যোক্তা কিংবা কখনও চাকরিজীবী।
গত ১৫ বছরে কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ ১১৮ শতাংশ বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষি কার্যক্রম হচ্ছে একটি সম্মিলিত প্রয়াস। এখানে কৃষিবিদের যেমন অবদান রাখতে হবে তেমন শিক্ষকদের, উদ্ভাবকদের এবং কৃষকদের অবদান রাখতে হবে।
আইসিএবি ও আইসিএমএবি এর সদস্য মো. আমির হোসেন বলেন, কৃষি যন্ত্র কিনতে বর্তমানে হাওর অঞ্চলে সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। তারপরও বাকি অর্থের যোগান দেয়া অনেক ক্ষেত্রেই কৃষকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। কৃষি যন্ত্র কেনায় কৃষকদের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসার কথা বলেন তিনি।
এক্ষেত্রে কৃষক ও কৃষি যন্ত্র নিবন্ধনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তাহলে যন্ত্র বন্ধক রেখ কৃষকরা সহজেই ঋণ নিতে পারবে।
কৃষি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. সদরুল আমিন বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ববস্থা গড়ে তুলতে এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর আসবে না। দেশে বেকারত্ব কমাতে এইচএসসি পাশ করে কৃষি শিক্ষা গ্রহণ করে কৃষিতে যোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তার মতে এতে প্রতি বছর এক থেকে দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেক্ষেত্রে নিজেদের সফলতার পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রেও বিল্পব অআসবে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ধান-চাল ক্রয়ের জন্য যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিবিদ রেজাউল করিম সিদ্দিকের সঞ্চালনায় সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন-বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল টিচার্স সোসাইটির মহাসচিব ড. মোজাহেদুল ইসলাম, সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, প্রাইম ব্যাংকের অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (কৃষি সহায়তা বিভাগ) আসাদ বিন রশিদ প্রমুখ।
খুলনায় প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে সফল তড়িৎ বিশ্বাস
খুলনায় প্রথমবারের মতো পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণে সফল হয়েছেন ডুমুরিয়ার তরুণ কৃষক তড়িৎ বিশ্বাস।
শুধু বীজ নয়, তিনি পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের কালি উৎপাদন করে বিক্রি করছেন। কৃষি বিভাগের সহায়তায় মাত্র ৫০ শতক জমিতে তিনি এই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করেন। একই সঙ্গে সংরক্ষণ করা বীজ স্বল্প মুনাফায় স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছেন এই তরুণ। স্বল্প খরচে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে অধিক আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী মসলা ফসল। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পেঁয়াজের চাষ হয়। জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈরী আবহাওয়া এবং বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের জাতীয় গড় ফলন বিশ্বব্যাপী গড় ফলন অপেক্ষা কম।
আরও পড়ুন: দেশে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণীত হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
বর্তমানে দেশে ১.৭৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১৭.৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে (বিবিএস, ২০১৮)। আমাদের দেশে যে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় তা দিয়ে দেশের মোট চাহিদার মাত্রা ৫৭.১৪% মিটানো সম্ভব। ফলে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর চাহিদা পূরণে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।
পেঁয়াজের বাল্বের ফলন বৃদ্ধির জন্য মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আমাদের দেশে উন্নত জাত, সঠিক সময়ে ও সঠিক মাত্রায় সার, সেচ ও বালাই দমন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পেঁয়াজের বীজের ফলন বৃদ্ধিসহ মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। সেই আলোকে খুলনায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে ঝোঁক দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এবারই প্রথম খুলনায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা হয়েছে। তাতে সফলতাও এসেছে।
গত বছর পেঁয়াজের বীজের দাম বেশি ছিল। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এ বছরও দুই হাজার টাকার পেঁয়াজের বীজ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। কৃষক যদি নিজেরাই বীজ তৈরি করে তাহলে সিন্ডিকেট ভাঙবে এমনটা ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে শিকারীদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া পাখি অবমুক্ত
ডুমুরিয়ার তড়িৎ বিশ্বাস বলেন, কৃষি অফিস থেকে পেঁয়াজের বাল্ব দিয়েছিল। বর্গা নিয়ে ৫০ শতক জমিতে ১৩ মণ বাল্ব লাগিয়েছিলাম। সেখান থেকে ২৩ মণ পেঁয়াজ এবং ২৫ কেজি বীজ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের কালি ৩ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি। বীজগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কৃষি অফিসের সহায়তায় মওসুমের সময়ে বীজগুলো বিক্রি করা হবে। কৃষি অফিস থেকে বাল্ব দেওয়া হয়েছিল। আর আমি শ্রম ও পরিচর্যা করেছি। তিন মাস পরিচর্যা করে ফসল ঘরে তুলেছি।
তরুণ এই কৃষক বলেন, আমি এবার প্রথম পেঁয়াজের চাষ করেছি। বীজও খুলনায় প্রথম। চাষ করে খুব ভালো লেগেছে। আগামী বছর বীজ দিয়ে পেঁয়াজ চাষ করার ইচ্ছা রয়েছে।
আরও পড়ুন: নওগাঁয় অসহায় কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, পেঁয়াজ একটি উচ্চমূল্যের ফসল। বীজের দাম অনেক বেশি ছিল। এ বছর ৬ হাজার টাকা কেজি পর্যন্ত দাম হয়েছিল। যে কারণে দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে বীজ ক্রয় করে পেঁয়াজ উৎপাদন করা সম্ভব ছিল না। এ কারণে আমরা কৃষক পর্যায়ে ডাল, তেল, মসলার উন্নতমানের বীজ সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা তড়িৎ বিশ্বাসকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং পেঁয়াজের বীজ ও সার প্রদান করা হয়। প্রথমবারের মতো খুলনায় পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ৩০ কেজির মতো বীজ হয়েছিল। কিন্তু শোকানোর কারণে কমে ২৫ কেজির মতো রয়েছে তড়িৎ বিশ্বাসের কাছে। এটি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। তার দেখাদেখি আগামীতে আরও কৃষক উৎসাহিত হবে। পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, এক কেজি পেঁয়াজের বীজ সংরক্ষণ করবে এবং বাকী বীজ বিক্রি করে দিবে। এক কেজি বীজে ৫০ থেকে ৫২ শতকে লাগানো যাবে। নভেম্বর মাসে পেঁয়াজ লাগানো হয় এবং এপ্রিলের শেষ পর্যায়ে উঠানো হয়। ৫০ শতক জমিতে পেঁয়াজ, কালি ও বীজ উৎপাদন এবং সংরক্ষণে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ করে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।
খুলনা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, খুলনার মাটি পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। অল্প-স্বল্প পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এবারই প্রথম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এক বিঘা জমিতে বারি-১ জাতের বাল্ব লাগিয়ে পেঁয়াজের বীজ উৎপান ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজের বীজ এনে চাষাবাদ করা হতো। খুলনায় এবার ২৫ কেজি পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এই বীজ কৃষক তড়িৎ বিশ্বাসের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে স্থানীয় চাষিদের মাঝে।
জমিদার হরিপদের কাছারি বাড়ি থেকে লিচু চাষ শুরু
সুনামগঞ্জের ছাতকে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ মৌসুমে করোনার কারণে লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে ছাতক-দোয়ারার সব হাটবাজারে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচু বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন চাষিরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন গড়ে ছাতকবাজারসহ এখানের বাজারগুলোতে কয়েক লাখ টাকার স্থানীয় জাতের লিচু বিক্রি হয়। ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চানপুর, বড়গল্লা, কচুদাইড়, রাজারগাঁও এবং দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া, পরমেশ্বরীপুর, বীরসিংহপুর, সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা ও আলীপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে ছাতক -দোয়ারাবাজারসহ এখানের হাটগুলোতে কয়েক লাখ টাকার স্থানীয় লিচু বিক্রি হয়। পুরো মৌসুমে এখানের চাষিরা কোটি টাকার লিচু বিক্রি করেন।
আরও পড়ুন: লিচু দিয়ে রূপচর্চা
লিচু চাষি মানিকপুর গ্রামের আরব আলী, গোদাবাড়ী গ্রামের আব্দুল কাদির, রাজারগাও গ্রামের আব্দুল মালিক, চানপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া ও লামাসানিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, লাভজনক লিচু চাষে জড়িয়ে এখানের শতাধিক চাষি এখন স্বাবলম্বী। লিচুর ভালো বাজারমূল্য রয়েছে এখানে। চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়েছে।
জানা গেছে, ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টিলা বেষ্টিত চৌমুহনী বাজার ও লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুর। একটু এগুলেই দোয়ারাবাজারের লামাসানিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন এলাকার শতাধিক পরিবার।
ব্রিটিশ জমিদার আমল থেকেই নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর ও আশপাশ এলাকার টিলাভূমিতে লিচু চাষ শুরু হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করে লিচুর চাষ করা হচ্ছে। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন-দিন এর পরিধি বেড়েই চলছে।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড খরায় মাগুরায় লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ আমলে গৌরীপুরের জমিদার হরিপদ রায় চৌধুরী ও তার ভাই শান্তিপদ রায় চৌধুরীর কাছারিবাড়ি ছিল মানিকপুর গ্রামে। এ কাছারি বাড়িতে জমিদারের লোকজন কয়েকটি লিচুগাছ রোপন করেছিলো। কাছারিবাড়িতে শতবর্ষী তিনটি লিচু গাছ এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাছারিবাড়িতে বহু আগে গ্রামবাসী জামে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। মূলত ওই কাছারিবাড়ি থেকেই গ্রামজুড়ে লিচু চাষ ছড়িয়ে পড়ে। দিনে-দিনে আশপাশ গ্রামসহ বর্তমান দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি গ্রামেও তা ছড়িয়ে পড়ে। গত ক'বছর ধরে উপজেলা কৃষি বিভাগও লিচু চাষে লোকজনকে উৎসাহী করছে এবং বিদেশি লিচুর চারা চাষীদের মাঝে বিতরণসহ বিভিন্নভাবে সরকারী সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন জানান, লিচু চাষিদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে। তাদের সরকারি সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। চাষিরাও ভালো বাজার মূল্য পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: লিচু গাছের আমটি ছিঁড়ে নেয়ার কথা স্বীকার করলেন সাবেক মেম্বার
টিলাবেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সকল সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ
চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলের ছয় জেলায় ১ লাখ ৬২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এই ছয়টি জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৬২ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমি। কিন্তু ইতোমধ্যে আবাদ হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: মৌসুম শেষ হলেও প্রণোদনা পায়নি ফরিদপুরে পাট চাষিরা
এর মধ্যে যশোর জেলায় ২৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলায় ২২ হাজার ৮৬০ হেক্টর, মাগুরা জেলায় ৩৫ হাজার ২৭০ হেক্টর, কুষ্টিয়া জেলায় ৪০ হাজার ৯৬০ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০ হাজার ২১৫ হেক্টর ও মেহেরপুর জেলায় ২০ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে।
আরও পড়ুন: তীব্র তাপদাহে যশোরে শুকিয়ে যাচ্ছে পাটগাছ: বিপাকে কৃষক
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার প্রামানিক জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পাটের উৎপাদন এ মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে। পাট চাষে কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগীতা করে আসছে।
আরও পড়ুন: নাটোরে অভিযান চালিয়ে ৬ হাজার মণ পাট উদ্ধার
দেশে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণীত হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা প্রণীত হয়েছে।
তিনি বলেন, সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে দেশে উত্তম কৃষি চর্চা নীতিমালা (জিএপি) প্রণীত হয়েছে, যা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এই নীতিমালার আওতায় উত্তম কৃষি চর্চার ক্যাটাগরি, সাটিফিকেশন, টেস্টিং, মনিটরিং, রিপোর্টিং ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা থাকবে। এর মাধ্যমে ট্রেসেবিলিটি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এছাড়া, ফলমূল ও শাকসবজির বিদেশে রপ্তানি বাড়াতে সার্টিফিকেশন সিস্টেম উন্নত করা, পূর্বাচলে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব প্রতিষ্ঠা, শ্যামপুরে প্যাকেজিং ও প্রসেসিং কেন্দ্রের আধুনিকায়ন, বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ওয়াসিং ফেসিলিটিসহ ভ্যাকুয়াম হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ হাতে নেয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: খামারিদের দেয়া সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে: কৃষিমন্ত্রী
সোমবার মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষ থেকে অনলাইনে ‘ফলমূল ও শাকসবজির সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া ও গ্যাপ (GAP) শনাক্তকরণ’ শীর্ষক আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. রাজ্জাক বলেন, সার্কভুক্ত দেশসমূহে খাদ্য উৎপাদনে প্রশংসনীয় অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। তবে পুষ্টিকর খাবারে মানুষের কম প্রবেশযোগ্যতা এখনও উদ্বেগের কারণ হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। অনেকক্ষেত্রে অপুষ্টি এখনও প্রবল আকারে রয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে, ফলমূল ও শাকসবজি পুষ্টি চাহিদা পূরণে সবচেয়ে সহায়ক হতে পারে।
আরও পড়ুন: ধান-চাল ক্রয়ের জন্য যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
প্রণোদনা পেলেন খুলনার ৩ হাজার ৬০০ কৃষক
অনাবৃষ্টির কারণে বোরো ও সবজির কাঙ্খিত উৎপাদন হয়নি। মাটিতে জোঁ না থাকায় পাটের বীজ এখনও মাটিতে পড়েনি। কৃষকের এ সকল ক্ষতি পুষিয়ে নিতে খুলনার ৩ হাজার ৬০০ কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মৌসুম শেষ হলেও প্রণোদনা পায়নি ফরিদপুরে পাট চাষিরা
জেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, এ কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার ৬০০ কৃষককে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। জেলার কৃষকরা ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রণোদনা পেয়েছেন। প্রনোদনা পাওয়া কৃষকদের মধ্যে দৌলতপুর ও লবনচারা এলাকার ৬০ জন, রূপসা উপজেলার ১০০, দাকোপ উপজেলার ১৫০, কয়রা উপজেলায় ২০০, দিঘলিয়া উপজেলায় ৩৪০, ফুলতলা উপজেলায় ৩৫০, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৪০০, পাইকগাছা ও তেরখাদা উপজেলায় ৬০০ জন করে এবং ডুমুরিয়া উপজেলায় ৮০০ জন রয়েছেন।
জেলার অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, এ কর্মসূচির তালিকাভুক্ত প্রত্যেক কৃষক ৫ কেজি আউশ বীজ, ২০ কেজি ড্যাপ ও ১০ কেজি এমওপি সার পেয়েছে। বোনা আউশের চাষ শুরু হয়েছে। বৃষ্টির পরশ পেলে রোপা আউশের আবাদ শুরু হবে। এ প্রনোদণায় বিশেষ করে তেরখাদার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি উপকৃত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আমন সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। কাঙ্খিত বোরো উৎপাদন হয়নি। ধান মাড়াইয়ের সময় ১০ শতাংশ চিটা পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি খাদ্য গুদামে চাল ও গমের মজুদ তলানিতে। ভারত থেকে প্রতি মাসে চাল আমদানি হচ্ছে। এরপরও চালের মূল্যের উর্ধ্বগতি। খাদ্য ঘাটতি পূরণের লক্ষে কৃষককে উৎসাহিত করতে মূলত উফশী আউশ প্রণোদনা।
আরও পড়ুন: মাগুরায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের প্রণোদনার টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
কৃষকরা জানান, কোনও প্রকার দুর্যোগ বা রোগ বালাই দেখা না দিলে ২০ হাজার মেট্রিক টন আউশ ধান উৎপাদন হবে। আগামী ভাদ্র মাসে আউশ ধান উঠলে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবে বলে আশা করছেন।
মাগুরায় নালিমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না কৃষকরা
চলতি মৌসুমে মাগুরায় নালিম চাষে উৎপাদন ভালো না হওয়ায় কৃষকরা হতাশায় ভুগছে। নালিম চাষে পরিশ্রম কম লাভ বেশি হওয়ায়ে জেলার কৃষকরা চলতি মৌশুমে নালিম চাষে ঝুঁকছে ছিলেন।
এদিকে এবার কৃষকরা নালিমে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। প্রতি ট্রাক নালিম ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে গত বছর এক লাখ টাকার উপরে বিক্রি হয়েছিল।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে মাগুরা সদরের ইছাখাদা, মুছাপুর, সত্যপুর, হাজরাপুর, হাজিপুর, নালিয়ালডাঙ্গি, শিবরামপুর ও নড়িহাটি গ্রামে নালিমের চাষ হয়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকয় মাগুরায় নালিমের ফলন তেমন ভালো হয়নি।
আরও পড়ুন: মৌসুম শেষ হলেও প্রণোদনা পায়নি ফরিদপুরে পাট চাষিরা
চাষিরা বলেন, ‘আমরা উপযুক্ত সময়ে নালিমের বীজ রোপন করেছি। কিন্তু তীব্র খরা ও প্রচণ্ড তাপদায়ে এবার নালিমের গাছ অনেক মরে যাওয়ায় ফলন ভালো হয়নি।’
মাগুরা সদরের ইছাখাদা গ্রামের রজব আলী মোল্লা বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে আমি নালিমের চাষ করেছি। ইতোমধ্যে জমি থেকে নালিম উত্তোলন করেছি। তবে এবার প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে নালিমের আশানুরূপ ফলন হয়নি। গত বছর যেখানে নালিমের বাম্পার ফলন হয়েছিল সেখানে এবার ফলন খুবই কম। এবার জেলার বাইরের ব্যাপারীরা নালিম ক্রয় করার জন্য আসছে কিন্তু উৎপাদন ভালো না হওয়াতে ব্যাপারীদের চাহিদা অনুযায়ী নালিম দিতে পারছি না।
তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদিত নালিম ঢাকা, মাদরীপুর, শিবচর, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় যায়। এই স্থানের ব্যাপারীরা প্রতি বছর ট্রাক ভর্তি করে নালিম নিয়ে যায়। এবার প্রতি ট্রাক নালিম ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে গত বছর এক লাখ টাকার উপরে বিক্রি করেছি।
আরও পড়ুন: করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ: ক্যাপসিকাম চাষে রাহুলের সফলতা
কৃষি বিভাগ বলছে, নালিম একটি পুষ্টিকর ফল। বাঙ্গির বিকল্প ফল হিসেবে নালিমের কদর অনেক। বর্তমানে রমজান মাসে নালিমের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে এখন প্রতি পিচ নালিম ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জেলায় দিন দিন এ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আগামীদিনে নালিম চাষ করতে জেলার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।