দুদেশের মধ্যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো দুদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধ বজায় রাখতে কোনো বাধা হবে না।
রাজধানীতে ‘বাংলাদেশ-কানাডা রিলেশনস: প্রোগনোসিস ফর পার্টনারশিপ’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তব্যকালে হাইকমিশনার এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সিক্স সিজন হোটেলে শনিবার সকালে কসমস গ্রুপের জনহিতকর সংস্থা কসমস ফাউন্ডেশনের অ্যাম্বাসেডর লেকচার সিরিজের আওতায় এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
দুদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মো. শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ-কানাডার সম্পর্ক সকল দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান বিশ্ব ব্যবস্থাতে কানাডার কাছ থেকে ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা আশা করে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ শক্তি’। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ও ইউরেশিয়ার মতো বৈশ্বিক উদ্যোগের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ তাও তিনি ব্যাখ্যা করেন।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।
বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এ সংলাপে অংশ নেন। তারা বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যকার সম্পর্ককে বর্তমানের আলোকে মূল্যায়ন করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ইস্যুটিও জোরালোভাবে উঠে আসে।
ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের সাথে কানাডার ব্যবসায়িক সম্পর্ক গত ১৪ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৪ সালে হওয়া ৬০ কোটি ৫ লাখ কানাডিয়ান ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেড়ে ২০১৮ সালে ২৪০ কোটি কানাডিয়ান ডলারে উন্নীত হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে কানাডা মনে করে যে ‘এ বর্তমান পরিস্থিতির কোনো তাৎক্ষণিক সমাধান নেই এবং আগামী দিনগুলোতে এ বিষয়ে টেকসইভাবে লেগে থাকতে হবে।’
অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান হাইকমিশনার দুদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্কের অব্যাহত উন্নয়ন আশা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্পায়ন, অবকাঠামো তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সামগ্রিক প্রয়োজনীয়তা দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করেছে কানাডার ব্যবসায়িক সম্প্রদায়।
হাইকমিশনারের মতে, দুদেশের সম্পর্কের একটি প্রভাবশালী দিক হতে পারে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এটি বাংলাদেশে কানাডার যে মূল কার্যক্রম উন্নয়ন সহযোগিতা, তার জায়গা দখল করে নেবে।
২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসে বাংলাদেশে কানাডার রপ্তানি অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ও সর্বকালের রেকর্ড এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
অন্যদিকে, কানাডায় বাংলাদেশের রপ্তানি জানুয়ারি-অক্টোবর মাসের মধ্যে গত বছরের মোট রপ্তানির পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে ও নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে।
হাইকমিশনার বলেন, বাণিজ্যকে আরও বেশি বহুমুখী খাত ও পণ্যে প্রসারিত করতে হবে। সেই সাথে বাণিজ্যের পাশাপাশি বিনিয়োগ, অবকাঠামো এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও ভালো অবদান রাখা যেতে পারে।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হলো যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কানাডার নাগরিকদের সতর্ক থাকার যে পরামর্শ ছিল তা তুলে দিয়েছে কানাডা।
কয়েক সপ্তাহ আগে, বাংলাদেশে ভ্রমণে কানাডার নাগরিকদের যে সতর্কতার পরামর্শ দেয়া ছিল তা তুলে দেয়া হয়।
হাইকমিশনার বলেন, এর ফলে কানাডিয়ানরা এখন বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন বা কাজ করতে আসতে পারবেন।
তিনি বলেন, কানাডার ব্যবসায়ীদের এ দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, নাগরিক সমাজের অধপতন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাবের বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ‘এ বিষয়টি আমরা সরকারের বিভিন্ন মহল এবং চেম্বার্স অব কমার্সের সাথে আলাপকালে তুলে ধরেছি।’
তিনি জানান, বাংলাদেশি পরিবারগুলোর কাছে উচ্চ শিক্ষার গন্তব্যস্থল হিসেবে কানাডাকে পছন্দ করা বাড়ছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থী কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন। যা ২০১৪ থেকে প্রায় ১৫০ শতাংশ বেশি।