অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে রাজধানীর বংশী ও তুরাগ নদী সংকুচিত হয়ে গেছে বলে এক গণশুনানিতে উঠে এসেছে।
শুনানিতে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, এই নদীগুলোর ওপর নির্ভরশীল জেলেদের জীবিকা, খাদ্য ব্যবস্থা ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এবং মিঠা পানির সংকট বেড়েছে।
শুক্রবার(২২ মার্চ) বংশী নদীর তীরবর্তী মাঝির দিয়া গ্রামে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে এক গণশুনানিতে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ, রিভার ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার, সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক পলিউশন স্টাডিজ ও উই মিন গ্রিন যৌথভাবে এ গণশুনানির আয়োজন করে।
নদী রক্ষায় গণশুনানিতে কাউন্দিয়া ইউনিয়নের মাঝির দিয়া গ্রামের প্রায় শতাধিক মাঝি পরিবারের সদস্য অংশ নেন।
তারা জানান, দূষণের কারণে বংশী নদীর পানি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে।
পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে নদী, খাল ও সমুদ্রকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
জেলেরা জানান, বংশী ও তুরাগ নদীই তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। দূষণের কারণে এ নদীতে এখন আর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: সবুজ ভবিষ্যৎ নির্মাণে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ ও নর্ডিক দেশগুলো: পরিবেশমন্ত্রী
জেলে পরিবারের নারী সদস্যরা জানান, বংশী বা তুরাগের পানি গৃহস্থালির কোনো কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এমনকি পানিতে নামলেও শরীরে চুলকানি, ঘাসহ নানা ধরনের রোগ হচ্ছে।
গণশুনানিতে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশের নদীগুলো বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নদীগুলো দখল করা হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে এবং ভরাট করা হচ্ছে।
জাকির বলেন,নদী দখল ও দূষণের দায়ে কাউকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্স সেন্টারের চেয়ারম্যান বলেন, নদীতে মাছ না পাওয়ায় জেলেরা পেশা পরিবর্তন করছে। শিল্প দূষণের কারণে বংশী ও তুরাগ নদী আজ মরে যাচ্ছে।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ পানির সংকটে রয়েছে।
তিনি বলেন, নদীর পানির দূষিত হওয়ার কারণে প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর।
অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, পচা পানির দুর্গন্ধে নদী পারাপারই কঠিন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনে কর্মসূচি গ্রহণ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
তিনি বলেন, এ পানিতে মাছ ও জলজ প্রাণী বাঁচতে পারে না। নদী দূষণ রোধে আইন থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের অবহেলা ও শিল্পকে জবাবদিহির আওতায় আনতে না পারার কারণে ধ্বংস হচ্ছে নদী।
জাবেদ আহমেদ বলেন, নদী দূষণ ও দখলমুক্ত হলে নদীকেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে তোলা সম্ভব। এতে পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে এখানে কর্মসংস্থান বাড়বে। মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নতি হবে।
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে ‘ঢাকার পানি, জলাভূমি ও জলবায়ু’ স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত গণশুনানি অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উই মিন গ্রিনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা রহমান।
বিশ্ব পানি দিবস ২০২৪-এ, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ একটি রূপরেখা সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে- যা জলবায়ু পরিবর্তন, পানির ঘাটতি এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোকে তুলে ধরেছে।
আরও পড়ুন: বনে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না: সাবের হোসেন