বাংলাদেশে আশ্রিত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের চূড়ান্ত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশ্বব্যাপী চালু রাখতে অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন প্রত্যাশা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। উভয় পক্ষ কুশল বিনিময় করেন এবং একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। পরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ সময় বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বিদ্যমান ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (টিফা) এবং এই কাঠামোর আওতায় অস্ট্রেলিয়ার বড় কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগের কথা উল্লেখ করেন অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টিফার আওতায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী বৈঠক এ বছরের এপ্রিল-মে মাসে ক্যানবেরায় অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ প্রতি বছর ৪ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করে।
বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে, যা অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো গন্তব্য হতে পারে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছে এবং তারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
তিনি প্রস্তাব করেন, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, চামড়া, ক্ষুদ্র শিল্প ও কৃষি খাতের বিনিয়োগকারীসহ অস্ট্রেলিয়া থেকে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করতে পারে।
আরও পড়ুন: বহুভাষার সংস্কৃতির মেলবন্ধন শান্তির পৃথিবী গড়বে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান
যেহেতু বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ টন গম আমদানি করে, তাই অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে এই পণ্য রপ্তানির বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে তার সব ধারণা বিনিময়ের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারদিয়া।
তিনি অস্ট্রেলিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং উভয় দেশের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি বিনিময়ের প্রস্তাব দেন।
হাইকমিশনার জানান, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার ভালো মানের উল আমদানি করতে পারে।
তিনি বাংলাদেশে উৎপাদিত ভালো মানের আমের প্রশংসা করেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় আম রপ্তানি চান।
নারদিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের উদারতার কথা স্বীকার করেন।
তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে এবং তাদের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সমর্থন করতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইওসেফ আল দুহাইলান, মিশরের রাষ্ট্রদূত ওমর মহি এলদিন ফাহমী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে ইইউ প্রেসিডেন্টের অভিনন্দন, সহযোগিতার অঙ্গীকার
সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় সৌদি আরবের সঙ্গে শুধুমাত্র জনশক্তি রপ্তানি আর হজের সম্পর্ক ছিল। এখন এই সম্পর্ককে আমরা বিনিয়োগ সম্পর্কে রূপ দিতে চাই। সৌদি আরবের সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য ইকোনমিক জোনে সৌদি আরবকে ৩০০ একর জমির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তারা আরও ৩০০ একর জমি চেয়েছে। বৈঠকে তাদের মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী পরিবেশ পরিকল্পনা 'সৌদি গ্রিন ইনিশিয়েটিভে' বাংলাদেশি কৃষিবিদসহ অন্যদের ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে।
এদিকে গাজায় বেসামরিক নাগরিক বিশেষ করে নারী ও শিশুদের আরও হতাহত এড়াতে যুদ্ধবিরতির জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে আওয়াজ তুলতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং আরব লীগ উভয়ের সদস্য হিসেবে মিশরের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করায় মন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান মিশরের রাষ্ট্রদূত।
তারা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিশেষ করে পাট খাত নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে বাংলাদেশ ও মিশরের আরও বেশি সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বৈঠকে মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত উভয়েই উভয় পক্ষের উচ্চ পর্যায়ের সফর এবং যত দ্রুত সম্ভব কায়রোতে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় দফা ফরেন অফিস কনসালটেশন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আরও পড়ুন: গাজায় বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ায় মিশরকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ধন্যবাদ