মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমান, ক্ষমতা ছাড়তে সরকারকে চাপ দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারকে চাপ দিতে জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
প্রতিবেদনে জামায়াতের সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তারেক রহমান বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
২৮ অক্টোবরের সমাবেশে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, একটি পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সক্রিয় বিরোধিতাকারী এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতাকারী জামায়াতের সঙ্গে জোটের জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা বিবেচনা করে, বিএনপি বিগত কয়েক বছর ধরে ইসলামপন্থী দলটি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল।
আরও পড়ুন: জামায়াতের অর্থের ‘জোগানদাতা’ ডা. ফাতেমাকে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার
এছাড়া, ২০২৩-২৪ সালে গণপরিবহন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগে বহু মানুষ নিহত হওয়ায় জামায়াত ব্যাপক নিন্দার সম্মুখীন হয়েছিল। এরপর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল বিএনপি।
বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা সর্বশেষ অবরোধে অনেক গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং একজন বাস হেলপারকে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের কারণে প্রতিদিন ৬৫ হাজার কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে গত ৩১ অক্টোবর থেকে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের জোট একযোগে দফায় দফায় অবরোধ আরোপ করেছে।
তারেক এবং জামায়াত নেতাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতায় হতবাক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা এবং মানবাধিকার কর্মীরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করেছেন।
তারা জামায়াতের সমাবেশগুলোর জন্য ‘সিস্টেমেটিক অ্যাডভোকেসি’ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে যুদ্ধাপরাধের এবং ধর্মনিরপেক্ষ ও উদারপন্থী শক্তির উপর কয়েক দশকের নির্মম হামলার কথা স্মরণ করেছেন।
বিএনপির মহাসমাবেশের আগে জামায়াতে ইসলামীর একজন প্রধান নেতার সঙ্গে মার্কিন কূটনীতিকের বৈঠকের নিন্দা করেছেন ২০০ জনেরও বেশি বিশিষ্ট নাগরিক।
এর আগে বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল জামায়াতের সমাবেশের অধিকারের পক্ষে একটি মার্কিন প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন: ‘যথাযথ সম্মানের সঙ্গে আমি গণমাধ্যম, পাকিস্তান সরকারের যোগাযোগ, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যার আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করতে চাই। বাংলাদেশের ৯ মাসের গণহত্যার সময় জামায়াতের ভূমিকা কী ছিল তা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায়না... আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল।’
আরও পড়ুন: জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানি ৬ নভেম্বর
তিনি আরও বলেন, ‘নাৎসি পার্টিকে জার্মানিতে কর্মকাণ্ড করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা কি কেউ কল্পনাও করতে পারে!’
বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্লেষণকারী ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে পলাতক, কিন্তু এখনও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তারেক দক্ষিণ এশিয়ায় সংগঠিত অপরাধের একটি প্রধান কারণ ডি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হয় এবং পাকিস্তানের আইএসআই-এর সমর্থনপুষ্ট। তার কার্যালয় হাওয়া ভবন থেকে ওসামা বিন লাদেনের হুজিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আনার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।’
ভারতীয় আউটলেট দ্য প্রিন্ট (২৬ সেপ্টেম্বর) প্রবীণ সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্তকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘আমার কাছে তথ্য আছে যে ভারতের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ২৬ আগস্ট সিঙ্গাপুরে বিএনপির শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতীয় পক্ষও বলেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার একটি প্রাথমিক শর্ত হবে তারেক রহমানকে দলের প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করা এবং দলটি জামায়াতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবে।’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও জামায়াত একটি ভয়াবহ সহিংসতার আয়োজন করেছিল। তারা বাসে নির্বিচারে আগুন-বোমা, ৩২টি জেলায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের হত্যা করেছিল।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার মতে, সংখ্যালঘুরা বিএনপি-জামায়াত জোটের শেষ মেয়াদে অন্তত ২৮ হাজার সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। জামায়াত নেতারা প্রকাশ্যে আহমদিয়া সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার হুমকি দিয়েছিল।
কয়েক মাস আগে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলার পর, জামাত ও বিএনপি একই কথার প্রতিধ্বনি করেছিল।
তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জামাতপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণামূলক প্রচারণা’ চালিয়ে তাদের বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছিল।
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার বিষয়ে সজাগ থাকুন: শিক্ষামন্ত্রী