বিশ্ব যে সবুজ প্রবৃদ্ধি কৌশল অনুসরণ করছে তার অংশ হিসেবে পাটকে ‘ভবিষ্যতের আঁশ’ হিসেবে তুলে ধরার এই মুহূর্তে যে সুযোগ রয়েছে তা কাজে লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে... পাটকে তার সঠিক নামে স্বীকৃতি দিতে এবং সঠিক অবস্থানে পৌঁছাতে সহায়তা করতে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য বিপুল চাপকে কাজে লাগানোর সময় এসেছে।’
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘প্রজেক্টিং জুট অ্যাজ দ্য ফাইবার অব দ্য ফিউচার’- শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বস্ত্র ও পাট সচিব মো. আবদুর রউফ, বুয়েটের উপউপাচার্য আব্দুল জব্বার খান ও বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বক্তব্য রাখেন।
শাহরিয়ার বলেন, এটা উদ্বেগজনক যে লাখ লাখ টন পচনশীল নয় এমন পদার্থ আমাদের মাটি ও পানিতে প্রবেশ করছে, যেগুলো আমাদের গ্রহের স্বাস্থ্য ও বাস্তুতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
আলম বলেন, বিপরীতে পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুগুলো এই ধরনের কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারে।
তিনি বলেন, পাটের ক্ষেত্রে মোটা প্যাকেজিং উপাদানের ঐতিহ্যগত মূল্য ছাড়াও এর অভিযোজনযোগ্যতা ও বহুমুখিতা তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ।
আলম বলেন, ‘আমরা এখন জানি দামি অ্যাক্টিভেটেড চারকোল থেকে জিও-টেক্সটাইলের মতো হাইটেক অ্যাপ্লিকেশনের মতো বিভিন্ন উপাদান পাট থেকে পাওয়া যেতে পারে। এই তথ্য আরও ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, প্রতি দুই বছর পর পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত পাট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের বিষয়ে একটি রেজুলেশন পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা ইউএনজিএ রেজিউলোশনের চেতনায় পাটের উপর একটি কৌশলগত প্রচার চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে প্রস্তুত।’
আলম বলেন, তারা টেকসই উন্নয়ন, ন্যায্য বাণিজ্য ও জলবায়ু কর্মকাণ্ডের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে পাটকে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’-এর মূল উপাদান হিসেবে দেখতে চান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই উদ্যোগে আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বজুড়ে আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানাতে চাই।’
প্রতিমন্ত্রী পাঁচটি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্বাস করা হচ্ছে এই পরামর্শগুলো পারস্পরিক লাভজনক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারে:
প্রথমত, প্রকৃতির জন্য উপকারী বিশ্ব গঠনের প্রতি আমাদের পারস্পরিক অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে পাটকে পচনশীল নয় এমন উপকরণের পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসেবে প্রচার করুন।
দ্বিতীয়ত, পাট ও পাটজাত দ্রব্যের অবাধ ও ন্যায্য বাণিজ্যকে সমর্থন করার উপায় হিসেবে পাট চাষি এবং উদ্যোক্তাদের সমর্থন করা- তারা এই অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকৃত অভিভাবক।
তৃতীয়ত, পাটের সর্বোত্তম সম্ভাবনা অন্বেষণের জন্য চাপ-প্রতিরোধী পাটের জাত ও উচ্চ মূল্যসম্পন্ন পাটজাত পণ্যের জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করুন।
চতুর্থত, গুণমান উন্নত করা এবং অপচয় বা দূষণ রোধ করার লক্ষ্যে কাঁচা পাট আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ দক্ষ পণ্যের নকশা ও উন্নয়নকে সমর্থন করা।
পঞ্চম, সবশেষে টেকসই টেক্সটাইল, প্যাকেজিং, আসবাবপত্র বা কাগজ উদ্ভাবনে বিশ্বজুড়ে তরুণদের জন্য সম্ভাব্য জীবনধারা পছন্দ হিসেবে পাটের কথা ছড়িয়ে দিন।
তিনি বলেন, ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ২০২৩’ উদযাপন এবং আগামী বছরগুলোতে পাটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য কৌশল নির্ধারণ করুন।
প্রতিমন্ত্রী পাটের বাজারের দৃশ্যমানতা বাড়াতে, এটিকে বৈশ্বিক স্থায়ীত্বের প্রবণতার সঙ্গে সারিবদ্ধ করতে এবং জলবায়ু-নিরপেক্ষ ভবিষ্যতের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, সবুজ বৃদ্ধির জন্য সব ইচ্ছুক অংশীদারদের সঙ্গে হাত মেলাবেন বলে আশা করেন।
আফসোস করে আলম বলেন, প্লাস্টিকের মতো কৃত্রিম পণ্যের বিশ্বব্যাপী বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী প্যাকেজিং ও কার্পেট শিল্পে পাট তার প্রাধান্য হারাতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক সরকারও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বহু পাট কারখানা ক্রমান্বয়ে হ্রাস ও বন্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। অথচ পাটভিত্তিক পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে খুব কমই কোনো প্রচেষ্টা করা হয়েছে।
আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই ধারাবাহিক নীতি ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে পাট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘকাল ধরে অদক্ষতা ও লোকসান কাজটিকে কঠিন করে তুলেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পাটখাত ফের ক্রমবর্ধমান অনুকূল বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিবেশে গুণগত পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।