বরগুনার আমতলীতে একটি সেতু ভেঙে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নির্মাণকাজে ঠিকাদারের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২২ জুন) দুপুরে এ দুর্ঘটনার পরপরই আমতলীতে সেতুটির নির্মাণকারী ঠিকাদারের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
বরগুনার আমতলী উপজেলায় চাওড়া নদীর উপর নির্মিত হলদিয়া সেতু ভেঙে কন্যাযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বরগুনার আমতলী উপজেলার কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমির সহকারী শিক্ষক ও উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের বিয়ের অনুষ্ঠান হয় শুক্রবার। শনিবার আমতলী পৌর শহরের খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা হুমায়রার স্বামী ডা. সোহাগের বাড়ি যাচ্ছিলেন কনেযাত্রীরা। হলদিয়া সেতু পার হওয়ার সময় সেতুর মাঝের অংশ ভেঙে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা নদীতে পড়ে যায়। এতে অটোরিকশায় থাকা যাত্রীরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা নদীতে তলিয়ে যায়। মাইক্রোবাসে ১৬ জন ও অটোতে ৩ জন যাত্রী ছিলেন। মাইক্রোবাসে থাকা কনে পক্ষের ৯ যাত্রী মারা যান।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, সেতু নির্মাণের সময় ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা কাজ করেছেন। ফলে নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই সেতুর মাঝের বিম ভেঙে গেছে। ওই সেতু দিয়ে উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ চলাচল করে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ভাঙা সেতু মেরামতের জন্য আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বহুবার জানিয়েছি কিন্তু তিনি আমলে নেননি। যার ফলে আজ ৯ জনের প্রাণ গেল।’
আরও পড়ুন: গুজরাটে সেতু ভেঙে নিহত বেড়ে ১৪১
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমতলীতে আমার যোগদানের আগেই এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।
সেতুটির ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, আমি যথাযথভাবেই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করেছি। নির্মাণ কাজে কোনো অনিয়ম করিনি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ সেতু নির্মাণে যে ঠিকাদার অনিয়ম করেছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরগুনা-১ আসনের সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, নিহতের স্বজনদের হাসপাতালে সমবেদনা জানিয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিক্ষুদ্ধ মানুষকে শান্ত করেছি।
তিনি আরও বলেন, সেতু নির্মাণে অনিয়মের কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাওড়া নদীর উপর হলদিয়া হাট এলাকায় আয়রণ সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে আমতলী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেতুটির নির্মাণকাজ পায় তৎকালীন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা।
সেতুটি নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর মাঝের বিম ভেঙে যায়। গত ১০ বছর ধরে ওই ভাঙা সেতু দিয়েই হলদিয়া ইউনিয়ন ও চাওড়াসহ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ চলাচল করছিল।
আরও পড়ুন: বরগুনায় সেতু ভেঙে কনেযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস নদীতে পড়ে নিহত ৯