বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, ছাত্ররা লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এখন ছাত্ররাজনীতির কথা শুনলে ভয় হয়। ছাত্ররাজনীতিতে র্যাগিং, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার কাম্য নয়। ছাত্র রাজনীতি লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকার এফডিসিতে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের জন্য ব্যাপক পড়াশোনা করতে হয়। তাই লেজুড়ভিত্তিক অপরাজনীতি বুয়েটের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সহায়ক পরিবেশ বিঘ্নিত করে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বুয়েট অ্যালামনাই সদস্যদের মতেও সেখানে ছাত্র সংসদ থাকতে পারে কিন্তু লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি নয়। আদালত ছাত্ররাজনীতির পরিধি নির্ধারণ করে নির্দেশনা প্রদান করলে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সে আলোকে আচরণবিধি প্রণয়ন করতে পারে।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের রায়ের পর বুয়েটের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়া
তিনি বলেন, বিইউপি, এমআইএসটি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নেই। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের মতামত ও দাবি—দাওয়া শোনার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতির সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির সম্পর্ক দৃশ্যমান হওয়ায় প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপ বাড়ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বুয়েটের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে চলমান যে পরিস্থিতি চলছে তা ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও অ্যালামনাইসহ সকল পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে আদালতের মাধ্যমে সমাধান করা উচিৎ। বুয়েটের ছাত্র সংসদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
তিনি বলেন, বুয়েট যেহেতু একটি বিশেষায়িত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তাই বুয়েটের ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র সংসদ তাদের মতো করেই হওয়া উত্তম। আববার হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকলেও ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল না। আনুষ্ঠানিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকার পরও আমরা দেখেছি বুয়েটে ২১ ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ সকল প্রকার জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। পরীক্ষা হয়েছে, ক্লাস হয়েছে, ল্যাব চলেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য দেখিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার অধিকার আদায়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি বুয়েট শিক্ষক সমিতির
তিনি আরও বলেন, বিশেষায়িত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে এখন আরও বেশি শক্তিশালী। ঈদের ছুটির পর বুয়েটের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জনে একাত্বতা দেখে আমাদের বুঝে নিতে হবে তারা কি চায়। পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করে শিক্ষকরা অপেক্ষা করলেও কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে উপস্থিত হয়নি। শিক্ষার্থীদের এই নীরব প্রতিবাদ বিবেচনায় নেওয়া উচিৎ।
কিরণ আরও বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে ছাত্র রাজনীতি মানে কয়েকটি স্লোগান নয়, ছাত্র রাজনীতি মানে অহেতুক আন্দোলন নয়, ছাত্র রাজনীতি মানে লেজুড়বৃত্তি নয়। ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া। যেখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সমস্যা নিয়ে ছাত্ররা সমবেত হবে। ভয়েস রেইস করবে, গণতন্ত্র সুরক্ষা দেবে। শিক্ষা—দীক্ষায় পরিপূর্ণতা অর্জন করে ভালো মানুষ হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করবে। ভালো আমলা হবে, রাজনীতিবিদ হবে, ব্যবসায়ী হবে, সমাজসেবক হবে। যার মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি পরিপূর্ণতা প্রকাশ পাবে। আমরা সেই ছাত্র রাজনীতি চাই না যে ছাত্র রাজনীতি অস্ত্রবাজী করবে, খুনা—খুনি করবে, হল দখল করবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালু করার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ এখন আমরা এমন কোন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাবো না যেখানে সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা চলছে। বরং প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখল, সিট দখল, গণরুম নির্যাতন, র্যাগিং, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। এমনকি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার সমর্থিত রাজনৈতিক দলের প্রভাব বিস্তারের সংবাদও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র রাজনীতির মুখোশের আড়ালে ক্ষমতা, সম্পদ, টাকা পয়সা, তদবির বাণিজ্যই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সহায়ক’ শীর্ষক ছায়া সংসদে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক দিপক কুমার আচার্য, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মল্লিক, সাংবাদিক শারমিন নীরা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষার পরিবেশ দুটিই থাকা উচিত: ড. হাছান মাহমুদ