‘আমারে কইছিল, পোলা ইঞ্জিনিয়ার হইয়া বিদেশে যাইব। আমার চিকিৎসা করাইব। এখন আমার চিকিৎসা কে করাইব, আমার ইঞ্জিনিয়ার পুতে গেল কই? আমার পুতেরে আইন্যা দেও তোমরা।’
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে নিহত চুয়েটশিক্ষার্থীর শান্ত সাহার লাশ নরসিংদীর পশ্চিম কান্দাপাড়ার সেবাসংঘ এলাকায় তার বাড়িতে পৌঁছালে এভাবেই বিলাপ করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা শিউলি সাহা।
এর আগে সোমবার (২২ এপ্রিল) বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থী শান্ত সাহার (২১)।
শান্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শিউলি সাহা বলেন, ‘আমার বাচ্চা আর নেই, আমি আর বাঁচতে চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে আমাকে কইছিল, আমি ইঞ্জিনিয়ার পাস করে বিদেশে গিয়ে তোমারে বিদেশে নিয়া চিকিৎসা করামু। এখন আমাকে এ কথা কইব কে?’
নিজের কষ্ট প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না শান্তর বাবা শেখেরচর বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী কাজল সাহা। তিনি বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে অনেক আশা ভরসা ছিল। সড়ক দুর্ঘটনা আমার সব কিছু ধ্বংস করে দিল। ছেলে বলেছিল আমার পড়া লেখা শেষ হলে সংসারের জন্য তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না। কিন্তু আজ সবকিছুই আমার শেষ হয়ে গেছে।’
ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখের ছুটি শেষে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরেন শান্ত। সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তার বড় ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা কৌশিক সাহাকে মৃত্যুর খবরটি জানান শান্তর সহপাঠীরা।
তিন ভাইয়ের মধ্যে শান্ত সবার ছোট। তার মেজ ভাই পার্থ সাহা ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি দেশে ফিরলে নগরীর মেঘনা নদীর পাড়ে শান্তর লাশ দাফন করা হবে বলে জানালেন বড় ভাই কৌশিক সাহা।
চট্টগ্রামের কাপ্তাই সড়কে বাসচাপায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় শান্তসহ চুয়েটের আরেক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম কাপ্তাই রোডের সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ময়নাতদন্ত শেষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে শান্তর লাশ নরসিংদীতে নিয়ে আসে শান্তর দুই সহকারী প্রভোস্ট ও সাত সহপাঠী।