তিস্তা
ভয়াবহ ভাঙনের মুখে উলিপুরের তিস্তা পাড়ের মানুষ
আবারও ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুরের তিস্তাপাড়ের মানুষ।
গত তিন দিনে ভাঙনের তোড়ে তিন গ্রামের মানুষ হারিয়েছেন আড়াই শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙন কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
আরও পড়ুন: বিপদসীমার ২৮ সেমি ওপরে তিস্তার পানি
গত এক মাস আগে ভাঙন শুরু হয় উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, কালপানি বজরা ও সাতালস্কর গ্রামে। উত্তরে জজমিয়ার বাড়ী থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ব্যাপী ভাঙন শুরু হয়েছে।
কালপানি বজরার মোজাম্মেল হক (৬৫) জানান, ‘তিনদিন থাকি এটে (খোলা মাঠে) পরি আছি। গরীব মানুষ জায়গা নাই কোটে যাই। আজকে বজরা বাজারের বাসিন্দা দূর সম্পর্কের জেঠতো ভাই টিটু মিয়া তার খুলিত (আঙিনায়) ঘর তোলার অনুমতি দিছে। দেখি ওটে যায়া আপাতত উঠি, তারপর মাবুদ দেখপে।’
আরও পড়ুন: তিস্তাপাড়ে ভাঙনে মানুষের মানবেতর জীবন
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, ‘দ্রুততম সময়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের ভাঙন কবলিতদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই সহযোগিতা শুরু করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঙ্গে আমরা ভাঙনের বিষয়গুলো আপডেট করেছি। বাজেট না থাকায় তারা মুভমেন্ট করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। আর খোলা আকাশে কেউ থাকলে সেটা আমার নজরে আসেনি। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘গত ২০-২৫ বছর আগে মূল নদীর স্রোত ছিল এই এলাকায়। গ্রামগুলোর উজানে নদী শাসনের ব্যবস্থা নেয়ায় এখানে হঠাৎ করে ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: তিস্তার ভাঙন: গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে শতাধিক পরিবার গৃহহীন
লালমনিরহাটে বানভাসি মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন, বাড়ছে দুর্ভোগ
উজানের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লালমিনরহাটে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত তিনদিন ধরে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি। পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন বাঁধে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ জুন) সকাল ৯টায় হাতীবান্ধার দোয়ানী পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫২.৬০ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার (২০ জুন) সন্ধা ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২.৯০ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে বানভাসি মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সোমবার (২০ জুন) রাত ১০টায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর লালমনিরহাট সদর এবং আদিতমারী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া,হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালমাটি, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পানি প্রবেশ প্রায় ১৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পড়ুন: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র-ধরলা নদীর পানি বাড়ছে, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
তিস্তার পানি ফের বিপৎসীমার ওপর, পানিবন্দি পাঁচ হাজার পরিবার
কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে ফের বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
রবিবার সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে, দুপুর থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে।
ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষ জানান, গত দুই সপ্তাহ থেকে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে গত মাসের শুকনো মরুময় তিস্তার পানিতে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। ফিরে পেয়েছে তিস্তা তার আপন রূপ। নৌকা আর মাঝি মাল্লাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। জেলেরাও প্রায় ফিরে পেয়েছে তিস্তার পানি আর মাছ।
পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে লালমনিরহাট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অতিরিক্ত পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উজানের ঢেউ বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ভারী বৃষ্টির কারণে জেলার ছোট ছোট নদী ও খাল ভরে গেছে পানিতে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার পানি কমছে, খাবার ও পানির সংকট
নদীপাড়ের মানুষজন জানায়, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ।
পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। আদিতমারীর সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ যাওয়ার সড়কটির অর্ধেকাংশ ধসে গেছে। বাকিটুকু ধসে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। সব মিলে নির্ঘুম রাত কাটছে তিস্তাপাড়ের মানুষের। তিস্তার বাম তীরের প্রায় ৭-৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠেছে।
গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, প্রায় সোয়া একর জমির উঠতি বাদাম খেত পাঁচদিন ধরে বন্যার পানিতে ডুবে আছে। পানি নেমে গেলেও পলি আর বালু ভরাট হয়ে নষ্ট হবে ফসল। প্রতি বছর বাদাম আর পেঁয়াজ থেকে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা আসত। এ বছর প্রথম বন্যায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এখন বাদামও নষ্ট হলো।
একদিকে বন্যার পানিতে কৃষকের ঘরে খাবার সংকট। অন্যদিকে ফসল নষ্টের ক্ষতি। সব মিলে তিস্তাপাড়ে আমাদের সীমাহীন কষ্ট।
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, গত দুই দিন ধরে বন্যার পানি বাড়া কমা করছে। গোবর্দ্ধন ওয়ার্ডে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বন্যা কবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শনিবার তা বিতরণও শেষ হয়েছে। বন্যা কবলিত যেসব এলাকা আছে সেগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ বন্যায় বন্দি সিলেটবাসী
সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
তিস্তায় পানি কমলেও শঙ্কা কাটেনি
টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ভারতের গজল ডোবার সব গেট খুলে দেয়ায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা ছাপিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে। তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা কাটাচ্ছে নির্ঘুম রাত।
পানি প্রবাহ বেড়ে তলিয়ে গেছে বাদাম, মরিচ, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া ও ভুট্টাসহ বিস্তীর্ণ চরের বিভিন্ন উঠতি ফসল। অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ হাঁটু বা কোমর পানিতে বন্দিদশায় আছেন। এসব মানুষের হাতে এখনও পৌঁছেনি কোনো সহায়তা। দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে রাখা হয়েছে।
শনিবার দুপুর ২টায় পানি প্রবাহ ছিল ৫২ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। পানি বিপৎসীমার পরিমাপ হচ্ছে ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। যা বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে তিস্তা নদীর তীরবর্তী লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার এলাকার চর ও নিম্নাঞ্চলে মানুষের বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। তবে আবার যে কোন সময় পানিবন্দি হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
শুক্রবার তিস্তা ব্যারাজে সকাল ৬টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। নদীর পানি বাড়ায় তিস্তা তীরবর্তী চর ও নিম্নাঞ্চলে কয়েক শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, নদীর পানি কমায় আমাদের বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। তবে দুর্ভোগ এখনও কমে যায়নি। তবে গোটা এলাকা কাদাময় রয়েছে। আবার উজান থেকে ধেয়ে আসা ভারতের পানি কখন সবকিছু ডুবিয়ে দেবে তা বলা মুশকিল।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, পানি কমেছে। তবে কতক্ষণ এ অবস্থা থাকে এটাই দেখার বিষয়। বৃষ্টির পানির চেয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানিই তিস্তা নদীর অবস্থার পরিবর্তন করে। তাই বর্ষা আসলেই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি না। কখন সবকিছু ডুবিয়ে নিয়ে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা ব্যারাজ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, তিস্তার পানি অনেক কমে এসেছে। আজ দুপুরে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমলেও আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি সবসময়। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই
পানি বাড়ছে তিস্তার, খুলে দেয়া হয়েছে সব গেট
তিস্তায় পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
টানা ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে শুক্রবার বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এতে তিস্তা নদীর তীরবর্তী লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পাশাপাশি ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে ও রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার অনেক মানুষ।
তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জানা যায়, তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পূর্বাভাষ কেন্দ্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা অববাহিকা ব্যারাজ এলাকায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে হঠাৎ পানি প্রবাহ বেড়ে যায় তিস্তায়। রাতে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজের ভাটিতে নদী তীরবর্তী বেশ কিছু গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ
ধরলার পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে
ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি একরাতে ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাড়ছে অন্যন্য নদ-নদীর পানিও।
শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে পাঁচ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার শঙ্কা
তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই
ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। যে কোনো সময় পানি ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
রবিবার দুপুরে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাট তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপদসীমার দশমিক ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাশাপাশি পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার চর এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: পানি বাড়ছে তিস্তার, খুলে দেয়া হয়েছে সব গেট
ব্যারেজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি ৫১ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রবিবার সকালে পানি অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, তিস্তা নদীর পানি এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, যেকোনো সময় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তাই দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর
পানি বাড়ছে তিস্তার, খুলে দেয়া হয়েছে সব গেট
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ করে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে দেশের সর্ববৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) দুপুরে তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও ভারতের গজলডোবা ব্যারেজে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় উজানের ঢল বেড়ে যায়। ফলে তিস্তা ব্যারেজের পানির প্রবাহ বেড়েছে। যদিও এখনও জেলার তিস্তা নদীর পানি এখন বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তবে জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া'র নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা বলেন, তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। প্রতি বছর জুন মাসে একটি বন্যা দেখা দেয়। তাই তিস্তাপাড়ের মানুষকে সর্তক থাকার পাশাপাশি আমরাও প্রস্তুত আছি।
পড়ুন: তিস্তা চুক্তি ১১ বছর ধরে ঝুলে থাকা ‘লজ্জাজনক’: মোমেন
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর
কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভাঙনে দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন ও লালমসজিদ এলাকার প্রায় ১০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এছাড়া গত দুই মাসের ব্যবধানে আরও অর্ধশতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। নিঃস্ব এসব পরিবারের মানুষজন উঁচু বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিন উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের গ্রাম দুটিতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর সহায় সম্বল চোখের নিমিষেই নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে আমাদের সব কিছু তিস্তা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ
গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। এসময় ছয়টি বাড়ি ভেঙেছে। হুমকিতে রয়েছে আরও ৭০-৮০টি বাড়ি। অসময়ে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে আগ্রাসী তিস্তা নদী। প্রায় ৪০ কিলোমিটার ব্যাপী এই নদীটির ভাঙন কবলিত বাম তীরে মাত্র ৫ কিলোমিটার জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকি ৩৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত নদীর অনেক জায়গায় চলছে এখন ভাঙন। গত তিন দিনে বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিঘার পর বিঘা বোরো ধান, ফলদ ও কাঠের গাছসহ ভেঙে যাচ্ছে বিল্ডিং বাড়ি। এখন হুমকিতে রয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার।
গত কয়েক বছর ধরে তিস্তার ভয়াবহ আগ্রাসনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, মন্দির, ডাংরারহাট, রামহরি, পাড়ামৌলা ও গাবুর হালান গ্রামের একাংশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরও গ্রামের পর গ্রাম। বসতভিটা ও জমি হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে বুক ফাঁটা কান্নায় ভারি হয়ে আসছে এখানকার আকাশ-বাতাস। নদী ভাঙনের হুমকিতে থাকা মানুষ এখন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত শরাফত মাস্টারের ছেলে মোস্তাক আহমেদ (৫৬) হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘গতবার নদী বাড়িভিটা সউগ (সব) খায়া (খেয়ে) গেইল (ফেলছে)। হালের গরু বিক্রি করি নতুন বাড়ি করনু (করছি)। এবারো ভাঙবের নাগছে (লাগছে)। কামলা দিয়া খাং। এই বাড়ী গেইলে (গেলে) করিম কি। মোর পকেটোত বিষ খাওয়ার মত টেকা নাই।’
পড়ুন: নিখোঁজের তিনদিন পর নদী থেকে কৃষকের লাশ উদ্ধার