জনদুর্ভোগ
সেতু এখন মরণ ফাঁদ!
সংস্কারের অভাবে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানার কুচিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
প্রায় ৩৫ বছর আগে নির্মিত সেতুটি দীর্ঘ দিনে সংস্কার না করায় অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে এরই মধ্যে খুঁটিতে ফাঁটল ধরেছে। রেলিং (গার্ডার) ভেঙে পড়েছে আরও আগে। এই অবস্থাতে বেশ কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেতুটি পারাপার করছে। যেকোন মুহূর্তে সেতুটি ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিগগিরই সেতুটি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের কুচিয়া নদীর দু’তীরের টেংরামারী, উত্তর কাইনমুখী, দক্ষিণ কাইনমুখী ও দিঘাসহ প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের চলাচলের সুবিধার্থে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মাজেদ সানা সেতুটি নির্মাণ করেন।
আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত সেতুর কারণে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না পুনঃখনন করা ভারানি খাল
দ্বীপ বেষ্টিত সোলাদানার উত্তর কাইনমুখী গ্রামের কিশোর মন্ডল জানান, ইউনিয়নব্যাপী জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় নদী বা খাল। চারদিকে যতদূর চোখ যায় যেন পানি আর পানি। সুষ্ঠু যাতায়াত ব্যবস্থায় সেতুটিই তাদের একমাত্র ভরসা। তবে মূল অবকাঠামো হারিয়ে সেতুটি এখন রীতিমত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে এখনো এলাকাবাসীর অবিরাম সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে যেকোন সময় দুর্ঘটনারও আশঙ্কা করছেন তিনি।
দিঘার এলাকার কল্লোল মন্ডল জানান, আরও ১০ বছর আগের সেতুটির চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরপরও তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়েই যাতায়াত করছেন। উপজেলা সদরসহ স্কুল-কলেজে পৌঁছাতে সেতুটিই তাদের একমাত্র ভরসা।
দক্ষিণ কাইনমুখীর বিজন মন্ডল জানান, সেতুটি দিয়ে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অতিরিক্ত খরচ করে মালামাল বাড়িতে নিতে হয় তাদের।
আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ ‘শাপলা পাতা’ মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি, বিলুপ্তির আশঙ্কা
সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হক জানান, তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালীন নতুন সেতুর প্রস্তাবনাসহ কাগজপত্র তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন, সেটি এখনো পাশ হয়নি।
বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান গাজী জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন স্থানীয় চারটি গ্রামসহ উপজেলার হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পাশাপাশি নতুন করে আরও একটি সেতু নির্মাণের দাবি তার। এ নিয়ে আগামী উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সভায় উত্থাপনের কথাও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় গাছে গাছে আমের মুকুল, ছড়াচ্ছে সৌরভ
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, সাবেক চেয়ারম্যান এস এম এনামুল হক উপজেলা সমন্বয় সভায় একাধিকবার সেতুটির বিষয় উত্থাপন করলেও সেসময় পর্যাপ্ত অর্থাভাবে সেতুটির বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সেতুটির অবস্থা বিবেচনায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে।
ফরিদপুরে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগে তিন শতাধিক পরিবার
পানি নিষ্কাশনের জায়গা দখলের অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে ফরিদপুর শহরতলী সিএন্ডবি ঘাট সংলগ্ন আইজউদ্দিন মাতুব্বরের ডাগি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার। জলাবদ্ধতার ফলে জমে থাকায় পানিতে পরিবেশ নোংরা এবং নানা রোগের উপদ্রব বাড়ছে।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী পদ্মা নদী থেকে বেশ কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী ট্রলার বা জাহাজ থেকে তুলে সিএন্ডবি ঘাট পদ্মা পাড়ের (আইজমুদ্দিন মাতুব্বরের) এলাকায় জড়ো করে। আর এই বালু থেকে বের হওয়া পানি এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। এছাড়াও বর্ষা ও বৃষ্টির পানিতেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এই অবস্থা গত চার বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচলের কাজ চারিয়ে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: সংযোগ সড়ক না থাকায় কাজে আসছে না ৩১ লাখ টাকার সেতু
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের যে পথ ছিল সেগুলো নানাভাবে দখল হয়েছে, এছাড়াও ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী ও অর্থবৃত্তের মালিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টি অনেকবার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে দ্রুত এই জলবন্ধতা নিরসন করা হবে।
পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম, আসমা বেগমসহ অনেকে জানান, এই গ্রামে পাশে যে মাঠ সেখানে ধানসহ বিভিন্ন ফসল হতো, কিন্তু গত চার বছর হলো সারাবছর পানি জমে থাকে। সেখানে কোনে খেতখামার করা যায় না, এছাড়াও প্রত্যেকটি বাড়ি চার পাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া পরিবেশটি বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। এখানকার ছেলে-মেয়েরা সব সময় বিভিন্ন রোগে ভুগছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য পাঞ্জু শেখ বলেন, বালুর ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের পথগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয় না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলা জলাবদ্ধতা সমস্যারও সমাধান হয় না।
আরও পড়ুন: বাঁশের সাঁকোই ৩০ হাজার মানুষের ভরসা
তিনি জানান, বর্ষার সময়ে পানি গোটা এলাকায় নিমজ্জিত হলে সেই পানি বের হওয়ার তেমন কোনো পথ থাকে না ফলে জলাবদ্ধতার সমস্যাও প্রকট হয়।
স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক মাওলনা নাজমুল হাসান বলেন, ‘এই জলাবদ্ধতায় আমরা বাস করতে পারছি না, শিশুসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপদে রয়েছি। গৃহপালিত পশু পালন করা যাচ্ছে না।’
ডিক্রীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির বলেন, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা উন্নয়ন সভায় তুলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরশন করা হবে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে এবার মিলল সাড়ে ছয়শ’ বছর আগের তৈজসপত্র!
ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা মাসুদুল আলম বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। নানাবিধ সমস্যার কারণে বর্ষা বা বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যেতে পারছে না। তাছাড়া আমাদের পানি নিষ্কাশনের পথগুলো অত্যন্ত নাজুক। আমরা দ্রুতই এই জলাবদ্ধাতার সমাধানের চেষ্টা করবো।’
দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা: শীতেও ভবদহ অঞ্চলে ভোগান্তি
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা-যশোর বিস্তৃত অঞ্চলের ভবদহের ৫২টি গ্রাম ২০ বছর ধরে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে। বর্ষাকাল বিদায় নিয়ে শীতের আগমন ঘটলেও ভবদহ এলাকা এখনও জলাবদ্ধ। ফলে এসব এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিএডিসি) এই বিশাল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে এর সফলতা নিয়ে সন্দিহান বাসিন্দারা।
ভবদহের দুঃখ
১৯৬১-৬২ সালে খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও যশোর জেলার অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হরি নদীর উপর ২১ ভেন্টের স্লুইস গেট নির্মিত হয়েছিল। এর কিছু দুরে ৯ ভেন্টের আরেকটি স্লুইস গেট স্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুর-সিলেট আন্তনগর ট্রেন এখনও স্বপ্ন!
সে সময় এ অঞ্চলে স্লুইস গেট নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল ভবদহ এলাকার অর্ধশত বিলের ফসলকে বন্যার পানি ও সাগরের নোনা পানি থেকে রক্ষা করা। কিন্তু মাত্র ২০ বছর পরে সেটি এখানকার মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হরি নদী ভরাট হতে থাকে এবং স্লুইস গেটগুলো ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি ‘ভবদহের দুঃখ’ বলে পরিচিতি পেয়েছে।
হাটগাছা গ্রামের অনামিকা বিশ্বাস জানান, ঘরের চারপাশে পানি কিন্তু খাওয়ার উপযোগী নেই একটুও। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ঘরেই থাকে। ঘরের নিচ দিয়ে মাছ চলে বেড়ায় কিন্তু তা ধরে খাওয়ার কোন উপায় নেই। প্রভাবশালীরা সেখানে মাছ চাষ করছে।
সেচ পাম্প ‘লোকসান প্রকল্প’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিএডিসি) যৌথ উদ্যোগে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও ভবদহ স্লুইস গেট দিয়ে বাসিন্দাদেন জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
ভবদহ সংলগ্ন বিলে ফসল ফলাতে ও পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এ বছরের শুরুতে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয়রা এই পদ্ধতিকে সাগরে ঢিল ফেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এর আগে ভবদহর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১২ সালে সরকার ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রকল্পও কোন কাজে আসেনি। বছর দুয়েক আগে, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে একটি প্রকল্প জমা দেয় যা বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বিএডিসির যশোরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সেচ বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, এ অঞ্চলের বিলে ফসল ফলাতে ও মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাউবোকে বিএডিসি ৩০ এইচপি (হর্সপাওয়ার) পাওয়ারের ২০টি পাম্প সরবরাহ করে। যা রক্ষণাবেক্ষণে বিএডিসির ৮ জন শ্রমিকসহ একজন উপ-প্রকৌশলী সেখানে সার্বক্ষণিক দেখভাল করে থাকেন। কিন্তু লিকেজ দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তা পাউবোকে অবহিত করা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আরও পড়ুন: দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, বিএডিসির কাছ থেকে ২০টি পাম্প পাওয়া গেলেও চাহিদার তুলনায় কম। তাই আরও বড় পাম্প নিতে ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২ বছর আগে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পড়ে আছে। সেটিরও অনুমোদন মেলেনি।
ভবদহ অঞ্চলের বিল কেদারিয়ার বাসিন্দা সত্য বিশ্বাস জানান, আশির দশকে ভবদহতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আজ ৪০ বছর পরও এই জলাবদ্ধতা দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু প্রভাবশালীরা লাভবান হচ্ছে কারণ তারা সরকারি বরাদ্দ আনছে আর লুটপাট করছে।
ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই
নদীর তলদেশ পলিতে ভরে যাওয়ায় বিলের পানি কোথাও যেতে পারছে না। ফলে এসব বিলের পানি নামতে না পারায় মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
স্থানীয় খুলনা-৫ আসনের (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির সেচ প্রকল্প কতটা সফল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে হরি নদী খননসহ এর শাখা প্রশাখা খননের কোন বিকল্প নেই। ভবদহের জল হরি নদী দিয়ে ভদ্রা, ঘ্যাংরাইল হয়ে শিপসা নদীতে পড়ে সাগরে মিশে। তাই ভবদহের মধ্যে খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করতে হবে।
সেতু আছে, নেই সংযোগ সড়ক
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শান্তিপুর নদীর উপর পাকা সেতু থাকলেও নেই সেতুতে ওঠার জন্য কোনও সংযোগ সড়ক। ফলে বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাচ্ছে আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষাকালে নদীতে পানি থাকলেও হেমন্তকালে নদীর পানি প্রায় শুকিয়ে যায়। হেমন্তকালে নদী শুকিয়ে গেলে চলাচল করা যায় তবে বর্ষাকালে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব। যার ফলে চলাচলে দুর্ভোগ দেখা দেয়।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বাদল ইউনিয়ন অন্তর্গত বাদাঘাট-চানপুর সড়কে শান্তিপুর নদীর উপর ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়নি। আবার নির্মিত হয়নি সেতুতে উঠা নামার সংযোগ সড়কও। তাই নদীর উপর ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটি। আসছে না কোনো কাজেও।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
তাহিরপুর উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলজিইডি (সুনামগঞ্জ) হিলি প্রকল্প ৩২ লক্ষাধিক টাকা নির্মাণ ব্যয়ে সেতুর দরপত্র আহ্বান করে। নির্মাণকাজের ঠিকাদারি পায় জামালগঞ্জ উপজেলার পারভেজ এন্টারপ্রাইজ।
জানা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বাদাঘাট-চানপুর সড়কটি দিয়ে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কের শান্তিপুর নদীতে সেতুতে উঠার জন্য দু’দিকে অ্যাপ্রোচে মাটি নেই। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প থেকে উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। শান্তিপুর বাজারের উত্তর পাশ থেকে সেতু পর্যন্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্পে ইউপি সদস্য আবু তাহের মিয়াকে প্রকল্প প্রধান করা হয়। প্রকল্প চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রকল্পে শান্তিপুর বাজার থেকে কাজ শুরু করে সেতুর উত্তর পাশে দুই শতাধিক ফিট দূর পর্যন্ত মাটির কাজ করান। অবশিষ্ট সংযোগ সড়কটি অসম্পূর্ণ রেখে দেয়া হয়। ফলে ২০১৮ সালে বর্ষায় সেই মাটিও সরে যায়।
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
এই ব্যাপারে স্থানীয় মাসুক মিয়া জানান, নির্মাণের পর সেতুটি ব্যবহার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্ব সাধারণের জন্য সেতুটি চলাচলের উপযোগী করতে হলে প্রটেকশন ওয়াল দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
চানপুর গ্রামের বাসিন্দা মজিদ বলেন, সংযোগ সড়কটি স্থাপন করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হলে আমরা সহজেই চানপুর-বাদাঘাট সড়ক ব্যবহার করে তাহিরপুর সদরে যাতায়াত করতে পারতাম। জনদুর্ভোগ কমে আসত।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইকবাল করিব জানান, আমি একবারেই নতুন, তাই এই সেতুটির বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরও পড়ুন: শীতের প্রথম বাজার ধরতে ব্যস্ত যশোরের সবজি চাষিরা
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলব।
৫০০ পরিবারের একমাত্র ভরসা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো!
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হোসেনপুর তালুকদার বাড়ির সংলগ্ন কুচয়া খালের ওপর প্রায় ৫০০ পরিবারের একমাত্র ভরসা নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোটি। বর্তমানে সেটিও ভেঙে যাওয়ায় চলাচলকারী গ্রামবাসীর জীবন দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসী বহুদিন ধরে একটি সেতু নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করে ক্লান্ত। আর এভাবেই কেটে গেল তিন যুগ, আজও সেতু নির্মাণের কোন ব্যবস্থা হয়নি।
এলাকাবাসী জানায়, প্রায় দীর্ঘ তিন যুগ ধরে এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওই খাল পারাপারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। সাঁকোটির পশ্চিম পাশে হাফেজিয়া মাদরাসা, এতিমখানা ও মসজিদ থাকায় শিশুদের ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হতে হয়। এছাড়া অসুস্থ রোগীকে সাঁকো পার করতে দুর্ভোগের সীমা থাকেন না।
আরও পড়ুন: দেবে গেছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক, জনদুর্ভোগ চরমে
৭ নং দক্ষিণ কচুয়া ইউনিয়নের (ইউপি) সদস্য মো. শরিফুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘দীর্ঘ বছর যাবৎ এলাকাবাসীর চাঁদায় স্বেচ্ছাশ্রমে এই বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করে লোকজন চলাচল করছেন। বর্তমানে বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার কারণে চলাচল প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। অনেক সময় জরুরি মুহূর্তে পানিতে সাঁতার কেটে পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা।’
তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল বলে এতো দিন শিক্ষার্থীদের খুব একটা সুবিধা হয়নি। কিন্তু এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। তাই শিক্ষার্থীরা নিরাপদে চলাচল করার জন্য এলাকাবাসীকে নিয়ে পুনরায় সাঁকোটি নির্মাণের জন্য কাজ করছি।’
ইউপি সদস্য বলেন, ‘আমি কয়েকবার সেতুটি নির্মাণের জন্য কচুয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিডি) অফিসকে অবগত করছি। উনারা সেতু নির্মাণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেননি।’
আরও পড়ুন: ওয়াই সেতু নির্মাণে রাঙ্গামাটির বিচ্ছিন্ন দুই দ্বীপবাসীর স্বপ্নপূরণ
গ্রামবাসীর দাবি, সরকারি উদ্যোগে সেতুটি নির্মাণ করা হলে তিন হাজারের বেশি মানুষ উপকৃত হবে। তাই সরকারিভাবে জনস্বার্থে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে সরকারের কাছে সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।
হোসেনপুর গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ শফিকুল ইসলাম তালুকদার ও সানা উল্লাহ তালুকদার বলেন, আমাদের ভোগান্তি কেউই দেখতে আসেন না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয় না। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের প্রশ্ন, এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে?
আরও পড়ুন: কোটিপতি ছেলের বাসায় আশ্রয় হলো না মায়ের
একই গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, এই বাঁশের সাঁকোটি গ্রামের লোকজন কষ্ট করে নির্মাণ করে থাকেন। কিন্তু বর্ষার মৌসুম আসলে তাদের একমাত্র চলাচলের সাঁকোটি পানিতে ভেসে যায়। এরপর চলাচলের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের।
কচুয়া উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, জনস্বার্থে এখানে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হবে।
দেবে গেছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক, জনদুর্ভোগ চরমে
আল মামুন সাগর
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের প্রায় চারশো মিটার দেবে গেছে। এই কারণে কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনী থেকে ভেড়ামারা বারোমাইল পর্যন্ত সড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটে জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, দেবে যাওয়া অংশের দুই প্রান্তের সামান্য এই চারশো মিটার সড়ক পার হতে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তাছাড়া প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক বিভাগ ইট বালু ফেলে জরুরি মেরামত কাজ করলেও এতে তেমন কোন সুফল মিলছে না। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি যেন এখন মহাদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: আখাউড়ায় যুবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা মেরামত
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কটির দেবে যাওয়া এই অংশটি দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে এটি এক সময় মহাসড়ক ছিল। দেখে মনে হবে এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন এক কাঁচা রাস্তা। অথচ এই সড়কটিই হচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে উত্তরাঞ্চলের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম।
আরও পড়ুন: রাস্তার কারণে বিয়ে হচ্ছে না অনেক তরুণ-তরুণীর!
জাতীয় সড়কের অংশ গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি প্রায় এক বছর ধরেই খানাখন্দে ভরে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যেই আবার গত দিন দশেক আগে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া জ্যোতি ফিলিং স্টেশনের কাছ থেকে কবরস্থান পর্যন্ত প্রায় চারশো মিটার সড়ক দেবে গিয়ে কাদামাটিতে একাকার হয়ে আছে। ফলে কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনী থেকে ভেড়ামারা বারোমাইল পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কের দুই ধারে প্রায় শত শত বাস-ট্রাকসহ যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
মাগুরায় বন্যার পানিতে রাস্তা ডুবে জনদুর্ভোগ চরমে
প্রতিদিন নানা কাজে প্রতিনিয়ত এলাকাবাসীকে দুই’শ গজ সড়কে হাটু পানি ও দুই কিলোমিটার রাস্তায় ভয়াবহ কাদা মাড়িয়ে উপজেলা শহরের যেতে হচ্ছে। মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার চরপাচুড়িয়া গ্রামের মধুমতি নদীর পাশ দিয়ে চলে গেছে এই সড়কটি।
এই সড়ক দিয়ে চড়পাচুড়িয়া গ্রাম ও চর পাচুড়িয়াসহ ফরিদপুরের বোয়ালমারি উপজেলার চরনারানদিয়া, রায়পাশা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন।
বিকল্প কোনও সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নিরুপায় হয়ে এই পথ দিয়ে চলতে হয়। সড়কটি সংস্কার বা পাকাকরণ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
এলাবাসীর অভিযোগ, মহম্মদপুর উপজেলা সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এ গ্রামটির সীমানা নিয়ে প্রতিবেশী ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি উপজেলার সাথে বিরোধ ছিল। প্রায় দুই বছর আগে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
সীমানা বিরোধের কারণে এখানে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যায়নি। প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত মধুমতি নদী পাড়ের চর পাচুড়িয়া গ্রামটিতে নূন্যতম কোনো নাগরিক সুবিধা নেই।
উপজেলা সদরে বাস করে চরম অবহেলিত এই গ্রাম। এ যেন বাতির নিচে অন্ধকার। উপজেলা শহরের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটি চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য। এলাকাবাসীরা জানান, নানা কাজে উপজেলা শহরে যেতে হয় পানি ও কাদা মাড়িয়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরল ইসলাম বলেন, গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না, কিছু অংশে বিদ্যুৎ আসলেও রাস্তাঘাটের কোনও উন্নয়ন হয়নি।
এ দিকে, এই অবস্থার সাথে যোগ হয়েছে মধুমতির ভাঙন। ভাঙনে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
মহম্মদপুর উপজেলা সদরের একটি স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী অরিন ও সুমি জানান, স্কুল, কলেজ, অফিস সব মহম্মদপুর উপজেলা সদরে। কোমর পানিতে কাপড় ভিজিয়ে যাতায়াত করতে হয়। গায়ের কাপড় গায়েই শুকাতে হয়।
আরশাদ মোল্যা নামে অপর এক ব্যক্তি জানান, রাস্তাঘাট নেই বলে এই গ্রামে কেউ আত্মীয়তা করতে চায় না। আত্মীয় স্বজন বিপদে না পড়লে বেড়াতে আসেন না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। ঘাড়ে করে হাসপাতালে নিতে হয় রোগীকে। রাস্তা না থাকায় কোনও যানবাহন চলে না।
আরও পড়ুন: যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে, বন্যার আশঙ্কা
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল জানান, সদর ইউনিয়নের এক নম্বর মৌজায় চর পাচুড়িয়া গ্রাম অবস্থিত। দীর্ঘ দিন ধরে সীমানা বিরোধ থাকায় এখানে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া যায়নি। এবার সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর এসএ রেকর্ড সম্পন্ন হয়েছে। এখন উন্নয়নে প্রকল্প নিতে আর বাঁধা নেই। সম্প্রতি বালীভর্তি বস্তা ফেলে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চর পাচুড়িয়াবাসীর সমস্যা সমাধানে দ্রুত সম্ভব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
খানাখন্দে বেহাল দশা, সড়কে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ লক্ষ্মীপুর পৌরবাসীর
লক্ষ্মীপুর পৌর শহরে খানাখন্দে সড়কের বেহাল দশা। বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এসব দেখেও চুপ করে আছেন সংশ্লিষ্টরা। কোন ধরনের ব্যবস্থাই নিচ্ছেন না তারা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুর হাসপাতাল রোড, সরকারি আলিয়া মাদরাসা সংলগ্ন ঢাকা-নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর মহাসড়ক থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত মিয়া আবু তাহের সড়ক। দলিল উদ্দিন ভূঁইয়া সড়ক, ল –ইয়ার্স কলোনি, পেশকার বাড়ি রোড়, বালিকা বিদ্যা নিকেতন রোডসহ বেশ কয়েকটি সড়ক লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ। উক্ত সড়কগুলো খানাখন্দে বেহাল সড়কে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন ধরে সড়কের সংস্কার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২২ বছরেও সংস্কার হয়নি কুমিল্লার জগতপুর-সাদকপুর সড়ক
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার তেরবেকী ও শিল্পী কলোনি সড়কের একই অবস্থা। এছাড়াও চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দক্ষিণ মজুপুর ফরিদ আহমদ সড়ক এলাকার বাসিন্দারা। এটি লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনের এমপি একেএম শাহাজাহান কামালের বাড়ির সড়ক হলেও বিগত কয়েক বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই সড়কে।
এ ছাড়া পৌরসভার এক সহ সবকটি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ রাস্তাগুলো দীর্গদিন থেকে কোন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না। বিশেষ করে হাসপাতাল সড়কের তৃপ্তি হোটেল থেকে সুপ্রীম কেয়ার রামগতি রোড পর্যন্ত একেবারে খারাপ অবস্থা। এতে করে রোগীরা হাসপাতালে যাতায়াত করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। লক্ষ্মীপুর শহরে যানযট শুরু হলে যাতায়তের সুবিধার জন্য সাধারণ মানুষ বাগবাড়ি থেকে জেবি রোড় হয়ে কালু হাজি রোড দিয়ে দক্ষিণ তেমুহনী বা হাসপাতালে যায়। বর্তমানে দলিল উদ্দিন ভূঁইয়া সড়কের অংশের যে করুন অবস্থা যা একেবারে চলাচলের অযোগ্য।
পৌর শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভা হিসেবে নাগরিকদের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করছে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা। অথচ সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশায় প্রায় সারাবছরই দুর্ভোগে থাকতে হয়। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় এ সংকট আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। কিন্তু এমন সংকট দেখেও যেন না দেখার ভান করে আছেন পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা। মেয়র ও কমিশনারদের জানালে, তারা সড়কগুলো এলজিইডির বলে দায় এড়িয়ে যান।
১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহিরুল আলম শিমুল বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে আমার ওয়ার্ডের ফরিদ আহমদ সড়ক এবং ড্রেনেজ উন্নয়নে একটি মাস্টার প্ল্যান করা আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন: ঘরমুখো মানুষের চাপেও যানজটমুক্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
লক্ষ্মপুর পৌরসভার সচিব মো. আলাউদ্দিন বলেন, অন্যান্য পৌরসভার তুলনায় আমাদের রাস্তাঘাট ও ড্রেন অনেক ভালো আছে। তবে নাগরিকদের অসচেতনতার কারণে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র এম এ তাহের জানান, ইতোমধ্যে কিছু সড়কের মেরামত কাজ এবং ড্রেনের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এসব সংকট নিরসনে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
২২ বছরেও সংস্কার হয়নি কুমিল্লার জগতপুর-সাদকপুর সড়ক
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা সদর থেকে জগতপুর-সাদকপুর হয়ে গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। ২২ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। এতে ১০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শনিবার দেড়ঘন্টা বন্ধ থাকবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিকআপ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল চালাচল করে। উপজেলা সদরের সাথে জগতপুর, সাদকপুর, শ্যামপুর, মালাপাড়া, আসাদনগর গ্রামের একমাত্র চলাচলের সড়কটি বর্তমানে খানখন্দে ভরে আছে। পুরো রাস্তা জুড়ে ছোট-বড় গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতে গর্তগুলো জলাবদ্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় যানবাহন গর্তে পড়ে অহরহর দুর্ঘটনা ঘটছে।
এলাকাবাসী জানান, ২২ বছর আগে সড়কটি প্রথম পাকা করা হয়। ১৬ বছর পরে রাস্তাটি নতুন করে সংস্কারের জন্য ২০১৬ সালে কাজ শুরু করে। বুড়িচং উত্তরপাড়া এলাকা থেকে জগতপুর পর্যন্ত রাস্তাটির কাজ করা হয়। কিন্তু সাদকপুরের শুরু থেকে শ্যামপুর গোমতী নদীর বাঁধ পর্যন্ত রাস্তাটির কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দেয়।
অভিযোগ রয়েছে, রাস্তার কাজে চাঁদা চাওয়ায় ঠিকাদার কাজ অসমাপ্ত রেখেই চলে যান।
৫নং পীরযাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন জাহের জানান, রাস্তার কাজে বাধা সৃষ্টি করে চাঁদা চাওয়ায় ঠিকাদার এই রোডের কাজ নিতে চায় না। রাস্তাটি নতুন করে টেন্ডার করা হয়েছে। আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে একমুখী যানজট
বুড়িচং উপজেলা প্রকৌশলী অনুপ কুমার বড়ুয়া জানান, এই রাস্তার কাজে চাঁদা চাওয়ায় এর আগের ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে গেছে। এখন আবার নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বিল পাস হলে কাজ শুরু হবে।
বিশ্বনাথে অসমাপ্ত সংস্কার কাজে ‘জনদুর্ভোগ’
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় নির্ধারিত সময় পার হলেও ১৩ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ এখনো অর্ধেক বাকি। যে পরিমাণ সংস্কার হয়েছে তার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে অর্ধেক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দ নিয়ে। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর যাতায়াতে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বনাথ জিসি থেকে জগন্নাথপুর সীমানা পর্যন্ত ১৩.০৯ কিলোমিটার সড়ক ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর সংস্কার কাজ শুরুর অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। ২৩ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৭১.০৯৭ টাকা বরাদ্দের এ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাওন এন্টারপ্রাইজ। ১৩.০৯ কিলোমিটারের মধ্যে বিভিন্ন অংশে আরসিসি ঢালাই ধরা হয় প্রায় ১৮ মিটার।
আরও পড়ুন: ‘হ্যালো ছাত্রলীগ’র অর্থায়নে ৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার
করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে অনুমতির ৬ মাস পর কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিছু দিন কাজ করার পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আরও ৩-৪ মাস কাজ বন্ধ রাখে ওরা। এ অবস্থায় তার টেন্ডার বাতিল হবার উপক্রম হলে, তার অন্য সহযোগীকে কাজ বুঝিয়ে দেন তিনি। ফের শুরু হয় কাজ। সব মিলিয়ে ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেন তারা। ফের করোনার প্রকোপ, কঠোর লকডাউন আর বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়ে কাজ। এর মধ্যেই চলে যায় কাজের নির্ধারিত সময়। বর্তমানে দেড়-দুই মাস ধরে একরকম বন্ধই আছে কাজ। এ অবস্থায় বাকি অংশ সংস্কার নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, মূল কাজের আরসিসি অংশের মধ্যে বাকি আছে ৭-৮ মিটার প্রায়। ইতোমধ্যে সাব ভেইজ ৯ কিলোমিটার, ডাবু বিএম ৮ কিলোমিটার ও কার্পেটিং ৫ কিলোমিটারের মতো সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আর বাকি প্রায় অর্ধেক কাজই অসমাপ্ত রয়েছে। করোনার কারণে লকডাউন ও ঈদ মিলিয়ে শ্রমিক ছুটিতে রয়েছে। অল্প ক’জন আছে সাইটে। ছোট-খাটো ত্রুটি ধরা পড়লে ঠিক করছে তারা।
স্থানীয়রা বলেন, সময় মতো কাজ শুরু হলে এ ভোগান্তি পোহাতে হতো না আমাদের। অর্ধেক অবশিষ্ট থাকায় বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে অবস্থা হয়েছে আরও নাজুক। ছোট-বড় ডোবা আর কাঁদা-মাটিতে একাকার পথ। কাজ শেষ হওয়া অংশেও রয়েছে ত্রুটি।
আরও পড়ুন: ঢাকার খালগুলো দখলমুক্ত করে সংস্কার করবে দুই সিটি করপোরেশন
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ জানান, ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক কাজ সমাপ্ত হয়েছে। করোনা, বৃষ্টি সব মিলিয়ে কিছুটা পিছিয়েছে নিয়িমিত সংস্কার কর্মকাণ্ড।
লকডাউন শিথিল হলে শ্রমিক বাড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব কাজটি সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি জানান।