ঘূর্ণিঝড় ইয়াস
ইয়াসের প্রভাবে ভোলায় থেমে থেমে ঝড়ো বাতাস ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকূলীয় দ্বীপজেলা ভোলার উপর দিয়ে বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে ঝড়ো বাতাস ও মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভোলায় ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে এবং ২৪ ঘণ্টায় ১৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে ভোলার লালমোহন উপজেলায় আবু তাহের (৪৮) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায়
এদিকে বুধবার সকাল থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে মেঘনা নদী। জোয়ারের পানিতে গেলো রাতে জেলার মনপুরা, চরফ্যাসনের ঢাল চর, কুকুরি মুকরি,চরনিজাম, চর জহিরউদ্দিন, মাঝের চর, মদনপুরসহ প্রায় অর্ধশত নিন্মঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
সাগর মোহনার ঢাল চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ।
অপর দিকে জোয়ারের পানিতে করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধের ১৭টি স্পট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ভোলার মনপুরাতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ২০ মিটার ও চরফ্যাসনের মাদ্রাজে ১০ মিটার বিধ্বস্ত হয়ে পানি প্রবেশে করেছে।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল আক্তার জানান, গেলো রাতে ভোলার মেঘনা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।
ভোলা জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক ই-লাহী চৌধুরী জানান, লালমোহনে গাছ চাপায় নিহত কৃষকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া জোয়ারে প্লাবিত হলে রাতে ঢাল চরে প্রায় ১ হাজার ২০০ লোককে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ও কোস্ট ট্রাস্টে নিরাপদে সরিয়ে আনায় হয়। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
ফেনীতে জোয়ারের পানিতে ডুবে জেলের মৃত্যু
ফেনীর সোনাগাজীতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ডুবে হাদিউজ্জামান (২৬)নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে জেলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মৃত জেলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর এলাকার শেখ পাড়ার আবদুল বারী গাজীর ছেলে।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে জাটকা ধরায় ২৫ জেলে আটক
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হাদিউজ্জামান, তার চাচা জাহিদুল ইসলাম ও আবদুর রহিম ছোট ফেনী নদীতে ঠেলাজাল দিয়ে চিংড়ির পোনা মাছ ধরতে যান। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে নদীতে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় তীব্র স্রোতে হাদিউজ্জামান ডুবে নিখোঁজ হয়ে যান। অন্য দুজন কোনো রকম সাঁতার কেটে উপকূলে এসে প্রাণে বাঁচেন।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষায় নৌ-পুলিশের যৌথ অভিযান
সোনাগাজী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. জামিল আহমেদ খান বলেন, উপকূলীয় এলাকা সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়ায় বাহিরের চরের ছোট ফেনী নদী থেকে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ওই জেলের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ।
আরও পড়ুন: কালীগঞ্জে নদীতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম পলাশ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃত হাদিউজ্জামান মৌসুমি জেলে। গলদা চিংড়ির পোনা ধরতে আসেন সোনাগাজী অঞ্চলে। তার মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস: বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায়
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে নদীর পানি প্রায় তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, কৈখালী, মুন্সিগঞ্জ ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে এবং বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার আগাম ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা বহনযোগ্য সম্পদ নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া উপকূল এলাকা আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা এবং শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কৈখালি , ঈশ্বরীপুর ,রমজাননগর, কাশিমারিসহ সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জ হরিনগর এলাকায় মাইকিং করে জনগনকে সতর্ক করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ১৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত করা হয়েছে মানুষের আশ্রয়ের জন্য। এর মধ্যে শ্যামনগর উপজেলার ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা ৭৫ হাজার বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আ ন ম আবু জার গিফারি।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
পটুয়াখালীতে ইয়াসের প্রভাবে ১৬ গ্রাম প্লাবিত
এছাড়াও জেলায় দেড় হাজার স্কুল কলেজ মাদরাসা ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কোভিড চলাকালীন নিরাপত্তা বজায় রেখে তাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ইউএনও।
এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বেড়িবাঁধের ৫৫টি পয়েন্ট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পূর্নিমার ভরাকাটাল ও পূর্নচন্দ্র গ্রহণের সময় ইয়াস এর দাপটে জলোচ্ছাসের আশঙ্কা করছেন উপকূলবাসী।
এদিকে, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের ৮টি টহল ফাঁড়ির সব সদস্যকে নিরাপদে সরে যাবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সহকারি বন সংরক্ষক এম এ হাসান বলেন, ইয়াস আঘাত করলে এবং অস্বাভাবিক জলোচ্ছাস হলে তাদেরকে উদ্ধার করে আনার জন্য নৌযানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’: খুলনাঞ্চলের নদ-নদীতে বেড়েছে জোয়ারের পানি
শক্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনাঞ্চলের নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার রাত থেকেই এখানে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। মঙ্গলবার সকাল থেকে ঝড়ো বাতাসও বইছে, এ কারণে উপকূলের উপজেলা কয়রা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছায় জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। এ ছাড়া বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে বেড়িবাঁধ এলাকার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সুন্দরবনের আশপাশের নদনদী সহ শিবসা, কপোতাক্ষ, রূপসা নদীর পানি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের পানির চাপে খুলনাসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: 'ইয়াস' মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ ইউএনবিকে বলেন, বঙ্গেপসাগরে থাকা ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় নদ-নদীর জোয়ারের পানি২-৪ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে ।
তিনি বলেন, মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় খুলনায় ৮১৪ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে ও জান-মালের অপূরণীয় ক্ষতি প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে খুলনা জেলা প্রশাসন। জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে প্রস্তুত করা হচ্ছে গতবারের ৮১৪টির অধিক আশ্রয়কেন্দ্র। প্রস্তুত রয়েছে ১১৪টি মেডিকেল টীম।
খুলনা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সকল সদস্য, এনজিও, সিপিপি, ফায়ার সার্ভিস সবাইকে যার যার মতো প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জুম প্রযুক্তির মাধ্যমে সভায় যুক্ত হয়েছিলেন, তাদেরও নির্দেশনা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ নিয়ে সতর্ক থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
পরে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেনের সাথে সভা করেছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি।
শনিবার পর্যন্ত ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে বলে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি স্কুলগুলোকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে বেশি সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: আন্দামান সাগরে ঘণীভূত হওয়া ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত করতে পারে
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বলেন, শুক্রবার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। গত বছর ৮১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল; এবার আরও বেশি সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হবে। কোভিড-১৯ এর কারণে সংক্রমণ রোধে আশ্রয়কেন্দ্রের সক্ষমতার অর্ধেক মানুষকে একটি কেন্দ্রে রাখা হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলায় ৫টি ও প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে মোট ১১৪টি মেডিকেল টীম প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা চিকিৎসা সেবা দেবেন। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে শুষ্ক খাবার অর্থাৎ চাল-ডাল প্রস্তত রয়েছে-সরকারি নিদের্শনা মোতাবেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
আতঙ্ক নয়, উপকূলবাসীকে সজাগ ও সতর্কতার মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।