পরমাণু সংস্থা
ইউক্রেনে ‘ডার্টি বোম্ব’ বিষয়ে তদন্ত করবে জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা
এবার ইউক্রেনে ‘ডার্টি বোম্ব’ বিষয়ে তদন্ত করবে জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থা। শুক্রবার জাতিসংঘের পারমাণবিক প্রধান রাফায়েল গ্রোসি এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের দু’টি স্থানে ডার্টি বোম্ব তৈরির কার্যক্রম চলছে, রাশিয়ার এমন অভিযোগ তদন্তে পরিদর্শক পাঠাচ্ছেন। আশা করছেন যে তারা ‘খুব দ্রুতই একদিনের মধ্যে’ একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে।
গ্রোসি বলেন, ইউক্রেনের সরকারের লিখিত অনুরোধের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিদর্শকরা এই সপ্তাহে আইএইএ এর সুরক্ষার অধীনে থাকা দুটি এলাকা পরিদর্শন করবেন।
জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এই সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কাছে একটি চিঠিতে অভিযোগ করেছেন যে ইউক্রেনের কিয়েভের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের নিউক্লিয়ার রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ভোস্টোচনি মাইনিং অ্যান্ড প্রসেসিং প্ল্যান্ট ‘(প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির) জেলেনস্কির কাছ থেকে এমন ডার্টি বোম্ব তৈরির জন্য সরাসরি আদেশ পেয়েছে।’
রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, এই তথ্য রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: পরমাণু আলোচনায় গ্যারান্টি বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সেসময় তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় (রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) জানিয়েছে একটি ডার্টি বোমার কাজ ‘সমাপ্তির পর্যায়ে রয়েছে’ যা সন্ত্রাসবাদিরা যা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহার করে।
গ্রোসি বলেছেন: ‘এই সপ্তাহের সুরক্ষা পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হল সম্ভাব্য অঘোষিত পারমাণবিক ক্রিয়াকলাপ এবং ডার্টি বোম্ব' তৈরির সঙ্গে সম্পর্কিত উপকরণ শনাক্ত করা।’
তিনি বলেন, আইএইএ এক মাস আগে কিয়েভের পারমাণবিক গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছেন। ‘সেখানে কোনও অঘোষিত পারমাণবিক কার্যকলাপ বা উপকরণ পাওয়া যায়নি।’
কিন্তু গ্রোসি বলেছেন যে পরিদর্শকরা একটি ভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে এটি পুনরায় পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন।
সাধারণত পরিদর্শকরা পরমাণু উপাদান যেমন-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, প্লুটোনিয়াম ও থোরিয়ামের সন্ধান করেন।
তিনি বলেন, তবে এ ক্ষেত্রে ‘কিছু নির্দিষ্ট আইসোটোপ, সিজিয়াম ও স্ট্রন্টিয়ামের উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং, এটি নিষ্পত্তির জন্য সেখানে জ্বালানি পুনঃপ্রক্রিয়া করা হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করতে আমরা একটি ভিন্ন ধরণের কাজ করতে যাচ্ছি।’
গ্রোসি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এসেছিলেন ইউক্রেন সম্পর্কিত পারমাণবিক ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের রুদ্ধদ্বার ব্রিফ করতে। আইএইএ এর আগে তার মাধ্যমে একটি বিবৃতি দেন এবং তিনি কাউন্সিলের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
রাশিয়ার নেবেনজিয়া বলেছেন যে তিনি গ্রোসিকে বলেছিলেন যে ‘তাকে সতর্ক থাকতে হবে’। কারণ দু’টি স্থানই একমাত্র জায়গা নয় যেখানে ‘ডার্টি বোম্ব’ তৈরি করা যেতে পারে।
গ্রোসি বলেন, তিনি একটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা সম্পর্কে ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’ রয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে: ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি
তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে আইএইএ ইউক্রেনের অন্যান্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে আরও বিশেষজ্ঞ মোতায়েন করতে চলেছে। এগুলো হলো— রিভনি, খমেলনিটস্কি দক্ষিণ ইউক্রেন ও চেরনোবিল।
এর আগে ১৯৮৬ সালে বিশ্ব সবচেয়ে খারাপ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পরপরই রাশিয়ান বাহিনী চেরনোবিল দখল করে নেয়, যদিও তারা এপ্রিলের শুরুতে চলে যায়।
অন্যদিকে, ইউক্রেন ‘ডার্টি বোম্ব’ বিস্ফোরণের মস্কোর দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
দেশটির চারটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সংস্থা এনারগোঅটম বলেছে, রাশিয়ার সেনারা গত সপ্তাহে দখলকৃত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গোপন নির্মাণ কাজ চালিয়েছে।
এনারগোটম মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে যে অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণকারী রাশিয়ান অফিসাররা প্লান্ট পরিচালনাকারী ইউক্রেনীয় কর্মীদের বা জাতিসংঘের পারমাণবিক শক্তি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার মনিটরদের ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে না। যাতে রাশিয়ানরা কী করছে তারা তা দেখতে না পারে।
গ্রোসি এক বিবৃতিতে বলেছেন যে জাপোরিঝিয়াতে পারমাণবিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ‘অনিশ্চিত রয়ে গেছে’ এবং প্রকৌশলীরা ‘এই মাসের শুরুতে বারবার বিভ্রাটের পরে প্ল্যান্টের ভঙ্গুর বাহ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহকে স্থিতিশীল করার জন্য কাজ করছেন।
আইএইএ প্রধান বলেছেন, তিনি পরিষ্কারভাবে বলছেন যে এটি ‘পারমাণবিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।’
গ্রোসি পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে জাপোরিঝিয়াকে ঘিরে একটি সুরক্ষা অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’।
আরও পড়ুন: পরমাণু চুক্তি আলোচনায় ‘লিখিত প্রতিক্রিয়া’ পেশ ইরানের