বন্যা
বন্যায় চট্টগ্রামের ১৩ উপজেলায় মৎস্যখাতে ক্ষতি ৭০ কোটি টাকা
চট্টগ্রামে কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় জেলার ১৩ উপজেলা ও মহানগরীসহ মাছ চাষের ১৩ হাজার ৩৭৯টি পুকুর এবং ১২৬টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। অবকাঠামোসহ সব মিলিয়ে বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৭০ কোটি টাকা।
বন্যার পানি নেমে যাবার পর ক্ষয়ক্ষতি অনুসন্ধান করে এ তথ্য জানায় জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের জরিপ কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বন্যায় প্লাবিত চট্টগ্রামের ১৩ হাজার ৩৭৯টি পুকুরের আয়তন ৩ হাজার ৭৪৬ হেক্টর। আর ভেসে যাওয়া ১২৬টি মাছের ঘেরের আয়তন ১৮৯ হেক্টর। এসব পুকুর ও ঘের থেকে মাছ ভেসে গেছে ৪ হাজার ১৫৪ টন। সেই হিসাবে এই বন্যায় শুধু মৎস্য খাতেই ৬৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
গত ১ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। ৪ আগস্ট নগরী ও জেলায় বন্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে। এরমধ্যে ৭ আগস্ট পর্যন্ত চার দিন টানা জলাবদ্ধতা ছিল নগরীতে।
অপরদিকে, জেলার ১৫ উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলায় এখনও কিছু কিছু এলাকায় বন্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৪ উপজেলা। সেগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া ও চন্দনাইশ।
চার উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষ হয় প্রায় ১০ হাজার পুকুরে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।
সাতকানিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসান আহসানুল কবির বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার মৎস্য প্রজেক্ট ও পুকুর ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বন্যায় নিহত ১৬, ক্ষয়ক্ষতি ১৩৫ কোটি টাকার বেশি
বন্যার কারণে ২ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া
রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের প্রাইমোরি অঞ্চলের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় সময় রবিবার (১৪ আগস্ট) দেশেটির জরুরি কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ক্রান্তীয় ঝড় খানুন এর প্রভাবে এ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের পর এই লোকদের সরিয়ে নেয়া হয়।
আরও পড়ুন: চীনে ভয়াবহ বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, এই অঞ্চলে সপ্তাহজুড়ে হওয়া ভারী বৃষ্টিপাতে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে।
রাশিয়ার জরুরি পরিস্থিতি মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে জানিয়েছে, ৪ হাজার ৩০০ টিরও বেশি বাড়ি ও ২৮টি জনবসতি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চলের ১৬টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উদ্ধারকারীরা এই অঞ্চলে ১৩টি অস্থায়ী আবাসন কেন্দ্র স্থাপন করেছেন।
স্থানীয় কর্মকর্তারা শুক্রবার জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সাতটি জেলায় বন্যা হয়েছে এবং কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন নারী এবং ১০ ও ১২ বছরের ২টি শিশু।
এর আগে টাইফুন খানুন কোরীয় উপদ্বীপ ও জাপানে আঘাত হানে।
আরও পড়ুন: তাপ, দাবানল ও বন্যা গ্রীষ্মকে ‘তীব্র গরম’ করে তুলেছে
বন্যাকবলিত এলাকায় অতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন ইউয়ান বরাদ্দ দিল চীন
বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে যুক্তরাজ্য: সারাহ কুক
চট্টগ্রাম বিভাগে বড় আকারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য ২৫ হাজার পাউন্ড মানবিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
এই অর্থ দিয়ে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও কক্সবাজার জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষ সহায়তা পাবে।
রবিবার (১৩ আগস্ট) ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন জানিয়েছে, কারিতাস বাংলাদেশ ও অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করা স্টার্ট ফান্ড বাংলাদেশ এটি বরাদ্দ করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেছেন, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার পাশে রয়েছে যুক্তরাজ্য।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ও দেশের ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য ১১.৬ মিলিয়ন পাউন্ড মানবিক সহায়তা যুক্তরাজ্যের
তিনি বলেন, ‘আমি ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে ইউকে জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিতে ২৫ হাজার পাউন্ড মানবিক সহায়তা দিয়েছে।’
এই সহায়তা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি কিট, আশ্রয় সামগ্রী এবং ক্ষতিগ্রস্ত ১৮ হাজারেরও বেশি মানুষকে নগদ টাকা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করবে।
তিনি বলেন, ‘এটি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়াকে পরিপূরক করে এবং বাংলাদেশে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের দীর্ঘস্থায়ী সহায়তার উপর ভিত্তি করে তৈরি করে।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের ব্যাপক সহযোগিতা আরও গভীর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমি: সারা কুক
আমরা বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই, যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীকে মোমেন
বন্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর ৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত
চট্টগ্রামে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কোথাও কোথাও সড়কের আশেপাশে ফুটপাতে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও নগরীতে ২ দশমিক ১৯ কিলোমিটার নালা ও প্রায় ২ কিলোমিটার ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ সময় অতিবৃষ্টি ও বন্যায় মহানগরী ও জেলার ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চসিক ও জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে কয়েকদিনের সৃষ্ট জলবদ্ধতায় নগরীর বন্দর, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, বড়পোল, হালিশহর, দেওয়ানহাট, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন রোড, বায়েজিদ বোস্তামী রোড, সুন্নিয়া মাদরাসা রোড, খতিবের হাট, জাকির হোসেন রোড, ডিসি রোড, লয়েল রোড, মাইজপাড়া, কে বি আমান আলী রোড, শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ রোড, কে সি দে রোড, জামালখান, সার্সন রোড, খাজা রোড, ওমর আলী মাতব্বর রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়কে কার্পেটিং উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দ। নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে লাভলেইন, জুবলী রোড়ের বিভিন্ন স্থানে ফুটপাত দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো ভরে গেছে, রয়েছে কাদাও। অলি-গলির অনেক রাস্তাও ভেঙ্গেছে। নানা দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যানবাহন চলছে এসব রাস্তায়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুনিরুল হুদা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সড়ক সংস্কারের জন্য ৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে এই টাকা বরাদ্দ চাওয়া হবে। এর আগে বৃষ্টি মৌসুম চলে গেলে চসিকের ব্যবস্থাপনায় সড়ক সংস্কার করা হবে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যা: আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ, ১৫,৬০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
বান্দরবানে বন্যা: আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ, ১৫,৬০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, বান্দরবানে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো তাদের বাড়িতে ফিরে গেছেন।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকালে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি সাম্প্রতিক বৃষ্টি ও বন্যায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের বিস্তারিত বিবরণ ও জেলার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
বিপর্যয়টি ধ্বংসের একটি ক্ষত রেখে গেছে। পরিবারগুলোকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং অবকাঠামোর যথেষ্ট ক্ষতি করেছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বন্যা-ভূমিধস মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন
তিনি বলেন, বর্তমানে দুর্যোগকবলিত প্রায় ৩৪০ জন মানুষ জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। এছাড়া দুর্যোগের প্রভাবটি মারাত্মক হয়েছে। বন্যায় ১৫ হাজার ৮০০ পরিবার আক্রান্ত হয়েছে এবং ১৫ হাজার ৬০০টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেছেন, কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৮ হাজার ২৫৩ হেক্টর ফসলি জমি বন্যায় তলিয়ে গেছে।
বন্যা ও ভূমিধসের ফলে ১০ জনের মৃত্যুর কথাও জানান তিনি।
এছাড়া অবিরাম বর্ষণে থানচি ও রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দু’টি ভ্রাম্যমাণ পানি পরিশোধন ইউনিট স্থাপন করে পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নিয়েছে।
ইতোমধ্যেই এই উদ্যোগের মাধ্যমে ২ লাখ লিটার পানি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও ত্রাণ তৎপরতায় যোগ দিয়েছেন এবং অতিরিক্ত ৫৩ হাজার ৮০০ লিটার সুপেয় পানি বিতরণ করেছেন।
উপরন্তু, ৯৬২ জনকে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৮৫০টি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকার দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৬৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এবং ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ৭টি উপজেলার প্রতিটির জন্য ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে এবং পুনর্বাসন কাজে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করেছে।
বান্দরবান শহরে চারদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার পর শুক্রবার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়েছে।
এছাড়া, পানি শোধনাগার থেকে ধ্বংসাবশেষ এবং পলি অপসারণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় পানি সরবরাহ ব্যাহত রয়েছে। জেলায় ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
বান্দরবানে ভূমিধসে মা-মেয়েসহ নিহত ৩
চট্টগ্রামে বন্যায় নিহত ১৬, ক্ষয়ক্ষতি ১৩৫ কোটি টাকার বেশি
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে চট্টগ্রামে অন্তত ১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ সময় ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব মিলিয়ে ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া উপজেলার।
সোমবার রাত থেকে ৩ দিন কার্যত পানির নিচে ছিল এসব এলাকা। টানা ৩ দিন বন্ধ বিদ্যুৎ। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হলেও এখনো অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হয়নি বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন সিনিয়র কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাথমিক হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার। গত ৩ দিন আমরা খাবার বরাদ্দ দিয়েছি। আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত আছে মোট ১ হাজার ১৯৩টি।
এদিকে বুধবার থেকে পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন এলাকায় নৌকা ডুবে ও স্রোতের টানে ডুবে নিখোঁজ হওয় অনেক নারী-পুরুষ-শিশুর লাশ ভেসে উঠে।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বন্যায় ৩ উপজেলা ও মহানগরীতে মোট ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রশাসন মৃত্যুর এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় উন্নতি হতে পারে: এফএফডব্লিউসি
বন্যাকবলিত এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের মনিটরিং সেল চালু
বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার বিষয়ে মনিটরিং সেল চালু করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
কেন্দ্রীয়ভাবে অধিদপ্তরে স্থাপিত এই মনিটরিং সেলের কার্যক্রম বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ভোর থেকে শুরু হয়েছে।
সারাদেশের বন্যাকবলিত এলাকার উদ্ধারকাজ বিষয়ে যেকোনো সহযোগিতার জন্য হটলাইন নম্বর ১৬১৬৩ এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নিয়মিত নম্বর ০২২২৩৩৫৫৫৫৫ চালু থাকবে।
পাশাপাশি মনিটরিং সেলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য ০১৭১৩-০৩৮১৮১ মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা যাবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, সকল দুর্যোগে ফায়ার সার্ভিস মানুষের দুঃসময়ের বন্ধু। বরাবরের মতো দেশের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে সকলেই যেন সহজে ফায়ার সার্ভিসের সেবা নিতে পারেন সেজন্য এই মনিটরিং সেল বন্যাকালীন সার্বক্ষণিক কাজ করবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকার সকল কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করে সকলকে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে নিখোঁজের ৩২ ঘণ্টা পর যুবকের লাশ উদ্ধার
বন্যাজনিত কারণে ১০ আগস্ট দুপুর ২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন রাস্তায় পড়ে যাওয়া ৬০টি গাছ অপসারণ, দুটি ভূমিধস, ১১টি অগ্নিদুর্ঘটনা এবং ৯টি অন্যান্য দুর্ঘটনায় অংশগ্রহণ করে দুই জনকে জীবিত ও দুই জনের লাশ উদ্ধার এবং ১০০ জনকে আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর করেছে ফায়ার সার্ভিস।
একইসঙ্গে অতিবৃষ্টির কারণে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন রাস্তায় পড়ে যাওয়া ৯টি গাছ অপসারণ এবং একটি অগ্নিদুর্ঘটনায় অংশ নিয়ে দুই জনকে জীবিত ও একজনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
উল্লেখ্য, মনিটরিং সেলের পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকার ফায়ার স্টেশনসমূহ এবং বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমেও সেবাগ্রহণকারীরা ২৪ ঘণ্টা বন্যা-সংক্রান্ত দুর্যোগে উদ্ধারবিষয়ক সেবা নিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় উন্নতি হতে পারে: এফএফডব্লিউসি
চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে নৌকাডুবি, ব্যবসায়ী নিখোঁজ
চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে নিখোঁজের ৩২ ঘণ্টা পর যুবকের লাশ উদ্ধার
চট্টগ্রামের রাউজানে বন্যার পানিতে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজের ৩২ ঘণ্টা পর এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে উপজেলার হালদা নদীর ছায়ারচর এলাকা থেকে তার লাশটি উদ্ধার করা হয়।
মৃত যুবক শাহেদ হোসেন বাবু (৩৭) একই উপজেলার উরকিচর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত সিআইপি এস এম ইউসুফের ছেলে। তিনি পেশায় একজন কৃষি ও মাছ চাষি ছিলেন।
আরও পড়ুন: নিখোঁজের ৩ দিন পর যুবকের ভাসমান লাশ উদ্ধার
নৌ পুলিশের হালদা ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুল হাছান বলেন, নিখোঁজের স্থান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে স্থানীয়রা লাশটি উদ্ধার করে। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে তাদের বাড়িতে এসেছি। লাশটির সুরতাহাল করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার (৭ আগস্ট) রাতে অতি বর্ষণে উরকিরচর গ্রামের শাহেদের গরুর খামার ডুবে যায়। খামারে থাকা কয়েকটি গরু পার্শ্ববর্তী খালে ভেসে যায়। গরুগুলো উদ্ধার করে শাহেদ আরও তিনজন সঙ্গীসহ সন্ধ্যায় নৌকায় করে ফেরার সময় নৌকা উল্টে হালদার শাখা খালপাড়ে পড়ে যান। অন্য তিনজন তীরে উঠতে পারলেও সাঁতার না জানার কারণে তীব্র স্রোতের টানে ভেসে যান শাহেদ।
উল্লেখ্য, নিখোঁজ শাহেদের খোঁজে 'ঘটনার পর থেকে সদরঘাট নৌ থানা থেকে একটি টিম হালদা নৌ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের নিয়ে স্পিডবোটে করে নদী ও শাখা খালে সন্ধানে তল্লাশি চালিয়েছিল।
আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জে চিকিৎসকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু
চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছেন। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে তার লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা।
নিহত জুনায়েদুল ইসলাম জারিফ (১৮) চন্দনাইশস্থ বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি আমিরাবাদ ইউনিয়নের জনকল্যাণ এলাকার জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছেলে।
আরও পড়ুন: উলিপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু
স্থানীয়রা জানায়, গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ২টার সময় অতিবৃষ্টির কারণে নিজ বাড়ি থেকে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাবার সময় আমিরাবাদ ইউনিয়নের জনকল্যাণ এলাকায় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে যায়। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মঙ্গলবার তার লাশ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, পানিতে ডুবে নিখোঁজ এক যুবকের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফুলবাড়ীতে আম পাড়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে স্কুলছাত্রের মৃত্যু
সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু
চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতি ২৪ ঘণ্টায় উন্নতি হতে পারে: এফএফডব্লিউসি
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, ফেনী, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি)।
এফএফডব্লিউসি তার নিয়মিত বুলেটিনে বলেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে যা আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
এতে বলা হয়েছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘন্টা অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে নৌকাডুবি, ব্যবসায়ী নিখোঁজ
এ কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালী, ভুগাই-কংশা, সোমেশ্বরী, জাদুকাটাসহ সব প্রধান নদ-নদীর পানি কোনো না কোনো সময় দ্রুত বাড়তে পারে।
এতে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকা ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় এবং অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যাওয়ায় মুহুরী, ফেনী, হালদা, কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরীসহ দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ধীর গতিতে পতন হতে পারে।
এতে আরও বলা হয়, বল্লা পয়েন্টে খোয়াই নদী স্বল্প সময়ের জন্য বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
আরও পড়ুন: বান্দরবানে ভূমিধসে মা-মেয়েসহ নিহত ৩