গোপালগঞ্জ, ১১ নভেম্বর (ইউএনবি)- গোপালগঞ্জে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত নতুন জাতের স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন বিনাধান-১৬ উৎপাদন নতুন রেকর্ড গড়েছে।
আমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান ৬.৬৯ মেট্রিক টন ফলেছে বলে জানিয়েছেন কাশিয়ানী উপজেলার পশ্চিম মাঝিগাতি গ্রামের কৃষক হুমায়ূন খন্দকার ও কৃষি কর্মকর্তারা।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে, এ বছর এ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে গোপালগঞ্জ জেলার ১০০ একর জমিতে ৩০০টি প্রদর্শনী প্লটে বিনা-১৬ ধানের আবাদ করা হয়েছে। স্বল্প মেয়াদকাল সম্পন্ন এ জাতের ধান রোপনের ১০০ দিনের মাথায় তা কাটা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার পশ্চিম মাঝিগাতি গ্রামের কৃষক হুমায়ূন খোন্দকার বলেন, আমি এ বছর বিনা-১৬ জাতের ধান আবাদ করেছি। প্রচলিত আমনের তুলনায় এ ধান রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়েছে। এ ধান প্রচলিত আমনের ১ মাস আগে কাটা যায়। বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়া যায়। এ ধানের আবাদের পর সরিষা, কলাই বা মসুরের আবাদ করা যায়।
তিনি বলেন, আগে আমরা বছরে ২টি ফসল পেতাম। কিন্তু এ ধানের বদৌলতে একই জমিতে বছরে ৩ ফসল ফলিয়ে আমরা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবো। এতে আমাদের লাভ হবে।
একই গ্রামের কৃষক খন্দকার সিদ্দিক বলেন, প্রচলিত জাতের ধান চাষে লাভ নেই। স্থানীয় আমনে রোগবালই দেখা দেয়। কিন্তু বিনাধান-১৬ জাতে কোনো রোগ বালাই নেই। কারেন্ট পোকা আক্রমণ করে না। তাই কীটনাশক খরচ লাগে না। ধান হেলে বা ঝড়ে পড়ে না। অধিক ফলন দেয়। এ জাত চাষ করে আমরা লাভের মুখ দেখেছি।
কাশিয়ানী উপজেলার সমসপুর গ্রামের কৃষক মঞ্জুর হোসেন শেখ বলেন, ক্ষেতে উৎপাদিত ধান থেকেই এ ধানের বীজ পরবর্তী বছরের চাষাবাদের জন্য সংরক্ষণ করা যায়। এ ধানের চাল চিকন ও ভাত খেতে সুস্বাদু। এসব কারণে আমরা আমন মৌসুমে এখন থেকে বিনা ধান-১৬ আবাদ করবো।
গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শেফাউর রহমান বলেন, লাভজনক শস্য বিন্যাস উদ্ভাবন কর্মসূচির আওতায় গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ও কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতায় গোপালগঞ্জে বিনাধান-১৬ আবাদ করে কৃষকরা আমন মৌসুমের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
তিনি বলেন, হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ৬.৬৯ টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এটি দেশের সর্বোচ্চ ফলন। গত বছর এ ধান ৫.৯৭ টন ফলে ছিল। স্বল্প জীবনকালের এ ধান ক্ষেত থেকে কাটার পর কৃষক একই জমিতে আরও ২টি ফসল ফলাতে পারবেন।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিউটের (বারি) ফরিদপুর অঞ্চলের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, গোপালগঞ্জের মাটি খুবই উর্বর। এ জেলার মাটিতে ধান উৎপাদনের সব ধরনের উপাদান বিদ্যমান। ধানে পোকার আক্রমণ কম হয়। এ কারণে এখানে ধানের ফলন বরাবরই ভালো হচ্ছে। বিনাধান-১৬ রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়ে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুঁটিয়েছে। এ ধান লাভজনক শস্য বিন্যাসে কৃষককে সহায়তা করছে।