বেলা গড়ার সাথে সাথে শীতের তীব্রতাও বেড়েছে। হঠাৎ শীতের আক্রমণে সাধারণ মানুষ জবুথবু হয়ে পড়েছেন। শীতে কাজকর্মের অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কর্মজীবী, দিনমজুর, ছিন্নমূল মানুষ ও শিশুরা। গত ক’দিন ধরে ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করছে বলে জানিয়েছে তেতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
প্রকৃতির নিয়মে পঞ্চগড়ে শীতের আগমন ঘটেছে। কুয়াশায় ভিজে যাচ্ছে গাছপালা, ফসলের মাঠ। যেন শিশির ভেজা ঘাসের ডগায় মুক্তোর দানা। ভোরের শিশির বিন্দু, সাঝেঁর বেলা মৃদু হিমেল হাওয়া, কুয়াশায় ঢাকা তাপহীন সূর্য জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় পঞ্চগড় জেলায় প্রতি বছর সবার আগে এখানে শীত আসে।
এখানে শীতের স্থায়িত্বও হয় বেশি। কোনো কোনো সময় ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এই শীতের স্থায়িত্ব থাকে। ঘনকুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহের ফলে গায়ে গরম কাপড় ও টুপি পরা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে তেমন বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। ছিন্নমূলসহ সাধারণ মানুষ কাগজ-খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। মোটরবাইক চালকরা আগেই গরম কাপড় বের করেছেন। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা এবার শীতের তীব্রতা আরও বেশি হবে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুসহ বয়স্করা সর্দি, জ্বরসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মো. সানিউজজ্জামান জানান, বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে রাতে তাপমাত্রা আরও কমে যাচ্ছে।
অনেকে শীতকে বরণ করে নিতে শুরু করেছে নানান প্রস্তুতি। জেলার বিভিন্ন এলাকার গরম কাপড় মার্কেটেও শীতবস্ত্র বেচা-কেনা শুরু হয়েছে। শীতের কারণে লেপ তোষক, কাঁথা বানানো ও কম্বল কেনাবেচাও শুরু হয়েছে। গরম কাপড় ও লেপ তোষকের দোকানে ভিড় বেড়েছে। বেড়েছে বেচাবিক্রিও।
জেলা শহরের তুলারডাঙ্গা এলাকার দিনমজুর সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘন কুয়াশা হলেও আমাদের তো ঘরে বসে থাকা যাবে না। কাজকর্ম না করলে কী খাবো? একদিন কাজ না করলে উপোস থাকতে হবে।’
বাস চালক সাইদুর রহমান জানান, ঘনকুয়াশার কারণে সাবধানে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগছে, ফলে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ঘনকুয়াশার জন্য হেডলাইট জ্বালিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র তৌহিদুল ইসলাম জানান, পৌর এলাকায় প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি অসহায় ছিন্নমূল ও দুঃস্থ্য মানুষ বসবাস করে। হঠাৎ শীত জেঁকে বসেছে। ‘সামান্য কম্বল পেয়েছি, তা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিন শত শত শীতার্ত লোক পৌরভবন ও বাসায় আসছে।’
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘জেলার প্রায় দুই লাখ দুঃস্থ্য মানুষকে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ২২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। পাঁচটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ৩৩৩টি শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।’
বেসরকারি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে শীতার্তদের বাঁচাতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শীতপ্রবণ এলাকার শীতার্ত মানুষের পাশে এগিয়ে আসবেন সরকারসহ দেশবাসী এমনটি প্রত্যাশা এ এলাকার মানুষের।