%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সচল গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের পাম্প
বিদেশি প্রকৌশলী ছাড়াই দীর্ঘ চার বছর পর দেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের তিন নম্বর পাম্প সংস্কার করা সম্ভব হয়েছে। পাম্পটি সচল হওয়ায় আগামী বোরো মৌসুমে জিকে সেচ প্রকল্পের সেচ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এতে তিনটি পাম্পের সাহায্যে কুষ্টিয়াসহ চার জেলার কৃষকদের পানির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে স্থাপিত জিকে মূল পাম্পের তিন নম্বর পাম্পটি ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল অকেজো হয়ে যায়। গত চার বছর দুটি পাম্প দিয়েই কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা জেলার ১৩ উপজেলায় সেচ কাজ সচল রেখেছিল জিকে কর্তৃপক্ষ। পাম্পটি অকেজো থাকায় সেচ কাজ ব্যাহত হয়ে আসছিল। অকেজো হয়ে যাওয়া ৩৭ হাজার হর্স পাওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পটি মেরামতের জন্য জাপানি ইবারা কোম্পানি ১৭ কোটি টাকা দাবি করলে পানি উন্নয়ন বোর্ড শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিটাককে পরামর্শক নিয়োগ দেয়।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি বিটাক অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংকে তিন নম্বর পাম্পটি মেরামতের জন্য তিন কোটি ৭১ লাখ টাকায় চুক্তি সম্পাদন করেন। অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দেশি প্রকৌশলীরা দীর্ঘদিনের চেষ্টায় প্রায় মাসখানেক আগে তিন নম্বর পাম্পটি সচল করতে সক্ষম হয়েছে। পাম্পটি সচল হওয়ায় একদিকে কৃষকেরা নিজেদের চাহিদা মত সেচের পানি যেমন পাবে তেমনি আগামী বোরোতে স্বল্প খরচে অধিক ফসল ফলাতে পারবে কৃষকেরা।
জিকের পানি দিয়ে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন করেন কুষ্টিয়াসহ চার জেলার কয়েক হাজার কৃষক। এতদিন দুটি পাম্প মেশিন সচল থাকায় সময়মতো পানি পেতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে কৃষকদের। তবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিক না থাকায় জিকের বেশির ভাগ পানি অপচয় হয়। খাল খনন কাজ সময়মতো না হওয়ায় পানি ক্ষেত্রে পৌঁছাতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এসব কারণে গ্রামের খালখনন ও সংস্কারের দাবি কৃষকদের।
এদিকে বিটাকের সহযোগিতায় অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিং দেশি প্রকৌশলীদের নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে পাম্প সংস্কারের কাজ করতে পারবে বলে জানান অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কর্মকর্তা। একই সাথে এ ধরনের সাফল্যের পর অন্যান্য কাজে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করা সম্ভব বলেও মনে করেন প্রকৌশলীরা।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর
অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভারি পাম্প বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘দেশে এ ধরনের সফলতা তাদের প্রথম। তারা বাইরের কোন সহযোগিতা ছাড়াই নিজেরাই এমন কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।’
অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলী আজাদ মনে করেন, এখন দেশের বাইরেও তারা পাম্প মেরামতের জন্য কাজ করতে পারেন। দেশে এ ধরনের কাজ করতে পারায় সরকারের অনেক অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। পাশাপাশি দেশে যে এ ধরনের কাজ করা যায় তার নজির সৃষ্টি হয়েছে। সামনে তারা আরও জটিল কাজও সমাধান করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন।
তিন নম্বর পাম্পটি সচল হওয়ায় আগামীতে কৃষদের চাহিদা মত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান জিকে পাম্প হাউজের ইনচার্জ প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
তিনি জানান, জিকের পানির ওপর নির্ভর করে চার জেলার কৃষক। চাপ বেড়ে গেলে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। পদ্মায় পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে তিনটি পাম্পের সাহায্যে চার জেলার কৃষকদের পানির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। পাশাপাশি পাম্প মেরামতে সরকারের প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হয়েছে। এটাও একটা ভালো দিক।
জিকে সেচ হাউজের প্রতিটি পাম্প সেকে এক হাজার তিনশ কিউসেক পানি পদ্মা নদী থেকে উত্তোলন করে সেচ খালে দিতে পারে বলেও জানান তিনি।
বিশ্বনাথে মাঠে মাঠে শীতকালীন সবজি
সিলেটের বিশ্বনাথে মাঠে মাঠে এখন শীতকালীন সবজির ঘ্রাণ। এই মৌসুমের সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে উঠছেন স্থানীয় কৃষকরা। উপজেলায় এবার শীতের আগাম সবজি চাষের ধুম পড়েছিল। কেউ কেউ আরও আগেই সবজি চাষে নেমেছিলেন।
এরই মধ্যে মুলা, শিম, বাঁধাকপি, আলু, লাল শাক, ফুলকপি, টমেটো, শসা, গাজরসহ নানা ধরনের সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে।দাম একটু চড়া তারপরও লোকজন নতুন সবজি ক্রয় করছেন। আগাম সবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব সেই চিন্তা মাথায় রেখে চারা তৈরি ও সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা।
আরও পড়ুন: পুষ্টিগুণ অটুট রেখে শীতকালীন সবজি খাওয়ার সঠিক উপায়উপজেলার খাজাঞ্চি ও অলঙ্কারী ইউনিয়নে শীতকালিন সবজি বেশি চাষাবাদ হয়। ফলে এসব ইউনিয়নে সবজি চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে সিলেটের বাজারেও বিশ্বনাথের সবজি বিক্রি হয়। কিন্তু দাম বেড়েছে দিগুণ -তিনগুণ।বেশি দামের আশায় প্রতিবছরের মত এবারও অনেক চাষি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আগাম জাতের টমেটো, বেগুন, বাধাঁকপি, ফুলকপির বীজ বপন করেছিলেন। তবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়নি।উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বনাথে এ বছর ১৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করার লক্ষমাত্রা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৬৩০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে আবাদ চলমান রয়েছে। যেটা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
আরও পড়ুন: ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
উপজেলার কর্মকলাপতি, মাধবপুর, রহিমপুর, হরিপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগেই। যারা পিছিয়ে পড়েছেন তারা এখন চাষে তোড়জোড় শুরু করেছেন।
চাষিরা জানান, সবজি চাষে এখন খরচ বাড়ছে। কীটনাশক, সার, শ্রমিক, সেচ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন।উপজেলার হরিপুর গ্রামের সবজি চাষি উস্তার আলী জানান, শীতের আমেজ শুরু হয়েছে সে কারণে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ করছি।তেলিকোনা গ্রামের সবজি চাষি নুরুল হক বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে আমাদের সবজি চারা কিছুটা নষ্ট হলেও ফলন ভালো হয়েছে। লাল শাকঁ, আগাম জাতের চিচিঙ্গা, ঝিঁঙ্গার আবাদ করেছি। আশা করি লাভবান হবো।’খাজাঞ্চি ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি সবজি চাষাবাদ হয়। এখানে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। বর্তমানে এলাকার সবজি চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আরও পড়ুন: খুলনায় ৮০০ কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্যের সম্ভাবনাউপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, সিলেটের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় বিশ্বনাথে টমেটোর চাষ বেশি হয়। প্রতি হেক্টরে ২০ টনেরও বেশি ফলন হয়েছে এ অঞ্চলে।
তিনি বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে আগাম চাষ হয়নি। তবে শীতকালীন সবজি চাষে কোন প্রভাব পড়বে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে চাষিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে চাষিদের মাঝে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী ক্ষেত, বিনামূল্যে সবজির বীজ ও সার দেয়া হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে।’
ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে খুলনায়
পুরোপুরি শীত শুরু নাহলেও বেশ কয়েকদিন থেকে খুলনা মহানগরীতে সন্ধ্যার পর থেকে শীতের পিঠা বিক্রি ধুম পড়েছে। মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীরা মোড়ে মোড়ে পিঠার দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন। আর সাধারণ মানুষও খাচ্ছেন এসব ধোঁয়া-ওঠা গরম গরম পিঠা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পিঠা তৈরির ছাঁচে চালের গুঁড়ি নিয়ে তার ওপর গুড়, নারকেল ছিটিয়ে ভাপে দিচ্ছেন দোকানি। খোলায় বানানো হচ্ছে চিতই পিঠা। সন্ধ্যার পরেই পিঠার দোকানে ভিড় করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পিঠার দোকান সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। অনেকে আবার পিঠা বিক্রির দোকান দিয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
শান্তিধাম মোড়স্থ জাতিসংঘ শিশু পার্কের পশ্চিম পাশে, মহানগরীর রূপসা ঘাট, পিটিআই মোড়, দোলখোলা মোড়, গফফারের মোড়, শিশু হাসপাতাল রোড, তারের পুকুর পাড়, পিকচার প্যালেস মোড়, ক্লে রোড, মহারাজ চত্বর রোড, স্টেশন রোড, কদমতলা রোড, খান জাহান আলী রোড, সোনাডাঙা বাস স্ট্যান্ড, মোল্লা বাড়ির মোড়, নিউ মার্কেট, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মোড় আর ফুটপাতে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক অস্থায়ী পিঠার দোকান।
পিঠা বিক্রেতা নুরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুম এলেই পিঠা বিক্রি করি। এবার প্রায় ১৫-২০ দিন হয়েছে চিতই পিঠা বিক্রি শুরু করেছি। ৫ টাকা করে প্রতি পিস, বিক্রিও খুব ভালো।
নুরুর দোকান থেকে পিঠা কিনে প্রশংসা করে বেসরকারি চাকরিজীবী মামুন বলেন, ‘এখানকার পিঠার মান ভালো। তাই প্রতিবছরই কিনে থাকি। এবারও কিনেছি।
আরও পড়ুন: কুবিতে নবান্ন উৎসব
দোকানিরা জানান, খুব বেশি পুঁজি লাগে না বলে সহজে এ ব্যবসা শুরু করা যায়। জ্বালানি হিসেবে খড়ি, অকেজো কাঠের টুকরা, কিংবা গাছের শুকনা ডাল ব্যবহার করছেন তারা। তবে কেউ কেউ আবার পিঠা তৈরি করতে গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। কিছু গুড়, আটা, নারকেল নিয়ে এ ব্যবসা খুলে বসা যায়।
সোনাডাঙা মোল্লা বাড়ির মোড়ের পিঠা বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, পাটিসাপ্টা, কুলি, চিতই, খিজানো পিঠা ও তেলের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। দামে কম ও মান ভালো হওয়ায় দোকানে প্রায় ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে।
এদিকে দিনের আদ্রতা কমে যাওয়ার দরুন কার্তিক মাসের শেষ দিকের সকালে একটু একটু সূর্যের কিরণের দেখা মেলে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে রাতের শেষাংশে বেশ শীতে কাঁপন ধরছে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে নবান্ন উৎসব শুরু
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গত ১২ নভেম্বর (শুক্রবার) ভারতের তামিল নাড়ুর উপরদিয়ে অতিক্রম করেছে। তারই প্রভাবে গভীর সঞ্চালন মেঘমালা বাংলাদেশের উপরে অবস্থান করছিল। এরই প্রভাবে সূর্যের কিরণ দেখা যায় এবং কোথাও কোথাও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার কারণে সন্ধ্যার পর ঠান্ডা অনুভূত হয়েছে।
তিনি জানান, এই লঘুচাপের পরেই শীতের আরও তীব্রতা বাড়বে বলে মনে করেছে আবহাওয়া অফিস।
সেতু আছে, নেই সংযোগ সড়ক
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের শান্তিপুর নদীর উপর পাকা সেতু থাকলেও নেই সেতুতে ওঠার জন্য কোনও সংযোগ সড়ক। ফলে বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাচ্ছে আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষাকালে নদীতে পানি থাকলেও হেমন্তকালে নদীর পানি প্রায় শুকিয়ে যায়। হেমন্তকালে নদী শুকিয়ে গেলে চলাচল করা যায় তবে বর্ষাকালে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব। যার ফলে চলাচলে দুর্ভোগ দেখা দেয়।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বাদল ইউনিয়ন অন্তর্গত বাদাঘাট-চানপুর সড়কে শান্তিপুর নদীর উপর ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর সেতুর দুই পাশে মাটি ভরাট করা হয়নি। আবার নির্মিত হয়নি সেতুতে উঠা নামার সংযোগ সড়কও। তাই নদীর উপর ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটি। আসছে না কোনো কাজেও।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
তাহিরপুর উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এলজিইডি (সুনামগঞ্জ) হিলি প্রকল্প ৩২ লক্ষাধিক টাকা নির্মাণ ব্যয়ে সেতুর দরপত্র আহ্বান করে। নির্মাণকাজের ঠিকাদারি পায় জামালগঞ্জ উপজেলার পারভেজ এন্টারপ্রাইজ।
জানা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বাদাঘাট-চানপুর সড়কটি দিয়ে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু এই সড়কের শান্তিপুর নদীতে সেতুতে উঠার জন্য দু’দিকে অ্যাপ্রোচে মাটি নেই। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প থেকে উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। শান্তিপুর বাজারের উত্তর পাশ থেকে সেতু পর্যন্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্পে ইউপি সদস্য আবু তাহের মিয়াকে প্রকল্প প্রধান করা হয়। প্রকল্প চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রকল্পে শান্তিপুর বাজার থেকে কাজ শুরু করে সেতুর উত্তর পাশে দুই শতাধিক ফিট দূর পর্যন্ত মাটির কাজ করান। অবশিষ্ট সংযোগ সড়কটি অসম্পূর্ণ রেখে দেয়া হয়। ফলে ২০১৮ সালে বর্ষায় সেই মাটিও সরে যায়।
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
এই ব্যাপারে স্থানীয় মাসুক মিয়া জানান, নির্মাণের পর সেতুটি ব্যবহার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সর্ব সাধারণের জন্য সেতুটি চলাচলের উপযোগী করতে হলে প্রটেকশন ওয়াল দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
চানপুর গ্রামের বাসিন্দা মজিদ বলেন, সংযোগ সড়কটি স্থাপন করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হলে আমরা সহজেই চানপুর-বাদাঘাট সড়ক ব্যবহার করে তাহিরপুর সদরে যাতায়াত করতে পারতাম। জনদুর্ভোগ কমে আসত।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইকবাল করিব জানান, আমি একবারেই নতুন, তাই এই সেতুটির বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরও পড়ুন: শীতের প্রথম বাজার ধরতে ব্যস্ত যশোরের সবজি চাষিরা
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলব।
মাটি সরে দেবে গেছে সেতু, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় খালের ওপর নির্মিত সেতুর নিচ থেকে মাটি ধসে একাধিক স্থানে দেবে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। মাঝের অংশ সম্পূর্ণভাবে দেবে গেছে। দুই সপ্তাহ ধরে এমন পরিস্থিতি হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলেও হালকা যান চলাচল অব্যাহত থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।
জানা যায়, দেবগ্রামের তেনাপচা আশ্রয়ন ইউজেড-আরএইচডি (পিয়ার আলী মোড়) সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন। সড়কের ৫২৩ মিটার চেইনেজে অবস্থিত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে খালের ওপর প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যায়ে ১২ মিটার দৈঘ্যের ২ ভেন্ট বক্স কালভার্ট নির্মাণ হয়। কালভার্টের তলদেশের মাটি ধসে যাওয়ায় কয়েক স্থানে দেবে গেছে। ফেলে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দ্রুত সেতুটি মেরামত বা পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডির গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী গত ১৬ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ীর তত্ত্বাবধানে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় পদ্মা নদী থেকে উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের কেউটিল হয়ে বয়ে যাওয়া খালটি ফরিদপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের খনন কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকায় ছিল প্রায় ১১ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন: খুলনায় ৮০০ কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্যের সম্ভাবনা
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পর্যাপ্ত জায়গা ও ঢালু না রেখে খাল খনন করা হয়। এমনকি সেতুসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গার্ডার, সিসি ব্লক, জিওব্যাগ সহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থার প্রয়োজন থাকলেও করা হয়নি। ফলে গত দুই বছরে বর্ষাকালে খাল দিয়ে পানি প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হওয়ায় সেতুর নিচে এবং পাশ থেকে মাটি ধসে যায়। তেনাপচা এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে খালের দুই পাশ বেশি ধসে পড়ে। এতে ৬-৭টি পরিবার অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়। আরও বেশ কিছু পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, তেনাপচা খালের ওপর নির্মিত সেতুটির মাঝখানে এবং একপাশ ভেঙে দেবে গেছে। সেতুর নিচে একাধিক স্থান ভেঙে গেছে। সেতুতে ওঠতে বাম পাশের বেশ জায়গা নিয়ে মাঠি সরে গেছে। ওই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে মাহেন্দ্র, রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো হালকা যান এবং পথচারীরা আসা যাওয়া করছে।
এ সময় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী ও উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার সিদ্দিক নসিমনে বিভিন্ন মেহগনি গাছের গুড়ি ফেলছেন।
আসাদ চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে তাদের খালের দুই পাশে প্যালাসাইডিং করতে বলেছে। কাজ শেষে তাদের বিল পরিশোধ করা হবে।
আসাদ চৌধুরী জানান, অপরিকল্পিত খননে দুই বছর ধরে খালের দুই পাড় ধসে পড়ছে। ছোটভাকলার আব্দুল আজিজ মাস্টারের বাড়ির কাছ থেকে দেবগ্রামের প্রয়াত চেয়ারম্যান পিয়ার আলীর বাড়ি হয়ে তেনাপচা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন হয়েছে। এর মধ্যে তেনাপচা এক কিলোমিটার এলাকায় বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। খাল পাড়ে তার বাড়ি থাকায় তিনিও ঝুঁকিতে বাস করছেন।
অপরিকল্পিত খননের কারণে সেতুটি ধসে পড়ছে বলে জানান।
আরও পড়ুন: যমুনার চরে ভেড়া পালনে শত শত নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন
খুলনায় ৮০০ কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্যের সম্ভাবনা
নোনা পানির চিংড়ি চাষের জমি কমে যাওয়া খুলনায় চাষিরা তরমুজ আবাদে ঝুঁকছেন। এখানে গ্রীষ্মের পাশাপাশি শীত মৌসুমে তরমুজের আবাদ হচ্ছে। শীত মৌসুমে ৭ হাজার ও গ্রীষ্ম মৌসুমে সাড়ে ৩শ’ হেক্টর জমিতে এই ফল আবাদ হয়। সব মিলিয়ে দুই মৌসুমে খুলনায় ৮শ’ কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
জানা গেছে, আম্পান-ইয়াস, নদী ভাঙন, রোগবালাই, করোনা ও আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দাম ওঠানামা করায় চাষিরা লোকসান গুনতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে হাড়ির টাকা বাকি থাকে। লোকসান এড়াতে চিংড়ি চাষিদের একাংশ তরমুজ আবাদে নেমেছে।
খুলনা জেলার দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, বটিয়াঘাটা ও ডুমুরিয়া উপজেলায় শীত মৌসুমে ৭ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে চাষ শুরু, ফেব্রুয়ারিতে ফসল তোলা শুরু হবে। গ্রীষ্ম মৌসুমে সাদামাছের ঘেরের পাড়ে ৩১৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে। গ্রীষ্ম মৌসুম এপ্রিল থেকে জুন জুড়ে।
আরও পড়ুন: শীতের প্রথম বাজার ধরতে ব্যস্ত যশোরের সবজি চাষিরা
দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান খান জানান, এবারের শীত মৌসুমে ৯ ইউনিয়নে তিন হাজার চারশ হেক্টর জমিতে আবাদ হবে। বাজুয়া, কৈলাশগঞ্জ, দাকোপ ও লাউডোব ইউনিয়নের ৬ হাজার চাষি এর সাথে সংশ্লিষ্ট। ৮০ দিনের মধ্যে তরমুজ বাজারজাত হয়। বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ শীত মৌসুমে ২০ হাজার টাকা। বিক্রি তিন লাখ টাকা।
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এর মধ্যে সুরখালী, গঙ্গারামপুর ও ভান্ডারকোট ইউনিয়নের একাংশ জুড়ে উৎপাদন হতো। এবার বটিয়াঘাটা ইউনিয়নের ফুলতলা, হাটবাটি ও হোগলবুনিয়া গ্রামে আবাদ হবে। গেল মৌসুমে দুই হাজার দুইশ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও এবারের লক্ষ্যমাত্রা তিন হাজার পাঁচশ হেক্টর জমিতে।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
দাকোপ উপজেলার বটবুনিয়া গ্রামের চাষি প্রদিপ রায়, দীলিপ মন্ডল, সন্তোষ মন্ডল ও হেকমত আলী মোল্লা জানান, আমন কাটার পরে সেই জমিতেই তরমুজের আবাদ হবে। বলা যেতে পারে, বছর জুড়ে তরমুজের আবাদ হচ্ছে। ফলে কৃষি ও পরিবহন শ্রমিকদের সারা বছরের কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, শীত মৌসুমে এর আবাদ প্রসার হচ্ছে। বিঘা প্রতি ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হয়। এতে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
যমুনার চরে ভেড়া পালনে শত শত নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন
গাইবান্ধার দুর্যোগকবলিত যমুনা নদীর বালু চরে দুর্যোগ সহনীয় ভেড়া পালন করে সাবলম্বী হচ্ছে চরের নারীরা। উন্নত জাত, দুর্যোগ সহনীয় ও প্রজনন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় ভেড়া পালনে ঝুকে পড়েছে চরের নারীরা। এতে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে তারা।
মোল্লার চরের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান বলেন, গাইবান্ধার তিস্তা যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকজুড়ে ১ শ ৬৫টি চর রয়েছে। গাইবান্ধার, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলার এসব চরে অন্তত ৩ লাখ মানুষ বাস করে। বিশেষ করে তিস্তাসহ তিন নদীর দুর্গম চরাঞ্চল কাপাসিয়া, বেলকা, তারাপুর, হরিপুর। গাইবান্ধার মোল্লারচর, কামারজানি, এ্যাড়েন্ডাবাড়ি, উড়িয়া ও কঞ্চিপাড়া। সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া,কামালেরপাড়া ,সাঘাটা সদরসহ অন্তত ১৩ টি ইউনিয়ন দুর্গম চরাঞ্চল।
চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও উপকার ভোগী শিল্পি বেগম বলেন, এসব এলাকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ তাদের জীবন জীবিকা যাপনে চাষাবাদ ও গবাদী পশু সম্পদের ওপর নির্ভর করে। তারা সারা বছর কোন না কোন দুর্যোগ মোকাবিলা করে বুক উচু করে বাস করে। বিয়েসহ অন্যান্য বিপদ কাটে গরু ছাগল হাঁস মুরগি বিক্রি করে। তারপরেও তারা সুখি মানুষ। গবাদী পশু সম্পদ হিসাবে পালন করলেও এই চরগুলোতে কোন ভেড়া পালনের প্রচলন ছিল না।
তিনি বলেন, ‘আমি একটি ভেড়া পেয়েছি, তার অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমি এখন পাঁচটি ভেড়ার মালিক হয়েছি। একেকটি ভেড়ার ওজনেও অনেক বেশি। দুর্যোগে বিক্রি করে সংসারে খরচ বহন করবো। ’
সাজেদা বেগম নামে আরেকজন বলেন, ফ্রেন্ডশীপ নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ের গবেষণার নতুন সফলতা হিসাবে উন্নত মানের ভেড়া দিয়েছেন। যেমন উচু, তেমন লম্বা। দেখতে বেশ সুন্দর। অল্প সময়ে অনেক বড় হওয়ায় তাদের আনন্দের সীমা নাই।
তিনি বলেন, ‘এই প্রজননের সফলতা হিসাবে ভেড়ার উন্নত জাত অন্তত ৩০ কেজি ওজন ও বছরে ৪ বার বাচ্চা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: হাত-পা বিহীন এসএসসি পরীক্ষার্থী সালাহ উদ্দিনের স্বপ্ন বড়
হাত-পা বিহীন এসএসসি পরীক্ষার্থী সালাহ উদ্দিনের স্বপ্ন বড়
মায়ের সহযোগিতায় হুইল চেয়ারে করে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসা করত। বর্তমানে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ভবিষ্যতে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখে হাত পা বিহীন প্রতিবন্ধী সালাউদ্দিন। পরিবারে অভাব থাকা সত্বেও পড়ালেখা বাদ দেয়নি সে।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা দরগাহ ঘোনা এক হত-দরিদ্র মো. জয়নাল আবেদীন ও আয়েশা বেগমে দম্পতি পরিবারে হাত পা বিহীন জন্ম নেয়া প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন চার বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সে পঞ্চম।
তার মা আয়েশা বেগম জানান, হাত পা বিহীন জন্ম হয় সালাহউদ্দিনের। অংশবিশেষ একটি পায়ে দুইটি আঙ্গুল রয়েছে। এই দুইটি আঙ্গুল দিয়ে সে খাতায় লিখতে পারে। তার অনেক স্বপ্ন। সে কিছুতেই হারতে চায় না। তাই তার স্বপ্ন পূরণে দিনরাত কষ্ট করে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর
একটা হুইল চেয়ারে করে তার মা তাকে প্রতিদিন সকালে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। এরপর স্কুল ছুটি হলে দুপুরে আবার গিয়ে প্রতিবন্ধী ছেলে সালাহ উদ্দিনকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে আসতেন। এভাবে মা ছেলের স্কুলের দশ বছরের সংগ্রামের পথ চলা শেষ করে। শুরু হয় প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনের এসএসসি পরীক্ষার যুদ্ধ। মহেশখালী (৫) ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।
প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন বলে, ‘আমি পরিবারের বোঝা হতে চাই না । আমিও স্বপ্ন দেখি একদিন পরিবারের হাল ধরব। প্রতিবন্ধী হয়ে আমি পরিবারের বোঝা হতে চাই না। সেই স্বপ্ন নিয়ে আমি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি।’ ব্যাংকে চাকরি করার স্বপ্ন রয়েছে তার , এমনটি জানান প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন ।
পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার বিষয়ে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষকরা আমাকে সবসময় সহযোগীতা দিয়ে আসছেন। এতটুকু আসার পেছনে আমার মা ও স্কুল শিক্ষকের ভূমিকা অতুলনীয়। কম বেশি অনেকে সহযোগিতা করেছেন। তবুও পরিবারের দারিদ্রতা নিয়ে বুকে জমে আছে বিশাল কষ্টের পাহাড়।
আরও পড়ুন: বাস্তবে জীবিত হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তারা মৃত!
মহেশখালী (৫) ইউনুছখালী নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৫ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষা দিতে এসে ক্যামেরা বন্দি হন সে। পুরনো হুইল চেয়ারে করে পরীক্ষা দিতে আসেন। আগের তুলনায় শরীরের ওজন বেড়ে গেছে প্রতিবন্ধী সালাহ উদ্দিনের। তাই লক্কর ঝক্কর হুইল চেয়ারে চলাচল করতেও ভয় হয় তার। কিন্তু নিরুপায়, নতুন আরেকটা হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্যও নাই দরিদ্র পরিবারের। বর্তমানে যে হুইল চেয়ারটা ব্যবহার করছেন এটাও কয়েক বছর আগে ঢাকার এক ব্যাক্তি দিয়েছিল বলে জানান তিনি।
এরপর গত বছর কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একটা হুইল উপহার দিলেও সেটা কিছু দিন পর নষ্ট হয়ে যায় । তাই আগের হুইল চেয়ারই তার ভরসা। সরকার কর্তৃক প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা ও কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন সময় চাউল দিয়ে সহযোগিতা করে বলে জানিয়েছে সে।
আরও পড়ুন: তিন দশক গান গেয়েই চলছে অন্ধ বাউলের সংসার
এদিকে, সব কিছুর মূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া, এ কারণে ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানায় প্রতিবন্ধী সালাউদ্দিন।
শীতের প্রথম বাজার ধরতে ব্যস্ত যশোরের সবজি চাষিরা
যশোরে আগাম শীতের সবজি দ্রুত বাজারে তুলতে, খাবারে বেশি স্বাদ যোগতা এবং বেশি টাকা আয় করার জন্য চাষিরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
জেলার সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, সাতমাইল, চুড়ামনকাটি, বারিনগর, হৈবতপুর, কাশিমপুর, বন্দবিলা, লেবুতলা, নোঙরপুর, ইছালি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন জেলার সবজি চাষের কেন্দ্রস্থল। সেখানে এখন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি, মুলা, বোতল করলা এবং বিভিন্ন ধরনের পালং শাকের মতো শীতকালীন সবিতে মাঠ সবুজ হয়ে উঠছে।
সরকারি সূত্র জানায়, দেশের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ সবজিই যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজি দেশের অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করা হয়।
আরও পড়ুন: বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
যদিও এ বছর দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর তীব্র গরমের জন্য অনেক কৃষক সময়মতো শীতকালীন সবজির চাষ শুরু করতে পারিনি, এ কারণে একটু দেরি হয়েছে। এর মধ্যেও কিছু কৃষক স্থানীয় বাজারে উৎসাদিত সবজি স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে ভালো দাম পাচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসের মাঝিমাঝি সময়ে রবি মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু হয় চলবে মার্চ মাসের মাঝিমাঝি পর্যন্ত।
ইতোমধ্যে জেলায় ১৬ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মূলা, লালশাক- পালংশাক, সবুজ শাকসহ নানা ধরনের সবজি চাষ হয়েছে।
বাড়ছে খুলনার চুইঝালের কদর, যাচ্ছে থাইল্যান্ডে
প্রাকৃতিক ভেষজগুণ সম্পন্ন মসলা জাতীয় উদ্ভিদ চুইঝালের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পাতা, কাণ্ড, শেকড়, ফুল, ফল, ডাল সবই ঔষধি গুণসম্পন্ন। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এই মসলা মাংসের পাশাপাশি মাছের তারকারিতেও ব্যবহার হয়। আর এই গুড়া মশলা শুধু দেশীয় বাজারেই নয়, বিদেশে আর্থাৎ থাইল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে, দেশে খুলনার চুই ঝালের চারার কদর রয়েছে। মাটিতে কিংবা অন্য গাছের আশ্রয়ে লতার মতো বেড়ে ওঠে চুই ঝাল গাছ। কাণ্ড, বাকল, শেকড় তরকারিতে ব্যবহার করা হলেও এবার চুই ঝালের মসলার স্থায়িত্ব বাড়াতে যুক্ত হয়েছে নতুনত্ব। ক্রেতাদের সুবিধার জন্য চুই ঝালের পাউডার (গুড়া) মশলা তৈরি করে নতুন রূপ দিয়েছেন খুলনার কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডল।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলীর
কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক বলেন, ‘২০১৭ সালে কৃষি অফিসের সহায়তায় চুই ঝালকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে কাজ শুরু করি। ২০১৮ সাল থেকে আমি ও নিউটন দেশের বিভিন্ন স্থানে চুইয়ের চারা বিক্রি শুরু করি । এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি আমাদের। নিজেদের উৎপাদিত চুই ঝালের পাশাপাশি অন্য কৃষকদের কাছ থেকে এই চুই ঝালের শেকড়, কাণ্ড, লতা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছি। তবে চুই লতা কাটার পর এর শেকড়, বাকল, ডাল বেশিদিন রাখা সম্ভব হয় না। শুকিয়ে কাঠে পরিণত হলে সেটি আর মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। আবার চুইয়ের কাঁচা ডাল, শেকড় ও লতা কুরিয়ার করে পাঠাতে অনেক সময় তিন দিন লেগে যায়। এতে চুই ঝাল নষ্ট হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘চুই ঝাল নষ্ট হওয়া বন্ধ করতে ও নতুন রূপ দিতে কৃষি কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেনের পরামর্শে চুই ঝালের পাউডার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। সেই অনুযায়ী, গুড়া মশলা তৈরি করে খেয়েছি, যা খুবই সুস্বাদু। তবে চুইঝাল চিবিয়ে খেয়ে যেই স্বাদ পাওয়া যায়, সেটি গুড়া মসলায় পাওয়া যায় না। কিন্তু গুড়া মসলায় দারুণ একটা স্বাদ রয়েছে। এখন এই চুইয়ের পাউডার সাতক্ষীরার সাঈদ ভাইয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ড পাঠানো হবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজার ধরতে পারলে চুই ঝালের কদর বহুগুণে বেড়ে যাবে।
কৃষক নিউটন মন্ডল বলেন, ‘চুই গাছের শেকড়, ডাল বিক্রি করে অনেক সময় উপযুক্ত দাম পায় না কৃষকরা। আমরা সেই বিষয়টি বিবেচনা করে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে চুই ঝালের পাউডার তৈরির কাজ শুরু করি। প্রথমবার পাউডার তৈরি করে খেয়েছি, এটি খুবই ভালো সুস্বাদু। এবার আমরা এক কেজি চুই ঝালের গুঁড়ামসলা থাইল্যন্ডে পাঠাচ্ছি। থাইল্যান্ড পাঠানোর পরে সাড়া মিললে যারা আমাদের কাছ থেকে চারা নেয় তাদের উৎপাদিত চুই কিনে নিয়ে পাউডার করব। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিদেশি চুই রপ্তানি করব।’
আরও পড়ুন: কয়লার দাম বৃদ্ধি: খুলনায় ১৫ দিনে ২ শতাধিক ইটভাটা বন্ধ
তিনি বলেন, ‘১২ কেজি চুইয়ের শেকড়, ডাল শুকিয়ে এক কেজি পাউডার তৈরি হয়। ফলে এর দাম অনেক বেশি পড়ে যায়। আমরা পাউডারের মান ও প্রকারভেদে দাম নির্ধারণ করেছি। কেজি প্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত মানভেদে চুইঝালের পাউডার বিক্রি করা হবে।’
ডুমুরিয়া উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘চুই একটি উচ্চমূল্যের ফসল ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। চুই খেলে অনেক রোগের উপকার হয়। দীর্ঘদিন ধরে খুলনা এলাকাতে বিক্ষিপ্তভাবে চুইঝালের চাষ হচ্ছে। লোকজন বাগান বা ঘরের আশপাশে দু-একটি চাষ করতেন। কিন্তু আমাদের সহযোগিতায় কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডল সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকীকরণের জন্য আমাদের একটি প্রকল্পের সহযোগিতা পেয়ে প্রথমে প্রদর্শনী আকারে মাতৃগাছ তৈরি করে। এরপর থেকে চারা গাছ তৈরি করে বিক্রি করেছেন।’
কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বছর থেকে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৪০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চুইঝালেরচাহিদা রয়েছে। চুই ঝালের কাণ্ড, শেকড় পাঠলে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাই তারা চুইয়ের যে প্রকৃত স্বাদ সেটি গ্রহণ করতে পারে না। এজন্য আমাদের নবদ্বীপ মল্লিক ও নিউটন মন্ডল স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্লেন্ডিংয়ের মাধ্যমে চুইঝালের গুঁড়ো তৈরি করে এর পাউডারটি বিদেশে পাঠাচ্ছে। প্রথম চালান তারা থাইল্যান্ডের পাঠাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে চলছে নবান্নের প্রস্তুতি
মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, চুইঝাল যাতে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে যায়, সে জন্য আমাদের একটি প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট ও পিরোজপুরের প্রত্যেকটা উপজেলায় পাঁচটি চুইগ্রাম হবে। গ্রামের প্রতিটি সদস্যের বাড়িতে অন্তত দু’টি করে চুইঝাল গাছ লাগানো হবে।