%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6
বাংলাদেশের শিশু: ভাইরাসের নীরব শিকার
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় বেশির ভাগ শিশু এখন তাদের বাড়িতে বন্দী। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শিশুদের অনেকেই তবুও ভাইরাসের শিকার যেহেতু আজকাল তারা পর্দার সামনে- মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বা টিভিতে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশু এবং তাদের গ্যাজেট আজ অবিচ্ছেদ্য, এবং এটি তাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনকও হতে পারে। এছাড়া, লকডাউন-সম্পর্কিত বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘায়িত বিচ্ছিন্নতা তাদের বাড়ির ভেতরে থাকতে বাধ্য করছে। আর এতে শহুরে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ।
আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন কোভিড পরবর্তী বিশ্বে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলে, 'বিচ্ছিন্নতা বোধ থেকে কম ঘুম, দুর্বল হৃদয়, নিম্ন প্রতিরোধ ক্ষমতা, বিষণ্ণতা এবং প্রতিবন্ধী এক্সিকিউটিভ ফাংশন হতে পারে।'
গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্তের পরগত বছরের ১৭মার্চ সরকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে গত এক বছরে এই বন্ধটি বেশ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে।সম্প্রতি, এই মাসেও স্কুল বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়।
আরও পড়ুন: করোনা ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ঈদ পর্যন্ত বাড়তে পারে: মন্ত্রী
যেহেতু সারাদেশে শিক্ষাবোর্ড পরীক্ষা দিতে পারছে না, তাদের পূর্ববর্তী পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়নের ভিত্তিতে সকল শিক্ষার্থীকেপরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়।
তবে অভিভাবকরা দাবি করেন, গত এক বছর ধরে বাসায় থেকে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাদের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রেখে, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে গেমস খেলে, পড়াশোনা করে এবং মোবাইল ফোনে পরিচিতদের সাথে সংযুক্ত হয়ে গ্যাজেটে আসক্ত হয়ে পড়েছে। আরএসব কিছুই তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা ফারজানা ফেরদৌসি ইউএনবিকে বলেছেন, 'আমার দুই বাচ্চা নাজিরাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে তারা কেবল তাদের বাড়িতেই বন্দী রয়েছে। সবসময় রিমোট স্টাডির পর তারা মোবাইল ফোনেই আঁকড়ে থাকে। কোভিড পূর্ব সময়ে স্থানীয় খেলার মাঠে খেলাধুলাতারা কখনই মিস করবে না।'
ফারজানা বলেছিলেন,গ্যাজেটের অত্যধিক ব্যবহারদেখে মনে হচ্ছে বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে। তিনি যোগ করেন, 'গ্যাজেট এবংফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য আমার বাচ্চারা খুব দেরিতে ঘুম থেকে ওঠছে। আমাদের শৈশবে আমরা কখনও গ্যাজেট ব্যবহার করার সুযোগ পাইনি, সম্ভবত এ কারণেই আমরা এখনও ফিট এবং সুস্থ রয়েছি।'
সর্বশেষ জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য ও সুস্থতাসমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশেরও বেশি কিশোর-কিশোরী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'সমীক্ষার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার অবস্থা পরীক্ষা করা এবং বোঝা। ১০ জন অবিবাহিত ছেলের মধ্যে সাত জনই একটি মোবাইল ফোনের মালিক। অবিবাহিত পুরুষদের প্রায় অর্ধেক এবং বিবাহিত ও অবিবাহিত কিশোরীদের এক পঞ্চমাংশ কিশোরীরা সপ্তাহে অন্তত একবার ইন্টারনেটে প্রবেশ করে।'
আরও পড়ুন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন
যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ডা. এসএম আমানের মতে, গবেষণায়দেখাযায় যে দীর্ঘক্ষণ সেলফোন এক্সপোজার শিশুদের আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। 'গবেষণায় যে শিশুদের হাইপারএক্টিভবা সংবেদনশীল বা আচরণগত সমস্যাসহ অন্যান্য শিশুদের সাথে মিশতে না পারার সমস্যা ছিল তাদের মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে সেলফোন ব্যবহারের সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল,'তিনি বলেছিলেন।
'শিশুরা টিভি দেখতে, গেম খেলতে, ফোন কল করতে এবং বার্তা প্রেরণে সেলফোন ব্যবহার করে। অনেক বয়স্ক বাচ্চা এবং কিশোর-কিশোরীর নিজস্ব সেল ফোন রয়েছেযাতে তারা ২৪/৭ঘন্টা সংযুক্ত থাকে। তবে শিশুদের এগুলো ঘন ঘন ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে এবং যদি তাই হয় তবে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ঝুঁকির চেয়ে আলাদা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র জানিয়েছেন, সেলফোন মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ নির্গত করে। 'সেলফোন নিরাপদ কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের উদ্বেগ রয়েছে। ক্যান্সার একটি বিশেষ উদ্বেগ, তবে যেহেতু ক্যান্সারবিকশিত হতে ১০-২০বছর সময় নেয় এবং শিশুদের ঘন ঘন সেল ফোন ব্যবহার তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক বিকাশ, তাই উত্তরর চেয়েআরও বেশি প্রশ্ন রয়েছে,' তিনি যোগ করেছেন।
বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির প্রভাষক রহিমা আক্তার বলেছেন, কিশোর-কিশোরীরা ঘরে বসে প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় বা সাত ঘণ্টা ডিভাইসবিশেষত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। 'গ্যাজেটের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের উপর চাপ সৃষ্টি করে যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং, কিশোর-কিশোরীদের ডিভাইসের পরিবর্তে খেলার মাঠে খেলতে হবে।'
অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা অভিভাবকদের প্রতি তাদের সন্তানদের সাথে পারিবারিক বন্ধন বাড়ানোর সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না: প্রধানমন্ত্রী
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের ডা. খায়রুল বাশার বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে সমাজের অবশিষ্ট অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সাধারণত শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। 'সাধারণ ক্রিয়াকলাপ থেকে বিচ্ছিন্নতা শিশুদের এমন এক সঙ্কটে ফেলে দেয় যা মানসিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এবং এতে তীব্র স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিসঅর্ডার, এবং পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার এবং মনোযোগ-ঘাটতি হতে পারে।
'তবে শিশুরা বাড়িতে বন্দী থাকাকালীন পেরেন্টিং দক্ষতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পিতামাতা এবং শিশুদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলার জন্য একটি ভাল সুযোগ হলো বাড়িতে থাকাটা। সঠিক পেরেন্টিংপদ্ধতির মাধ্যমেপারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় হতে পারে,' তিনি যোগ করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের চেয়ারম্যান প্রফেসর নূর মুহাম্মদ বৈদ্যুতিক ডিভাইস ব্যবহার না করে আরও বেশি বই পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 'এই মহামারি চলাকালীন সরকার বিশেষজ্ঞদের দ্বারা টেলি কাউন্সেলিং পরিষেবা চালু করতে পারে।'
ফরিদপুরে আইসিইউতে চিকিৎসক ও যন্ত্রাংশের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটে চিকিৎসক সংকট আর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে করোনা রোগীরা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, যতোটুকু সামর্থ রয়েছে তার সবটুকু দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালটিতে ১৬ বেডের আইসিইউ ইউনিটের জন্য চিকিৎসক থাকার কথা দুই সিফটে ২৪ জন। বর্তমানে সেখানে রয়েছে ৯ জন। অন্যদিকে আইসিইউ বেডের ১৬টির মধ্যে মনিটর স্বচল রয়েছে ১০টির, এছাড়াও ভেন্টিলেটর স্বচল ৮টির। এই ওয়ার্ডে গুরুতর করোনা রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এই স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক আর প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে জরুরি চিকিৎসা পেতে আসা রোগীদের সেবাদান কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি: আইসিইউ বেড ও বিশেষজ্ঞের সঙ্কট
ফরিদপুর জেলার ৯ উপজেলায় প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। এ জেলা ছাড়াও বৃহত্তর ফরিদপুরের অনেক মানুষের চিকিৎসার আশ্রয়স্থল ৫১৭ বেডের এই হাসপাতালটি।
ফরিদপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপে ফরিদপুরে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গত ৭ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৯ হাজার ৭৭ জন, মারা গেছে ১৭ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ১৩৭ জন। বর্তমানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৫৬৮ জন। এর মধ্যে শুধু সদর উপজেলাতেই রয়েছে ৫ হাজার ৭৬১ জন আর মারা গেছেন ৯২ জন।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে স্বামীর দেয়া আগুনে দগ্ধ গৃহবধূর মৃত্যু
এতো সমস্যার পরেও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবাকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ওয়ার্ডের নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
আইসিইউ ওয়ার্ডের সেবিকা জুথিকা বিশ্বাস বলেন, ‘করোনার সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের সেবা দেয়া হয় এই ওয়ার্ডে, আমরা সকলেই সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। স্বল্প সংখ্যক জনবল আর যতোটুকু চিকিৎসা সরঞ্জামাদি রয়েছে তা দিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে জমিদার বাড়ি সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আইসিইউ ওয়ার্ডের ইনচার্জ ডা. আনন্ত কুমার বিশ্বাস হাসপাতালের নানান সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আইসিইউ ওয়ার্ডের করোনা রোগীর চাপ অনেক বেশি, সেই তুলনায় চিকিৎসক নেই। যেখানে প্রয়োজন ২৪ জন চিকিৎসক সেখানে মাত্র ৯ জন চিকিৎসক রয়েছে। করোনা ওয়ার্ড ছাড়াও অন্য ওয়ার্ডগুলোর একই অবস্থা।’
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে চিকিৎসক, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানেলা, মনিটর ও ভেন্টিলেটর পেলে আমরা যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবো।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ২৫০ বেডের করোনা ডেডিকেটেড এই হাসপাতাল শুধু ফরিদপুর নয়, পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোরও করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে রোগী বাড়ছে। প্রতিদিনই রোগীদের আইসিইউ বেডের চাহিদা রয়েছে কিন্তু আসন না থাকায় বাধ্য হয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, মহামারি এই করোনার সময়ে বিপুল সংখ্যক রোগীদের জন্য আরও চিকিৎসক এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
করোনার এই দূর্যোগের সময়ে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মরণব্যাধী করোনা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, শুধু ফরিদপুর নয়, দেশের দক্ষিণবঙ্গে অনেক রোগী এই হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসে। তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে এখানে আইসিইউ আসন বৃদ্ধি ও সেবাকাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে হবে।
বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছে সরকার
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বুধবার থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনের মধ্যে প্রবাসী কর্মীদের বহনের জন্য পাঁচটি দেশে বিশেষ ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বুধবার এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ ইউএনবিকে বলেন, ‘লকডাউনকালীন বিদেশগামী কর্মীদের জন্য ফ্লাইট চালু করা হবে।’
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালুর দাবি আটাবের
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরের জন্য অতিশীঘ্রই স্পেশাল ফ্লাইট চালু করা হবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ বিষয়ে বিস্তারিত ওয়ার্ক প্ল্যান তৈরি করবে।’
মন্ত্রী বলেন, যে পাঁচটি দেশে আমরা ফ্লাইট চালু করব সে সব দেশ এখনো ওপেন আছে। সে দেশে কোন সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, যারা বিদেশকর্মী বা ওয়ার্কার তাদের কীভাবে বিদেশ পাঠানো যায়, আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছিলাম। এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আসল ।
কবে নাগাদ সিদ্ধান্ত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ফ্লাইট চালু বিষয়ে সিদ্ধান্ত আপনি ফাইনালই বলতে পারেন। এ বিষয়ে গতকাল এবং আজকে মিটিং এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু প্রক্রিয়াটা কী হবে তার সিদ্ধান্ত হবে। আগামীকাল বিকাল ৩টায় আরেকটি মিটিং হবে। যারা এখন বিদেশ যাবেন তাদের বিষয়ে কিছু শর্ত থাকবে। সেখানে সব সিদ্ধান্ত হবে।
বিদেশগামী কর্মীদের প্রক্রিয়াটা কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সনদসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এয়ারপোর্টে আনার দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহের।
আরও পড়ুন: লকডাউনে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ থাকবে: বেবিচক
মন্ত্রী বলেন, 'প্রবাসী কর্মীরা কেবল জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনের ছাড়পত্র গ্রহণ করে এবং দেশে প্রযোজ্য কোয়ারেন্টাইন শর্ত মেনে কোভিড নেগেটিভ সনদ নিয়ে দেশে আসতে পারবেন।
কতজন কর্মী এখন আটকে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটির সঠিক সংখ্যা বলা কঠিন। তবে এজেন্সিগুলো বলছে ২৫-৩০ হাজার। আমার ধারণা যখন ফ্লাইট চালু করব তখন দেখবেন আরও অনেকে যাবে, তখন সংখ্যা ১ লাখ হয়ে যেতে পারে।'
এদিকে, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি মনছুর আহামেদ কালাম ইউএনবিকে বলেন, 'ছুটিতে আসা প্রবাসী কর্মী ও নতুন ভিসা প্রাপ্তদের যাতায়াত সচল রাখার নিমিত্তে লকডাউনের মাঝে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটসমূহ চলাচল রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি সরকারে কাছে। এ বিষয় গতকাল আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের দাবি জানাই।'
আটাবের সভাপতি বলেন, 'মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী অনেক প্রবাসী ছুটি নিয়ে বা জরুরি প্রয়োজনে বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন এবং তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হতে চলেছে। তারা এয়ারলাইন্সের টিকিট সংগ্রহ করে কর্মস্থলে গমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন। তাছাড়াও অনেক নতুন কর্মী ভিসা প্রাপ্ত হয়ে কর্মস্থলে গমনের অপেক্ষায় রয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে যোগদান না করতে পারলে নিয়োগকর্তা তাদের অনেকেরই ভিসা বাতিল করবেন।'
তিনি বলেন, 'একজন প্রবাসীর আয়ের ওপর তার পুরো পরিবার নির্ভরশীল। সঠিক সময়ে নিজ কর্মস্থলে গমন করতে না পারার কারণে তাদের কর্মচ্যুতি হলে তাদের পরিবার পথে বসার উপক্রম হবে। তাই ছুটিতে আসা প্রবাসী কর্মী এবং নতুন ভিসাপ্রাপ্ত কর্মীদের সময় মত কর্মস্থলে পৌঁছানোর বিষয়টিও বর্তমান সরকার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।'
আরও পড়ুন: ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক: বেবিচক
অন্যদিকে, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা)- সাধারণ সদস্যদের ব্যানারে আয়োজিত গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্য এসব দেশে এখন করোনার প্রকোপ নেই। শ্রমিক গ্রহণকারী এসব দেশের পক্ষ থেকেও কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। তাই, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব দেশে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা যুক্তিযুক্ত নয়। এতে হাজার হাজার বিদেশগামী এবং সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাই, চলমান লকডাউনে বিদেশগামীদের কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট দেশে বিমান চলাচল স্বাভাবিক রাখার দাবি জানান রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা। প্রয়োজনে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে হলেও বিদেশগামীদের যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রকোপ আকার ধারণ করায় বুধবার থেকে আট দিনের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনে বাংলাদেশ। গণপরিবহনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বন্ধ ঘোষণা করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এই অবস্থায় সঙ্কটে পড়েছেন বিদেশগামীরা।
মাগুরায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের প্রণোদনার টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ
মাগুরায় করোনায় কর্মহীন ৪৩৮ জন শিল্পী কলাকুশলীর জন্য ৪৩ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের সহায়তা বিতরণ তালিকায় ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার ও একজন সহ সাধারণ সম্পাদকসহ কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই তালিকা তৈরি করা হয়।
বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী নামে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিজ পরিবারের ১৪ জনসহ অন্তত ৫০ জনের নাম দিয়ে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যারা কেউ দুঃস্থও নন, শিল্পীও নন।
আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা: আর্থিক প্রণোদনা পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
একইভাবে শিল্পকলার সংগীত শিক্ষক অজিত রায়ের বিরুদ্ধে একই পরিবারের ৬ জনের নাম দিয়ে ৬০ হাজার টাকা তুলে নেয়াসহ শিল্প সংস্কৃতির সাথে নূন্যতম সংযোগ নেই এমন ব্যক্তিদের নাম দিয়ে লাখ লাখ টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনকি জেলা শহরে ২টি ফ্ল্যাট ও ২টি বাড়িসহ অন্তত ৩ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকের স্ত্রীকেও দেয়া হয়েছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীর প্রণোদনা। এর ফলে অনেক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পী সহায়তা পাননি। এতে সরকারের এ মহতি উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জেলার শিল্পী সমাজের মধ্যে।
আরও পড়ুন: প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে সিরিজ মতবিনিময় সভা করবে অর্থ বিভাগ
লিখিত এক অভিযোগে জেলার কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী ওই তালিকায় শিল্প সাহিত্যের সঙ্গে নূন্যতম যোগাযোগ না থাকা একাধিক ব্যক্তির নাম দিয়ে টাকা উঠিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন।
তারা জানান, তালিকার ২২৯ নং সিরিয়ালে পবিত্র কুমার চক্রবর্তী নামে স্থানীয় একটি কাপড়ের দোকানের সেলসম্যানকে নাট্যশিল্পী হিসেবে দেখানো হলেও তিনি জীবনে কোনদিন স্টেজে উঠেছেন বলে শহরের কেউই জানেন না। তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর ভগ্নিপতি।
আরও পড়ুন: সময়মতো প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে: প্রধানমন্ত্রী
একইভাবে ২৩০নং সিরিয়ালের ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী বিশ্বজিতের ভাইপো, ২৫৫ সিরিয়ালের বরুন চক্রবর্তী বড়ভাই, ২৫৬ ইতি চক্রবর্তী ছোটবোন, ২৬৪ প্রনয় চক্রবর্তী ভাগ্নে, ২৬৫ প্রিয়াংকা চক্রবর্তী ভাগ্নি, ২৬৬ গোপাল চক্রবর্তী চাচাতো ভাই, ২৬৭ বন্দনা চক্রবর্তী ভাইয়ের বৌ, ২৬৮ প্রদীপ চক্রবর্তী চাচাতো ভাই এর ছেলে, ২৭০ কার্তীক চক্রবর্তী চাচাতো ভাই এর ছেলে, ২৭১ সুদীপ্ত চক্রবর্তী ভাতিজা, ২৭২ আনন্দ চক্রবর্তী ভগ্নিপতি, ২৭৪ বিথি চক্রবর্তী ছোট বোন ও ২৫৭ ছবি রানী ভট্টাচার্য ভাইয়ের স্ত্রী। এভাবে শিল্পীদের নাম দিয়ে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও তার সঙ্গীরা।
শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত শিক্ষক অজিত রায় ও শহরের সাতদোহা পাড়া এলাকার একটি পরিবারের ৬ নারীর নাম দিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরা হলেন সন্ধ্যা রানী ঘোষ (৪১৯), প্রিয়া ঘোষ (৪৪), রিয়া ঘোষ (৮৫), ডলি ঘোষ (১০৪), আপন ঘোষ (১০৫) ও লিলি ঘোষ (১৭২)। এদের কারোই শিল্প সংস্কৃতির সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। অথচ তাদের প্রত্যেকের নামে ১০ হাজার টাকা করে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। শহরের কেশব মোড়ের বাসিন্দা বর্তমানে স্বামীর কর্মস্থল ঢাকায় অবস্থানরত সিগ্ধা পাল নামে এক সাবেক নৃত্য শিল্পী ও তার মায়ের নামে ১০ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কাস্টমস বিভাগে কর্মরত এক ব্যক্তির স্ত্রী সিগ্ধা পালের মাগুরা শহরে ২টি ফ্ল্যাট, ১টি বাড়ি ও একটি বিশাল বাগান বাড়ি রয়েছে। যার মূল্যমান কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা। স্বজনপ্রীতি করে তাকে ও তার মা জোসনা পালকে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারিভাবে যখন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পীদের সহায়তা দেয়ার জন্য নামের তালিকা আহ্বান করা হয় তখন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও অজিত রায় এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি অসাধুচক্র একত্রে বসে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ও আইডি নম্বর সংগ্রহ করে নিজ মনগড়া একটি তালিকা প্রেরণ করে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রকৃত শিল্পীদের বিষয়টি জানতেই দেয়া হয়নি। অথবা তাদের আবেদন ফেলে দেয়া হয়েছে। যার ফলে প্রকৃত শিল্পীরা অনেকেই বঞ্চিত হলেও মুখচেনা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম দিয়ে তালিকা প্রেরণ করা হয়। ফলে সরকারের এত বড় একটি মহতি উদ্যোগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
অন্যদিকে, অচলা মন্ডল নামে এক নারীর নাম তালিকায় থাকলেও তালিকায় দেয়া ফোন নম্বরে ফোন দিয়ে ওই নারীর স্থলে সাতক্ষীরা থেকে আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ফোন ধরে।
অন্যদিকে শহরের তাতীপাড়া এলাকার বাসিন্দা শিল্পী কবরী ঘোষের নাম থাকলেও তাকে ফোন করলে তিনি জানান, তিনি কোনো টাকা বা চেক পাননি। অথচ ইতোমধ্যে চেক বিতরণ করা হয়ে গেছে মর্মে জানিয়েছেন শিল্পকলা সংশ্লিষ্টরা।
মাগুরার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্না, সাহিত্যিক এম এ হাকিম, লোক সাংস্কৃতি সংগঠক এ.টি.এম. আনিসুর রহমান, সাহিত্য সংগঠক অ্যাডভোকেট কাজী মিহির, সাহিত্যিক ও গীতিকবি লিটন ঘোষ জয়, কবি রহমান তৈয়বসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ ও দুঃখের সঙ্গে জানান, শিল্প সংস্কৃতিক সঙ্গে যারা জড়িত তারা সাধারণত উদার মানবিক হবেন, এমনটিই ভাবা হয়ে থাকে। প্রকৃত শিল্পীরা যেখানে করোনার কারণে চরম অর্থ সংকটে অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে আছেন। সেখানে শিল্পীদের জন্য দেয়া টাকা নয়-ছয় করে খরচ করা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মাগুরা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর ব্যানারে একটি অসাধু চক্র যেভাবে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন তাতে আমরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। এরা শিল্প সংস্কৃতির চরম শত্রু।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যরা যদি পাওয়ার উপযোগী হন তাহলে তারা টাকা পেতেই পারেন। আমি কোনো স্বজন প্রীতি বা দুর্নীতি করিনি।’
এ প্রসঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিন জানান, শিল্পকলা একাডেমী থেকে নামের তালিকা চেয়ে পাঠানোর পর দ্রুত তালিকা পাঠানো হয়েছে। ফলে কিছুটা অসামঞ্জস্য থাকতেই পারে। তালিকার সবাইকে টাকা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে একটি তালিকায় একই পরিবারের ১৪ জনের নাম থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক বলেন তিনি।
জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম জানান, কয়েকজন শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে তালিকা প্রস্তুত করতে। ভবিষ্যতে প্রকৃত শিল্পীরা যেন সকল ধরনের সহায়তা পান সেজন্য প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।
দেশে নতুন লকডাউন: দুর্দান্ত কোনো ফলাফলের বিষয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা
কোভিড-১৯ এর ক্রমবর্ধমান সংক্রমণে লাগাম টানতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে বুধবার থেকে নতুন একটি লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের প্রস্তুতির অভাবে এই লকডাউনে কোনো দুর্দান্ত ফল লাভের সম্ভাবনা নেই।
তারা বলছেন, লকডাউনের সময় নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করে জনগণকে জোরপূর্বক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং বাড়ির অভ্যন্তরে থাকতে বাধ্য করে 'কারফিউ জাতীয়' পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা লকডাউনের সময় কল-কারখানাগুলো খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাও করেছেন। কারণ তারা আশঙ্কা করছেন এতে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া অব্যাহত থাকবে।
তারা বলছেন, লকডাউন কার্যকর করার আগে সরকারের উচিত হতদরিদ্র, দিনমজুর ও বস্তিবাসীদের জীবন চালাতে খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করা।
আরও পড়ুন: ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু; প্রজ্ঞাপন জারি
৫ এপ্রিল থেকে প্রায় সবকিছু খোলা রেখে এক সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকর করা হয়েছিল। আর এই লকডাউনের কোনো ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান নয়। কারণ দেশে এই সময়ে ৪৭ হাজার ৫১৮ জন নতুন করে আক্রান্ত হয় এবং ৫০৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ ও প্রাণহানির সাপ্তাহিক বৃদ্ধি সর্বোচ্চ দেখা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার থেকে সকল অফিস এবং গণপরিবহন বন্ধ করে সাত দিনের কঠোর লকডাউন কার্যকর করার জন্য সরকার সোমবার নতুন কতগুলো নির্দেশনা জারি করে। তবে, লকডাউনের সময় কারখানাগুলো খোলা থাকবে।
লকডাউনের প্রস্তুতি
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. বে-নাজির আহমেদ বলেন, লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির প্রয়োজন।
তিনি বলেন, 'বড় সমস্যা হলো সরকার কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই আবারও লকডাউন বাস্তবায়ন করতে চলেছে। আপনি ১৭ কোটি লোককে সাত দিনের জন্য বাড়ির ভিতরে রাখতে চাইলে অনেক প্রস্তুতি নেয়াও জরুরি। এর সফল বাস্তবায়নের জন্য এমন পদক্ষেপে বিপুল সংখ্যক লোককে ব্যস্ত থাকার কথা।'
এই বিশেষজ্ঞ জানান, প্রতিটি এলাকায় অস্থায়ী দোকান তৈরি করা উচিত ছিল যাতে মানুষ রমজান মাসে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সেখান থেকে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে সংগ্রহ করতে পারে।
তিনি বলেন, প্রণোদনার মাধ্যমে স্বল্প আয়ের লোকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং বাড়িতে থাকতে উৎসাহিত করা উচিত ছিল।
আরও পড়ুন: লকডাউনে ৮টি বিশেষ পার্সেল ট্রেন চলবে: রেলপথ মন্ত্রী
'একজন বস্তির বাসিন্দা প্রতিদিন রোজগার না করে বাঁচতে পারে না। আমাদের প্রয়োজন হতদরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করা এবং তাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করা যেন তাদের লকডাউনে জীবিকার জন্য বাইরে যেতে না হয়।'
রমজানের শুরুতেই সবজির বাজারে ঊর্ধ্বগতি, ক্রেতাদের অসন্তোষ
করোনা মহামারির মাঝেও সারা বিশ্বজুড়েই মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনা ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের আনন্দের মহিমায় উজ্জীবিত। কিন্তু মঙ্গলবার ঢাকার সবজির বাজারগুলোতে প্রায় সকল সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানীবাসীর রমজানের আনন্দে ভাটা ফেলেছে।
করোনার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনীতির প্রভাব রাজধানীবাসীর মধ্যেও পড়েছে। নগরবাসীর অর্থনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যেই গত সপ্তাহে বেড়েছে বেগুন, শসা, করলা, ঢেড়স, ধুন্দুল, গাজর, পটল, মরিচসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল সবজির দাম।
আরও পড়ুন: রমজানে নকল ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: শিল্পমন্ত্রী
বাজারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও রমজানকে সামনে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারকেই দায়ী করছেন ঢাকার বাসিন্দারা।
এদিকে বিক্রেতাদের দাবি, করোনার কারণে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহের অভাব এবং রমজানের কারণে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বাজাগুলো সরেজমিনে ঘুরে ইউএনবি প্রতিনিধি দেখতে পান, বেগুন প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ৭০ টাকা, ঢেড়স প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ধুন্দুল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকা এবং বরবটি প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহের সোমবার বাজারে আলু ১০.৫৩ শতাংশ, পেয়াজ ৪ শতাংশ, রসুন ১৪.২৯ শতাংশ, শুকনা মরিচ দেশি ১১.১১ শতাংশ ও আমদানিকৃত ৩.৮৫ শতাংশ, আদা ২৯.১১ শতাংশ ও এক হালি ডিম ৬.৯০ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধি হয়েছে।
আরও পড়ুন: রমজানে অফিসের সময়সীমা নির্ধারণ
আবার গতকাল রাজধানী বাজারগুলোতে উন্নতমানের চাল কেজি প্রতি ৬০-৬৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল কেজি প্রতি ৫২-৬০ টাকা এবং মোটা চাল কেজি প্রতি ৪৬-৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এর পাশাপাশি, আটা কেজি প্রতি ৪০-৪৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন কেজি প্রতি ১২২-১২৫ টাকা দের বিক্রি হয় রাজধানীর বাজারগুলোতে।
উল্লেখ্য যে, রবিবার বাণিজ্যমন্ত্রী একটি অনলাইন সভায় জানান, রমজান উপলক্ষে দেশে প্রতি কেজি চিনিতে ৩ টাকা করে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে পুনঃনির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত এবং খোলা চিনি বিক্রি হবে যথাক্রমে ৬৮ টাকা এবং ৬৩ টাকা দরে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বাজারগুলোতে আসা ক্রেতারা ইউএনবি প্রতিনিধিকে জানান, গতকালের (সোমবার) তুলনায় আজ প্রায় প্রতিটি সবজিতেই কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে। এ সময় ক্রেতারা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে দোষারোপ করেন।
রাজধানীর ডেমরার বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, স্থানীয় বাজারে আজ প্রতিটি সবজির দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখে তিনি অবাক হয়েছেন।
তিনি জানান, সোমবার তিনি বেগুন ও শসা কিনেছেন কেজি প্রতি ৫০ টাকা করে। কিন্তু একদিনের ব্যবধানেই দুটি সবজিরই দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা।
আরও পড়ুন: রমজানের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে
এ সময় তিনি, সরকারকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য সরবরাহের দাবি জানান।
এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে সারুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মুন্সি দাবি করেন, গতকালের তুলনায় আজ তাদের অতিরিক্ত দামে পাইকারী ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে সবজি কিনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই।
ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে ভোজ্যতেল আমদানিকারক সমিতিরি সভাপতি গোলাম মাওলা দাবি করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, দেশের বাজারেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে তিনি মনে করেন, কখনো কখনো খুচরা বিক্রেতারাও ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি করে থাকে। তেলের দাম বৃদ্ধি নিরসনে তিনি দুর্নীতি রোধ এবং খুচরা বাজারে সরকারকে তেলের দাম নির্ধারণ করার ব্যাপারে মত দেন।
এদিকে প্রতি বছরই রমজানে নিত্যপণ্যে দাম বৃদ্ধি কারণ হিসেবে বাজার ব্যবস্থাপনায় গাফিলতি এবং বাজারে মনিটরিংয়ের অভাবকে দায়ী করেন বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতির (ক্যাব) সহ সভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন।
তিনি বলেন, প্রতিবছর রমজানে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে, আর বাজারে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষ দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
তিনি মনে করেন, এখনই বাজারে সমন্বিত মনিটরিং ব্যবস্থা শুরু করা দরকার।
আরও পড়ুন: রমজানে দরিদ্র ও দুস্থতের জন্য ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিাআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান সাম্প্রতিক সানেম পরিচালিত পরিসংখ্যানের বরাতে বলেন, করোনার কারণে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ এসে দাঁড়িয়েছে। এই মুহূর্তে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, রমজান মাসে সাধারণ মানুষের কষ্ট চরমে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, ‘দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বন্দর থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য খালাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা উচিত। পরিবহন খাতে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমাদের পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, তবে আমাদের এগুলো কার্যকর করা দরকার।’
লকডাউনে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না: সচিব
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ চলাকালীন নিম্ন আয় ও কর্মহীন লোকেরা যাতে কোনো খাদ্য সংকটের মুখোমুখি না হয় সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন ইউএনবিকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৫৭২ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে। প্রয়োজনে বরাদ্ধ আরও বাড়ানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই বরাদ্ধকৃত টাকা ইতোমধ্যে সকল উপজেলায় পৌঁছে গেছে এবং যথাসময়ে বিতরণ শুরু হবে । এখন ১ কোটি ২৪ লাখ পরিবার এই অর্থ পাবেন । পরিবার সংখ্যা প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে। একটি কর্মহীন পরিবারও যাতে বাদ না যায় সেটি সরকার দেখবে।’
১৪ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ এক সপ্তাহের জন্য ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হবে। দেশে লকডাউন শুরু হলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে যাবে।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতে গত বছরের মাসব্যাপী ‘সাধারণ ছুটি’ চলাকালীন কয়েক লাখ লোক কর্মহীন হয়ে পড়ে।
তবে, সচিব বলেন, কেউ যাতে খাদ্যে কষ্ট না পান তা নিশ্চিত করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।
ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি
কোভিড-১৯ সময়ে সর্বাত্মক লকডাউন ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের দরিদ্র ও দুস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১২১ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সারা দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলার জন্য ৮৭ লাখ ৭৯ হাজার ২০৩টি এবং ৩২৮টি পৌরসভার জন্য ১২ লাখ ৩০ হাজার ৭৪৬ টিসহ মোট এক কোটি নয় হাজার ৯৪৯টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে এ বরাদ্দ দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু; প্রজ্ঞাপন জারি
পরিবার প্রতি ১০ কেজি চালের সমমূল্য অর্থাৎ কার্ডপ্রতি ৪৫০ টাকা হারে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষে উপজেলাসমূহের জন্য ৩৯৫ কোটি ছয় লাখ ৪১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং পৌরসভারসমূহের জন্য ৫৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ৪৫০ কোটি ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫০ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
মহসিন বলেন, ‘এটি রমজানে দরিদ্র পরিবারগুলোর ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, এই লক্ষে ১২১ কোটি ৬৫ লাখটাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’
ঢাকার বায়ুর মান উন্নত করা সম্ভব কি?
আজকাল ঢাকায় যারা বসবাস করছেন তাদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন রাজধানীর ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণের কারণে ঢাকা আর বাসযোগ্য নেই বলে কোনও সুযোগ পেলে তারা অন্য শহরগুলোতে স্থানান্তরিত হবেন।
অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মুজিবুল হক বলেছেন, 'ঢাকায় বসবাস করা ব্যক্তিগত লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে কারণ এর বাতাস বেঁচে থাকার জন্য খুব অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে।'
আরও পড়ুন: বৃষ্টি সত্ত্বেও ঢাকার বায়ু 'অস্বাস্থ্যকর'
ঢাকার বাসিন্দারা এই বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ এবং অস্বাস্থ্যকর বায়ু নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করেছেন যেমনটি তারা ২০১৭ সালে একই সময়ে করেছিলেন।
এই ৯০ দিনের সময়কালে (জানুয়ারী-মার্চ ২০২১), বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহর ঢাকায় বায়ুর গুণমান ১২ দিনের জন্য 'বিপজ্জনক', ৫৮ দিনের জন্য 'অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর', ১৯ দিনের জন্য 'অস্বাস্থ্যকর' এবং 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর' হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছিল।
২০১৭-২০২১ সালের প্রথম তিন মাসের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) তথ্য বিশ্লেষণের পরে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিটি জানা গেছে।
২০২১ সালে, একিউআইয়ের দৈনিক গড় স্কোর ছিল জানুয়ারিতে ২৬১, ফেব্রুয়ারিতে ২৩১ এবং মার্চ মাসে ২১১, যা গত পাঁচ বছরে রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ কর্তৃক পরিচালিত বায়ুমণ্ডল দূষণ স্টাডিজ (সিএপিএস) এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার যে বিশ্লেষণ করেছেন সেটি অনুসারে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি-মার্চ মাসে গড়ে একিউআইয়ের স্কোর যথাক্রমে ২৪৭, ১৯৩ এবং ১৭০ ছিল।
আরও পড়ুন: ঢাকার বায়ু দূষণ: হাইকোর্টের আরও ৩ দফা নির্দেশনা
এই পাঁচ বছরের সময়কালে, বাতাসের গুণমান ২০২০ সালে তুলনামূলকভাবে ভাল ছিল। কেননা জানুয়ারিতে গড় একিউআই স্কোর ছিল ২৩৫, ফেব্রুয়ারিতে ২২০ এবং বছরের মার্চ মাসে ১৭৫।
এছাড়াও, ২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে গড় একিউআই স্কোর ২৪০, ২২৬ এবং ১৯১ ছিল, যেখানে ২০১৮ সালের জানুয়ারি-মার্চ মাসে ২৫৬, ২২৪ এবং ১৮৩ ছিল।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে, ঢাকার বায়ুর গুণমান সাত দিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ (স্কোর ৩০০+) ছিল, যেখানে ২৩ দিনের জন্য খুব অস্বাস্থ্যকর (স্কোর ২০০-৩০০) এবং অস্বাস্থ্যকর (১৫১-২০০) এক দিনের জন্য ছিল।
ঢাকার বায়ুর গুণমান তিন দিনের জন্য বিপজ্জনক ছিল, ২০ দিনের জন্য অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং ফেব্রুয়ারিতে অবশিষ্ট পাঁচ দিন অস্বাস্থ্যকর ছিল।
গত মার্চে, বায়ুর গুণমান দুই দিন বিপজ্জনক ছিল, ১৫ দিন খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ১৩ দিন অস্বাস্থ্যকর এবং সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যকর নয় (স্কোর ১০১-১৫০) ছিল এক দিনের জন্য।
গত তিন মাসে, ২০ জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ গড় একিউআই স্কোর ৩৬৫ এবং ১১ মার্চ সর্বনিম্ন গড় একিউআই স্কোর ১৪৪ ছিল।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর না হলেও ঢাকার বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর
যদিও বিপজ্জনক বায়ু মানের কারণে ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে, মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে এবং বায়ু দূষণ পরীক্ষা করতে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হচ্ছে না।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মজুমদার বলেন, বায়ুর গুণগতমান বিপজ্জনক হলে মানুষকে বাইরের সকল কাজকর্ম এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই নিম্নমানের বাতাসে জড়িয়ে আছে এবং প্রায়ই বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহর বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় দূষিত শহর হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
কোভিড-১৯ এবং নিম্ন মানের বায়ু
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা এবং বায়ু দূষণকারীদের দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকার কারণে নিম্ন মানের বায়ু নগরবাসীর জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত মৃত্যু এবং অক্ষমতার জন্য ঝুঁকির শীর্ষ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বায়ু দূষণ।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতির সাথে সাথে দেশের বাতাসের মান এখন মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯: দেশে একদিনে রেকর্ড ৭৮ মৃত্যু, শনাক্ত ৫৮১৯
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ স্তরের বায়ু দূষণের সংস্পর্শে মানুষের শ্বসন এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগের সৃষ্টি হয় যা কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে মানুষকে আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সম্প্রতি সতর্ক করে দেয়, যেসব শহরগুলিতে বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি রয়েছে তাদের এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারির বিরুদ্ধে তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, আইন প্রয়োগ ও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সবার মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মাস্ক নিজেকে বায়ু দূষণ এবং কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
বায়ু দূষণ এবং রোগসমূহ
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, দূষিত বায়ু নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণের ফলে হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী বায়ু দূষণের ফলে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
আরও পড়ুন: ঢাকার বায়ুদূষণ কমছে না, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসীরা
সাধারণত, জুনের মাঝামাঝি থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলে ঢাকার বায়ু পরিষ্কার হতে শুরু করে এবং জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বায়ু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 'গ্রহণযোগ্য' থাকে।
২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর (ডিওই) এবং বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকার বায়ু দূষণের তিনটি প্রধান উত্স হল ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া এবং নির্মাণ কাজের ধুলা।
খুলনাঞ্চলে পানি সমস্যায় তরমুজ চাষে বিপর্যয়
কয়েক বছর থেকে খুলনা জেলার কয়রায় তরমুজ চাষ শুরু হয়েছে। প্রথমে দু-একজন কৃষক তরমুজ চাষ করে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় এবার উপজেলার আমাদি ও বাগালি ইউনিয়নে ৫ গুণ বেড়েছে তরমুজ চাষ।
কৃষকরা স্বপ্ন দেখছেন লাভবান হবেন তবে দুর্যোগ প্রবণ এ উপকূলে গত কয়েক মাস অনাবৃষ্টি ও স্থানীয় পানির উৎস খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় খরতার প্রভাব পড়ছে তরমুজের উপর। অনাবৃষ্টির আকাশ থেকে ঝরছে খরতার তাপ। কৃষকের স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন:ঘেরের পানির ওপর মাচায় ঝুলছে রসালো তরমুজ
পানির অভাবে গাছগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ফল নষ্ট হচ্ছে। দূরের ডিপ থেকে পানি কিনে টেনে এনে কোন রকমে বাঁচিয়ে রেখেছে গাছগুলো, তবুও অনেকের কপালে জুটছে না পানি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর ১৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করে কৃষকরা দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় এ বছর কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ৬৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।
আরও পড়ুন: অসময়ে তরমুজ চাষে ভাগ্যবদল রূপসার ২০ চাষির
আমাদি ইউনিয়নের হরিকাটি গ্রামের শিপালী সরদার বলেন, গত বছর এলাকায় তরমুজের ফলন ভালো দেখে অন্যের কাছ থেকে বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা করে ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে এবার প্রথম তরমুজ চাষ করেছেন। তবে পানির চরম সমস্যায় ভালো ফলন পাওয়া নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন।
তিনি বলেন, খালে পানি না থাকায় ডিপ থেকে পানি কিনে আনতে অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
একই গ্রামের চন্দ্র শেখর মন্ডল এবার প্রথম ৯ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। তার এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে পানির সমস্যার কারণে আসল টাকা উঠবে কিনা সংশয়ে রয়েছেন।
এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অর্থকারী ফসল চাষাবাদে কৃষি অফিসের উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা দেখা মেলেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
জমির ভিতরে থাকা খালগুলো খননের মাধ্যমে ও স্যালো বসানোর মাধ্যমে পানির সমস্যা সমাধান করতে পারলে তরমুজ চাষ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকারী ফসল হবে বলে সচেতন মহল জানান।
আরও পড়ুন: খুলনায় লবণাক্ত এলাকায় তরমুজের বাম্পার ফলন
পাইকগাছা কৃষি অফিসার কয়রা উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পানির সমস্যার নিরসনের জন্য খালগুলো খনন করে কৃষকের কাছে যাতে ইজারা দেয়া হয় সেজন্য জেলা সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা করা হবে। পানি সমস্যার কারণে গাছগুলোতে একটা ভাইরাস দেখা দিয়েছে, তার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, তবে বৃষ্টি না হলে রোগ পুরোপুরি নিরাময় হবে না।
পেঁয়াজ বীজ ফরিদপুরের চাষিদের কাছে ‘কালো সোনা ’
পেঁয়াজ বীজ চাষে হাসি ফুটেছে ফরিদপুরের কৃষকদের। গত কয়েক বছরে ভালো দাম পাওয়ায় এবারও স্বপ্নটাও বড়। আর তাই একে সোনার সাথে তুলনা করছেন।
ফরিদপুর কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সাড়ে ১৭শ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করা হয়েছে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় এই জেলার প্রতি বছরই পেঁয়াজ বীজের চাষ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ১ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী জানান, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর অঞ্চলের ১ হাজার ৫৬ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিন হবে। যার বাজার প্রায় মূল্য (গত বছরের মতো হলে) ৫শ কোটি টাকার মতো।
আরও পড়ুন: দেড় বছর পর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু
তিনি জানান, সরকারের বিএডিসির সংগৃহীত মোট পেঁয়াজ বীজের ৭০ শতাংশ ফরিদপুর জেলা থেকে করে থাকে। এ বীজ উৎপাদন করে রবি মৌসুমে চাষিরা অধিক মুনাফা করে এই কারণে এই ফসলকে ব্লাক গোল্ড বা কালো সোনা হিসেবে অভিহিত করা হয়।
সরেজমিনে ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে দেখা গেছে, সেখানকার চাষিরা বীজ সংগ্রহের কাজে ব্যস্থ রয়েছে। অনেক কৃষক-কৃষাণী চুক্তিতে (পেঁয়াজ বীজ গাছে পেঁয়াজ তাদের আর বীজ মালিকের) এই কাজে অংশ নিচ্ছে।
অম্বিকারপুর এলাকার গোবিন্দুপুর মাঠে কৃষক হারিজ মোল্লা, জুলেখা বেগম, ফাতেমা খানমের মতো অনেকেই জানান, এই মৌসুমে বীজ তোলার কাজ করে যে পেঁয়াজ পাই তাই দিয়ে সংসারের সারা বছরের পেঁয়াজের চাহিদা মিটে যায়।
মাঠে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কৃষক রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর জেলা থেকে এসেছেন।
এদের মধ্যে রহমান মাতুব্বর, আশিক মেল্লা বলেন, পেঁয়াজ বীজ তোলা সময় আমাদের মতো অনেকেই ফরিদপুরে আসে জনবিক্রির কাজে। এই সময়টায় আমাদের ভালো আয় হয় ।
তারা জানান, করোনার সময়ে এমনিতেই কাজের অভাব, তাই ফরিদপুরের এই মৌসুমে আমাদের মতো অনেকেই চলে আসে জনদিতে।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজ বীজে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন মাগুরার কৃষকরা
জেলা সদর উপজেলার পেঁয়াজ বীজ চাষিরা জানান, প্রচণ্ড রোদ থাকার পরেও চলতি মৌসুমে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের ভালো ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ উৎপাদন হবে। গত বছরের বাজার মূল্যে ছিল প্রতি মণ দুই লাখ টাকা মতো। আর খরচ প্রতি বিঘায় ৩০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে বিঘা প্রতি ভালোই আয় হবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামের বিএডিসির তালিকাভুক্ত পেঁয়াজ বীজ চাষি মো. আকবর খান বলেন, ‘এই বছর চার বিঘা জমিতে বীজের চাষ করছি। আশা করছি ৮ মণের বেশি বীজ উৎপাদন হবে।’
একই গ্রামের পেঁয়াজ বীজের চাষ করে লাভলি- ইমতিয়াজ দম্পতি।
তারা জানান, পেঁয়াজের বীজের কালো দানা আমাদের এলাকার ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাজারে যে দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ বীজ আমাদের কাছে সোনার মত।
তারা বলেন, এই অঞ্চলের বীজ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিএডিসির মাধ্যমে সরবরাহ করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বিএডিসি কতৃপক্ষ সব চাষিদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে না।
আমাদের দাবি, সরকারের যেহেতু বীজের দরকার, তবে কেনো সকলের কাছ থেকে নিবে না।
গোবিন্দুপুর গ্রামে আরেক পেঁয়াজ বীজ চাষি শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংকগুলো শুধু জমির মালিকদের লোন দেয়। আমার মতো বর্গা চাষিদের লোন দেয় না। আমরা বাধ্য হয়ে এনজিও’র কাছ থেকে অধিক সুদে লোন নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ করি।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ বিএডিসির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও এ বীজ চাষে অনেক বেকার যুবকরা তাদের কর্মস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। কারণ অল্প খরচে অধিক মুনাফা লাভ করার সহজ উপায় হলো বীজ চাষ।
তিনি বলেন, ফরিদপুর সদর, ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সদরপুর ও সালথা উপজেলার পেয়াজ বীজ চাষীদের এখন আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, সারা দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনের বড় অংশীদার ফরিদপুরের বীজ চাষিরা।