বিশেষ-সংবাদ
৫০ মণ ওজনের মানিক ও বাবু’র দাম উঠেছে ১৪ লাখ
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সবার নজর কাড়ছে ৫০ মন ওজনের মানিক ও বাবু যুগল। ক্রেতারা শান্তপ্রকৃতির এ দুটি ষাঁড়ের এখন পর্যন্ত দাম হাকিয়েছে ১৪ লাখ টাকা। তবে মালিক অলি মিয়া ষাঁড় দুটির বিক্রয় মূল্য নিধারণ করেছেন ২২ লাখ টাকা।
প্রবাসফেরত অলি মিয়া ও তার স্ত্রী হাবিবা বেগম বাড়ির আঙ্গিনায় একটি গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। যেখানে কোরবানি ঈদ উপলক্ষে বেশ কিছু পশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। সে সকল পশুর মধ্যে রয়েছে মানিক ও বাবু নামে দুটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়।
অত্যন্ত যত্নের সাথে ষাঁড় দুটির লালন পালন করছেন তারা। প্রতিদিন তাদের খাবারের তালিকায় দিচ্ছেন খৈল, ভূষি, বন, খড়, ঘাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার। তাদের পরিচর্যায় একজন লোকও রাখা হয়েছে। কালো দেহী মানিকের ওজন প্রায় ২৫ মণ। আগাগোড়া একেবারে থুলথুলে মাংসল। সাদা রংয়ের বাবুরও ওজন প্রায় ২৫ মণ। দেখতে অনেকটা গোলগাল।
আরও পড়ুন: অনলাইনে জমে উঠেছে কোরবানির পশু বেচাকেনা
অলি মিয়া জানান, গত চার বছর ধরে মানিক ও বাবুর লালন পালন করছেন। কোরবানির ঈদে বিক্রি করার লক্ষে তাদের প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে হৃষ্টপুষ্ট করেছেন। এতে তাদের পিছনে প্রতিদিন এক হাজার টাকা খরচ করছেন। শুধু তাই নয়, তাদের খাবারের জন্য বাড়ির পাশে তিন কানি জমিতে ধান চাষ বাদ দিয়ে ঘাসের আবাদ করেছেন।
তিনি জানান, পরিবারের সদস্যর মতই তাদের প্রতিপালন করা হচ্ছে। তবে খামারের পরিধি বাড়ানোর জন্য এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে শত কষ্টে সত্বেও পশু দুটি বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।
তার স্ত্রী হাবিবা বেগম বলেন, গত চার বছর আগে খামারে থাকা একটি গাভী গরু থেকে এ দুটি ষাঁড়ের জন্ম। অনেক শখ করে তাদের নাম রাখা হয়েছে মানিক ও বাবু। তারপর থেকেই কোরবানির ঈদে বিক্রি করার লক্ষ নিয়ে এ গুলোকে লালন পালন করা হচ্ছে। এবারের ঈদে মানিক ও বাবুকে বিক্রি করে দেয়া হবে। মনে শত কষ্ট থাকলেও তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: হাজার কেজির ‘বাংলার টাইগার’: দাম হাঁকছেন ৫ লাখ
গরু কিনে ‘ডিজিটাল পশুর হাট’ উদ্বোধন করলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ.বি.এম সাইফুজ্জামান বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসছেন। তাদের কাছে যে পুঁজি আছে তা বিনিয়োগের নিরাপদ স্থান হচ্ছে পশু পালন। এতে স্বল্প পুঁজি দিয়ে গ্রামীণ পরিবেশে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ পশুপ্রাণী পালন করে তারা লাভবান হতে পারবেন। তবে যারা এ ধরনের উদ্যাগে নিবেন তারা যেন বিষয়টি আমাদের অবহিত করেন। প্রাণী সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে সব্বোর্চ্চ সহযোগিতা করা হবে।
তিনি বলেন, খামারি অলি মিয়া যে উদ্যোগ নিয়েছে আমি তাকে সাধুবাদ জানাই এবং যে কোন প্রয়োজনে আমরা তার পাশে থাকব।
হাজার কেজির ‘বাংলার টাইগার’: দাম হাঁকছেন ৫ লাখ
‘বাংলার টাইগার’নামটি শুনে একটু চমকে উঠছেন তো। এটি কোন বাঘের নাম নয়, এটি একটি ষাঁড়ের নাম। বিশাল আকৃতির এই ষাড়টি দেখতে অনেকটা বাঘের মতো। তাই মালিক আদর করে এর নাম দিয়েছেন ‘বাংলার টাইগার’। ইতোমধ্যে ষাড়টি সেলেব্রিটিদের মতো সবার নজর কেড়েছে।
আরও পড়ুনঃ লকডাউন অমান্য করায় চাঁদপুরে গরুর হাট ভেঙে দিল প্রশাসন
‘বাংলার টাইগার’অন্য সাধারণ ষাঁড়ের মতো নয়। অস্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড়টির ওজন প্রায় এক হাজার কেজি। আর আজ এর জন্যই কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিমদেবত্তর গ্রামটি সারা বাংলাদশে পরিচিতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন রাজিকুল ইসলাম। পরম আদরে ‘বাংলার টাইগার’ তাঁরই খামারে বেড়ে উঠেছে। রাজিকুল আসন্ন ঈুদল আজহা উপলক্ষে এর দাম হেঁকেছেন পাঁচ লাখ টাকা। অবশ্য এখন পর্যন্ত এর দাম উঠেছে চার লাখ টাকা।
আরও পড়ুনঃ গরু কিনে ‘ডিজিটাল পশুর হাট’ উদ্বোধন করলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
রাজিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছর গরুর হাটে গরু বিক্রি করা যায় দেখে শুনে। করোনায় লকডাউন থাকায় তা হচ্ছে না। তবে লকডাউন ওঠে গেলে কোনো একটা হাটে বাংলার টাইগারকে নেয়া হবে। ফ্রিজিয়াম জাতের ষাঁড়টির বয়স প্রায় চার বছর। কোরবাবানির উপযোগী হওয়ায় এটিকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এতে এলাকায় মানুষের মধ্যে যথেষ্ট সাড়া পড়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বাড়িতে এসেই দাম হাঁকাচ্ছেন ক্রেতারা। অনেকেই বাংলার টাইগারকে এক নজর দেখতে ভিড় করছেন।’
আরও পড়ুনঃ কুড়িগ্রামে গরু পাচারকারীদের তৎপরতায় করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক
রাজিকুল জানান, কোনো প্রকার ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্যে ষাঁড়টিকে এ পর্যায়ে আনা হয়েছে। ষাঁড়টিকে খড়, জার্মানির তাজা ঘাস, খৈল, ভূষি, চালের কুড়া, ভুট্টা, ভাতসহ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়। এছাড়াও গোসল করিয়ে পরিষ্কার ঘরে রাখা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা ও রুটিন অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেয়াসহ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। খাবারসহ প্রতিদিন এ ষাঁড়টির পেছনে ৪০০ টাকার ওপর খরচ হয়।
ষাঁড়টি দেখতে আসা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এতো বড় গরু সাধারণত হাটে দেখতে পাওয়া যায় না। তাই ‘বাংলার টাইগারের' খবর শুনে দেখতে এসেছি।’ বাড়িতে লালন পালন করা ষাঁড় এতো বড় হতে পারে তা দেখেই হতবাক হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ ৯৯৯ এ কল দিয়ে ছিনতাইকৃত গরুর ট্রাক উদ্ধার, আটক এক
এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. জোবায়দুল কবির বলেন, এটিকে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদে রাখার জন্য দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রাজিকুল ইসলামকে বিভিন্ন নির্দেশনা ও পরামর্শ দিচ্ছে। তিনি খুব ভালোভাবে ষাড়টিকে লালন পালন করেছেন।
বাগেরহাটে ‘ভ্রাম্যমাণ বাজার’ যাচ্ছে মানুষের দোড়গোড়ায়
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘লকডাউন’ বাস্তবায়ন ও মানুষকে ঘরে রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা পূরণে বাগেরহাটে ভ্রাম্যমাণ বাজার চালু করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সর্বত্রই ঘুরে বেড়াবে ভ্রাম্যমান বাজার। ১০০টি ভ্যানের উপর ভ্রাম্যমাণ বাজারের জন্য নানা রকমের পণ্য সাজানো রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্য নিয়ে ভ্যানগুলো মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ বাজারে মাছ, মাংস, দেশি ফল, সবজিসহ নানা ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী মিলবে।
বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বাগেরহাট শহরের স্বাধীনতা উদ্যানের সামনে থেকে এই ভ্রাম্যমাণ বাজার উদ্বোধন করা হয়।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় বাজার লকডাউন করলো প্রশাসন
উদ্যোক্তরা জানান, ভ্রাম্যমাণ এই বাজার চালু করায় কাঁচাবাজার মুখী মানুষদেরকে ঘরে রাখা সম্ভব হবে। একই সাথে লকডাউনে কারণে বেকার হয়ে পড়া ভ্যান চালকদেরও কর্মের সংস্থান হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ বাজার মানুষকে ঘরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তাদের প্রত্যাশা। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ভ্রাম্যমাণ বাজারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
দেখা গেছে, স্বাধীনতা উদ্যানের সামনে রাস্তার দুই পাড়ে রাখা হয়েছে ভ্যান। ভ্রাম্যমাণ বাজার লেখা প্লাকার্ড ভ্যানের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ভ্যানের উপর নিত্যপ্রয়োজনীয় হরেক রকম পণ্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি ভ্যানচালকের কাছে উচ্চস্বরে বাজানোর জন্য বাঁশি দেয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর চালকরা ভ্রাম্যমাণ বাজার নিয়ে বাঁশি বাজাতে বাজাতে মানুষে দৌড়গোয়াড় ছুটে চলেছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সরদার নাসির উদ্দিন জানান, আওয়ামী যুবলীগ জেলা শাখা এই বাজার বাস্তবায়ন করছে। প্রথম পর্যায়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ভ্রাম্যমাণ বাজারের কার্যক্রম চলবে। পর্যায়ক্রমে ভ্যানের সংখ্যা ও এলাকা বৃদ্ধি করা হবে। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে ভ্রাম্যমাণ বাজারের মাধ্যমে মানুষকে ঘরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একই সাথে ভ্রাম্যমাণ বাজার থেকে পণ্য ক্রয় করতে মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কোভিডের 'হটস্পট’ হয়ে উঠছে রাজধানী: আশংকা বিশেষজ্ঞদের
একমাস আগে রাজধানী ঢাকায় করোনাভাইরাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখন সংক্রমণ ও মৃত্যুতে হটস্পটে পরিণত হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে করোনার ভারতীয় রূপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পরও সরকার আন্তঃজেলা পরিবহন চলাচল বন্ধ করতে সময় নিয়েছিল। রাজধানীতে জনসংখ্যার ঘনত্ব, মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কে জনগণের উদাসীনতাও ঢাকায় দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
তারা বলছেন, ব্যাপক হারে নমুন পরীক্ষা, সংক্রমিত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইন, লকডাউন বাস্তবায়ন এবং হাসপাতালে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
পরিস্থিতি ভয়াবহ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ দিনে ১ হাজার ৪১২ জন রোগী মারা গেছেন এবং ৮৯ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দেশে ১১ হাজার ৫২৫ জন এবং বুধবার ১১ হাজার ১৬২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকা শহরে ৩ হাজার ৭১৫ জন বা ৩২.২৩ শতাংশ এবং বুধবার ৩ হাজার ২৮৫ জন বা ২৯.৪৩ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে জুনের শুরুতে ঢাকা শহরে কোভিড পজিটিভিটি হার ছিল মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
ভাইরাস শুধু ঢাকা শহরেই নয়, বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগে ৫ হাজার ৯৭ জন রোগী বা ৩১.০৯ শতাংশ এবং বুধবার ৪ হাজার ৭৩২ জন বা ৪২.৩৯ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া, মঙ্গলবার এবং বুধবার সারাদেশে যথাক্রমে ২০১ এবং ১৬৩ জন করোনায় মারা গেছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগে ৪৫ জন এবং বুধবার ৫৮ জন মারা যান।
আরও পড়ুন: লিভার রোগ নিয়ন্ত্রণে শরীর চর্চার বিকল্প নেই: বিশেষজ্ঞ
আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অনেক জেলা থেকে মুমূর্ষ রোগীরা রাজধানীর কোভিড হাসপাতালে আসছে। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য ২৭৫টি সাধারণ এবং ১০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। তবে বুধবার ৩০০ জনেরও বেশি রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং কোনো আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না।
বুধবার রাজধানীর ১৪টি সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ১১টিতে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি ছিল না। এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য সব কোভিড-ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালে রোগীগের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
ভিক্টোরিয়া কলেজ: বন্ধ ক্যাম্পাসে মাদক আর যৌনকর্মীদের আখড়া
করোনায় ১৬ মাস ধরে বন্ধ ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস। চলছে ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন। বন্ধ ক্যাম্পাস আর পরিত্যাক্ত ছাত্রাবাস এখন মাদকসেবী আর যৌনকর্মীদের আস্তানা। ছুটির এ সময়ে অতিরিক্ত সতর্কতা আর পুলিশের টহল উপেক্ষা করে কলেজ ক্যান্টিনে চলে মাদক বিক্রি। রাতের আধাঁরে পরিত্যাক্ত ছাত্রাবাস থাকে যৌনকর্মীদের দখলে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ধর্মপুরে পুলিশ ফাঁড়ি প্রয়োজন।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি শাখার ২২টি বিভাগে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেন। কবি নজরুল ইসলাম ছাত্রাবাস ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে হাজার শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়াও কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী ধর্মপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
আরও পড়ুন: থমকে আছে ভিক্টোরিয়ার খেলার মাঠ ভরাট কাজ
জানা গেছে, কলেজের কান্দিরপাড় উচ্চমাধ্যমিক শাখায় দেয়ালের উপর দিয়ে বহিরাগতরা প্রবেশ করেন। সেখানে রাতে অবস্থান ও মাদকসেবন করেন। নিউ হোস্টেলের পরিত্যক্ত ভবনে রাতের আধাঁরে যৌনকর্মীদের যাতায়াত রয়েছে। ডিগ্রি শাখার পরীক্ষা ভবনের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক, জিয়া অডিটোরিয়ামের পেছনে, মোতাহের হোসেন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবনের সামনে, কলা ভবনের নিচতলা, বিজ্ঞান ভবন-২ এর বিশেষ কিছু কক্ষে মাদকসেবীদের আড্ডা জমে। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কলেজ ক্যান্টিন ক্যাফে-৭১ এর চলে মাদকবিক্রি। শহর, শহরতলী ও কোটবাড়ি এলাকার মাদকসেবীদের নিয়মিত আসর ক্যাফে-৭১।
নৌকা গ্রাম: শরীয়তপুরের ৩০ পরিবারের জীবিকা চলে নৌকা তৈরি করে
শহীদুল ইসলাম পাইলট
শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের চন্দনকর এলাকার এখনও ৩০ পরিবার নিয়মিত নৌকা তৈরি করছেন। নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। তাই এই গ্রামটি নৌকা গ্রাম নামে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানায়, নিচু অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ছিল এই শরীয়তপুর। বর্ষার দিনে বিলে শুধু পানি আর পানি থাকতো। বছরে ছয় মাস পানির নিচে থাকতো এই অঞ্চলে বিভিন্ন এলাকা। তখন মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহার হত নৌকা। এই জেলায় ব্যবহারকৃত নৌকা বেশির ভাগই রুদ্রকরের চন্দনকর এলাকার নৌকা গ্রাম থেকে নিতেন ক্রেতারা। এখানে শুধু নৌকা বানানো হতো বলে এলাকার নাম চন্দনকর বা নৌকা গ্রাম নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে ব্যতিক্রমধর্মী নৌকায় চড়াতে চান লক্ষ্মীপুরের ইউছুফ
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রুদ্রকর ইউনিয়নের চন্দন কর এলাকায় নৌকা তৈরি কাজ চলছে পুরোদমে। ঘরের পাশেই নৌকা বানানোর কাঠ আর বড় জায়গা রয়েছে। সেখানে কাজ করছে নৌকা বানানোর শ্রমিকরা। ছোট থেকে বড় সকল বয়সী মানুষই নৌকা বানানোর কাজ করে। কেউ কাঠ কাটছে, কেউ নৌকায় পেরেক মারছে। নৌকার ডাইসের মাধ্যমেই কাঠ কেটে নৌকার পাটাতন বানাচ্ছে। কেউ কাঠ কাটার পর তা আবার সমান করছেন ডাইসে বসানোর জন্য।
নৌকা বানানোর কারিগররা জানান, একটি ছোট নৌকা বানাতে দুই দিন সময় লাগে আর বড় হলে তিন দিনের প্রয়োজন হয়। আগে গাছের কাঠের দাম কম হওয়ায় নৌকা বানাতে তেমন খরচ পড়ত না। বিভিন্ন মালামাল কিনে ছোট নৌকা বানাতে এখন ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা গুনতে হয়। তাতে ক্রেতারা নিতে কিছু টা হিমসিম খাচ্ছেন। বড় নৌকা বানাতে যা খরচ, তার থেকে কিছুটা কম খরচ হয় মাঝারি সাইজের নৌকা বানাতে।
ক্রেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামেই নৌকা বানানোর কাজ করে আসছে কিছু পরিবার। তাদের মধ্যমেই নৌকা তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতা বা নৌকা বিক্রেতারা। আগে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে বড় একটি নৌকা পাওয়া যেত। এখন সেই নৌকা কিনার জন্য গুনতে হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাও খাজনা ও ভাড়া ছাড়া। এতে করে নৌকা কিনে ব্যবহার করা গেলেও কিনে বিক্রি করাটা অনেক সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নৌকা মিস্ত্রী সঞ্জয় মন্ডল বলেন, ‘বাবার হাত ধরে কাঠের কাজ শিখেছি। আর অন্য কোনও কাজ করতে পারি না। এই নৌকা বানানোর বছরে তিন থেকে চার মাস চাহিদা থাকে। এটির চাহিদা শেষের পর গ্রামে গিয়ে গিয়ে কাঠের কাজ করি। কিন্তু করোনা আসার পর কাজ অনেকটা নাই বললেই চলে। কষ্ট করে নৌকা বানিয়ে তারপর সংসার চালাতে হয়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেড় লক্ষাধিক কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশু বিক্রয়ের শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খামারিরা৷ প্রতিবছরই কোরবানির ঈদের অন্তত ১৫দিন আগে পশুর বাজারগুলো জমজমাট হয়ে ওঠে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি থাকলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে পশু বিক্রয় নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলার খামারিরা।
জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবার ১২ হাজার ৩৭০টি পশুর খামার করা হয়েছে। এসব খামারে কোরবানির জন্য এক লাখ ৭৭ হাজার পশু লালন পালন করা হচ্ছে।
জেলা শহরের দাতিয়ারায় ‘রূপচান্দ বিবি ডেইরি’ নামে একটি খামার রয়েছে। খামারটিতে দেশীয় শতাধিক গরু লালন-পালনে ১২জন শ্রমিক পর্যায়ক্রমে কাজ করেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে গরু পাচারকারীদের তৎপরতায় করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক
এই খামারের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, 'খামারটিতে অনেক টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি কারণে আমরা চিন্তিত কিভাবে গরুগুলো বিক্রয় করবো। যদি এইবার হাট না বসে তাহলে অনেকটা লোকসান গুণতে হবে আমাদের।’
দক্ষিণ পৈরতলার তিন রাস্তার মোড়ে আলী আযম ডেইরি খামার। খামারটিতে বড় ছোট মিলিয়ে প্রায় ৪০টির মতো গরু রয়েছে। রয়েছে অসংখ্য মহিষ ও গাড়ল। এই খামারে সর্বোচ্চ গরুর মূল্য প্রায় ৬ লাখ টাকা। প্রতি বেলায় পাঁচ জন শ্রমিক খামারটিতে কাজ করেন। এই খামারের প্রায় ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন তাজু মিয়া
তিনি বলেন, ‘গরুগুলোকে তিন বেলায় খাবারে খড়, ঘাস, চিটা, গুড়, খৈল, ভুষি পর্যায়ক্রমে দেয়া হয়। অনেক শ্রম দেয়া হচ্ছে গরু-মহিষগুলোর প্রতি। গত বছর করোনার মাঝেও পশুর হাট বসেছিল। কিন্তু এবার ঈদের আগে যে পরিস্থিতি তাতে হাট না বসলে মালিকের অনেক টাকা লোকসান হবে।’
খামারটির মালিক আলী আযম বলেন, ‘ঈদের ছয় মাস আগে থেকেই পশুগুলোকে অধিক যত্ন সহকারে লালন পালন করা হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এইবার গরু কম তুলেছি। দেশের যে অবস্থা করোনার মহামারিতে সব খামারিরা একটা চাপা আতঙ্কের মাঝে রয়েছেন। সরকারকে আমাদের দিক বিবেচনা করে একটা পরিকল্পনা নিতে হবে।’
জেলা শহরের উত্তর পৈরতলার কাউসার এগ্রো ফার্মের মালিক শিল্পপতি কাউসার আহমেদ। খামারটির দায়িত্বে আছেন হাজী জালাল উদ্দীন। এই খামারে জেলার বড় বড় গরু রয়েছে৷ এখানে সর্বোচ্চ ১০ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকার গরু রয়েছে। রয়েছে ফাইটার, খাসা, শাহিওয়াল, হারিয়ানা, নেপালী প্রজাতির ষাড় ও বলদ।
খামারে দায়িত্বে থাকা হাজী জালাল উদ্দীন জানান, খামারে এইবার তারা কম গরু তুলেছেন। তবে সবগুলো গরুই আকর্ষণীয়। খামারের বড় দু’টি বলদ রয়েছে, যা জেলার মধ্যে উচ্চতায় সবচেয়ে বড় গরু বলে দাবি তার।
তিনি বলেন, ‘আমরা অনলাইনে গরুগুলো বিক্রয়ের প্রচারণা চালাচ্ছি। কিন্তু বাজারে দরদাম করে বিক্রয়ে আরও সুবিধা হয়। অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা গরু কিনতে আসতেন খামারে। এই বছরের করোনা পরিস্থিতিতে তারা আসতে পারছেন না। যদি হাট নাও বসে, আমরা যেন গরুগুলো যেকোনও উপায়ে বিক্রয় করতে পারি সরকার সেরকম ব্যবস্থা করে দিবেন বলে আশা করছি।’
আরও পড়ুন: গরু ছিনতাই করতে না পেরে কৃষকের গলায় ছুরিকাঘাত !
এই বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুজ্জান জানান, এই বছর কোরবানি ঈদকে ঘিরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু প্রস্তুত রয়েছে। গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত আরও ১৩/১৪ হাজার পশু থাকবে।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের মতো এবারও আমরা খামারিদের অনলাইনে পশু বিক্রয় করতে উৎসাহিত করছি। আমাদের ফেসবুক পেইজ রয়েছে। সেখানে খামারীরা পশুর ছবি দিচ্ছেন। আমরা এই পেইজ বুস্টিং করছি। গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ৬০ শতাংশ পশু অনলাইনে বিক্রয় হয়।’
ম্যাজিক জালে অবাধে মা মাছ নিধন!
ঠাকুরগাঁও জেলায় চায়না ম্যাজিক কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতে নির্বিচারে ছোট-বড় ডিমওয়ালা মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে। ফলে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মৎস্য সম্পদ উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
এ জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে স্থানীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চায়নার ম্যাজিক জাল এক ধরনের বিশেষ ফাঁদ। এটি ছোট ছোট কক্ষ বিশিষ্ট খোপের মতো। এ জাল খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাশয়ে বাঁশের খুঁটির সাথে জালের দু’মাথা বেঁধে রাখা হয়। ছোট-বড় সব ধরনের ডিমওয়ালা মাছ এ জালে আটকা পড়ে।
আরও পড়ুন: টাঙ্গন নদীতে নির্বিচারে চলছে ‘মা’ মাছ নিধন
বর্ষার পানি পুরোপুরি আসার আগেই জেলার বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট চায়না জালে (রিং জাল) ছেয়ে গেছে। আর এসব জাল দিয়ে প্রাকৃতিক উৎসে ডিম দিতে আসা মা ও পোনা মাছ নিধন করছেন স্থানীয়রা। জেলার সর্বত্র বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গীতে এই জালের ব্যবহার হচ্ছে।
জালের মালিকরা বলছেন, এমন কোনো মাছ নেই যা এই জালে ধরা পড়ে না।
মৎস্য অধিদপ্তরের বলছে, এই জাল সর্বনাশা। এটা বন্ধ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোন কার্যকরী পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।
সরেজমিনে দেখো যায়, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল, ধনতলা, পাড়িয়া, বড়বাড়ী, বড়পলাশবাড়ী, ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার রুহিয়া থানাধীন উত্তর বঠিনা, চুয়ামনি, আসাননগর, টাঙ্গন ব্যারেজ, বড়দেশ্বরী, সেনুয়া গ্রাম ঘুরে অসংখ্য চায়না জাল দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় যেখানেই একটু পানি জমেছে সেখানেই এই জাল পাতা হচ্ছে। আর অবাধে ডিমওয়ালা দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস মাছের প্রজননকাল। চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না। যার ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছ ধরলে দেশি মাছের অভাব দেখা দিবে।
উত্তর বঠিনা গ্রামের আব্বাস বলেন, এই জালের দাম একটু বেশি হলেও পোষায়। এত মাছ অন্য কোনো জালে ধরা পড়ে না।
স্থানীয়রা বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানুষ কর্মহীন হওয়ায় এসব মাছ ধরা আরো বেড়েছে। আগে যেসব লোক অন্য কাজকর্ম করে ব্যস্ত সময় পার করতেন, এখন তারা এসব মাছ ধরছেন।
আসাননগর গ্রামের গনি মিয়া দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করেন। গনি মিয়াকে চায়না জাল সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন, যারা প্রকৃতপক্ষে মাছের কারবার করেন কিংবা মাছ ধরা যাদের বংশগত পেশা, তারা কখনো এই জাল দিয়ে মাছ ধরবেন না। শুধু মৌসুমি শিকারিরাই এমন কাজ করতে পারেন।
চায়না জালের বড় ব্যবসায়ী ফারুক জানান, বর্তমানে চায়না জালের খুব চাহিদা। প্রতি ফুট জাল ষাট টাকা দরে বিক্রি হয়। একজন ক্রেতা কমপক্ষে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট জাল ক্রয় করেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুকুরে বিষ প্রয়োগে ৭০ লাখ টাকার মাছ নিধন
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘চায়না কারেন্ট জালসহ যে জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরা হয় সে সব জাল আমাদের দেশে নিষিদ্ধ।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই জাল বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
কুড়িগ্রামে গরু পাচারকারীদের তৎপরতায় করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক
কুড়িগ্রামে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ধরন নিয়ে জেলাবাসীর আতঙ্ক দিন-দিন বেড়েই চলেছে। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি ভাবে নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ।অন্যদিকে আসন্ন ইদুল আযহাকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু নিয়ে আসায় সক্রিয় গরু পাচারকারীরা। জেলার অরক্ষিত বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রায় প্রতি রাতেই ভারতীয় গরু ঢুকছে এমন অভিযোগ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের।
আরও পড়ুন: ৯৯৯ এ কল দিয়ে ছিনতাইকৃত গরুর ট্রাক উদ্ধার, আটক এক
ভারতীয় এই গরুগুলো পৌঁছে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও কুড়িগ্রামে আসছেন গরু কিনতে।জেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আব্দুল হাকিম জানান, শনিবার ও মঙ্গলবার যাত্রাপুর হাটে শতশত ভারতীয় গরু কেনাবেচা হয়।এছাড়াও নারায়ণপুরের ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক জানান, নদীপথে শত-শত গরু সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এতে গরু পাচারকারীদের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকা গুলোতে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ১
তবে বিজিবির দাবি, করোনার বিস্তাররোধে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।জেলাপ্রশাসন ও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি বাজার মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। এতকিছুর পরেও সীমান্ত দিয়ে গরু প্রবেশ থেমে নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘পাচারকারীদের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরন কুড়িগ্রামের সীমান্ত এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবুও কেন গরু চোরাচালান বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়? করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত কুড়িগ্রামের সব সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি গরু আসা বন্ধ করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।’
আরও পড়ুন: গরু ছিনতাই করতে না পেরে কৃষকের গলায় ছুরিকাঘাত
কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবি ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কর্নেল জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে সীমান্তে করোনা বিষয়ক প্রচারণা শুরু করা হয়েছে। সীমান্তবাসীদের জানানো হয়েছে কোনওরকম অনুপ্রবেশ লক্ষ্য করলেই তারা যেন বিষয়টি দ্রুত আমাদের জানান। এছাড়া অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্ত এলাকাগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে।’
এতকিছুর পরেও আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দু'চারটি গরু চোরাপথে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: করোনা: খুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের তীব্র সংকট
কুড়িগ্রাম জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করার বিষয়ে সবরকম নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে গাফলতি দেখা গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউএনও ও বিজিবির সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।’উল্লেখ্য, সারাদেশে করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় এক সপ্তাহের লকডাউন চলছে পুরো দেশজুড়ে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) লকডাউনের প্রথম দিন দেশে করোনায় একদিনে ১৪৩ জন মারা যাবার কথা জানানো হয়, যা একদিনের হিসেবে মৃত্যুর রেকর্ড।
করোনা: খুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডারের তীব্র সংকট
খুলনা অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সাথে সাথে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকটও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফলে সময় মতো অক্সিজেন না পেয়ে অনেকে মারা যাচ্ছে বলে করোনা আক্রান্তদের স্বজনরা অভিযোগ করছে। আর এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও স্পষ্ট অসহায়ত্ব ফুটে উঠছে।
অক্সিজেন সিলিন্ডার কে আগে নেবে, তা নিয়ে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রীতিমত কাড়াকাড়ি চলে রোগীদের স্বজনদের মধ্যে। এমনটাই দেখা গিয়েছে করোনার হটস্পট খুলনার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে। সময়মতো অক্সিজেন না পেয়ে রোগী মৃত্যুর অভিযোগও বাড়ছে দিন দিন। অন্যদিকে বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের স্বজনরা তৎপর আগে ভাগে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ করে রাখতে। এতে নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে সেবা খাতে।
আরও পড়ুন: বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যু সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ
খুলনার সবচেয়ে বড় বিশেষায়িত হাসপাতালে ১৩০ শয্যার বিপরীতে গত কয়েকদিন যাবত রোগী ভর্তি আছেন ১৮০ থেকে ১৯০ জন। এখানে মাত্র ৭৭ টি শয্যায় রয়েছে কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যবস্থা, বাকি রোগীদের ভরসা সিলিন্ডার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ’শ সিলিন্ডার মজুদের কথা বললেও হাহাকার থামছে না।
এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘অক্সিজেনের সিলিন্ডার আমি নিজে ঘুরিয়ে আমার রোগীর পাশে রাখি। একটু পর এসে দেখি সেটা আরেকজন নিয়ে গেছে। আমাদের মতো যারা নরমাল পেশেন্ট তারা সিলিন্ডার পাচ্ছে না।’
আরেক করোনা রোগীর ভাই বলেন, ‘সিলিন্ডার না পেয়ে আমরা হাসপাতালে এদিক-ওদিক ছুটছি, কিন্তু সিলিন্ডার পাচ্ছি না। শুধু এই অক্সিজেনের জন্য আমার বোনটা মারা যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার সুযোগ দিচ্ছে সরকার
করোনা প্রতিরোধ ও সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য ও মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ ইউএনবিকে বলেন, ‘রোগীর এমন চাপ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রোগীর সংখ্যা যখনই ১৭০ অতিক্রম করছে তখনই অক্সিজেন সিলিন্ডার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।’
অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের হিসেবে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, বিভিন্ন সংগঠন আর ব্যক্তি পর্যায়ে শুধুমাত্র করোনা রোগীদের জন্য খুলনা শহরে বর্তমানে দৈনিক সিলিন্ডারের চাহিদা ৭০০ টি। তার বিপরীতে সরবরাহ করা যাচ্ছে মাত্র ৪১০ টি।
আরও পড়ুন: দেশে করোনায় একদিনেই সর্বোচ্চ ১৪৩ জনের মৃত্যু
তারা জানান, ‘ছোট সিলিন্ডারের চাহিদা প্রচণ্ড বেড়ে গেছে, প্রতিনিয়তই রাতের বেলা ফোন আসছে। অনেককে দিতে পারছি, অনেককে বলছি পরে আসেন, গাড়ি এখনো আসেনি বা আসতেছে। হঠাৎ করে চাহিদা যদি এক শ’র জায়গায় দুই শ’ হয়ে যায় সেটা চ্যালেঞ্জিং।’
একটি ছোট সিলিন্ডারে ১ হাজার ৩৬০ আর বড় সিলিন্ডারে অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতা ৬ হাজার ৮০০ লিটার।
চাহিদা আর সরবরাহের ভিতর ফারাকের দূরত্ব ক্রমশই বাড়ছে। যে পরিস্থিতি চলছে তাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার একসময় দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠতে পারে খুলনায়।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরের করোনায় শনাক্তের হার ৪৫.৯৫, মৃত্যু ৫
সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন বিপর্যয়ের কারণে বুধবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় ৭ জন রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার হঠাৎ করেই খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। এখানকার মেশিন ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
আরও পড়ুন: করোনা: খুলনা বিভাগে রেকর্ড ৩৫ জনের মৃত্যু, ১২৪৫ শনাক্ত
তবে তার আগেরদিন মঙ্গলবার (২৯ জুন) ২৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। যা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪৬.৭৪ শতাংশ। এর আগে সোমবার খুমেক ল্যাবে শনাক্তের হার ছিলো ৩৮.৯৩ শতাংশ, আর রবিবার ৩৯.৬৫ শতাংশ, শনিবার ৫০ শতাংশ, শুক্রবার ৩৭.৯০ শতাংশ, বৃহস্পতিবার ৫১.৫৫ শতাংশ, বুধবার ৩৪ শতাংশ আর মঙ্গলবার ৪০ শতাংশ। এই তথ্যই বলে দিচ্ছে খুলনা অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।