চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন মানুষ বিভিন্ন রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য সৃষ্টিকর্তার পরই ডাক্তারদের ওপর ভরসা করে থাকেন। তাই তাদের আস্থার জায়গাটি অক্ষুণ্ন রাখা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। অহেতুক পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীরা যাতে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে বাংলাদেশ কমিউনিটি অফ থ্যালমোলজিক্যাল সোসাইটির সপ্তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘আপনারা (চিকিৎসকরা) সমাজের এমন এক পেশায় নিয়োজিত যা অত্যন্ত সম্মানিত এবং একইসাথে গুরুত্বপূর্ণ। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ রাখব রোগীদের প্রতি আরও বেশি আন্তরিক ও ব্রতী হোন। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যে পরিমাণ চার্জ আদায় করেন তা সাধারণ মানুষের ক্ষমতার বাইরে। তাই আপনাদের চিকিৎসা ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, আপনারা আজকে যে অবস্থানে আছেন, সেখানে পৌঁছাতে সাধারণ মানুষের অবদানও কিন্তু কম নয়। কারণ তাদের ট্যাক্সের টাকাতেই মেডিকেল কলেজের খরচ জোগানো হয়। তাই তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে আমি মনে করি।
মেডিকেল সেক্টরের উন্নয়নের সাথে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান চক্ষু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা উভয় ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। তাই আপনাদের সব সময় সর্বশেষ প্রযুক্তি ও চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে পরিচিত থাকতে হবে।’
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর চক্ষু চিকিৎসা প্রদানের জন্য চক্ষু ক্যাম্প পরিচালনা একটি উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় মাধ্যম উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কিন্তু এ ধরনের ক্যাম্পে চোখ অপারেশনের পর বেশ কিছু রোগী অন্ধত্বের শিকার হয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত। এ ধরনের ক্যাম্প পরিচালনায় আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে মনিটর করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম প্রধান একটি চাহিদা। জনগণের এ চাহিদা পূরণে সরকার সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছে। ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, ডাক্তার-নার্স নিয়োগ, উন্নত যন্ত্রপাতি সংগ্রহসহ তৃণমূল পর্যায়ে থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সার্বিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে জেলা সদরের বাইরে, এমন কি ঢাকা বা বিভাগীয় শহরের বাইরে পদায়ন হলেই ডাক্তার-নার্সরা বদলির তদবির শুরু করেন। আর বদলি হতে না পারলে কোনো রকমে সময় পার করার চেষ্টা করেন।’
‘এতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগণ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হন। গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা নিয়েই আমাদের দেশ। আপনাদের অনেকেই গ্রাম থেকে এসেছেন। তাই গ্রামের সাধারণ মানুষের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে সহযোগীতা চেয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যাকে যে জায়গায় পদায়ন করা হবে সে জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং তা আন্তরিকতার সাথে করতে হবে। হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে যতটুকু সেবা দেয়া সম্ভব তা সবটুকু দিতে হবে। চিকিৎসা নিতে আশা জনগণ যাতে অহেতুক কোনো হয়রানির শিকার না হয় তাও নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন এ লক্ষ্যে কার্যকর অবদান রাখতে পারে বলে আমি মনে করি।’
সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক মানুষ বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক লোক চোখের নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। জনগণের মধ্যে চোখের প্রাথমিক পরিচর্যা ও রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে নিরাময়যোগ্য চক্ষু রোগের প্রাদুর্ভাব বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব।’