সোমবার বিকাল ৩টার দিকে মৌলভীবাজার মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন সিকৃবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড।
মামলার আসামিরা হলেন- বাস চালক জুয়েল আহমদ (৩০), হেলপার মাসুক মিয়া (৩১) ও সুপারভাইজার শেফুল মিয়া (৩৫)। এর মধ্যে সুপারভাইজার এখনও পালতক রয়েছে।
ঘটনার সময় নিহত ওয়াসিমের সঙ্গে থাকা ১০ জন শিক্ষার্থীকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলা করতে পরিবারের অনাগ্রহের কথা আগেই জানা গিয়েছিল। অবশেষে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) কর্তৃপক্ষ বাদী হয়েই নিজেদের শিক্ষার্থী ঘোরী মো. ওয়াসিম আব্বাস হত্যার অভিযোগে মামলা করেছে।
মামলার এজাহারে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে ওয়াসিমকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
এজাহার দায়েরকালে ওয়াসিমের সাথে ওই বাসে থাকা সিকৃবির ১০ শিক্ষার্থীও থানায় উপস্থিত ছিলেন।
মৌলভীবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুহেল আহাম্মদ মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ইতোমধ্যে চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। তাদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাসটিও জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে ওয়াসিমকে বাসচাপা দিয়ে ‘হত্যার’ প্রতিবাদে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রবিবার সিকৃবির শিক্ষার্থীরা ওয়াসিম হত্যার দাবিতে নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেন তারা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তিন দিনের কর্মসূচিতে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন। দাবিগুলো হলো- অভিযুক্ত চালক ও হেলপারের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করা, উদার পরিবহনের রোড পারমিট ও লাইসেন্স বাতিল করা, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে চলতে না দেয়া, অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি না চালানো এবং সড়কে শিক্ষার্থীসহ সকল যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তাছাড়া শিক্ষার্থীরা ২৭ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস বর্জন ও পরীক্ষা স্থগিতেরও দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিকৃবি কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের আন্দোলন মেনে নিয়ে সকল ক্লাস বর্জন এবং পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার বিকালে নবীগঞ্জের টোলপ্লাজা থেকে সিলেটে আসার উদ্দেশে উদার পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-১৪:১২৮০) বাসে ওঠেন সিকৃবির কয়েকজন ছাত্র। এ সময় ওই বাসের চালকের সহকারী (হেলপার) মাসুক মিয়া তাদের কাছে ১০০ টাকা করে ভাড়া দাবি করেন। এতে ওয়াসিম ও তার বন্ধুরা ছাত্র পরিচয় দিয়ে ভাড়া কম দিতে চান। এতে মাসুক মিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে নেমে যান। নামার সময় পেছন থেকে সহকারী মাসুক মিয়া তাদের গালি দেন। গালি শুনে ওয়াসিম বাসের সিঁড়িতে উঠে হাতল ধরে কেন গালি দিলেন তা জিজ্ঞেস করতেই চালক গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। আর ঠিক তখনই মাসুক মিয়া ওয়াসিমকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে বাসের পেছনের চাকায় পিষ্ট হয়ে ওয়াসিম গুরুতর আহত হন। পরে তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক ওয়াসিমকে মৃত ঘোষণা করেন।