অনেকেই বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের নামই কেউ শোনেনি আগে। স্থানীয় সুশীল সমাজ ও রাজনীতি সচেতন মানুষও এসব প্রতিষ্ঠানকে চেনে না। অথচ আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে খুলনায় এসব প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের তালিকায় দেখা গেছে, সারাদেশে ১১৮টি সংস্থা এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে খুলনা থেকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে ৫টি সংস্থা। এর মধ্যে ‘ডেভেলপমেন্ট এডুকেশন এন্ড পিস’এবং ‘অনিক মানবিক উন্নয়ন সংস্থা’ প্রতিষ্ঠান দুটির নাম পরিচিত নয়।
এদিকে মাদকাসক্তদের নিরাময়ে কাজ করার কারণে কিছুটা পরিচিত ‘কেএমএসএস’ এবার নিবন্ধন পেয়েছে পর্যবেক্ষক হিসেবে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান এবারই প্রথম নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেল। এছাড়া ‘রূপান্তর’ ও ‘নবলোক’ ইতোপূর্বে একাধিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে।
অচেনা ও অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধিত করার ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের জেলা সম্পাদক এডভোকেট কুদরদ ই খুদা বলেন, ‘অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীসহ বিভিন্ন শর্ত পূরণের পর পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পায়। কিন্তু খুলনায় যারা তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদের এসব আছে বলে মনে হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এই সব পর্যবেক্ষক নির্বাচনে কোনো কাজে আসবে না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘রূপান্তর’ ও ‘নবলোক’ নামের প্রতিষ্ঠান দু’টি ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের জোটভুক্ত। জোটের পক্ষ থেকে তারা খুলনা ও বাগেরহাটের ৪টি করে মোট ৮টি আসনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। এছাড়া ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের জোটভুক্ত সাতক্ষীরার প্রতিষ্ঠান উত্তরণ খুলনা-৫ আসনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।
এ ব্যাপারে রূপান্তরের তথ্য কর্মকর্তা মো. আবদুল হালিম বলেন, জোটভুক্তভাবে রূপান্তর খুলনা-২ ও ৩ এবং বাগেরহাট-২ ও ৪ নম্বর আসনে এবং নবলোক খুলনা-১ ও ৪ এবং বাগেরহাট-১ ও ৩ নম্বর আসনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। প্রতিটি আসনে তাদের ৫০ জন করে পর্যবেক্ষক থাকবে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেএমএসএস খুলনায় দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্তদের নিয়ে কাজ করে। এই কাজে সংস্থাটির সুনাম আছে। তবে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আফরোজা আক্তার মঞ্জু জানান, ইতোপূর্বে তারা কখনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেননি। এবার প্রথম নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন পেয়েছেন। খুলনা-৩ আসনে তারা পর্যবেক্ষণ করবেন। এজন্য ১০/১২ কর্মী নিয়োগ দেয়ার ইচ্ছা আছে। ঢাকা থেকে ফিরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।’
কমিশনে তালিকাভুক্ত ‘ডেভেলপমেন্ট এডুকেশন এন্ড পিস’ নামের প্রতিষ্ঠানটি নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে তাদের ল্যান্ডফোনে ফোন করা হলে কাজী শহিদুল্লাহ রাজু নামের একজন নিজেকে সহকারী পরিচালক পরিচয় দেন। তিনি জানান, প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয়ে কাজ করেন। তবে আগে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেননি। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের মোবাইল নম্বর রেখে দিয়ে পরে এ বিষয়ে জানাবেন বলে জানান।
আরেক সংস্থা ‘অনিক মানবিক উন্নয়ন সংস্থা’এর কার্যালয় দিঘলিয়া উপজেলার হাসপাতাল রোডে। বৃহস্পতিবার সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক নাসরিন আকতার মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আগে সেভাবে কখনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এবার ‘আলোকিত প্রতিবন্ধী সংস্থাকে (১৯ নম্বর নিববন্ধন) সাথে নিয়ে খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ ও নড়াইল জেলায় কাজ করবো। এজন্য কাগজপত্র তৈরি করছি।’
নির্বাচনের পর্যবেক্ষকের বিষয়ে খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন বলেন, কমিশন থেকে যাদের নাম দেয়া হবে, তাদেরই পর্যবেক্ষক কার্ড দেয়া হবে। কাদের নাম দেয়া হচ্ছে-এটা কমিশনের বিষয়।