অদম্য মানসিক শক্তির অধিকারী হাফেজ কাজী ইশা রুহুল্লাহ আসিফ (৪৯) সম্ভবত দেশের প্রথম প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, যিনি সংসদ সদস্য হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
জন্মের এক বছরের মধ্যে দৃষ্টি শক্তি হারানো আসিফ হঠাৎ করেই রাজনীতিতে উড়ে এসে জুড়ে বসছে তেমনটা নয়। তিনি বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক।
১৯৮৫ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী আসিফ আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদে পটুয়াখালী-২ সংসদীয় এলাকার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
কিন্তু প্রতিবন্ধী হলেও ওই এলাকায় জয় লাভ করতে হলে বেশ বিপাকে পড়তে হতে পারে আসিফকে। কারণ বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থী রয়েছে ওই আসনে। সেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষে বর্তমান চিফ হুইফ আ স ম ফিরোজের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই জোরালো।
সারাদেশে ধর্মীয় বক্তৃতা দিয়ে ছুটে বেড়ানো জাতীয় পার্টির এই ধর্ম বিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক আসিফ জানান, তিনি জাতীয় সংসদে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ সারাদেশের সকল প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান।
অন্ধ আসিফ বলেন, একজন অন্ধ ব্যক্তি যদি পবিত্র মসজিদ মক্কার ইমাম হতে পারে, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারে তাহলে আমি কেন পারবো না, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ৮ জুন থেকে ২০০৪ সালের ১৫ জুন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে জন্ম থেকেই অন্ধ ডেভিড ব্লাঙ্কেট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
আসিফ ইউএনবিকে জানান, তিনি জাতীয় সংসদে শারীরিকভাবে অক্ষম বা প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় সংসদের থাকতে চান এবং সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের প্রবেশাধিকারসহ অন্যান্য অধিকার নিয়ে কাজ করে যেতে চান।
সরকারি চাকরিতে অন্যান্য কোটার সাথে প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশা কোটা বরাদ্দ থাকলেও সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে সরকার সব ধরনের কোটা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছে। তবে প্রতিবন্ধীদের কোটা আইন দ্বারা বলবৎ থাকার কথা বিভিন্ন মহল থেকে জানানো হলেও বাস্তবায়নে জটিলতা থাকার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বছর খানেক আগে জাতীয় পার্টির ধর্মবিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক হওয়া আসিফ গত ১৩ নভেম্বর দলটির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এবং দুদিন পর ১৫ নভেম্বর তা জমাও দিয়েছেন।
আসিফের পৈতৃক গ্রাম পটুয়াখালী-১ আসনে পড়লেও তিনি ওই সংসদীয় এলাকা থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। কারণ জাতীয় পার্টির মহাসচিব রহুল আমিন হাওলাদার ওই আসনের সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রার্থী।
১৯৬৯ সালে পটুয়াখালী সদর উপজেলার পশ্চিম দেওখালী গ্রামে জন্মগ্রহণকারী আসিফ পুটুয়াখালী নেসারিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল (এসএসসির সমমান) পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন।
সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় বক্তৃতা বা ওয়াজ মাহফিল করে প্রাপ্ত উপার্জনের মাধ্যমে দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা আসিফ তার সংসারে সহযোগিতা করেন।