লক্ষ্মীপুর, ০৭ অক্টোবর (ইউএনবি)- লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালটি একশ’ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর সেটির অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হলেও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।
বরং আগে হাসপাতালটি একশ’ শয্যার হলেও সেটিতে ৫০ শয্যার জনবলও ছিল না।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ৫০ শয্যা থেকে একশ শয্যায় অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু ১৪ বছর পার হলেও হাসপাতালটিতে ওই একশ’ শয্যার বিপরীত পদ সৃষ্টি করে নতুন কোনো জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, এরই মধ্যে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুর স্টেডিয়াম মাঠের জনসভায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালকে একশ’ শয্যা থেকে আড়াইশ’ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর হাসপাতালের অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন সম্পন্ন হলেও জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। আর তাই সেই ৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রমই চলছে এখনো।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে ২১জন কনসালটেন্টের পদ রয়েছে। এর মধ্য অর্থোপেডিক ও চক্ষু ছাড়া বাকি ১৮টি পদে ডাক্তার আছেন। ৭০ জন নার্স-ব্রাদারের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩০ জন, বাকি ৪০জনের পদ খালী। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির এমএলএসএস, আয়া ও সুইপারের ১৮টি পদের মধ্যে ৯টি পদ খালি রয়েছে।
এছাড়া রেডিওলোজিস্ট পদটি দীর্ঘদিন থেকে শূন্য। এ কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কোনো ধরনের আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা হয় না।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আবদুল আজিজ ও ময়িম বেগম জানান, জেলা শহরের এই হাসপাতালে প্রচুর রোগী। সে হিসেবে ডাক্তার ও অন্যান্য সুবিধা খুবই কম। যেভাবে চিকিৎসা পাওয়ার কথা সেভাবে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না।
তারা বলেন, হাসপাতালে আসলে দালালদের খপ্পরে পড়তে হয়। প্রতিদিন ১টার পরে বহির্বিভাগে টিকেট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।
তারা বলেন, রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত টিকেট দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি শিশু রোগীর মা নূরুননাহার বেগম জানান, আমার দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে দু’দিন ধরে হাসপাতালে আছি। বাথরুমের অবস্থা খুবই করুণ, সবসময় অপরিষ্কার থাকে।
বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালটির দরজা-জানালা ও পানির টেপগুলো ভাঙা। প্রতিটি বেডে একজন রোগী চিকিৎসা নেয়ার নিয়ম। কিন্তু দুই-তিনজন ভর্তি রোগীকেট একটি বেডে থাকতে হচ্ছে।
তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতালের পরিবেশ, বাথরুম ও টয়লেট অপরিচ্ছন্ন। এতে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ্ হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজন. এমনকি নার্সদের আরও অভিযোগ, হাসপাতালটিতে সবসময় পানি সমস্যা লেগে থাকে, পানির পাম্পটির একেবারে নাজুক অবস্থা। পাম্প থেকে উঠানো পানি ময়লা, দুর্গন্ধ ও লবণযুক্ত, ব্যবহার করা যায় না। নিরুপায় হয়ে কর্তৃপক্ষ পাম্পের সংযোগ পুকুরে দিয়েছে। বর্তমানে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ডাক্তার, নার্স ও রোগীসহ সকলে ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করছেন। এতে রোগীসহ অনেকেই পানিবাহিত রোগে আত্রুান্ত হচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স অর্চনা রানী জনান, হাসপাতালে ৪০ জন নার্সের পদ খালি। আমাদের ২/৩ জনের ডিউটি একজনকে করতে হয়। একা ডিউটি করে সামলাতে খুব কষ্ট হয়।
সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. আনোয়ার হোসেন জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও মূল ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে, তার মধ্যেও অনেকগুলো পদ খালি রয়েছে। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, বিশেষ করে আয়া ও সুইপারের ১৮টি পদের মধ্য ৯টি পদ খালি থাকায় বারবার রোগী ও স্বজনরা অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে অভিযোগের সুযোগ পায়।
লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ আহম্মদ জানান, ‘আমি আসার পূর্বে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের অনেক সমস্যা ছিল। বর্তমানে জনবল সংকট ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই।’
তিনি বলেন, ‘দালালদের দৌরাত্ম কমিয়েছি। ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছি। ভাঙা দরজা-জানালা ও পানির টেপগুলো মেরামত করেছি।’
জনবল সংকটের সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এর দ্রুত সমাধানের আশা করেন।