মাছ উৎপাদন
‘একযুগে দেশীয় মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, গত একযুগে চাষের মাধ্যমে দেশীয় মাছের উৎপাদন চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ন: নিরাপদ ও টেকসই পোল্ট্রি উৎপাদনে সবধরনের সহায়তা দেবে সরকার -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
তিনি বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩৭ প্রজাতির বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় মাছের প্রজনন কৌশল ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে গত এক বছরে ১১ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণে লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মাছ উৎপাদন গবেষণা কার্যক্রম অতীতের তুলনায় জোরদার করা হয়েছে। গত ১২ বছরে চাষের মাধ্যমে দেশীয় মাছের উৎপাদন চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭ হাজার মেট্রিক টন থেকে দুই দশমিক ছয় লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
বুধবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বোর্ড অব গভর্নরসের ৪১তম সভায় মন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
মন্ত্রী বলেন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও সরকারের বাস্তবমুখী কার্যক্রম গ্রহণে কারণে দেশে ইলিশের বিস্তৃতি ও উৎপাদন বেড়েছে। গত ১২ বছরে ৮৫ শতাংশ ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি বড় আকারের ইলিশের প্রাপ্যতা আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলিশ সংরক্ষণ ও সহনশীল আহরণ নিয়েও গবেষণা চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুন: চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি সমস্যা সমাধানে সরকার বদ্ধপরিকর: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
তিনি বলেন, দেশ অনেক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে মৎস্য খাত। এ খাতে সরকারের বিভিন্ন রকম অনুদান ও বরাদ্দ রয়েছে।
যশোরে লক্ষ্যমাত্রার ৩ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন
যশোরে মাছ চাষে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, অভয়াশ্রম তৈরি, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিসহ নানান পদক্ষেপে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার তিন গুণ বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যন্তরসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ২৯৪ কোটি টাকার রাজস্বও আয় করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া গত ছয় বছরে জেলাতে প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন বেড়েছে।
যশোর মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে যশোরে মাছের চাহিদা ছিল ৬৫ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদন হয়েছে যশোর সদর উপজেলায়। এখানে ২৯ হাজার ৭২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া মনিরামপুরে ৩৮ হাজার ৩৪০, কেশবপুরে ৩৩ হাজার ৯৯৯, ঝিকরগাছায় ৩১ হাজার ১০৫, অভয়নগরে ২৯ হাজার ৭৯১, শার্শায় ২৫ হাজার ৮৩৮, চৌগাছায় ১৭ হাজার ৯৩১ ও বাঘারপাড়ায় ৮ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে সাড়ে ১০ লাখ বেল পাট উৎপাদন, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
সূত্র জানায়, জেলায় মাছ উৎপাদনের রেণু পোনার চাহিদা ছিল ১৮ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৬৯ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রেণু পোণা উদ্বৃত্ত থেকেছে ৫০ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন। এছাড়া মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাহিদা ছিল ২৮৭ লাখ পিস। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ১১৮ লাখ পিস। যা চাহিদার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মাছ উৎপাদিত হয়েছিলো এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুই লাখ ২০ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুই লাখ ২১ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুই লাখ ২২ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দুই লাখ ২৩ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছিলো। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন।
আরও পড়ুন: তিন বছর ঘুরেও কৃষি সহায়তা পাচ্ছেন না কব্জি হারানো মুক্তার
উত্তরায় মাছের পোনা অবমুক্ত করলেন ডিএনসিসি মেয়র
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম রবিবার উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর পার্কের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
মাছ উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানি অব্যাহত রাখার আহ্বান
করোনাভাইরাস সংকটেও মাছ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও রপ্তানি অব্যাহত রাখার জন্য অংশীজনদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।