সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে বন্যার পানি কমছে, তবে আটকে পড়া বর্জ্যে দুর্ভোগ
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি শুক্রবার সকালে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পচা বর্জ্যের দুর্গন্ধে পৌর এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পৌরবাসী।
সরজমিনে উত্তর আরপিন নগর, সাহেব বাড়ি ঘাট, মোদ্দো বাজার, সুরমা মার্কেট, আলফাত স্কয়ার পয়েন্ট, কালিবাড়ি, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, জামাই পাড়া, হাজির পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে জমে থাকা বর্জ্য দেখা গেছে।
পানি কমতে শুরু করলেও এলাকার বাসিন্দারা নিত্যকাজে বাড়ির বাইরে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
উত্তর আরপিন নগর এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, এলাকায় এত দুর্গন্ধ যে সকাল থেকেই বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি।
নতুন পাড়া এলাকার অসীম রায় বলেন, বন্যার পানি কমেছে কিন্তু এই পচা বর্জ্যের কারণে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
তবে সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, পানি সরে যাওয়ার পরপরই কর্তৃপক্ষ শহর পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ হোসেন জানিয়েছেন, পানিবাহিত রোগে এখনো কেউ অসুস্থ হয়নি। তবে ১২৩ টি মেডিকেল টিম সেবা দিতে প্রস্তুত আছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে পানি কমছে, খাবার সংকট তীব্র
বন্যায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সীমান্ত এলাকায় চরম খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। তবে পানি কিছুটা কমছে। ফলে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় বসতঘর থেকে পানি নিচে নামলেও, বাড়ির উঠানে এখনও হাঁটু পানি বিরাজ করছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সামান্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও সব ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তাহিরপুর সীমান্তের বীরেন্দ্রনগর থেকে লামাকাটা, জঙ্গলবাড়ী, কলাগাঁও, চারাগাঁও, বাসতলা, লালঘাট, ট্যাকেরঘাট, বড়ছড়া, রজনী লাইন, চাঁনপুরসহ লাউড়েরগড় পর্যন্ত প্রায় ১৭টি পাহাড়ি ছড়া রয়েছে। ওপারে মেঘালয় পাহাড়। বৃষ্টি হলেই এসব পাহাড়ি চড়া দিয়ে প্রবল বেগে পানি এসে সীমান্তের বাড়ি ঘরে তাণ্ডব শুরু করে। ঢলের সঙ্গে চড়া দিয়ে বালি এসে ফসলি জমি, পুকুর ও বাড়িঘর ভরে গেছে। সীমান্তের রাস্তাঘাট ক্ষণে ক্ষণে ভেঙে খালে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের জন্য ১ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানির বোতল হস্তান্তর
গত দুইদিনে বন্যার পানি একটু কমলেও এখনও উজান থেকে প্রবল ঢল আসছে। যাদুকাটা, পাটলাই ও রক্তি নদীর তীরবর্তী এলাকার বাড়িঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হুমকিতে পড়েছে লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্প, স্কুল, মাদরাসা, বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও পুরো উপজেলা গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।
সীমান্তবর্তী লালঘাট গ্রামের সরাফত আলী জানায়, বন্যায় শত শত পুকুরের মাছ ভেসে হাওরে চলে গেছে। পানি একটু কমলেও দুর্ভোগ কমছে না। সীমান্ত এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানি, মোমবাতি, ও সিলিন্ডার গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। বাজারে একশ্রেণির অসাধু ব্যাসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
চারাগাঁও গ্রামের সাবেক মেম্বার হাসান মিয়া জানান, একদিকে ভয়াবহ বন্যা, অপরদিকে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তের লোকজনকে শেষ করে দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী কিছু বিতরণ করা হলেও বন্যায় আক্রান্ত সীমান্তের লোকজন বঞ্চিত হচ্ছেন।
লাকমা গ্রামের সাফিল মেম্বার জানান, বন্যায় পুকুর ডুবে মাছ চলে গেছে এবং পুকুরগুলো বালিতে ভরে গেছে। ট্যাকেরঘাট স্কুল অ্যান্ড কলেজে বন্যা কবলিত, লাকমা, দুধের আউটা, পুটিয়া, জামালপুর, ভোরাঘাট, মদনপুরসহ বেশ কয়েকটি বন্যা কবলিত গ্রামের আটশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তারা এক কাপড়ে কোনরকম এখানে এসে জীবন বাঁচিয়েছেন। তারা এখন খাবার সংকট ভোগছেন।
আরও পড়ুন: বিয়ানীবাজারে বন্যার পানিতে ডুবে ব্যক্তির মৃত্যু
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রেসহ উপজেলাজুড়ে পাঁচটি টিম খাবার বিতরণ করছে। সরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণ আসতে শুরু করেছে। পর্যায়েক্রমে সীমান্ত এলাকাসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণসামগ্রী দেয়া হবে। তিনি এই দুর্যোগে মুহূর্তে দেশ বিদেশের সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত একজনের মৃত্যু
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বন্যা দুর্গতদের জন্য হেলিকপ্টারে করে বিমান বাহিনীর দেয়া ত্রাণ সামগ্রী নিতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে আহত ছয়জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে গুরুতর আহত বিপ্লব মিয়ার (৪৫) মৃত্যু হয়। তিনি তাহিরপুর উপজেলা সদরের উজান তাহিরপুর গ্রামের শহীদ আলীর ছেলে।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সুহেল রানা বলেন, ত্রাণ বিতরণের জন্য এয়ারফোর্সের একটি হেলিকপ্টার তাহিরপুরে এসেছিল। বন্যার পানির জন্য সদরের কোনো স্থানে নামতে না পারায় আকাশ থেকেই তারা ত্রাণের বস্তা মাটির দিকে নিক্ষেপ করেছিল। ত্রাণ গ্রহণ করতে গিয়ে আরও অনেকেই আহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরে তাহিরপুর উপজেলা সদরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টারের ওপর থেকে বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় শতাধিক বন্যার্ত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে ওপর থেকে ছুড়ে দেয়া ত্রাণ নিতে দৌড়াদৌড়ি করে ধরতে গেলে ৬ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ বন্যায় বন্দি সিলেটবাসী
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে প্রধানমন্ত্রী
হেলিকপ্টার থেকে ‘লো-ফ্লাই মুডে’ মঙ্গলবার সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও তৎসংলগ্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি লো-ফ্লাই মুড বা নিচু হয়ে উড়েছিল। এতে তিনি দুর্গত এলাকা প্রত্যক্ষ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সিলেট সার্কিট হাউসে যান। যেখানে বিভাগীয়, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এর আগে, বন্যার পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রে পরিণত হওয়ায় বিশেষ করে সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার্তদের সরিয়ে নিতে এবং অসহায় মানুষকে সহায়তার জন্য বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানায়, একইসাথে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ইউনিটগুলোকে ডাকা হয়েছে।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার ১৫ থেকে ১৮ জুন বন্যাকবলিত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা হিসেবে নগদ ২২.৫ মিলিয়ন টাকা, ৪০০ মেট্রিক টন চাল এবং ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দিয়েছে।
পড়ুন: সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় বন্যার্তরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে: বিএনপি
সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
বন্যাকবলিত এলাকায় জরুরি ব্যাংকিং সেবা দেয়ার নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
বন্যার কারণে ব্যাংকের যেসব শাখা, উপশাখা এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে কার্যক্রম স্বাভাবিক পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না, বিকল্প উপায়ে সেখানে জরুরি ব্যাংকিং কার্যক্রমের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির কারণে এসব এলাকার অনেক ব্যাংক এবং এটিএম শাখা খুলতে পারেনি।
তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট শাখা ও উপশাখা থেকে গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বর্ষণ ও ভূমিধসের কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। এ দুই জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
পড়ুন: মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে শুরু করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ, কুড়িগ্রামে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি
মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে শুরু করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী
আগামী মঙ্গলবার থেকে দেশের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি কমতে থাকবে এবং টানা তিনদিন কমবে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে আমরা যে বার্তা পেয়েছি সেখানে বলা হয়েছে সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকবে। মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে থাকবে এবং টানা তিনদিন কমবে।’
রবিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন জায়গায় মানুষ আটকে পড়ে আছে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হয়েছে কিন্তু সুনামগঞ্জে পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত আছে। একই সাথে হবিগঞ্জ, মৌলভিবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে প্রায় এক লাখ পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, সিলেট জেলার ৬০ এবং সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি আছেন। এদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস স্পিড বোট নিয়ে উদ্ধার কাজ করছে। সবশেষ খবর অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ৩২, নৌবাহিনীর ১২ এবং ফায়ার সার্ভিসের ৪টি বোট কাজ করছে দু জায়গায়। এরই মধ্যে তারা প্রায় এক লাখ মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
পড়ুন: পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ, কুড়িগ্রামে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি
তিনি বলেন এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ৭৫ হাজার আর সিলেটে ৩০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। নিখোঁজের কোনো তথ্য এখনও আমরা পাইনি। গতকালের পর থেকে কোনো ক্যাজুয়ালটিও হয় নি।
বন্যায় এখন পর্যন্তু দু’জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণহানি আমরা দু’জনের খবর পেয়েছি, একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী সে স্রোতে ভেসে গেছে আরেকজন বয়স্ক ব্যাক্তি বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছেন।
সোমবারের পর থেকে সিলেট সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও উত্তরাঞ্চলে অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এ সময় উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল বা ভাটির দিকে অবনতি হবে। আরও নতুন করে যে জেলাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে সেগুলো হলো রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, মৌলভিবাজার ও হবিগঞ্জ। এখন ১২টি জেলা বন্যাকবলিত। প্রায় ৭০টি উপজেলায় বন্যা রয়েছে। এটা বাড়ছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলে কমবে কিন্তু উত্তরাঞ্চলে বন্যা বাড়বে কারণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা বেসিনে যে সব জেলা আছে সেগুলো বন্যাকবলিত হচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গতকাল পর্যন্ত আমরা একেকটি জেলায় ৮০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম, আজ আরও ৫০ লাখ করে দিয়েছি। সিলেট ও সুনামগঞ্জে মোট এক কোটি ৩০ করে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে জেলাগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সেগুলোতে আমরা ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল আর ৪ হাজার প্যাকেট করে শুকনা খাবার আমরা এরই মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, যে সংখ্যায় বন্যাকবলিত হয়েছে এখানে আরও ত্রাণ দরকার। কিন্তু আমরা যেটা দিচ্ছি বিতরণ করে পারছে না। এ কারণে সাপ্লাইয়ের একটি কনটিনিউয়াস চেইন মেইনটেইন করা হচ্ছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী আমাদের আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত জিআর চাল আছে, শুকনা খাবারও আছে। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে আমরা দেব।
পড়ুন: সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ২১ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ উদ্ধার প্রায় ১০০
বন্যার ক্ষতি এড়াতে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ২১ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ উদ্ধার প্রায় ১০০
টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে বন্যায় আটকে পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১০০ জনকে সুমনগঞ্জের ছাতক উপজেলা থেকে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।
রবিবার সকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।উদ্ধারকৃতদের সিলেটে আনা হয়েছে।
এর আগে শনিবার রাতে একটি ট্রলার রেস্তোরাঁ থেকে তাদের উদ্ধার করলেও ছাতকে তা আটকা পড়ে।
আরও পড়ুন: ভ্রমণে গিয়ে সুনামগঞ্জে বন্যায় আটকা পড়েছেন ঢাবির ২১ শিক্ষার্থী
তিন দিন আগে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন পানসি রেস্টুরেন্টে আশ্রয় নেয়।
আটকে পড়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শোয়েব আহমেদ এক বার্তায় জানিয়েছেন, ‘আমাদের খাদ্য ও পানীয় জলের ভীষণ প্রয়োজন এবং এখানে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। এখানে, আমাদের বেশিরভাগ ফোনের ব্যাটারি শেষ। এবং দুর্বল নেটওয়ার্কের কারণে সেটা সঠিকভাবে কাজ করছে না।’
আরও পড়ুন: ভয়াবহ বন্যায় বন্দি সিলেটবাসী
‘১০ জেলার ৬৪ উপজেলা বন্যা কবলিত’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের ১০ জেলার ৬৪ উপজেলা বন্যা কবলিত। এর মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অবস্থা ভয়াবহ। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা হয়নি।
শনিবার বিকালে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং এ মন্ত্রী এসব জানান।
তিনি বলন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী না ঘুমিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করছেন। যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চলমান।
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে, উদ্ধার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে সেনাবাহিনী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জে আগামী দুই দিনে বন্যার আরও অবনতি হবে। মঙ্গল ও বুধবার থেকে পানি কমে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পরিস্থিতি উন্নতি হবে। তবে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দিবে। এই সময়ে ওপরের পানি নেমে যাবে।
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, এক লাখ মানুষ পানিবন্দি
বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: সিলেট ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার আরও অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে এ দুই জেলার বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রধান প্রধান নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড পাওয়ার সাব-স্টেশনে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় শনিবার দুপুর ১২টায় কর্তৃপক্ষ দুই জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ) আব্দুল কাদির।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নজিরবিহীন এ বন্যায় সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ ও সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা
বন্যায় সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার দুপুর থেকে বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
বন্যাকবলিত এলাকার স্থানীয়রা জানিয়েছে, বন্যায় জেলায় যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। পরিস্থিতি ক্রমে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলার প্রতিটি উপজেলেই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ ঘরেই হাঁটু থেকে কোমর পানি। নৌকার অভাবে অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদেও যেতে পারছে না। এমন অবস্থায় পানিতে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারে জেলার তিন উপজেলায় সেনাবাহিনী নেমেছে।
সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার দুপুর থেকে এ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়।
এর আগে গত বুধবার থেকে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। শুক্রবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে
জেলার প্রায় সব উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
উকিলপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, সুনামগঞ্জে এর আগে এত ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। জেলা শহরে সড়কে চলছে নৌকা, সড়ক যোগাযোগ হয়ে পড়েছে বিচ্ছিন্ন, সেই সঙ্গে গত তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সুনামগঞ্জের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত সুনামগঞ্জ জেলা। তবে প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, ‘পৌর শহরের সব রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মানুষ উঁচু এলাকা খুঁজে খুঁজে আশ্রয় নিচ্ছে। এক ভয়াবহ দুর্যোগে পড়েছে জেলা শহরের বাসিন্দারা।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, ‘দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা সীমান্তের যাদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা সেগুলো বিতরণ করবে।’
আরও পড়ুন: বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে ওসমানী বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠা-নামা বন্ধ
উপজেলার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সার্বক্ষণিক খোলা রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ ওঠেননি।
উপজেলার সদর বাজার, সুলেমানপুর বাজার, বালিজুরি বাজার, পাতারগাঁও বাজার, কাউকান্দি বাজার, একতা বাজার, নতুন বাজার ও শ্রীপুর বাজার পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে নিম্নাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বৈর আবহাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ নেই। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পানিতে তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসি মানুষদের সহায়তা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে অঝোর বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে, যাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘মেঘালয়ে প্রায় সাড়ে ছয়শ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। আগামী ৭২ ঘণ্টায় সুরমায় পানি বাড়তে পারে। এতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।’
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার শঙ্কা