আগামী মঙ্গলবার থেকে দেশের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি কমতে থাকবে এবং টানা তিনদিন কমবে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে আমরা যে বার্তা পেয়েছি সেখানে বলা হয়েছে সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকবে। মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে থাকবে এবং টানা তিনদিন কমবে।’
রবিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন জায়গায় মানুষ আটকে পড়ে আছে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হয়েছে কিন্তু সুনামগঞ্জে পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত আছে। একই সাথে হবিগঞ্জ, মৌলভিবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে প্রায় এক লাখ পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, সিলেট জেলার ৬০ এবং সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি আছেন। এদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস স্পিড বোট নিয়ে উদ্ধার কাজ করছে। সবশেষ খবর অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ৩২, নৌবাহিনীর ১২ এবং ফায়ার সার্ভিসের ৪টি বোট কাজ করছে দু জায়গায়। এরই মধ্যে তারা প্রায় এক লাখ মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
পড়ুন: পানিবন্দি ২ লাখ মানুষ, কুড়িগ্রামে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি
তিনি বলেন এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ৭৫ হাজার আর সিলেটে ৩০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। নিখোঁজের কোনো তথ্য এখনও আমরা পাইনি। গতকালের পর থেকে কোনো ক্যাজুয়ালটিও হয় নি।
বন্যায় এখন পর্যন্তু দু’জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাণহানি আমরা দু’জনের খবর পেয়েছি, একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী সে স্রোতে ভেসে গেছে আরেকজন বয়স্ক ব্যাক্তি বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছেন।
সোমবারের পর থেকে সিলেট সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও উত্তরাঞ্চলে অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এ সময় উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল বা ভাটির দিকে অবনতি হবে। আরও নতুন করে যে জেলাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে সেগুলো হলো রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, মৌলভিবাজার ও হবিগঞ্জ। এখন ১২টি জেলা বন্যাকবলিত। প্রায় ৭০টি উপজেলায় বন্যা রয়েছে। এটা বাড়ছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলে কমবে কিন্তু উত্তরাঞ্চলে বন্যা বাড়বে কারণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা বেসিনে যে সব জেলা আছে সেগুলো বন্যাকবলিত হচ্ছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গতকাল পর্যন্ত আমরা একেকটি জেলায় ৮০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম, আজ আরও ৫০ লাখ করে দিয়েছি। সিলেট ও সুনামগঞ্জে মোট এক কোটি ৩০ করে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে জেলাগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সেগুলোতে আমরা ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল আর ৪ হাজার প্যাকেট করে শুকনা খাবার আমরা এরই মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, যে সংখ্যায় বন্যাকবলিত হয়েছে এখানে আরও ত্রাণ দরকার। কিন্তু আমরা যেটা দিচ্ছি বিতরণ করে পারছে না। এ কারণে সাপ্লাইয়ের একটি কনটিনিউয়াস চেইন মেইনটেইন করা হচ্ছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী আমাদের আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত জিআর চাল আছে, শুকনা খাবারও আছে। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে আমরা দেব।
পড়ুন: সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ২১ ঢাবি শিক্ষার্থীসহ উদ্ধার প্রায় ১০০
বন্যার ক্ষতি এড়াতে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী পররাষ্ট্রমন্ত্রী