বাজেট
বাজেট ‘জনবান্ধব’: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দেশকে সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।
বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকান। কোনো দেশই এত ভালো নয়।ইউরোপ, আমেরিকা... এমনকি আমাদের প্রতিবেশীদের দিকেও তাকান, তারা কি ভালো করছে? আমরা তুলনামূলকভাবে ভালো আছি।’
কাদের আরও বলেন, এই বাজেটও ‘জনবান্ধব’ বাজেট।
তিনি আরও বলেন, জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য বাজেট তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটি একটি জনবান্ধব বাজেট। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখেই এই বাজেট করা হয়েছে।’
২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (০১ জুন, ২০২৩) তিনি জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেন।
আরও পড়ুন: বাজেটে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭.৫ ও মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ
অর্থমন্ত্রীর টানা পঞ্চম এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট এটি।
বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারের সঙ্গে মিল রেখে একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক-প্রবৃদ্ধির দিকে দেশকে চালিত করার এবং ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রস্তাবিত বাজেটে রাষ্ট্রপতির সম্মতি
প্রস্তাবিত বাজেটে রাষ্ট্রপতির সম্মতি
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট এবং ২০২২-২৩-এর সংশোধিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করার সম্মতি দিয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশের ৫২ তম এবং ২৪তম বাজেট পেশ করেছেন।
এই বাজেটটি বর্তমান অর্থমন্ত্রীর টানা পঞ্চম বাজেট।
রাষ্ট্রপতি আজ দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে তার কার্যালয় জাতীয় সংসদ ভবনে (সংসদ কমপ্লেক্স) আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটের অনুমোদন দিয়েছেন।
এ সময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভবনে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক টুকু, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ সময় তিনি জাতীয় সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আরও পড়ুন: 'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমার ৩ শতাংশের কম হবে'
বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
বাজেটে বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণের জন্য বিদ্যমান শুল্ক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
বাজেটে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭.৫ ও মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সাড়ে ৭ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ৫০ দশমিক ০৬ লাখ কোটি মূল্যের আনুমানিক গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ যা এখন ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অনুমানকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থনৈতিক চাপ সত্ত্বেও কেন এবার উচ্চ প্রবৃদ্ধি আশা করছেন সে বিষয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীলতা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে আমরা উচ্চ প্রবৃদ্ধির গতিপথে ফিরে আসার এবং সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছি।’
আরও পড়ুন: সমস্ত নগদ-ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ইএফটি’র আওতায় আসবে: অর্থমন্ত্রী
কামাল ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ এবং জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চলমান মেগা-প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ করার দিকে মনোনিবেশ করেন।
অর্থবছরে বাংলাদেশ রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এরপর এলো মহামারি। অর্থমন্ত্রী ২০২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন, কিন্তু প্রকৃত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল তিন দশমকি ৪৫ শতাংশ, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মহামারি প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার করার পর ২০২১ অর্থবছরে বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে ৭ দশকি এক শতাংশ হয়েছে।
আরও পড়ুন: মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, চলতি হিসাবের ভারসাম্য বাড়ানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করা প্রধান চ্যালেঞ্জ: অর্থমন্ত্রী
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট: শিক্ষাখাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ছিল ৮১ হাজার ৪৪৯ টাকা।
এটি গত বাজেটের তুলনায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৩-২৪ সালের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল; যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতের বিপরীতে ছিল ৪১ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের বিপরীতে ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।
জাতীয় বাজেট উন্মোচনের সময় মন্ত্রী বলেন, “আমরা শিক্ষা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে বিকেন্দ্রীকরণ করছি এবং প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়াতে একটি 'স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (এসএলআইপি)' বাস্তবায়ন করছি।”
এই পরিকল্পনার আওতায় মাঠ পর্যায়ে আর্থিক ক্ষমতার প্রতিনিধি দল পুনর্গঠন করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ সমাজের সকল শিশুর জন্য মূলধারার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক স্তরে প্রায় ২৬ হাজার ৩৬৬টি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুন সৃষ্ট পদসহ মোট ৩২ হাজার ৫৭৭টি পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ছাড়াও শিক্ষার মান বাড়াতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৫টি কোর ও ৩টি নন-কোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাজেটে বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণের জন্য বিদ্যমান শুল্ক দ্বিগুণ করার প্রস্তাব
এ ছাড়া ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে শিক্ষার্থীদের প্রস্তূত করতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের জন্য ৫০ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগসহ মোট ৫৯ হাজার ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৮০০ কর্মকর্তাকে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ১ লাখেরও বেশি শিক্ষককে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরির জন্য হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এই শিক্ষকরা ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন। ফলে শ্রেণীকক্ষের পড়াশোনা আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এবং শিশুরা ক্লাসে আরও মনোযোগী হচ্ছে বলে জানান কামাল।
এদিকে জরুরি পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। 'দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং' শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৩৫টি জেলার ১০৪টি উপজেলার ১৫ হাজার ৪৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আধুনিক ও মডেল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৩৫১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩৭১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। সরকারি স্কুল ছাড়া উপজেলা সদরে অবস্থিত ৩১৫টির মতো বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মডেল স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়েছে।’
জেলা সদরে অবস্থিত সরকারি স্নাতকোত্তর কলেজের জন্য ১৮০টি ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বেসরকারি কলেজ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত ১ হাজার ৬১০টি কলেজের মধ্যে ১ হাজার ৪৭৩টি কলেজে আইসিটি বান্ধব ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
এসইএসডিপি (মাধ্যমিক শিক্ষাখাত উন্নয়ন পরিকল্পনা) এর আওতায় সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ৬২টি নতুন স্কুলের সঙ্গে ৩৩টি মডেল মাদরাসা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ৩৩টি ছাত্রাবাসসহ বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য ১৭৬টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে এবং পাঠদান পদ্ধতি আধুনিকীকরণের জন্য ২০০৯ সাল থেকে নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৩৩ হাজার ২৮৫টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং ১১ হাজার ৩০৭টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও, ভবিষ্যতে ৬৪ হাজার ৯২৫টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম এবং ১২ হাজার ল্যাব স্থাপন করা হবে।
প্রাথমিক স্তরের ২১টি পাঠ্যপুস্তকের ডিজিটাল বিষয়বস্তু এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণির ১৬টি পাঠ্যপুস্তকের ইন্টারঅ্যাকটিভ ডিজিটাল পাঠ্য সম্পূর্ণ এবং ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। ৭ম ও ৮ম শ্রেণীর ৬টি পাঠ্যপুস্তকের ই-লার্নিং মডিউল এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর জন্য ৬টি পাঠ্যপুস্তকের ই-লার্নিং উপাদান তৈরি ও আপলোড করা হয়েছে। নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৭১০টি আইসিটি শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের শ্রেণীকক্ষের কার্যক্রমের ওপর শিক্ষকদের জন্য অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রশিক্ষণ সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে এবং উন্মুক্ত পাঠের মাধ্যমে সমস্ত শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৩-২৪: স্বাস্থ্য খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ
বাজেট ২০২৩-২৪: সাংস্কৃতিক খাতে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, চলতি হিসাবের ভারসাম্য বাড়ানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করা প্রধান চ্যালেঞ্জ: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, চলতি হিসাবের ভারসাম্য উন্নয়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করা দেশের অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উন্মোচনকালে তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে, আমাদের বর্তমান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, চলতি হিসাবের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করা।’
তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে টেকসই উত্তরণ এবং উত্তরণ-পরবর্তী বাস্তবতা মোকাবিলার কৌশলগুলো এখনই নির্ধারণ করা দরকার। বিশেষ করে শুল্ক যৌক্তিককরণ, রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ, ভর্তুকি/নগদ সহায়তা প্রত্যাহার বা বিকল্প অন্বেষণ ইত্যাদি এখন বিবেচনা করা উচিত।
তিনি উল্লেখ করেন, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় মেটাতে এবং প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবস্থা করার জন্য জিডিপির শতাংশ হিসাবে রাজস্বের পর্যাপ্ত প্রবৃদ্ধি, সরকারি ব্যয়ের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় অর্থায়ন সহজতর করা এবং দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা উচিত।
আরও পড়ুন: শিগগিরই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি হবে: বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ
তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা সম্পর্কে আপনাদেরকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য আমরা একটি কৌশল প্রণয়ন করছি।
বাজেট বক্তৃতার সঙ্গে থাকে মধ্যমেয়াদী নীতি কৌশল সম্বলিত ‘মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (এমটিএমপিএস)’।
তিনি বলেন, এই নীতি বিবৃতি আমাদের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলোকে বিবেচনা করে মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোকে ব্যাখা করে।
আরও পড়ুন: বাজেটে দাম বাড়ানো ও কমানো হয়েছে যেসব পণ্যের
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য তরুণ ও নারীদের প্রস্তুত করতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
১ কোটি ৪৯ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ১৭৬টি দেশে কাজ করে
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায় জানান, বিশ্বের ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিগত ১২ বছরে মোট ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২ জন কর্মীকে পেশাদার, দক্ষ, আধা-দক্ষ এবং স্বল্প-দক্ষ ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ৭৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিকেন্দ্রীকরণ বা সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
একই সময়ে প্রায় ১০ লাখ নারী শ্রমিক বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।
কামাল বলেন, ‘আমরা নতুন শ্রম বাজারের জন্য আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছি। এরই মধ্যে মূল গন্তব্যের বাইরে পোল্যান্ড, সেশেলস, আলবেনিয়া, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া, উজবেকিস্তান, বসনিয়া হার্জেগোভিনা ও কম্বোডিয়ার মতো দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হয়েছে’।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৩-২৪: সাংস্কৃতিক খাতে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য তরুণ ও নারীদের প্রস্তুত করতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য মোট ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন বাজেট উন্মোচনকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।
বিদায়ী অর্থবছর ২০২২-২৩ সালে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ মানুষ ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখী করার লক্ষ্যে কয়লা, এলএনজি, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, পটুয়াখালী জেলার পায়রা, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকায় নির্মিত পাওয়ার হাবগুলোতে মেগা-প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কয়লাভিত্তিক রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল প্রকল্প (১ম ইউনিট) এবং পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে।
মাতারবাড়ি (২x৬০০ মেগাওয়াট) আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য চুক্তির কথা চলছে।
এছাড়া সরকার মোট ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।
বিদ্যুৎ সংগ্রহে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ সম্পর্কে মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সরকার আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ সংগ্রহ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার ০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে আন্তঃদেশীয় গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে ভারত থেকে মোট ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।’
এছাড়াও, ভারতের ঝাড়খন্ডে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের ১ম ইউনিট থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করা একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়াও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই।
আরও পড়ুন: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য তরুণ ও নারীদের প্রস্তুত করতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
তিনি আরও বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব।’
বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে সরকার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি থেকে উৎপাদন করতে চায় বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
সারাদেশে মোট আটটি লার পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেল চালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যার সম্মিলিত ক্ষমতা ৪৯ দশমিক ১৬ মেগাওয়াট।
বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মোট ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪টি সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
এভাবে সঞ্চালন লাইন এখন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও, বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ রাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎ সিস্টেম লস ১৪ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ট্রান্সমিশন লাইন ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করা।
এছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঠিক তথ্য সংরক্ষণ এবং বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ (পাঁচ) বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাজেটে দাম বাড়ানো ও কমানো হয়েছে যেসব পণ্যের
জ্বালানি নিরাপত্তা
২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের স্টোরেজ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার টন থেকে ২০২১-২২ সালে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টনে বেড়েছে।
এছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যায়ক্রমে জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হবে।
ভারতের শিলিগুঁড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত একটি পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে।
এই পাইপলাইনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব বলে জানান মন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সম্প্রতি ভোলা জেলার গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, বর্তমানে তা বেড়ে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে।
তেল ও গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। দেশের একমাত্র তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স ক্ষমতা বৃদ্ধির পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে।
আশা করা হচ্ছে, সব কূপ খননের পর প্রতিদিন ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। উপকূলীয় এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানও চলছে।
যেহেতু এই কাজের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাই আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে স্পট বাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি ও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
করমুক্ত আয়ের সীমা বেড়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার তার বাজেট বক্তৃতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য বিদ্যমান ৩ লাখ টাকা থেকে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন।
তিনি ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নারী ও প্রবীণ নাগরিকদের জন্য থ্রেশহোল্ড ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন।
এছাড়া শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগে ছিল যথাক্রমে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
যুদ্ধাহত গেজেট মুক্তিযোদ্ধাদের করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৫ লাখ টাকা, যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বেড়েছে।
কোম্পানি এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ব্যতীত সকল শ্রেণীর ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য প্রস্তাবিত করের হার এবং ট্যাক্স স্ল্যাবগুলো হলো: প্রথম ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার ওপর কোনো কর থাকবে না, পরবর্তী ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ কর; পরবর্তী ৩ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ; পরবর্তী ৪ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ; পরবর্তী ৫ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ এবং মোট আয়ের ভারসাম্যের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৩-২৪: সাংস্কৃতিক খাতে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ
বাজেটে দাম বাড়ানো ও কমানো হয়েছে যেসব পণ্যের
শিগগিরই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উন্নতি হবে: বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকের দাম কমবে: প্রজ্ঞা
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট গৃহীত হলে, তামাকজাত দ্রব্য আবারও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তুলনায় সস্তা হবে। বৃহস্পতিবার তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) বাজেট পেশ পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রজ্ঞা বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেট যুবকদের তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে উৎসাহিত করবে, যা প্রকারান্তরে তামাকজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থতার কারণ হবে এবং এর ফলে সরকারের জনস্বাস্থ্য ব্যয় বাড়বে।
প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে, প্রজ্ঞা বলে যে এর কারণে সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব হারাবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের তামাকমুক্ত বাংলাদেশের বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শলাকার দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র পঞ্চাশ পয়সা (১২ দশমিক ৫০ শতাংশ)। এই স্তরের করহার প্রায় অপরিবর্তিত রেখে কেবল মূল্যস্তর বাড়ানোর কারণে বর্ধিতমূল্যের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তামাক কোম্পানির পকেটে চলে যাবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মধ্যম স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৭ টাকা (৩ দশমিক ০৮ শতাংশ), উচ্চ স্তরে ১১১ টাকা থেকে ১১৩ টাকা (১ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৪২ টাকা থেকে ১৫০ টাকা (৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ) নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রেখে প্রতি দশ গ্রাম জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য যথাক্রমে ৫ টাকা ও ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিড়ির দাম ও করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে তামাক কোম্পানি!
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য থেকে দেশের ৮টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর এবং ময়মনসিংহ) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২২ সালের (৭ মার্চ) তুলনায় ২০২৩ সালে (৭ মার্চ) খোলা আটার দাম বেড়েছে ৭১ দশমিক ৭ শতাংশ, ব্রয়লার মুরগির দাম ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ, চিনির দাম ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ, ডিমের দাম ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, গুঁড়ো দুধের দাম ২১.২ শতাংশ, মসুর ডালের দাম ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম নামমাত্র বাড়ানো অথবা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরো সস্তা হয়ে পড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘নিত্যপণ্যের তুলনায় সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশ দখলে থাকা কমদামি সিগারেটের মূল্যস্তর বা খুচরামূল্য সামান্য পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে এই স্তরের সিগারেটের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
প্রস্তাবিত বাজেটে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য আমদানির সুযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী দ্রুত চূড়ান্ত করার মাধ্যমে ই-সিগারেট ও ভেপিং পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। চূড়ান্ত বাজেটে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৪ লাখ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সিগারেট খাত থেকে গতবছরের তুলনায় সরকারের ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। এই বাড়তি রাজস্ব আইএমএফ এর ঋণ শর্ত পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন: তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে করবৃদ্ধি ও আইন শক্তিশালীকরণের তাগিদ
তামাক নিয়ন্ত্রণকে এগিয়ে নিতে কারখানায় তদারকি আবশ্যক: গবেষণা
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনীতিতে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর অর্থনীতির ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সার, জ্বালানি ও গ্যাসের দাম অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনার জন্য বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশে উন্নীত করতে হয়েছিল।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে, যেখানে যুদ্ধপূর্ব বছরগুলোতে ভর্তুকি ও প্রণোদনার জন্য বরাদ্দ গড়ে জিডিপির ১ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল।
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি ব্যয়, পরিশোধের ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বিনিময় হারে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে।
যুদ্ধ এবং যুদ্ধকেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছিল। সে সময় বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য, সার ও জ্বালানির দাম অনেক বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রয়াসে ধীরে ধীরে পলিসি ইন্টারেস্ট রেট বাড়িয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিবেশের এই পরিবর্তনগুলো আমাদের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করছে। এটা লক্ষণীয় যে, যুদ্ধপূর্ব দশকে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।’
তিনি বলেন, যুদ্ধোত্তর বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার হারের অবমূল্যায়নের ফলে ২০২২ সালের আগস্টে গড় মুদ্রাস্ফীতি ৯ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়।
আরও পড়ুন: বাজেট অবাস্তব, এভাবে মূল্যস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়: সিপিডি
ফলে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের জুনে ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২২ সালের জুনে ৪১ দমমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে আসে এবং ধীরে ধীরে বর্তমানে এটি ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে।
একই সময়ে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ছিল প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ৫ পয়সা।
২০২৩ সালের ২৪ মে বিনিময় হার মার্কিন ডলার প্রতি ১০৮ টাকা ১ পয়সা ছিল। বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার হার স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক প্রচেষ্টার ফলে বাজারে সাময়িক তারল্য সংকট দেখা দেয়।
আরও পড়ুন: 'স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলার, দারিদ্র্যসীমার ৩ শতাংশের কম হবে'