পাউবো
সিলেটে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপরে
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে দ্রুত পানি বাড়ায় নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি ইতোমধ্যে বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে পাঠানো পৃথক বার্তায় বলা হয়েছে, কুশিয়ারা নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক গ্রামীণ এলাকার নিচু সড়কে পানি ওঠে গেছে।
বার্তায় আরও জানা যায়, কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বেড়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৬টায় কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে ১১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে এখানে পানি বেড়েছে ২ সেন্টিমিটার।
আরও পড়ুন: কুশিয়ারা নদীতে ধরা পড়ল ১৬০ কেজি ওজনের বাগাড়
বিয়ানীবাজার উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ শাখার কর্মকর্তা (পিআইও) মুশফিকুর রহমান সাকিব বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের জরুরি বার্তা দেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: আগামী বর্ষার আগেই সুরমা ও কুশিয়ারা নদী খনন করতে হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জলাভূমি, গাছ এবং নদী রক্ষা করুন: এসসিআরএফ
বাঁচার তাগিদে স্বেচ্ছাশ্রমে রিংবাঁধ নির্মাণ
‘একদিন আয় না করলে সংসার চলে না, তবুও বাঁচার তাগিদে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে হয়। সব ভেসে গেছে, জিনিসের দাম বেড়েছে। সংসার চালানো নিয়ে চিন্তিত।’ খুলনার কয়রায় স্বেচ্ছাসেবায় রিংবাঁধ নির্মাণ করতে আসা এক উপকূলযোদ্ধা গোপাল সরকার আক্ষেপের সাথে এমনটি জানালেন। তিনি দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের হলুদবুনিয়ায় বসবাস করেন।
দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামের চা বিক্রেতা ওবায়দুল হোসেন বলেন, দিন শেষে যে আয় হয় সেটা দিয়ে কোন রকমে তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনতিপাত করি। পানি ওঠায় কয়েক দিন দোকান বন্ধ, প্রতিদিন বাঁধে যেয়ে ফ্রি কাজ করেছি। বাজার করতে পারিনি, খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। তবে বাঁধ মেরামত করতে পেরে তিনি খুঁশি।
এমন আক্ষেপ শুধু ওবায়দুল কিংবা গোপালের নয়, অবহেলিত কয়রার লাখো মানুষের। ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষই নিম্নবিত্ত। কোথাও বাঁধ ভেঙে গেলে টিকে থাকতে স্বেচ্ছাশ্রম নিজেদেরই ঝাপিয়ে পড়তে হয় পানি আটকানোর জন্য।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া, মেদেরচর, ঘড়িলাল বাজার ও চরামুখা এলাকার বাঁধ মেরামতে ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। কাজটিতে অর্থায়ন করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জাইকা)। দরপত্রের মাধ্যমে ‘অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই কাজটির দায়িত্ব পায়।
প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদার জাকির মোহান্দি। তিনি তার পূর্ব পরিচিত শ্রমিক সর্দার সাতক্ষীরার আক্কাস আলীর কাছে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে লাইসেন্স ভাড়া দিয়েছেন। বিষয়টি শ্রমিক আক্কাস আলী স্বীকার করেছেন। বর্তমানে ওই কাজটি তিনিই করছেন। আর স্থানীয়ভাবে কাজ দেখাশুনা করছেন ওই মোজাফ্ফার মেম্বার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বড় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, সরঞ্জাম ও লোকবল নেই ওই শ্রমিক সর্দারের। কাজের মান ভালো না হওয়ায় চলমান কাজের চরামুখা এলাকার বাঁধ গত ১৭ জুলাই ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাপ্তরিকভাবে ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে আছেন পাউবো’র উপ-সহকারি প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন। তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সরঞ্জাম বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা অফিস থেকেই সব দিয়েছি। যে কোন দোকান থেকে সব আনতে বলি, পরে যে ঠিকাদার কাজ পাবেন তিনি সব পরিশোধ করেন। পরে মোজাফ্ফার মেম্বারের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, তিনি ওখানের কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এজন্য উনাকে দিয়ে করাচ্ছি।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে পানি প্রবেশ রোধ করা গেছে। পাউবো’র পক্ষ থেকে বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য বাঁশ ও জিও ব্যাগ দেয়া হয়েছিল। এবার পাউবো বাঁধ শক্তিশালী করার কাজ করবে।
গত ১৩ আগস্ট জোয়ারের পানির চাপে কপোতাক্ষ নদের চরামূখা নামক স্থানের রিংবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। ওই দিন থেকে টানা পাঁচ দিন স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বুধবার (১৭ আগস্ট) নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। টানা ৪ দিন বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও পঞ্চমদিনে প্রায় ৩ হাজার মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের প্রচেষ্টায় ফের রিংবাঁধ দিয়ে কপোতাক্ষের নোনা পানি আটকাতে সক্ষম হয়েছে। তবে শুধু এবার নয়, প্রতি দুর্যোগের পর এভাবেই ভাঙা বাঁধ মেরামতে স্থানীয় মানুষকেই দায়িত্ব নিতে হয় বলে জানালেন তারা। এবার বাঁশ- সিনথেটিক ব্যাগ চাহিদা মত না পাওয়ায় কাজে চরম ভোগ পেতে হয় বলে অভিযোগ তাদের।
পড়ুন: কয়রায় স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণে সহস্রাধিক মানুষ
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই ভোরে চরামুখার এই বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটারের মতো ধসে যায়। সেসময় ভাঙা স্থানে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হয়। এরপর ১৩ আগস্ট দুপুরে উচ্চ জোয়ারে ওই রিং বাঁধটি পুনরায় ভেঙে যায়। এই ভাঙনে কপোতাক্ষের নোনা পানিতে ডুবে যায় ১০টির বেশি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। অভ্যন্তরিণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, মৎস্য ঘের, আমনের বীজতলা, বসতবাড়িসহ পরিবেশের চরম ক্ষতি হয়েছে।
বাঁধ মেরামতে আসা লোকজন অভিযোগ করেন, চরামুখার বাঁধটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও তারা এড়িয়ে গেছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের জানালে এ কাজ তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে জানিয়ে দেন। উপজেলা প্রশাসনও একই কথা জানায়। অথচ বাঁধ ভাঙলে বারবার ভুক্তভোগী মানুষকেই তা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হয়।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা নাজমুল জানান, বাঁধ নির্মাণে কাজ করেছি। চাহিদা অনুযায়ী সরঞ্জামাদি দেয়া হয়নি। মোজাফ্ফার মেম্বার ও এক পাউবো কর্মকর্তার সখ্যতা রয়েছে।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমরা দেখেছি বিগত ১০ বছরে জরুরি কাজের নামে কয়রার বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১শ’ ৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার টাকারও বেশি। বরাদ্দ অনুযায়ী কাজ হয় না। সেখানে রয়েছে অর্থ লুটপাটের অসাধু চক্র। টেন্ডারে কাজ পেয়ে মূল ঠিকাদার নিজের লাভটা রেখে কাজটা বিক্রি করে দেন আরেকজনের কাছে। এভাবে হাতবদল হলে কাজের মান খারাপ হতে বাধ্য- এটাই দেখে এসেছি এতদিন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে চরামুখা গ্রামের খালের গোড়া নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের রিংবাঁধ মেরামত কাজ পরিদর্শন করেছেন খুলনা-৬ আসনের (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু।
এসময় তিনি বলেন, সরকার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছেন যেটা একনেকে পাশ হয়েছে, এটার টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া জাইকার অর্থায়ানে ৩৫০ কোটি ব্যয়ে বেঁড়িবাধের কাজ চলমান আছে। এছাড়াও বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহ জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
পড়ুন: কয়রায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪ গ্রাম প্লাবিত
বন্যা: সিলেটে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
টানা চারদিন বৃষ্টির পর রোদের দেখা মিলেছে সিলেটে। শনিবার সকাল থেকে আর বৃষ্টি হয়নি সিলেটে। বৃষ্টি থামায় কমতে শুরু করেছে নদ নদীর পানিও। শনিবার সিলেটের সবগুলো নদীরই পানি কমেছে। পানি কমছে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকেও। তবে এখনও নগরের বাইরের বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে আছে। প্রায় ১৭দিন ধরে পানিবন্দি থাকা মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ২ সেন্টিমিটার কমেছে। কমেছে, লোভা, সারি এবং ধলাই নদীর পানিও।
অনেকদিন পর রোদ উঠায় বাসা পরিচ্ছন্নতার কাজ করছিলেন নগরের তেররতন এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল আলী। তিনি বলেন, ঘরের ভেতরে প্রায় আটদিন পানি ছিল। ছয়দিন আগে পানি নামলেও বৃষ্টির কারণে ধোয়ামোছা করতে পারিনি। আজ থেকে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু করেছি। পানি নামার পর এখন ঘরের ভেতরসহ আশপাশে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: বন্যায় সিলেটে ৪০ হাজারের বেশি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত
দোকান থেকে পানি নামলেও এখনও সড়ক তলিয়ে আছে জানিয়ে দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডের ব্যবসায়ী মুকুল আহমদ বলেন, আজ ১৭ দিন হলো পানিবন্দি হয়ে আছি। ব্যবসাপাতি সব চুলোয় গেছে। এভাবে আর কতদিন থাকতে হবে কে জানে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন ছড়া, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্ন করছে। যেদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা দল সেদিকে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। পুরো নগরী ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি।
পানি ধীরে কমছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, পানি নামার গতি খুবই ধীর। তবে আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতি আর অবনতি হওয়ার শঙ্কা নেই।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মোকাবিলা করছেন সিলেটবাসী। নগরী ও জেলার ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। এমন বন্যা মোকাবিলা করতে হবে, তা স্বপ্নেও ভাবেননি এ অঞ্চলের মানুষ। এতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। বন্যায় অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু-হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ভেসে গেছে বানের পানিতে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যায় ঘরবন্দী সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষার্থী
উপদ্রুত এলাকার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচা লোকজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে।
গত ১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে পরদিন থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে বন্যার পানি। ভারি বর্ষণ বন্যায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোতে পানি উঠায় সিলেটে সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে সিলেট নগরের মানুষও পানি সংকটে পড়েন।
আর বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। চারদিকে পানিতে থৈ থৈ করলেও খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয় সবখানে।
যদিও সে সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনগুলো ও ব্যক্তি উদ্যোগে বানভাসিদের পাশে দাঁড়ায় খাবার ও পানি নিয়ে।
বন্যায় সিলেটে বন্যা কবলিত হয়ে ৮০ ভাগ নলকূপ পানিতে তলিয়ে যায় বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ৯৯ টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৫ হাজার নলকূপের মধ্যে ২৭ হাজার বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আর বেসরকারি প্রায় দুই হাজার নলকূপ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া আটটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেয়া হয়েছে। একটি প্লান্ট থেকে অন্তত পাঁচ হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা যায়। বিশেষ করে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জে এবং নগর এলাকায় একটি করে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দেয়া হয়েছে। আর দুটি রিজার্ভে রাখা হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানি কমলে নলকূপের পানি কিভাবে বিশুদ্ধ করতে হবে, সে পদ্ধতি জানাতে প্রচারণা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যা: ৩৭ হাজার মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে
কুড়িগ্রামে বানভাসিদের দুর্ভোগ বেড়েছে, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
কুড়িগ্রামে বন্যা যত স্থায়ী হচ্ছে বানভাসিদের ততই দুর্ভোগ বাড়ছে। বেশিরভাগ পরিবার বাড়ির ভিতর চৌকি উঁচু করে সেখানে অবস্থান করছে। কেউ কেউ নৌকায় গবাদিপশু নিয়ে দিনরাত পার করছে, কখন পানি নেমে যাবে। এই পরিস্থিতিতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন তারা। সমস্যায় পড়েছেন গবাদিপশুর খাবার নিয়ে।
সদর উপজেলার চর পার্বতীপুর গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘নিজেরা না হয় কোন রকমে চলবের নাগছি কিন্তু গরু-ছাগল নিয়া খুব বিপদে আছি। খড়ের গাদা পানিতে ভিজি গেইছে। এখন কি দেই আর কি খাওয়াই। খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪১ হাজার ৬১২জন মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। নাগেশ্বরী উপজেলায় ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যায় ৩২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বানভাসি মানুষের কথা চিন্তা করে ৩৬১টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বন্যা: কিশোরগঞ্জে পানিবন্দি লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে
এদিকে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানা গেছে। অনেক পানিবন্দি এলাকায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি বলে বানভাসিরা অভিযোগ তুলেছে।
সদর উপজেলার ভগবতীপুর চরের জোহরা খাতুন জানান, চুলা জ্বালাতে পারছি না। ঘরেও সবকিছু তলিয়ে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।
উলিপুর উপজেলার বেগমগন্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আমির হোসেন জানান, বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকায় নিজেরা তো কষ্টে আছি। এ অবস্থায় গরু ছাগলের খাবারও জোগাড় করতে পারছি না।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নে ১৪শ’ পরিবার প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে আরও ৩ হাজার ৫শ’ পরিবার।
আরও পড়ুন: বন্যা দুর্গতদের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ সহায়তা হস্তান্তর
কাজিপুরে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যমুনার পানি
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে তিন দিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (২১ জুন) সকালের রেকর্ড অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও কাজিপুর পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (হেডকোয়ার্টার) নাসির উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় যমুনা তীরবর্তী পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চলসহ উল্লাপাড়া, তাড়াশ ও রায়গঞ্জ উপজেলার চলনবিল এলাকার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। যমুনা ও সিরাজগঞ্জের অভ্যান্তরীণ নদ-নদীর পানিও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলছেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, প্রতিবছরই এদেশে কমবেশি বন্যা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সিরাজগঞ্জের যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বর্তমানে বন্যা চলছে। তবে সিরাজগঞ্জে বন্যা এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে, আশঙ্কাজনক তেমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। আগামী ২-৩ দিন পানি বাড়লেও আশংকার তেমন কিছু নেই, এরপর হয়তো পানি কমে যাবে।
তিনি বলেন, নদী তীরবর্তী বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হওয়ায় চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরসহ ভাঙনকবলিত স্থানে ভাঙন রোধে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া বাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নজর রাখা হচ্ছে।
পড়ুন: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র-ধরলা নদীর পানি বাড়ছে, নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
লালমনিরহাটে বানভাসি মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন, বাড়ছে দুর্ভোগ
সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
সিলেটে সুরমা নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করলেও বাড়ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। তবে সুরমা নদীর পানি সামান্য কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
প্লাবিত এলাকার বেশিরভাগ এখনও পানির নিচে। নগরীর উচু এলাকায় পানি কমলেও নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও রাস্তাঘাট এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। উপশহরের প্রধান সড়কে এখনও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে। ফলে বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট (নগরী) পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। অবশ্য সারি ও লোভাছড়া নদীর পানি কমেছে।আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার পানি কমছে, খাবার ও পানির সংকট
তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই
ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে। যে কোনো সময় পানি ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
রবিবার দুপুরে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাট তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপদসীমার দশমিক ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাশাপাশি পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার চর এলাকাগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: পানি বাড়ছে তিস্তার, খুলে দেয়া হয়েছে সব গেট
ব্যারেজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি ৫১ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে রবিবার সকালে পানি অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, তিস্তা নদীর পানি এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, যেকোনো সময় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। তাই দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইসগেট খুলে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়ি-ঘর
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ভোগান্তিতে বানভাসিরা
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেট নগরী এবং জেলার ১৩ উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রামান্তর নদীর পানিতে একাকার। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সিলেট নগরীতে আরও দুই ইঞ্চি পানি বেড়েছে।
এছাড়াও উপজেলাগুলোতেও বন্যার পানি বেড়েছে। এ অবস্থায় সিলেট জেলা ও মহানগরের অন্তত ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাবার, বিদ্যুৎ ও নানামুখী সংকটে দুর্বিষহ সময় কাটাচ্ছেন। এছাড়া গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ (সিলেট) পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপদসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শেওলা (সিলেট) পয়েন্টে নদীটির পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার, এখন তা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদীগুলো এখন পানিতে টুইটম্বুর। সুরমা-কুশিয়ারায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। সদর উপজেলার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী গোয়াইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও জকিগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আছে। এসব এলাকায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।
মঙ্গলবার (১৭ মে) দিনে ও রাতে সিলেট জেলায় বৃষ্টি হয়নি। তবে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (১৮ মে) সকাল পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বেড়েছে দুর্ভোগ। বিপর্যস্ত হয়ে আছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিভিন্ন উপজেলায় প্লাবিত এলাকায় বাঁধ ও পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়া লোকজন বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও শৌচাগার সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ ও জ্বালানি তেলের দোকান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানবিক বিপর্যয়ের শংকা দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বাঁধ ও পাকা রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় মানুষজনকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে সিলেট-সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি
বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট এখনও পানির নিচে। বাসাবাড়ি ও সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করেছে পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা জানান, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। নতুন করে বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভাঙনের খবর সংগ্রহ করছেন তারা।
সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতার ব্যাপারে তিনি জানান, নগরীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে ড্রেনেজ সমস্যা। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতিতে নগরীর দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সিলেটে আগামী ২০-২১ জুন পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। যে কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এছাড়াও চাল ও শুকনো খাবার বিভিন্ন উপজেলার বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার্তদের জন্য ১৯৯ আশ্রয়কেন্দ্র
সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপরে
অপরিকল্পিত সেতুর কারণে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না পুনঃখনন করা ভারানি খাল
দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর দখলমুক্ত করে অবশেষে পুনঃখনন করা হলেও বেশ কয়েকটি অপরিকল্পিত সেতুর কারণে ঐতিহ্যবাহী বরগুনার ভারানি খাল প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন মহল।
জানা গেছে, বরগুনার প্রমত্তা পায়রা ও খাকদোন এই দুই নদের সংযোগ রক্ষাকারী ভারানী খাল দুই পাড়ে বহুবছর ধরে অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে মরা খালে পরিণত হয়েছিল। খাকদোন নদের এ শাখা খালটি বরগুনা শহরের মাছবাজার এলাকার মাদরাসা সড়ক হয়ে বরগুনা সদর ও বুড়িরচর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে দক্ষিণে ৯ কিলোমিটার গিয়ে পায়রা নদে গিয়ে যুক্ত হয়েছে। আর এই ৯ কিলোমিটারের মধ্যে মোট ১১টি সেতু গড়ে উঠেছে। প্রতিটা সেতুই এমন অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে যে বর্ষা মৌসুমে যেকোনো ছোট-বড় নৌযানের এই সেতুগুলোর নিচ দিয়ে যাতায়াত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বরগুনা সদর উপজেলার সঙ্গে নৌপথ কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের নির্ভরযোগ্য চলাচলের মাধ্যম ছিল খালটি। কিন্তু দখলদারদের দৌরাত্ম্য ও দূষণে সময়ের ব্যবধানে এটি মরা খালে পরিণত হয়। একই সঙ্গে ভারানি খালের সঙ্গে সংযুক্ত আরও সাতটি শাখা খালেরও একই অবস্থা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ভারানি খাল দখলমুক্ত ও পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়। খালের দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর পুনঃখননের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তবে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ১১টি সেতু বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই সেতুগুলো ভেঙে পরিকল্পিতভাবে পুননির্মাণ না করা হলে এ খাল কখনোই প্রাণ খুঁজে পাবে না বলে অভিমত প্রকাশ করছেন অনেকেই।
২০১৭ সালে স্থানীয় পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকরা খালটি দখলমুক্ত করতে আন্দোলন শুরু করেন। দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের জনগণ দফায় দফায় বরগুনায় অবস্থিত খাল দুটি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন-সমাবেশও করেছেন সংগঠন থেকে শুরু করে সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। এতে জেলা প্রশাসন তৎপর হয়। বরগুনা জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের সহায়তায় উভয় পাড়ে ১৩৫ জন অবৈধ দখলদারের তালিকাও তৈরি করে।
আরও পড়ুন: সেতুর অভাবে ৩০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) ২০১৮ সালে খালটির অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করে। প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিব আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বরগুনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) খালটি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বরগুনা জেলা প্রশাসন ভূমি অফিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ডিসেম্বরে শেষ হয়। এরপর বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড খালটি পুনঃখননের প্রকল্প হাতে নেয়।
পাউবো কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দুই কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারানী খালের পুনঃখনন কাজ শুরু হয়। চট্টগ্রাম জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গরীবে নেওয়াজ ও পটুয়াখালী জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল মামুন এন্টারপ্রাইজ যৌথভাবে এ খাল খননের প্রকল্পটির কার্যাদেশ পায়। বরাদ্দ এই কাজের দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ স্থানভেদে ২৬ থেকে ৩০ মিটার বা ৮৫ থেকে ১০০ ফুট ও নিম্নস্তরের প্রস্থ ১২ মিটার বা ৩৯ দশমিক ৩৬ ফুট গভীরতা ১ দশমিক ৫ মিটার থেকে ২ মিটার পর্যন্ত বা ৫ ফুট থেকে ৬ দশমিক ৫০ ফুট।
আরও পড়ুন: ‘ভোজ্য তেলের আমদানির পয়সায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যাবে’