শিল্প-সংস্কৃতি
একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা সবসময়ই অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছে। অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা হয়।
এটি দেশের বৃহত্তম বইমেলা, যেখানে প্রকাশকরা বিভিন্ন ধারায় লেখা মুদ্রিত বই প্রদর্শন ও বিক্রি করেন।
এই মেলা পাঠকদের জন্য তাদের প্রিয় লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রকাশকদের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করার দুর্দান্ত সুযোগ করে দেয়। পাঠকদের বই পড়তে ও কিনতে উৎসাহিত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিবেশন করার পাশাপাশি বইমেলা মাসব্যাপী একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে– যা বাংলাদেশের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে।
অমর একুশে বইমেলার ইতিহাসের শিকড় অনুসন্ধান করা যাক-
চিত্তরঞ্জন সাহা
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি মাঠ থেকে বইমেলা শুরু হয়। চিত্তরঞ্জন সাহা ১৯২৭ সালে নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার বাংলাবাজারে অবস্থিত তার প্রকাশনা সংস্থা পুঁথিঘর প্রকাশনী ১৯৭১ সালে পুড়িয়ে দেয়া হয়। চিত্তরঞ্জন সাহা ২৬ মার্চের পর ঢাকা ছেড়ে যান। তিনি আগরতলায় আশ্রয় নেন এবং তারপরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় চলে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের অনেক বিশিষ্ট লেখক, শিল্পী, সাংবাদিককে শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় থাকতে হয়েছিল।
সেই সময়কালে চিত্তরঞ্জন কলকাতায় বসবাসরত কয়েকজন বিশিষ্ট সাহিত্যিকের সঙ্গে একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। তারা বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ওপর হওয়া অন্যায় ও যুদ্ধ নিয়ে লেখার ও তা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই মুক্তধারার জন্ম হয়।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমি ভবনের সামনে গাছের নিচে একটি মাদুর বিছিয়ে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রায় ৩২টি (কিছু সূত্র অনুসারে ৩৩টি) বই প্রদর্শন করেন।
যদিও চিত্তরঞ্জন সাহা প্রথমদিককার উদ্যোক্তা হিসেবে বইমেলার সূচনা করেছিলেন, তবে কিছু সূত্র অনুসারে তিনিই প্রথম ব্যক্তি নন যিনি ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বই বিক্রি শুরু করেছিলেন। স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী রাশিয়ান বই প্রদর্শন শুরু করেন। এই বইগুলো তাদের সমৃদ্ধ বিষয়বস্তু এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য সেসময়ে খুব জনপ্রিয় ছিল।
আরও পড়ুন: দুই বছর পর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন শুরু হচ্ছে বইমেলা
বাংলাদেশে প্রথম বইমেলার পেছনের ইতিহাস
চিত্তরঞ্জন সাহা একুশের বইমেলার প্রবর্তক হিসেবে স্বীকৃত হলেও বইমেলার শিকড় আরও গভীরে প্রোথিত।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে।
উদ্যোগটি নিয়েছিলেন সরদার জয়েনউদ্দীন। তিনি ১৯১৮ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন।১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) গ্রন্থাগারের নিচতলায় কিছু শিশুতোষ বই প্রদর্শন শুরু করেন। তখন তিনি শিশুদের বই নিয়ে ইউনেস্কোর একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন।
১৯৭০ সালে জয়েনউদ্দীন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে একটি বইমেলার আয়োজন করেন।
ইউনেস্কো ১৯৭২ সালকে ‘আন্তর্জাতিক বই বর্ষ’ ঘোষণা করায়, ডিসেম্বরে জয়েনউদ্দীন বাংলা একাডেমিতে বইমেলার আয়োজনের উদ্যোগ নেন। এরপর থেকে বাংলা একাডেমি বইমেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়।
একুশে বইমেলার যাত্রা
চিত্তরঞ্জন সাহা আরও কয়েক বছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বই প্রদর্শন ও বিক্রি চালিয়ে যান। ১৯৭৬ সালে বই বিক্রির এই ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যান্য প্রকাশকরা একত্র হন এবং এতে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়।
আশরাফ সিদ্দিকী সে সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন এবং বইমেলার সঙ্গে একাডেমির যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এরপর ধীরে ধীরে বাংলা একাডেমির আয়োজক সমিতি বইমেলাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে ‘বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি’ (চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত) এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় একটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুন: এবার একুশে বইমেলায় সাড়ে ৫২ কোটি টাকার বই বিক্রি
দুই বছর পর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন শুরু হচ্ছে বইমেলা
কোভিড-১৯ এর কারণে গত দুই বছরের অমর একুশে বইমেলার ঐতিহ্যবাহী তারিখ পরিবর্তন করা হয়।
সামাজিক দূরত্বের মতো কোভিড-১৯ এর নিয়মগুলোর বাধ্যবাধকতা এখন না থাকায় এ বছরের মেলা ঐতিহ্যবাহী ১ ফেব্রুয়ারি তারিখেই শুরু হতে যাচ্ছে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ বাংলা একাডেমির বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণে এবার পুরো মাসজুড়ে আয়োজনটি চলবে।
২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী সশরীরে মেলার উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রদান করবেন এবং সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করবেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা উপস্থিত থাকবেন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ৩ দিনব্যাপী নন-ফিকশন বইমেলা শুরু ২৬ ডিসেম্বর
এবারের বইমেলার জন্য ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট (স্টল) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৭৬টি স্টল। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে অমর একুশে বইমেলা কমিটির সম্পাদক কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকাশক ও মেলাপ্রেমীদের পরামর্শ ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা স্টল ও প্যাভিলিয়ন ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্টে কিছু পরিবর্তন এনেছি। পূর্ববর্তী পদ্ধতি পরিবর্তন করা হচ্ছে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে ৪৮৯টি স্টল এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে দর্শনার্থীরা যে কোনো কোণ থেকে পুরো মেলার মাঠ দেখতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের পাশে পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের স্টল বসানো হয়েছে। খাবার দোকানের জন্য দুটি নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারিত হয়েছে। কোনো অসংগঠিত, খোলা বা রাস্তার খাবারের দোকান থাকবে না।’
মেলায় প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চারটি প্রবেশপথ ও চারটি প্রস্থান পথ দিয়ে দর্শনার্থীরা চলাচল করতে পারবেন। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তারা সকাল ৮টায় মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন এবং রাত সাড়ে ৮টার পর সব প্রবেশপথ বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবিতে ১০দিনব্যাপী 'কিনে'র বইমেলা
বায়তুল মুকাররমে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা শুরু
কসমস অ্যাতেলিয়ার ৭১ পরিদর্শন করলেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই
বাংলাদেশে ফ্রান্সের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই কসমস ফাউন্ডেশনের প্রিন্টমেকিং স্টুডিও, শৈল্পিক স্থান গ্যালারি কসমস ও কসমস অ্যাতেলিয়ার ৭১ পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি এই পরিদর্শন করেন।
মারি মাসদুপুই কসমস সেন্টারে ‘ইমপ্রেশন অব রোকেয়াস’ শিরোনামে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত শিল্পী ও শিল্প শিক্ষক, অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানার চলমান একক ইন্টাগ্লিও প্রক্রিয়া সফটগ্রাউন্ড এবং স্টেনসিল ওয়ার্কশপ পরিদর্শন করেন।
কসমস আতেলিয়ার ৭১ এবং গ্যালারি কসমস-এর ডিরেক্টর তেহমিনা এনায়েত ও রোকেয়া সুলতানা রাষ্ট্রদূত মাসদুপুয়কে অভ্যর্থনা জানান এবং তাদের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেন। গ্যালারি কসমসের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর সৌরভ চৌধুরী স্টুডিও ও গ্যালারি পরিদর্শনে দিকনির্দেশনা দেন। চলমান শৈল্পিক উদ্যোগ ও কর্মশালার বিষয় বর্ণনা করেন।
তেহমিনা এনায়েত ইউএনবিকে বলেন, ‘কসমস আতেলিয়ার ৭১ এবং গ্যালারি কসমস-এ আমাদের মাঝে ফরাসি রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুইকে পেয়ে আমরা অভিভূত। ফ্রান্স শিল্পকলার জগতে অগ্রগামী দেশ এবং আমাদের কূটনৈতিক মিত্রদের মধ্যে একটি।’
তিনি বলেন, আমাদের শিল্পকলার রাষ্ট্রদূতের পরিদর্শন দুই দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বন্ধন ও বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।
প্রফেসর রোকেয়া সুলতানা বলেন, ‘এটা আমাদের গর্বের বিষয় যে রাষ্ট্রদূত মাসদুপুই এই একক প্রিন্টমেকিং ওয়ার্কশপ পরিদর্শন করেছেন। আমি ও আমাদের সকল অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা আমাদের কাজের বিষয়ে তার উপস্থিতি ও উৎসাহে মুগ্ধ।’
আরও পড়ুন: ইমপ্রেসন অব রোকেয়া'স: কসমস আতেলিয়ার ৭১ এ নকশা খোদাই পদ্ধতির কর্মশালা শুরু
২৩ জানুয়ারি উদ্বোধন করা কর্মশালায় দেশ ও দেশের বাইরের তরুণ এবং বিশিষ্ট শিল্পীরা উপস্থিত রয়েছেন। এর মধ্যে অস্মিতা আলম শাম্মী, রুজভেল্ট বেঞ্জামিন, ছোট জুলফিকার, রিফাত জাহান কান্তা, ফারজানা রহমান ববি, মোহাম্মদ রেজওয়ানুর রহমান, বাচ্চু মিয়া আরিফ, কামরুজ্জোহা এবং ভারতীয় এস এম এহসান। শিল্পী শুক্লা পোদ্দার।
কর্মশালায় চার অতিথি শিল্পী- প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী আফরোজা জামিল কনকা, বিশিষ্ট ফটোসাংবাদিক-শিল্পী নাসির আলী মামুন, প্রবীণ শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা বীরেন শোম এবং সাংবাদিক-শিল্পী জাহাঙ্গীর আলমসহ অংশগ্রহণকারী অতিথি শিল্পী স্যাম জামিল জুলিয়ান, রুমেসা মাইলক্স এবং সৌরভ চৌধুরী।
আরও পড়ুন: কসমস আতেলিয়ার ৭১-এ চলছে প্রিন্ট মেকিং ওয়ার্কশপ ইমপ্রেশন অব রোকেয়া’স
কসমস আতেলিয়ার ৭১-এ চলছে প্রিন্ট মেকিং ওয়ার্কশপ ইমপ্রেশন অব রোকেয়া’স
প্রিন্ট মেকিং শিল্পের পেছনের চিত্তাকর্ষক কৌশল ও গল্পগুলো তুলে ধরতে শিল্পকলার বিশিষ্ট অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানার ইমপ্রেশন অব রোকেয়া’স শিরোনামের একটি এক্সক্লুসিভ প্রিন্টমেকিং ওয়ার্কশপ বর্তমানে ঢাকার মালিবাগের কসমস আতেলিয়ার ৭১ -এ চলছে।
প্রখ্যাত শিল্পী ও শিল্পশিক্ষাবিদ এর জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) এই কর্মশালার উদ্বোধন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের তরুণ ও বিশিষ্ট শিল্পী অস্মিতা আলম শাম্মী, রুজভেল্ট বেঞ্জামিন, ছবি জুলফিকার, রিফাত জাহান কান্তা, ফারজানা রহমান ববি, মোহাম্মদ রেজওয়ানুর রহমান, বাচ্চু, মিয়া আরিফ, কামরুজ্জোহা, এস এম এহসান ও ভারতীয় শিল্পী শুক্লা পোদ্দার।
অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানার এক্সক্লুসিভ ইন্টাগ্লিও প্রসেস-সফটগ্রাউন্ড এবং স্টেনসিল ওয়ার্কশপে চার অতিথি শিল্পী- প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী আফরোজা জামিল কনকা, বিশিষ্ট ফটোসাংবাদিক-শিল্পী নাসির আলী মামুন, প্রবীণ শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা বীরেন সোম এবং শিল্পী-সাংবাদিক জাহাঙ্গীর অংশ নিয়েছেন।
অতিথি শিল্পী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্যাম জামিল জুলিয়ান, রুমেসা মাইলক্স ও সৌরভ চৌধুরী।
কসমস আতেলিয়ার ৭১ এবং গ্যালারি কসমসের পরিচালক তেহমিনা এনায়েত ইউএনবিকে বলেন, ‘কসমস গ্যালারি ও কসমস আতেলিয়ার ৭১- দীর্ঘদিন ধরে দেশের শিল্পের অগ্রগতি প্রচারকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় দশজন প্রতিভাবান এবং অতিথি শিল্পী রোকেয়া সুলতানার সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। রোকেয়া সুলতানা বাংলাদেশের অন্যতম বিশিষ্ট ও সফল একজন শিল্পী। এই অনন্য প্রিন্টমেকিং কর্মশালায় ভারতীয় শিল্পী শুক্লা পোদ্দার এবং আমাদের শিল্পাঙ্গণের আরও বেশ কয়েকজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী আমাদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন; এবং তাদের সম্মিলিত অবদান এই প্রচেষ্টাকে আরও সফল করে তুলবে।’
আরও পড়ুন: ইমপ্রেসন অব রোকেয়া'স: কসমস আতেলিয়ার ৭১ এ নকশা খোদাই পদ্ধতির কর্মশালা শুরু
পবিত্র শবে মেরাজ ১৮ ফেব্রুয়ারি
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশে পবিত্র শবে মেরাজ পালিত হবে।
সোমবার সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রতি বছর ২৬ রজব রাতে মুসলমানরা শব-ই-মেরাজ পালন করেন। যেদিন নবী মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এক বিশেষ পরিভ্রমণ করেন।
আরও পড়ুন: সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর তীব্র নিন্দা বাংলাদেশের
পবিত্র আশুরা আজ
ইমপ্রেসন অব রোকেয়া'স: কসমস আতেলিয়ার ৭১ এ নকশা খোদাই পদ্ধতির কর্মশালা শুরু
কসমস ফাউন্ডেশনের প্রিন্টমেকিং স্টুডিও 'কসমস আতেলিয়ার ৭১' এর আয়োজনে ইমপ্রেসন অব রোকেয়া'স শিরোনামে প্রখ্যাত শিল্পী ও শিল্পকলার শিক্ষক অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানার চার দিনের একক 'নকশা খোদাই পদ্ধতির কর্মশালা' শুরু হয়েছে। সোমবার রাজধানীর কসমস সেন্টারে এটির উদ্বোধন করা হয়। ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মশালা চলবে।
কসমস ফাউন্ডেশনের শৈল্পিক শাখা গ্যালারি কসমসের সহযোগিতায় এই কর্মশালায় বিশিষ্ট বাংলাদেশি শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, বীরেন সোম, নাসির আলী মামুন এবং আনিসুজ্জামান আনিস উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি দেশ ও বিদেশের ১০ জন শিল্পী- অস্মিতা আলম শাম্মী, রুজভেল্ট বেঞ্জামিন, ছবি জুলফিকার, রিফাত জাহান কান্তা, ফারজানা রহমান ববি, মোহাম্মদ রেজওয়ানুর রহমান, বাচ্চু মিয়া আরিফ, কামরুজ্জোহা, শুক্লা পোদ্দার ও এসএম এহসান এতে অংশগ্রহণ করছেন। শিল্পীরা এই কর্মশালায় সফট গ্রাউন্ড এবং স্টেনসিল মিডিয়াতে নকশা খোদাইকর্ম করবেন।
আরও পড়ুন: কসমস ফাউন্ডেশনের প্রদর্শনীতে আলেকজান্দ্রু পোটেকা ও নিপার শিল্পকর্ম
কসমস আতেলিয়ার ৭১ এবং গ্যালারি কসমসের নির্বাহী পরিচালক সৌরভ চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ‘প্রত্যেক শিল্পী কর্মশালায় দু’টি প্রিন্টমেকিং আর্টওয়ার্ক শেষ করবেন। পরে আমরা এই শিল্পকর্মগুলো ২৮ জানুয়ারি বারিধারা গার্ডেন গ্যালারিতে প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য প্রদর্শন করতে যাচ্ছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগের বর্তমান অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্টস থেকে স্নাতক করেন। এরপর তিনি ১৯৮৩ সালে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী থেকে প্রিন্টমেকিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
পোল্যান্ড, জার্মানি, মরক্কো, ওমান (বাইত আল জুবায়ের জাদুঘর), ফ্রান্স, ইরান, মিশর, তুরস্ক, তাইওয়ান, নেপাল, কোরিয়া, জর্ডান, ডেনমার্ক, পাকিস্তান, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র— ডেনভার ,ওয়াইমিং, এনওয়াই (আর্ট স্টুডেন্ট লীগ) এবং জাপানে তার প্রদর্শনী হয়েছে।রোকেয়া সুলতানা অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বৃত্তি এবং পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে একটি মর্যাদাপূর্ণ ফুলব্রাইট বৃত্তির আওতায় তিনি নেব্রাস্কা-লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ মাস আবাসিক শিল্পী ছিলেন। তিনি ঢাকা, শান্তিনিকেতন এবং সিডনির শিল্পকলা জগতের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
আরও পড়ুন: ‘ধারণার চেয়েও বেশি’: মধ্যযুগে বাংলায় হাবশি শাসন এবং আফ্রিকা-ভারত সংযোগ সম্পর্কে ডা. কেনেথ রবিন্স
শিল্পীর পাওয়া পুরষ্কারগুলোর মধ্যে ক্রয় পুরস্কার, সোমারস্টাউন গ্যালারি, চতুর্থ বিয়েনাল, এনওয়াই, ইউএসএ (১৯৯২), তৃতীয় ভারত ভবন প্রিন্ট বিয়েনেলে(১৯৫৫), ১৪তম জাতীয় শিল্প প্রদর্শনীতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার(১৯৯৯), নবম এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল সম্মাননা (১৯৯৯), জাতীয় শিল্প প্রদর্শনীতে(২০০২) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। ২০০৩ সালে তিনি প্যারিসের এল আতিলিয়ার লি কুরিয়ার ইট ফ্রিলট-এ ফরাসি সরকারের বৃত্তি লাভ করেন এবং ২০১৭ সালে তিনি কানাডার টরন্টোতে ওপেন প্রিন্ট স্টুডিওতে একজন আবাসিক শিল্পী হন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি; রাষ্ট্রপতি ভবন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, ১৯৭১ গণহত্যা নির্যাতন আর্কাইভস ও জাদুঘর তাইওয়ানের জাতীয় মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টস; বাংলাদেশ আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক; সিডনির ব্ল্যাকটাউন আর্ট সেন্টার, নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুকারম্যান মিউজিয়াম অব আর্ট, জর্জিয়ার এসজিসি ইন্টারন্যাশনালের আর্কাইভস; আর্ট ইউনিভার্সিটি একাডেমি, সান ফ্রান্সিসকো; দ্য মিউজিয়াম অব ইন্টারন্যাশনাল কনটেম্পোরারি গ্রাফিক, ফ্রেডরিকস্টাড, নরওয়ে; ইউনিভার্সাল গ্রাফিক মিউজিয়াম, কায়রো; জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি, কলকাতা; ইয়ং ওয়ান কালেকশন, কোরিয়ায় তার শিল্পকর্ম রয়েছে।
আরও পড়ুন: এপিসোডস অব হার গেজ: ঢাকা লিট ফেস্টে মাকসুদা ইকবাল নিপার প্রাণবন্ত চিত্রকর্মের মোড়ক উন্মোচন
শুক্রবার শহীদ আসাদ দিবস
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদের মহান আত্মত্যাগের স্মরণে শুক্রবার দেশে পালিত হবে শহীদ আসাদ দিবস।
জাতি তার শাহাদতের ৫৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আসাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে প্রস্তুত।
১৯৬৯ সালের এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর তাদের দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আসাদুজ্জামান আসাদ।
সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইতিহাসের স্নাতক আসাদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
আরও পড়ুন: জাতি বিজয় দিবস উদযাপন করছে
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান এই ঘটনার ইন্ধনে গণবিদ্রোহের মধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
দিবসটি উপলক্ষে শহীদ আসাদ পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এদিকে আসাদুজ্জামান আসাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
তারা আসাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
আরও পড়ুন: মহান বিজয় দিবসে জাতীয় কর্মসূচি
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতি স্মরণ করছে কৃতী সন্তানদের
বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব শুরু
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হয়েছে তাবলীগ জামাতের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব। শুক্রবার বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই এ ইজতেমা শুরু হয়।
দুপুরে ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জুমার নামাজ। জুমার নামাজ পড়াবেন বাংলাদেশের তাবলীগের মুরব্বি মাওলানা হাফেজ জোবায়ের আহমদ। আগামী রবিবার দুপুরের আগে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথমপর্ব।
জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত কারণে ইজতেমা ময়দানে আরও একজন মুসল্লী মারা গেছেন।
আরও পড়ুন: আগামীকাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা শুরু
আগামীকাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা শুরু
মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা আগামীকাল শুক্রবার ফযরের নামাজের পর শুরু হচ্ছে। ইজতেমায় অংশ নিতে তাবলীগের মুসুল্লীদের আগমনে এরই মাঝে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরের ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে।
এবারও ইজতেমাকে ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার কর্মী তৎপর রয়েছেন। তবে ইজতোমার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে তাদের। শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগবালাই বেড়ে যেতে পারে, তাই স্বাস্থ্যক্যাম্প বসানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্যাম উদ্বোধন করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
জানা গেছে, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় বার্ধক্যজনিত কারণে এরই মধ্যে দুই মুসল্লি মারা গেছেন।
ইসলাম ও ইজতেমার দাওয়াতের কাজে তাবলীগ জামাতের যারা মসজিদে মসজিদে বিভিন্ন মেয়াদের চিল্লায় ছিলেন তারা এরই মধ্যে প্যান্ডেলে ঠাঁই নিয়েছেন।লাখ লাখ মুসুল্লীর অবস্থানের জন্য বিশাল প্যান্ডেলকে খিত্তায় খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। জেলা অনুযায়ি খিত্তায় খিত্তায় ঠাঁই না পেয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন মাঠের পাশে খোলা আকাশের নিচে।
তবে মুসুল্লিদের আগমন এবার বেড়েছে এবং আগের চেয়ে নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও আরও বাড়ানোর দাবি রয়েছে তাদের।
এদিকে ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন করে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
আরও পড়ুন: বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু
এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, ইজতেমার ময়দানে এবং বিমানবন্দর থেকে আসা-যাওয়ার পথে বিদেশি মুসল্লিদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। দেশীয় মুসল্লীদের জন্য ময়দান ও ময়দানের আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
প্রতিবারের মতো এবারও ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামারায় মনিটরিং, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতাসহ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে ইজতেমা মাঠকে ঘিরে। ইজতেমার দেশী-বিদেশী শীর্ষ পর্যায়ের মুরৃব্বীরা তাবলীগের ৬ ওসুলের ওপর বয়ান করবেন।
গত কয়েক বছর থেকে তাবলীগের দুই গ্রুপ আলাদা করে একই জায়গায় ইজতেমা করছেন। প্রথম পর্যায়ে মাওলানা হাফেজ জোবায়ের পন্থি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ভারতের মাওলানা সাদ পন্থি তাবলীগ জামায়াত সদস্যরা ইজতেমা করবেন। দুই গ্রুপের ইজতেমায় দেশীয় মুসুল্লিদের সঙ্গে বিদেশি মুসল্লীগণ এই ময়দানে সমবেত হবেন এবাদত-বন্দেগী ও আল্লাহকে রাজি খুশি করার মাধ্যমে পরকালের চির শান্তির আশায়।
করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে গত দু'বছর বিশ্ব ইজতেমা হয়নি। দু'বছর পর এবার দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১৩ থেকে ১৫ জানুয়ারি এবং মাঝখানে চারদিন বিরতি দিয়ে ২০ থেকে ২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
রেওয়াজ অনুযায়ী আখেরী মোনাজাত হবে প্রতি পর্বের ইজতেমার শেষদিনে। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব ইজতেমায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে: আইজিপি
বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত থাকবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এপিসোডস অব হার গেজ: ঢাকা লিট ফেস্টে মাকসুদা ইকবাল নিপার প্রাণবন্ত চিত্রকর্মের মোড়ক উন্মোচন
বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মাকসুদা ইকবাল নিপার প্রাণবন্তভাবে তৈরি করা বিমূর্ত চিত্রকর্মগুলোর ক্যালিডোস্কোপিক জগৎ ব্যক্ত করে কসমস বুকস দশম ঢাকা সাহিত্য উৎসব বা ঢাকা লিট ফেস্টে (ডিএলএফ) 'এপিসোডস অব হার গেজ'-এর মোড়ক উন্মোচন করেছে।
কসমস বুকস থেকে প্রকাশিত নিপার জাঁকজমকপূর্ণ শিল্পকর্মের এটি প্রথম প্রকাশনা। শুক্রবার রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে ডিএলএফ-এর কসমস বুকস স্টলে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ইউএনবি’র ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন স্ট্র্যাটেজিস্ট নাবিলা রহমান।
কসমস বুকসকে তার প্রথম চিত্রকর্মের সমষ্টিগত প্রকাশনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাকসুদা ইকবাল নিপা বলেন যে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তিন বছরের বিরতিতে এই বছরের ডিএলএফে ফিরে আসতে পেরে তিনি সম্মানিত হয়েছেন।
নিপা ইউএনবিকে বলেন, ‘বইটির ধারণাটি আমার সমসাময়িক শিল্পকর্মগুলো থেকে প্রতিফলিত হয়েছে, যা আমি জাপানে আমার স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের সময় শুরু করেছিলাম। এই বইটিতে আমার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনীর ২০০টির মতো শিল্পকর্ম রয়েছে এবং এটি শিল্পী ও শিল্প লেখক জাভেদ জলিলের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও এই প্রকাশনাটি এর আগে জাতীয় জাদুঘরে আমার একক প্রদর্শনীর সময় ও পরে ঢাকা আর্ট সামিট-এ প্রকাশ করা হয়েছিল। এই প্রকাশনার মাধ্যমে এই প্রথম আমার চিত্রকর্মের সমষ্টি ডিএলএফে প্রদর্শিত হচ্ছে।’
বইটি সম্পাদনা করেছেন ক্যাথরিন গ্রেস গার্ডেনার ও মুবিন শাদমান খান এবং লেআউট ও ডিজাইন তৈরি করেছেন এআরকে রিপন। বইটির জন্য তার শিল্পকর্মের ছবি তুলেছেন নিপার স্বামী; স্বনামধন্য শিল্পী মোহাম্মদ ইকবাল, এআরকে রিপন, হোসেন শহীদ ইকো, মিজানুর রহমান খোকা, রেজাউল হক, রাসেল চৌধুরী ও সৌরভ চৌধুরী।
আরও পড়ুন: কসমস ফাউন্ডেশনের প্রদর্শনীতে আলেকজান্দ্রু পোটেকা ও নিপার শিল্পকর্ম
বইটিতে প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ার চিত্রগ্রাহক ডক্টর জিম ফ্রেজিয়ারের একটি মুখবন্ধও রয়েছে, যিনি ক্যামেরার পেছনে একজন পথপ্রদর্শক এবং স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরোর সঙ্গে কাজ করেছেন। একাধিক পুরস্কার বিজয়ী এই প্রকৃতিবিদ ২০১৫-২০১৬ সালে যখন বাংলাদেশে ছিলেন তখন নিপার কাজের প্রেমে পড়ে যান।
বিমূর্ত চিত্রকলার উজ্জ্বল জ্ঞানের সঙ্গে একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী ও প্রাণবন্ত বিমূর্ততার জন্য পরিচিত মাকসুদা ইকবাল নিপা ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে তার বিএফএ (ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং) ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০২ সালে তিনি জাপানের আইচি ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশনে পোস্ট-গ্রাজুয়েট রিসার্চ কোর্সে (অয়েল পেইন্টিং) ভর্তি হন। নিপা ২০০৪ সালে আইচি ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশন থেকে ফাইন আর্টস (পেইন্টিং) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। জাপানে থাকাকালীন নিপার শৈল্পিক শৈলীটি প্রতিনিধিত্বমূলক থেকে তার নিজস্ব ধাঁচের বিমূর্ততায় ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়।
ফরাসিতে একটি বচন রয়েছে যে ‘আর্ট ফর আর্ট’স সেক’ বা শিল্পের জন্য শিল্প – এর একজন প্রবক্তা হিসেবে নিপার যাত্রা সর্বদাই স্বাধীন এবং কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক, নৈতিক, উপযোগী বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ না করার জন্য অবিচল। নিপার শিল্পকর্মগুলো বিমূর্ত, আবেগপ্রবণ, একজন নারী ও একজন ব্যক্তি হিসেবে তিনি প্রতিদিন যে কষ্ট সহ্য করেন তার ভিজুয়াল ডায়েরি।
তিনি সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষা ও যে নিপীড়নের মুখোমুখি হন তা থেকে পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থেকেই শিল্পকর্মগুলো তৈরি করতে অনুপ্রাণিত হন। নিপীড়ন থেকে মুক্তি বলতে কী বোঝায় তা আবিষ্কার করার সময় তিনি বড় ক্যানভাসে তৈলচিত্র তৈরি করেন ও পরীক্ষা করেন।
একজন নারী ও শিল্পী হিসেবে নিপার যাত্রা হল জন্মের স্থান, দীর্ঘকাল ধরে চিন্তাভাবনা ও নীরব কল্পনার অস্পষ্ট উড্ডয়ন নিয়ে পরিশ্রম করা। তার সচিত্র পরামিতি হল দেখা, অদেখার ক্ষেত্র ও চোখ দিয়ে নেয়া তথ্যের মুহূর্তগুলোর গ্রহণ। কিন্তু তার যোগসূত্র হল পরিবেশের সংবেদনশীল অচেতন মিলনের সঙ্গে যেখানে সে পালিয়ে বেড়ায়, সেখানে সুখের সন্ধান করা।
কৌতূহল ও সন্দেহের আবরণের আড়ালে লুকিয়ে থাকা শব্দগুলো তার কল্পনাপ্রসূত চিন্তার ক্ষেত্র।
আরও পড়ুন: ‘ধারণার চেয়েও বেশি’: মধ্যযুগে বাংলায় হাবশি শাসন এবং আফ্রিকা-ভারত সংযোগ সম্পর্কে ড. কেনেথ রবিন্স
একজন শিল্পী হিসেবে নিপার অভ্যন্তরীণ মেজাজ ও লুকানো আত্মার স্মৃতিচারণ হছে- একটি অন্বেষণ, যা তিনি অস্থির তাগিদ ও মেজাজের নীরব আভাস দিয়ে ধ্যান করেন। যা ক্যানভাসের বিদ্যমান স্ব-দৃষ্টিতে থাকা ডায়েরির সঙ্গে ধীরে ধীরে বেঁচে থাকে।
নিপা তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর, ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তর, জাপানের টয়োটা মিউনিসিপ্যাল আর্ট মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস আর্ট মিউজিয়াম, কোরিয়ার সিউলের ইয়ংওন কর্পোরেশনসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য একক ও দলীয় শো করেছেন। তিনি তার নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন। নিপা জাপান, চীন ও বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও অনুদান পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: 'আফ্রো-দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মধ্যকার ঐতিহাসিক ও অনাবিষ্কৃত সম্পর্কের বিষয়ে মনোযোগ বাড়ানো প্রয়োজন'