আইনশৃঙ্খলা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের প্রশ্নই আসে না: তথ্যমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তুলনা করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ওইসব দেশের চেয়ে ভালো।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের প্রশ্নই আসে না।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকরা যাতে এ আইনে হয়রানির শিকার না হয়, সে জন্য আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে আমেরিকার তুলনায় আমাদের আইন অনেক সহজ।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ডের অনুমতি দেয়, কিন্তু আমাদের আইনে অতো কারাদণ্ড নেই।
আরও পড়ুন: কোনো মতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা যায় না: আইনমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে তুলনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল অপরাধের জন্য যদি কারও মৃত্যু হয়, তবে আমেরিকার আইনে তাতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড রাখা হয়েছে। যে কারণে আমাদের আইন তাদের চেয়ে অনেক সহজ।
তিনি বলেন, মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আইনটি প্রণীত হয়েছে এবং প্রতিটি দেশেই এই ধরনের আইন রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সাইবার আইন আরও কঠোর।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে তারা আরও সজাগ রয়েছে, যাতে তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে হয়রানির শিকার না হয়।
তিনি বলেন, অতীতের তুলনায় এখন গণমাধ্যমকর্মীরা কম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দায়িত্ব পালনকালে বাইরের কোনো হুমকি এলে সাংবাদিকদের সাহসের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
মন্ত্রী জানান, সাংবাদিকদের সহায়তায় সরকার সচেষ্ট, সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সুলতানার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার হয়েছে: আইনমন্ত্রী
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন পেলেন মাহিয়া মাহি
দুর্নীতি মামলায় সাবেক এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা তিন মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
উভয়ের উপস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী একে নূর উদ্দীন আহম্মেদ।
অ্যাডভোকেট নূর উদ্দীন বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে খাস জমি অবৈধভাবে দখল ও অর্থ আত্নসাতের অভিযোগে দুদক তাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে। ওই মামলা বর্তমানে বরিশাল বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে রয়েছে। আদালতের বিচারক মেহেদী আল মাসুদ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন। পরে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য করেছেন। এর মাধ্যমে মামলার বিচার কাজ শুরু হল।
মামলার বরাত দিয়ে আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশিদ বলেন, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আলী আকবর বাদী হয়ে মামলা করেন। তিন মামলায় পিরোজপুর ১ আসনের সাবেক এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রীকে আসামিকে করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আউয়াল দম্পতির ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ নিয়ে হাইকোর্টের রুল
এর মধ্যে একটি মামলায় তার স্ত্রী লায়লা পারভীন নিজের নাম লায়লা ইরাদ উল্লেখ করে ২০১৪ সালের ২৫ অগাষ্ট নেছারাবাদ উপজেলার স্বরুপকাঠি মৌজায় সরকারী ভিপি ৫ শতাংশ জমি ইজারা নেয়। ইজারা নেয়ার আবেদন পত্রে লায়লা ইরাদের সাক্ষর ছিলো।
ইজারার চুক্তি অনুযায়ী আধা-পাকা ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও দ্বিতল ভবন করে একেএম আউয়াল ফাউন্ডেশন ও পাঠাগারের নামে অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন। ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল দুদক কর্মকর্তা আলী আকবর স্বামী স্ত্রীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
একই কর্মকর্তার করা দ্বিতীয় মামলায় অভিযোগ আনা হয়, একেএমএ আউয়াল ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পিরোজপুর সদরে রাজার পুকুরের জমি স্ত্রী লায়লা পারভীনের পরিবর্তে লায়লা আউয়াল উল্লেখ ৪৪ শতাংশ জমি উভয়ের নামে নেয়। পরে পুকুর ভরাট করে অবৈধভাবে সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখলে নেয়। একই কর্মকর্তা ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন।
দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাঠি পল্লী বিদ্যুতের সাব জোনাল অফিসের পাশে বৈঠাকাঠি মৌজায় ৩ শতাংশ খাস জমি স্ত্রী লায়লা পারভীনের নামে নিয়ে দ্বিতল ভবন করে মাসিক ১৭ হাজার ২৫০ টাকা চুক্তিতে ভাড়া দিয়েছে। এ মামলায় একই কর্মকর্তা ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সাবেক এমপি আউয়াল দম্পতির সম্পদ জব্দের আদেশ বহাল
আউয়াল দম্পতির আগাম জামিন আপিলেও বহাল
বায়ু দূষণ: ঢাকায় ৮ যানবাহন, ৬ প্রতিষ্ঠান ও ৬ ইটভাটার জরিমানা
ঢাকা জেলায় বায়ু দূষণের দায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে আটটি যানবাহন, ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও ছয়টি ইটভাটাকে ২০লাখ ৫৭ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে ডিওই-এর মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইংয়ের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ, ধানমন্ডি, খিলগাঁও এবং ধামরাই এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
ঢাকার ধামরাই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ছয়টি অবৈধ ইটভাটা থেকে মোট ২০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এদিকে ধানমন্ডিতে কালো ধোঁয়া ছেড়ে বায়ু দূষিত করায় আটটি গাড়ির কাছ থেকে জরিমানা বাবদ ১২ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণসহ পরিবেশ সংরক্ষণ অভিযান জোরদার করার লক্ষ্যে বুধবার মাসব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু করে।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে জরুরি সমন্বিত পদক্ষেপের তাগিদ বিশ্বব্যাংকের
দেশকে দূষণমুক্ত করা হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বঙ্গবাজারে পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় ৩ জনের রিমান্ড
রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণ চেষ্টার সময় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় তিনজনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার আসামিদের আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদুল হাসান। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার ।
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো.আতাউল্লাহ তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. রাজু, শাওন ও শাহাদাৎ হোসেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক ইস্রাফিল হাওলাদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটে আগুন নেভানোর জন্য বংশাল থানাধীন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরসহ অন্যান্য ফায়ার সার্ভিসের অনেকগুলো ইউনিট কাজ করে। একপর্যায়ে বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটে লাগা আগুন আশপাশের মার্কেটসহ বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টাসের এনেক্সকো ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় অজ্ঞাতনামা ২৫০-৩০০ জন দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্রসহ বেআইনিভাবে জড়ো হয়ে বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটের বিপরীত পাশে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে হঠাৎ করেই ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তারা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সরকারি সম্পত্তির ক্ষয় ক্ষতিসহ ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়ে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেন।
বাদী ও তার সহযোগিরা সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে দৃষ্কৃতকারীদের প্রতিহতের চেষ্টা করলে একপর্যায়ে অজ্ঞাতনামা আসামিরা তাদের সরকারি কাজে বাধা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, লোহার রড ও লাটিসোঁটা দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।
এতে বাদী গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলে থাকা এসআই (নিরস্ত্র) মো. রুবেল খানও জখম হন।
বগুড়ায় আ.লীগ নেতা দুলুর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে ১ কোটি ৬ লক্ষ ১৩ হাজার টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপনের অভিযোগে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য আসাদুর রহমান দুলুর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৫ এপ্রিল) দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ে সংস্থার সহকারি পরিচালক মো. তারিকুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
দুদক জানায়, দুলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি ওই বছরের ২৫ জুলাই তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। দুলুর দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে দেখা যায় তার স্থাবর অস্থাবর মিলে সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৯২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৯ টাকা। কিন্তু যাচাইকালে আওয়ামী লীগের এই নেতার স্থাবর-অস্থাবর মিলে সম্পদ পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭২ লাখ ৭৭ হাজার ২০৯ টাকার। তার পারিবারিক ঋণ ও খরচ বাদ দিলে দুলুর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৭১ লাখ ৫২ হাজার ৩৬ টাকা। এই হিসেবে দুলু জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে ১ কোটি ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৯০ টাকার সম্পদ ভোগ-দখল রেখেছেন।
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা দুলুর দুর্নীতি মামলার বিচার ১ বছরে শেষ করার নির্দেশ
মামলার বাদী দুদকের সহকারি পরিচালক মো. তারিকুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগ নেতা দুলু অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ সালের ২৬ এর (২) ও ২৭ এর (১) ধারায় মামলা হয়েছে।
দুলু তার সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য, আয়ের উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে স্থানান্তর ও রূপান্তর করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (৩) (২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু বলেছেন, ‘আমার তথ্য গোপন করার কিছু নেই। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’
আরও পড়ুন: বিএনপি নেতা রিজভী ও দুলুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
বিএনপি নেতা মিনু, দুলুসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
৪২ ঘন্টায় হত্যা মামলার তদন্ত: সেই এসআইয়ের বরখাস্তের আদেশ স্থগিত, তদন্ত চলবে
মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের মো. রুবেল (২২) হত্যার ঘটনায় ‘মরদেহ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’র ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তে হাইকোর্টের আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে পুলিশ সুপারের নিচে নয়, এমন কর্মকর্তা দিয়ে ৬০ দিনের মধ্যে এ ঘটনা এবং হত্যা মামলাটির পুনঃতদন্তের নির্দেশ বহাল রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আট সপ্তাহের জন্য এই স্থগিতাদেশ দেন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী।
এর আগে কেস ডকেটসহ তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান আদালতে হাজির হওয়ার পর গত ৩ এপ্রিল বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে বরখাস্তের ওই আদেশ দিয়েছিলেন। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারকে ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
একইসঙ্গে এ হত্যা মামলা পিবিআই প্রধানকে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পুলিশ সুপারের নিচে নয়-পিবিআইয়ের এমন একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে এই হত্যা মামলাটি ৬০ দিনের মধ্যে পুনঃতদন্ত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। আর রিট আবেদনটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানকে বরখাস্ত রাখতে বলা হয়েছে। হাইকোর্ট ৫জুন এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ধার্য করেন। পরে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে।
‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’- শিরোনামে গত ২ মার্চ প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ওই মামলার নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে আসামি সোহেল ওরফে নুরুন্নবী ও বাদী চম্পা আক্তার ওরফে অঞ্জনা গত ৫ মার্চ ওই আবেদন করেন। সোহেল ও চম্পা সম্পর্কে ভাই-বোন। আর নিহত রুবেল সোহেলের ভগ্নিপতি।
আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৫ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমানকে কেস ডকেটসহ ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
সে অনুসারে তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে হাজির হন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ৩ এপ্রিল আদালত আদেশ দেন।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, লাশ রাত দেড়টায় উদ্ধারের পর সুরতহাল করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। এরপর মামলা, আসামি গ্রেপ্তার, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মানচিত্র তৈরি, সাক্ষ্য গ্রহণসহ একে একে অন্তত ৯টি ধাপ পেরিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত শেষ মাত্র ২২ ঘণ্টায়। পরবর্তী ২০ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়সহ তদন্তের সব প্রক্রিয়া শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অর্থাৎ লাশ উদ্ধার থেকে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পুলিশের সময় লেগেছে মাত্র ৪২ ঘণ্টা। একটি খুনের মামলার তদন্তে এমন ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুই দিনের কম সময়ে খুনের মামলার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনায় অনেকে প্রশংসা করলেও প্রশ্ন তুলেছেন আইন ও তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা বলছেন, মামলাটির তদন্ত শেষ হয়েছে রকেটের চেয়েও দ্রুতগতিতে। এটা ব্যতিক্রমী ও আশ্চর্যজনক ঘটনা। পুলিশের এমন তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাও।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দিনগত রাতে মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের একটি হ্যাচারিতে খুন হন মো. রুবেল (২২)। পরদিন রুবেলের স্ত্রী বাদী হয়ে সোহেল নামে একজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।
পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে রুবেল খুন হন। ৪০ মিনিট পর সোহেল ওরফে নুরনবী (৩০) নামে এক যুবক থানায় গিয়ে নিজে রুবেলকে খুন করেছেন বলে দাবি করেন। পুলিশ সোহেলকে নিয়ে সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে রাত দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। সেখান থেকে একটি রামদা উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাত ১টা ৫০ মিনিটের দিকে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তখন দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী নেওয়া হয়।
আরও বলা হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নেয় পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন, তথ্য সংগ্রহ, ঘটনাস্থলের মানচিত্র তৈরি করেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে রুবেলের স্ত্রী চম্পা আক্তার বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। পরে ওই মামলায় সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টা পর্যন্ত সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। বিকেলে সোহেল জবানবন্দি দিলে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
রানা প্লাজার সোহেল রানার জামিন, মুক্তিতে বাধা নেই
রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের ফলে তার কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মুনমুন আক্তার।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানান, রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। এর ফলে তার মুক্তিতে বাধা নেই।
এর আগে গত বছরের ১ মার্চ রানা প্লাজা ধস ও হতাহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ভবনটির মালিক সোহেল রানাকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই রুলের চূড়ান্ত নিয়ে আজ সোহেল রানাকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা। ভবনের নিচে চাপা পড়ে সারেন পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রায় দুই হাজার শ্রমিক আহত ও পঙ্গু হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: রানা প্লাজায় আহতদের ৫৬ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি: একশনএইড
ওই ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, রানার বাবা আব্দুল খালেক, রানার মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌরসভার মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারি প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম এপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলার বিচার এখনও চলমান।
আরও পড়ুন: অবশেষে রানা প্লাজা ধস মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
রানা প্লাজা ধস : ৮ বছরে কেমন আছেন ঠাকুরগাঁওয়ের ৩ পরিবার
ডাক্তার-নার্স পরিচয়ে বাড়িতে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬: ডিএমপি
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বুধবার ডাকাত দলের নেতাসহ ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপি জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা নিজেদেরকে চিকিৎসক ও নার্স পরিচয় দিয়ে অ্যাপ্রোন, মাস্ক ও আইডি কার্ড পরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মানুষের বাড়িতে ডাকাতি করত।
ডিএমপির মিডিয়া উইংয়ের উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন জানান, অভিযানে ছয়টি ল্যাপটপ, ১০টি মোবাইল ফোন ও দুটি ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ডিএমপির মাদকবিরোধী অভিযানে ৭৪ জন গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিম (২২), তন্ময় বিশ্বাস (৩০), স্বপন শেখ (৪৫), নুরুল ইসলাম (২৭), কলিম উদ্দিন কালু ওরফে কলিউল্লাহ (৪০) ও মো. মোখলেছুর রহমান।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গুলশান থানা পুলিশের একটি দল বুধবার গুলশান এলাকা থেকে এই চক্রের কথিত মূল হোতা আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিমকে গ্রেপ্তার করে। পরে আফসানার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গুলশান থানা পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তার পাঁচ 'সহযোগীকে' গ্রেপ্তার করে।
ডিএমপি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য।
তাদের বিরুদ্ধে গুলশানসহ বিভিন্ন থানায় মোট ১৪টি মামলা ও দুটি পরোয়ানা জারি করা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিনা পরোয়ানায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করতে ডিএমপিকে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি
কুমিল্লায় হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড
সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আমেরিকা ফেরত আকবর হোসেন বাবুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিচারক নাসরিন জাহান এ আদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- লিপি আক্তার, রহমত উল্লাহ রনি, কামাল হোসেন, তাজুল ইসলাম ও সজিব। তারা সবাই নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার উলুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নিহতের ছোট ভাইয়ের বউ লিপি আক্তার। অন্যরা হত্যাকাণ্ডে সহযোগী।
রায়ের সময় লিপি আক্তার ও সজিব পলাতক ছিলেন। বাকি তিন আসামির সামনেই রায় পড়ে শোনান বিচারক।
আরও পড়ুন: নাটোরে কলেজছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহিদ হোসেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১ আগস্ট নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মুদাফফরগঞ্জ এলাকায় একটি ডোবার মধ্যে থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরে জানা যায় যে উদ্ধার লাশ নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার উলুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আমেরিকা ফেরত আকবর হোসেন বাবুলের। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম।
এ ঘটনায় কুমিল্লা লাকসাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মিল্টন রহমান বাদী হয়ে পাঁচ জনকে আসামি করে একটি হত্যা দায়ের করেন।
এতে ১৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। আসামিদের মধ্যে তাজুল ইসলাম রুবেল ছাড়া বাকি চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
আরও পড়ুন: যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কেন অসাংবিধানিক নয়: হাইকোর্ট
র্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু: উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
কমিটিতে নওগাঁর জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়েছে।
তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না: মোমেন
তদন্তকালীন সময়ে জেসমিনকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে র্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদেরকে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও গ্রেপ্তার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র্যাব।
এরপর র্যাব হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
২৪ মার্চ সকালে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর গত ২৭ মার্চ হাইকোর্টের নজরে নিয়ে স্বত:প্রণোদিত আদেশ চেয়েছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। পরে আদালতের নির্দেশে ২৮ মার্চ তিনি হাইকোর্টে এ বিষয়ে রিট আবেদন দায়ের করেন।
রিটে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ও র্যাবের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ওই দিনই রিট আবেদনের আরজি তুলে ধরে রিটকারী মনোজ কুমার আদালতে বলেন, এ ঘটনায় কোনো বিষয়ও বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই। র্যাব গঠন করা হয়েছিল দাগি চোর-ডাকাত, মাদক চোরাকারবারিদের ধরতে।
এই নারীকে (সুলতানা জেসমিনকে) আটক করা হয় ২২ মার্চ। আর ২৪ মার্চ তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এই আইনে কাউকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার পুলিশের থাকলেও র্যাবের নেই।
তাছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারা অনুসারে সুলতানা জেসমিনকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, কোনো অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতেই র্যাব এ ধরনের বেআইনি ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা আজ অসহায়। র্যাব যাকে ইচ্ছা তাকে তুলে নিয়ে উধাও করে দিচ্ছে। এটি (সুলতানা জেসমিনকে আটক, হেফাজত, জিজ্ঞাসাবাদ) সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে করা হয়েছে।
তাছাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সুলতানা জেসমিনের মাথায় আঘাত থাকার কথা বলেছেন, যা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসেছে।
আরও পড়ুন: র্যাব হেফাজতে মৃত্যু: জেসমিনের ছেলে ও ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ
ফলে র্যাবের কর্মকাণ্ড ও নারীর মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। যে কারণে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
এরপর শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সুলতানা জেসমিনের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তুলে ধরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ ১১ টা ৫০ মিনিটে নওগাঁ সদরের নওজোয়ান মাঠের সামনে থেকে ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুসারে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়।
পরে জনসাধারণের সামনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব।
এর আগে আটক ওই নারীর মোবাইল ফোন থেকে অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য ও নথি উদ্ধার করা হয়।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, একজন নাগরিক জঘন্য অপরাধী হতে পারে। অত্যন্ত খারাপ কাজ করতে পারে। সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া (প্রসিডিউর) আছে। দিনশেষে আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যখন র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করল তখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে পুলিশ আটক করলেও একটা কথা ছিল। আইনে তাদের ক্ষমতা আছে।
এই আইনের ৩৯ ধারায় দেখতে পাচ্ছি তদন্তের ক্ষমতা পুলিশ অফিসারকে দেওয়া হয়েছে। এখানে র্যাবের বিষয়টি তো সুর্নিদিষ্টভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কথা হচ্ছে র্যাব তাকে উঠিয়ে নিয়েছে, এর পরই তাকে পুলিশে দেবে।
কিন্তু এখানে সেটা দেখা যাচ্ছে না।
সেদিন হাইকোর্ট কোনো মামলা ছাড়াই নওগাঁর সুলতানা জেসমিন (৪৫)কে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত যে প্রক্রিয়া তা আইনগতভাবে কতটুকু সঠিক ছিল তা জানতে চান।
আদালত বলেছেন, আটকের পর সুলতানা জেসমিনকে সম্মানজনক জায়গায় (থানা অথবা কার্যালয়ে) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল কিনা? উঠিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া আইনগতভাবে হয়েছে কিনা? তাকে একটা অভিযোগের ভিত্তিতে তুলে নেওয়া র্যাবের জুরিসডিকশনে (এখতিয়ার) ছিল কিনা? রাষ্ট্রপক্ষকে বুধবারের মধ্যে এসব প্রশ্নের জবাব দাখিল করতে বলেন।
ওই আদেশ অনুযায়ী আজ রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শোনার পর হাইকোর্ট সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন ও তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের প্রতি নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: জেসমিনের মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে, র্যাব হেফাজতে নির্যাতনে নয়: চিকিৎসক