আবরার আহমেদের অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারিটি জোরালো ড্রাইভে সীমানাছাড়া করলেন সাকিব আল হাসান, সঙ্গে সঙ্গে অন্যপ্রান্ত থেকে গর্জন করে উঠলেন মুশফিকুর রহিম। উল্লাস শোনা গেল ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তসহ বাকি সবারও। সব মিলিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো, এক কথায় তা ‘পাকিস্তানের বুকে বাংলাদেশের বিজয় উল্লাস’।
হ্যাঁ, পাকিস্তানকে তাদের মাটিতেই হোয়াইটওয়াশ করে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করেছে টাইগাররা।
রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই মাঠেই প্রথম ম্যাচে তারা জেতে ১০ উইকেটে।
প্রথম টেস্ট জেতায় সিরিজ জয় করতে দ্বিতীয় ম্যাচটিতে হার এড়ালেই চলত বাংলাদেশের। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হলে সেই সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়। তবে দ্বিতীয় দিন থেকে খেলা শুরু হলে পাকিস্তানকে ২৭৪ রানে বেঁধে ফেলে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজ একাই পাঁচ উইকেট নেন, আর সাকিব তিন উইকেট নিলে দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই পাকিস্তানের ইনিংস গুটিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: মিরাজের ঘূর্ণিতে ২৭৪ রানে থামল পাকিস্তান
দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে ১০ রান সংগ্রহ দিনের খেলা শেষ করলেও পরের দিন সকালটা দুঃস্বপ্নের মতো শুরু হয় বাংলাদেশের। দলীয় ২৬ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে চোখে সর্ষের ফুল দেখতে থাকে টাইগাররা। তবে ধ্বংস্তুপে দাঁড়িয়ে আশার ফুল ফোটান লিটন দাস ও মিরাজ। বল হাতে পাকিস্তানের ৫ উইকেট তোলার পর ব্যক্তিগত ৭৮ রান করে লিটনের সঙ্গে রেকর্ড গড়া জুটিতে বাংলাদেশকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলতে বড় ভুমিকা রাখেন মিরাজ। অন্য প্রান্তে ১৩৮ রান করে দলকে মাত্র ১২ রান দূরে রেখে তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে লিটন বিদায় নিলে বাংলাদেশও থামে ২৬২ রানেই। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে বল হাতে অসাধারণ পারফর্ম করেন পাকিস্তানের খুররাম শাহজাদ। একাই ৬ উইকেট নিয়ে টাইগারদের ব্যাটিং লাইন-আপ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেন তিনি।
দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে বোলিং ঝলক দেখায় বাংলাদেশের পেসাররা। প্রথম ইনিংসে স্পিনাররা দাপট দেখালেও দ্বিতীয় ইনিংসে দশ উইকেটের সবকটি নিয়েছেন পেসাররা। টেস্টে এই প্রথম এক ইনিংসে বাংলাদেশের পেসাররাই সবগুলো উইকেট নিলেন। এর মধ্যে হাসান মাহমুদের ফাইফার এবং আগুনে বোলিংয়ে নাহিদ রানা চার উইকেট নিলে লিড বেশি বড় করতে পারেনি পাকিস্তানের ব্যাটাররা। তারা মাত্র ১৭২ রানে গুটিয়ে গেলে সব মিলিয়ে ১৮৫ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। এই ইনিংসে ১৫২ কিলোমিটার গতির বল করে বাংলাদেশের সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বোলারও হয়ে যায় ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় আন্তর্জাতিক টেস্ট খেলতে নামা ২১ বছর বয়সী পেসার নাহিদ।