অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের ৮৫ শতাংশের বেশি এখনও আইনি সুরক্ষার আওতায় আনা হয়নি উল্লেখ করে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কমিশন তাদের সুপারিশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতির বিষয়টি তুলে ধরবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শ্রম ভবনে আয়োজিত শ্রম সংস্কার কমিশনের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমবাজারে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। আইটি, পরিবহন, খাদ্য সরবরাহের মতো খাতে বিপুলসংখ্যক মানুষ কোনো ধরনের আইনি সুরক্ষা ছাড়াই কাজ করছে। প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি শ্রমিক শ্রমবাজারে যোগ দিচ্ছে। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা চরম আকার ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিকে পুঁজি করে চলছে ব্যাপক শ্রমিক শোষণ ও নির্যাতন। দেশে বিদ্যমান শ্রম আইন মোট শ্রমিকের একটি সামান্য অংশের জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে।
অবশিষ্ট শ্রমিকদের জন্য তেমন কোনো সুরক্ষা কাঠামো নেই উল্লেখ করে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, দেশে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক বিদেশ চলে যাচ্ছেন। সেখানে কম মজুরিতে হলেও বিপজ্জনক ও অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
প্রতিদিন বাংলাদেশি শ্রমিকদের লাশ বিদেশ থেকে দেশে আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ব্যাপক শ্রম সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ: অধ্যাপক ইউনূস
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, শিল্পক্ষেত্রে সুষ্ঠু সম্পর্ক গড়ে তুলতে দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের বিকল্প নেই। এটি হলে শ্রমিক ও মালিকপক্ষ যৌথভাবে যথাযথ উৎপাদনশীল ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
কমিশন প্রধান বলেন, ‘সব ক্ষেত্রে না হলেও দেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই দুপক্ষ পরস্পরকে প্রতিপক্ষ ভাবার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। পুরো জাতি যদি এর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে, তাহলে এর মূল্য চোকাতে হবে।’
‘শিল্প খাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। শিল্প শ্রমিকদের ‘শ্রমিক’ হিসেবে আইনি স্বীকৃতি থাকলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অধিকাংশ শ্রমিকের তা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে-বিদেশের কর্মরত শ্রমজীবীরা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলেও তারা এখনও রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রত্যাশিত মর্যাদা পায়নি। ফলে সামাজিকভাবে অসম্মানজনক অবস্থায় তাদের বসবাস করতে হয়।’
‘সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, শ্রমিকদের ছোট করে দেখা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে। গৃহকর্মীরা প্রতিটি ঘরে নির্যাতনের শিকার হন। প্রতিনিয়ত নির্মাণ শ্রমিকদের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া জাহাজডুবি বা পরিবহন খাতে অব্যাহত দুর্ঘটনা শ্রমিকদের প্রতি সমাজ ও নীতিনির্ধারকদের হেয় মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।’
এ সময় দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিক এবং সব অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণ রক্ষায় ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান, যাতে ভবিষ্যতে শ্রমিকরা সমাজের ‘সম্পদ’ হিসেবে বিবেচিত হন এবং পরিবার নিয়ে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেন।