বাংলাদেশের অধিকাংশ উপকূলীয় জেলা বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে উপযুক্ত গভীরতায় মিঠা পানির জলরাশি পাওয়া যায় না এবং ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের পানি অত্যন্ত লবণাক্ত। ফলে এইসব অঞ্চলের মানুষ বিশুদ্ধ পানির ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলায় সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাতার চ্যারিটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা বজায় রেখে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে সংস্থাটি।
খোঁজ নিযে জানা গেছে, বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণে এসব এলাকার মানুষ প্রায়ই জলবাহিত রোগ যেমন, চর্মরোগ, কলেরা এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। এই সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রচেষ্টা থাকলেও তা অপর্যাপ্ত। ফলে এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ এখনও বিশুদ্ধ পানি ছাড়াই দিন কাটাচ্ছেন।
জানা যায়, বিশুদ্ধ পানির সংকট সমাধানে কাতার চ্যারিটি দীর্ঘদিন ধরে গভীর কূপ খনন এবং পানি শোধনাগার স্থাপনের মাধ্যমে উপকূলীয় জেলা বাসিন্দাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য কাজ করে আসছে। সম্প্রতি কাতার চ্যারিটি বাংলাদেশের ৫টি জেলায় ৪১০টি পানি শোধনাগার স্থাপন করেছে, যা ২২,০০০-এরও বেশি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে উপকৃত করছে। উপকৃত জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, যশোর, বরগুনা ও ঝালকাঠি।
সম্প্রতি সাতক্ষীরা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কাতার চ্যারিটি ২৬৮টি পানি শোধনাগার স্থাপন করেছে। প্রতিটি স্থানেই স্থানীয় লোকজন ওয়াটার প্ল্যান্ট থেকে পানীয় সংগ্রহ করতে জড়ো হয়েছে। সুবিধাভোগীরা তাদের ইতিবাচক অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
ইন্দিরা গ্রামের বাসিন্দা পাপিয়া খাতুন বলেন, আগে আমরা নলকূপের পানি পান করতাম যা বিশুদ্ধ ছিল না। কাতার চ্যারিটি যে প্ল্যান্ট বসিয়েছে তা আমাদের জন্য বড় স্বস্তির।
আশাশুনি উপজেলার সরদার পাড়া গ্রামের আরেক বাসিন্দা রওশন আরা বলেন, আগে গভীর নলকূপ থেকে পানের পানি সংগ্রহ করতে অনেক দূর হেঁটে যেতে হতো। তবে সেই পানি নিয়ে অনেক সমস্যা ছিল। এখন আমরা এই প্ল্যান্ট থেকে বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি।
একই গ্রামের শিক্ষক মোঃ রায়হান বলেন, পানিতে আয়রন ও আর্সেনিকের মাত্রা বেশি থাকায় আমরা পেটের বিভিন্ন অসুখে ভুগতাম। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে কোনো ঝামেলা ছাড়াই কাতার চ্যারিটির প্ল্যান্টের পানি ব্যবহার করছি।
কাতার চ্যারিটির জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এই কর্মকান্ডের প্রশংসা করেছেন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী জেলা হওয়ায় এ জেলায় বিশুদ্ধ পানির ব্যাপক সংকট আছে। এসব এলাকার উপরিভাগের পানি লবণাক্ত এবং অনিরাপদ মাত্রায় আয়রন রয়েছে। এই অবস্থায় কাতার চ্যারিটির নেয়া উদ্যোগে স্থানীয়দের একটি বড় অংশ দূষিত পানির পরিবর্তে বিশুদ্ধ পানি পান করছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা কৌশিক রায় বলেন, সাতক্ষীরা অঞ্চলটি অত্যন্ত লবণাক্ত। এখানকার পানিতে আয়রন ও আর্সেনিকের মাত্রা বেশি। ফলে এখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কাতার চ্যারিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা অনুসারে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ করছে। সরকারও এই প্রকল্পগুলোকে উৎসাহিত করছে।