প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পুনঃনির্মাণ করা সম্ভব হলেও হারানো প্রাণ আর কখনো ফিরিয়ে আনা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘যেসব স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে সেগুলো নতুন করে নির্মাণ করা যাবে। কিন্তু যেসব প্রাণ চলে গেছে তা আমরা আর কখনো ফিরে পাব না।’
বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি প্রতিটি দাবি পূরণ করেছেন। এছাড়া সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। তাই আন্দোলন করার কোনো কারণই ছিল না।
তিনি বলেন, এরপরও এ ধরনের ঘটনা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটানো হলো। তারপর আন্দোলনের নামে অনেকের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হলো।
তিনি বলেন, 'আমি কখনো ভাবিনি যে এই সময়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং এত তাজা প্রাণ ঝরে পড়বে।’
তিনি বলেন, কেউ দাবি করার আগেই সরকার সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আরও পড়ুন: দেশপ্রেম থাকলে তারা উন্নয়ন কাঠামো ধ্বংস করত না: প্রধানমন্ত্রী
সুষ্ঠু তদন্তে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত দেশব্যাপী তাণ্ডবের সুষ্ঠু তদন্তে সহায়তার জন্য জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছে, যাতে এই হামলার প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, তদন্তের পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি ইতোমধ্যে কমিটির আরও দুইজন সদস্য বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সরকার এরই মধ্যে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশেষ করে বিদেশি সংস্থাগুলোকে তদন্তে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, 'এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত এবং দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত।’
মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে দেশের মৎস্য খাতে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাদের ছয়টি স্বর্ণপদক, আটটি রৌপ্য পদক ও আটটি ব্রোঞ্জ পদক এবং সার্টিফিকেট দেন।
আরও পড়ুন: বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির জন্য বিদেশি কারিগরি সহায়তা নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৫ জন খামার মালিক, দুজন মৎস্য কর্মকর্তা, একজন প্রকল্প পরিচালক, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, একজন অ্যাসোসিয়েশন লিডার, একটি প্রকল্প ও একটি কমিটি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জেলেদের স্মার্ট কার্ড দিতে সরকারি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দু'জন জেলেকে স্মার্ট পরিচয়পত্র দেন।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান দেশের মৎস্য খাতে অসামান্য অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে বিশেষ স্মারক তুলে দেন।
১৫ খামার মালিকের মধ্যে যশোরে তিনজন, খুলনা, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারের দুইজন করে, ঝিনাইদহ, বগুড়া, জয়পুরহাট, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ফেনীতে একজন করে খামারি রয়েছেন।
টেকসই উন্নয়ন ও মৎস্য সম্পদের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ৩০ জুলাই থেকে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী 'জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪' উদযাপন হচ্ছে। তবে বুধবার মৎস্য সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার।
আরও পড়ুন: সহিংসতায় আহতদের দেখতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল পরিদর্শন প্রধানমন্ত্রীর