খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের অধীনে ৬০টি স্টেশনের ২২৩টি পদই খালি। এবং তাদের বেশিরভাগেরই আগুন বা অন্য কোনও বড় দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, একদিকে পর্যাপ্ত জনবল ও যন্ত্রপাতি নেই অন্যদিকে পানির উৎস, বৈদ্যুতিক ও ডিশের তার, সরু রাস্তা ও দেখভালের অভাবে প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই কাজ করতে হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, তারা গত বছর বিভাগে দুই হাজার ৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেছে যাতে ২৬৫ জন মারা যায় এবং আহত হয় আরও দুই হাজার ৩২ জন।
এসব স্টেশনে এক হাজার ৬৮৮ জনবল থাকার কথা থাকলেও ১ হাজার ৪৬৫ জন এবং ২২৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে উপ-সহকারী পরিচালকের ১০টি পদের মধ্যে একটি, সহকারী যোগাযোগ প্রকৌশলীর একটি, ৬৪ জন স্টেশন কর্মকর্তার মধ্যে ৪৭টি, ১১ জন অগ্নি কর্মকর্তার মধ্যে সাতটি, তিনজন মবিলাইজিং কর্মকর্তার মধ্যে তিনটি, ৪৭ জন সহকারী কর্মকর্তার
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামের মতি টাওয়ারে আগুন, এক ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে
মধ্যে একটি। ১৩১ জন দলনেতার মধ্যে মাত্র সাতটি, একহাজার দমকল কর্মীর মধ্যে ১২৬টি, ২৫৮ জন চালকের মধ্যে ১৭টি পদ শূন্য রয়েছে।
৫৮টি জলবাহী যানবাহন আছে। ৫৩টি ছোট কাভার্ড ভ্যান, অনুশীলনের জন্য যাত্রী বহনের জন্য ১১টি গাড়ি, মহড়ার জন্য জনসংযোগের জন্য একটি গাড়ি, ২২টি অ্যাম্বুলেন্স, চারটি এসইউভি, ১০৩টি পাম্প, ১৩টি বিশেষ যান এবং অনুশীলনের জন্য পাঁচটি জাহাজ রয়েছে।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এক হজার ২৪৪টি সড়ক দুর্ঘটনা, দুই হাজার ৩৪টি অগ্নিকাণ্ড এবং ৯১টি অন্যান্য দুর্ঘটনায় সাড়া দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের এক হাজার ৮৭০টি দুর্ঘটনায় ৫৯ কোটি ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকার সম্পদ উদ্ধার এবং দুই হাজার ৩২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিভাগের ১০টি জেলায় ৬০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটের ফকিরহাট ও চিতলমারী উপজেলা, সাতক্ষীরার তালা ও শ্যামনগর উপজেলায় চারটি স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।
এছাড়া কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও খুলনার পাইকগাছায় আরও দু’টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের জন্য জমি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ইউএনবি প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন সদস্য জানান, আগুন নেভানোর সময় ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে পানির উৎস না থাকায় এবং ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর বৈদ্যুতিক লাইন ও খুঁটি, সরু রাস্তা এবং রাস্তায় ডিশের ঝুলন্ত তারের কারণে দ্রুত কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।
এর বাইরে জনবল, ডাইভিং ইউনিট, যানবাহনের ঘাটতি, তারবিহীন যোগাযোগ বিঘ্নিত হওয়া এবং বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকা ইত্যাদি রয়েছে বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন: মহাখালী বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানান, খুলনা সদর ও টুটপাড়া স্টেশন ভবনগুলো পুরনো ও জরাজীর্ণ। ভবনের প্লাস্টার ধসে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গাড়ি, কম্পিউটার ও ওয়্যারলেস যন্ত্রপাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই জরাজীর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন দেড় শতাধিক দমকলকর্মী। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের জন্য একটি কোয়ার্টার ছিল, যা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
খুলনা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেন, ‘পুরাতন ভবনটি সরিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। এর ফলে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের যানবাহনের নিরাপত্তা ও নিরাপদ আবাসন ঝুঁকিতে পড়বে। অগ্নিকাণ্ডের কার্যক্রমকে সঠিকভাবে গতিশীল করতে জরুরি ভিত্তিতে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করুন।’
বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘বিভাগের ফায়ার সার্ভিসের জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার লক্ষ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। প্রতিটি স্টেশনের জন্য সেবা, যন্ত্রপাতি ও জনবল চাওয়া হয়েছে। আশা করি, পরিস্থিতির উন্নতি হবে।