ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিঠিতে সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে এবং এর বাইরে অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের জন্য তাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক চিঠিতে বলেন, 'আমি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতির জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি এবং বেসামরিক মানুষের জীবন ও অবকাঠামো রক্ষায় সংযম প্রদর্শনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
ন্যায়বিচার, শান্তি ও সম্প্রীতি সমুন্নত রাখা ইসলাম ও সকল মহান ধর্মের মূল শিক্ষা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সকল সংঘাত ও দুর্ভোগের বিরোধী এবং এর বন্ধ চায়।
তিনি ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের লাগামহীন গণহত্যায় শিশু, নারী ও পুরুষসহ নিরীহ মানুষের মর্মান্তিক প্রাণহানির জন্য ফিলিস্তিনের সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ১৯ মার্চ আপনার দূত এবং ফাতাহ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে আমাকে সম্বোধন করা আপনার চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করছি। গাজায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা সম্পর্কে আমি অবগত আছি এবং এ নিয়ে আপনার গভীর উদ্বেগকে সমর্থন করছি।’
চিঠিতে বলা হয়, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারকে অবমাননা এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন: বড় বাধার মুখে ফিলিস্তিনের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সংস্কারের পরিকল্পনা
চিঠিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা হতাশাজনক যে পরিকল্পনাটি এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কোনও বাস্তব পথ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং এর লক্ষ্য গাজায় ফিলিস্তিনিদের বৈধ জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে দমন করা এবং ভূমির ওপর ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ চিরস্থায়ী করা।’
এমন প্রেক্ষাপটে তিনি বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, গাজার যে কোনো অংশ দখলে ইসরায়েলের যে কোনো পরিকল্পনার বিরোধিতা করছি আমরা।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজাবাসীদের তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করা হবে না, গাজার ভূখণ্ড হ্রাস করা হবে না, ইউএনআরডব্লিউএ'র ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের ক্ষমতার ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে না এবং ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের একটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করা হবে না।
আরও পড়ুন: উত্তর গাজায় সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের হত্যার নিন্দা জাতিসংঘ প্রধানের
তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি সামরিক উপায়ে এই সংঘাতের সমাধান নয়। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের আদেশের ভিত্তিতে চলমান সংকট সমাধানে একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সময় এসেছে, যা কেবল ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের পাশাপাশি বসবাসের মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দখলদারিত্ব ও গণহত্যার শিকার একটি জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই দখলকৃত ও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা অনুভব করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘সুতরাং, আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে আমাদের পূর্ণ সংহতি জানাচ্ছি। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নিন্দা করছি এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধানের পক্ষে সমর্থন করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমরা পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমান্তে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য আপনার বৈধ আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।’
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ