৩৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সফরকারী প্রথম ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুদিনের সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন। এসময় তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে নয়াদিল্লি থেকে ঢাকা পৌঁছালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ম্যাক্রোঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
সশস্ত্র বাহিনী তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে এবং ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়।
নয়াদিল্লিতে ফরাসি নেতা জি২০ সম্মেলনে যোগ দেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আজ দিনের শুরুর দিকে দেশে ফিরে আসেন, যাতে তিনি ম্যাক্রোঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে পারেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট যে বিমানবন্দর এবং রাস্তা দিয়ে গাড়িতে ভ্রমণ করেন, সেসব সড়ক ম্যাক্রোঁ, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। রাজধানী জুড়ে দুই দেশের জাতীয় পতাকা ও বর্ণিল ফেস্টুন লাগানো হয়েছে।
ফ্রাঁসোয়া মিটাররান্ড ছিলেন শেষ ফরাসি রাষ্ট্রপতি, যিনি ১৯৯০ সালের ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ রবিবার সন্ধ্যায় তার সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই নেতার মধ্যে শীর্ষ বৈঠক হবে।
এছাড়াও সোমবার তারা কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করবেন এবং একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিং করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন ম্যাক্রোঁ।
ঢাকায় ফ্রান্সের দূতাবাস বলেছে, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য; বিশেষ করে ফ্রান্সের প্রযুক্তি এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উভয় পক্ষের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখে আমরা রোমাঞ্চিত।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রয়েছেন ইউরোপ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা।
ফরাসি পক্ষ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর এই সফরটি দুই দেশের মধ্যে আরও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুসংহত এবং ‘কিছু প্রকল্প জোরদার করার উপলক্ষ্য হবে।
১৯৯০ সালের শুরু থেকে দু’দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে।
বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে মোট বাণিজ্য ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে বর্তমানে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্রান্স পঞ্চম দেশ। ফরাসি কোম্পানিগুলো এখন ইঞ্জিনিয়ারিং, জ্বালার্নি, এরোস্পেস ও পানি সম্পদসহ বিভিন্ন খাতে সম্পৃক্ত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের সরকার আন্তরিকভাবে আশা করছে ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের নভেম্বরে ফ্রান্স সফর করেন।
ফ্রান্স এই সফরকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘গভীর করার সুযোগ’ হিসেবে দেখছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্স আলোচনার সময় জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করবে।
মোমেন বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন- এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় সমস্যা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এ ক্ষেত্রে একটি নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছেন।’
বাংলাদেশ তার প্রাসঙ্গিক লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের বিষয়টি এবং এর কার্যকারিতা বড় আকারে উত্থাপন করবে।
সোমবার দুপুর ২টায় ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্টের।
বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।