প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ যে ঋণ নিচ্ছে তার সঙ্গে কোনো উল্লেখযোগ্য শর্ত যুক্ত নেই।
বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর দেয়ার সময় এ কথা বলেন তিনি।
সংসদে এক বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইএমএফ একটি দেশকে তখনই ঋণ দেয় যখন তার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা থাকে। আমরা কোনও শর্তে (আইএমএফ থেকে) ঋণ নিচ্ছি না।’
পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বাংলাদেশ এখন আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করছে এবং ইতোমধ্যে বিদ্যুতের শুল্ক বাড়িয়েছে এবং ঋণের কারণে গ্যাসের দাম বাড়বে এবং পণ্য এবং মুদ্রাস্ফীতির ফলে দাম বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন: আইএমএফের ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফান্ড’ থেকে ঋণ নেয়ায় এশিয়ায় প্রথম বাংলাদেশ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছে। ‘আমার প্রশ্ন পৃথিবীর আর কোন দেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি দেয়? তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। কিন্তু বিদ্যুত ব্যবহারে সবাইকে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম ১৫০ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে আমরা বিদ্যুতের দাম মাত্র ৫ শতাংশ বাড়িয়েছি এবং বাল্ক গ্যাসের দামও কিছুটা বাড়িয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির স্পট মূল্য যা ছিল মাত্র ৬ মার্কিন ডলার এখন তা ৬৮ মার্কিন ডলার। ‘তাহলে সরকার কত ভর্তুকি দেবে? সরকার জনগণের অর্থ থেকে ভর্তুকি দেয়।’
তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে পণ্যের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশে, সরকার নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ন্যায্য মূল্য কার্ড এবং টিসিবি কার্ড প্রদান করেছে যাতে তারা ভর্তুকি মূল্যে চালসহ কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে।’
আরও পড়ুন: ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্খাকে সমর্থন দেবে আইএমএফ: ডিএমডি
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কৃষিতে বিশাল ভর্তুকি দিচ্ছি। এখন যদি আমাদের বিদ্যুৎ-গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য ৪০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা দিতে হয় তবে আমরা কীভাবে তা দেব?
তিনি বলেন, গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। ইংল্যান্ডের মতো দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। পৃথিবীর অন্য সব দেশেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও সেরকম পরিস্থিতিতে পড়েনি।’
প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে কৃ্চ্ছতা সাধনের ওপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনে বিদ্যুতের ব্যবহার ৫০ শতাংশ কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই এ ধরনের ব্যবস্থা নিলে তারা বিদ্যুতের ব্যবহারে কঠোরতা অনুশীলন করতে পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ব্যবসায়ীদের স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, সরকার তাদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে পারে, যদি তারা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গ্যাস সংগ্রহের জন্য সরকার যে হারে ব্যয় করে সেই হার দিতে রাজি হয়।
তিনি বলেছেন, ‘যদি তারা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করতে চায়, তাহলে তাদের একই মূল্য দিতে হবে যা সরকারকে গ্যাস সংগ্রহ করতে হবে। এখানে ভর্তুকি দেয়ার কোন কারণ নেই।’
আরও পড়ুন: প্রতিটি বিভাগে শিশুদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল দরকার: প্রধানমন্ত্রী